ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শতকোটি টাকা ক্ষতির বোঝা ভোক্তার কাঁধে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:০০:৩১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ মার্চ ২০২৩
  • / ১৪ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
দেশে রমজানের পণ্য এনে এবার অবিশ্বাস্য তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে কয়েকটি বড় আমদানিকারক গোষ্ঠী এবং বিদেশি পাঁচ জাহাজ। জরুরি প্রয়োজনে আমদানি করা পণ্য যেখানে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে খালাস হওয়ার কথা, সেখানে তা করতে ১৪ থেকে ১৫ গুণ বাড়তি সময় লেগেছে। নজিরবিহীনভাবে জাহাজগুলো অতিরিক্ত দাঁড়িয়ে ছিল সব মিলিয়ে ২৫০ দিনেরও বেশি। এর মধ্যে একটি জাহাজকে সর্বোচ্চ ১৩৬ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি জাহাজের বিপরীতে প্রতিদিন ৪২ লাখ টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে আমদানিকারকদের। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মূল্য পরিশোধ করলেও ডলার সংকটে বাংলাদেশের ব্যাংক তা বিদেশে পাঠাতে না পারায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। জাহাজগুলোকে বসিয়ে রাখায় অতিরিক্ত প্রায় ১০৭ কোটি টাকা গচ্চা গেছে আমদানিকারকদের।
কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, আমদানিকারকরা ক্ষতির এ টাকা এবার তুলে দেবেন ভোক্তার কাঁধে। প্রতি কেজি পণ্যে এখন বাড়তি দাম গুনতে হবে ভোক্তাকে ৫ থেকে ১০ টাকা। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- এস আলম গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও দেশবন্ধু গ্রুপ। এসব প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। কিন্তু ফের এলসি জটিলতা তৈরি হওয়ার শঙ্কায় এ বিষয়টি নিয়ে পরিচয় প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি কেউ-ই। এস আলম গ্রুপের এক পরিচালক বলেন, ‘রমজানের পণ্য এনে অতীতে এভাবে মাসের পর মাস বসে থাকার ঘটনা ঘটেনি। আমদানিকারকরা মূল্য পরিশোধ করার পরও ডলার সংকটে বিদেশিদের কাছে পরিশোধ করতে পারছিল না ব্যাংক। কোনো অপরাধ না থাকার পরও শাস্তি ভোগ করতে হলো আমাদের। এ ঘটনা বিদেশেও আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। নতুন করে বিপদে পড়তে চাই না।’
দেশবন্ধু গ্রুপের এক পরিচালক বলেন, ব্যাংকের নাম প্রকাশ করে এসব ব্যাপারে কথা বললে পরবর্তী এলসি আটকে যেতে পারে। সবচেয়ে বেশি সময় অপেক্ষায় থাকা এমভি ট্রঅং মিন প্রসপারিটি জাহাজের লোকাল এজেন্ট জিএম শিপিংয়ের জেনারেল ম্যানেজার মো. ইউসুফ বলেন, ‘রমজানের পণ্য এনে যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি, তা নজিরবিহীন। ক্ষতির কথা বলে আর নতুন ঝামেলায় পড়তে চাই না।’ এ ঘটনাকে দেশের জন্য লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, ডলার সংকট হতে পারে। সমস্যাটির সমাধান দ্রুত আশা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। এখন অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও আমদানিকারকরা বড় ধরনের ক্ষতিতে পড়লেন। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের সমস্যা না হয়, সে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, একটি জাহাজ পণ্য নিয়ে অপেক্ষা করলে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার ডলার বাড়তি খরচ হয়। জাহাজ যদি বড় আকারের হয় কিংবা ভাড়ায় আনা হয়, তাহলে এ খরচ প্রতিদিন ৪০ হাজার ডলারও হতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরে রমজানের পণ্য নিয়ে এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষার ইতিহাস নেই। ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ব্যবসায়ীরা ক্ষতির এ টাকা তুলে দেবেন ভোক্তার কাঁধে। ভোজ্যতেল ও চিনির দাম এ কারণে লাগামছাড়া হয়েছে অনেক আগেই। মনিটরিং জোরদার না হলে রমজানে এটি আরও ভোগাবে ভোক্তাদের।
১৮ অক্টোবর থেকে অপেক্ষা:
দেশবন্ধু গ্রুপের ৫৫ হাজার টন চিনি নিয়ে ট্রঅং মিন প্রসপারিটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে গত ১৮ অক্টোবর। নিয়ম অনুয়াযী এসব পণ্য খালাস করতে তাদের ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগার কথা। কিন্তু পণ্য খালাসে লেগেছে ১৩৬ দিন। গত ২ মার্চ পণ্য খালাস করে চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করে জাহাজটি। প্রতিদিন ৪০ হাজার ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪২ লাখ টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে তাদের। নাবিক-ক্রুদের বেতন, জ্বালানি, পরিচালন ব্যয়সহ বিভিন্ন খাতে প্রতিদিন এ টাকা খরচ হয় একটি জাহাজে। এ হিসাবে শুধু এ জাহাজের জন্য গচ্চা দিতে হয়েছে ৫৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। বাড়তি এ টাকা আমদানিকারক যদি ভোক্তার কাঁধে চাপান, তাহলে প্রতি কেজি চিনিতে বাড়তি গুনতে হবে ১০ টাকা ৩৮ পয়সা। বাজারে আসার আগেই পরিবহন ব্যয় বাবদ বাড়তি খরচ যুক্ত হয়ে গেছে পণ্যের সঙ্গে।
নভেম্বরে আসা পণ্য খালাস ফেব্রুয়ারিতে:
‘এমটি সুপার ফরটি’ জাহাজ মালয়েশিয়া থেকে প্রায় ১২ হাজার টন পাম অয়েল নিয়ে গত বছরের ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ভেড়ে। ১ কোটি ২৪ লাখ ডলার মূল্যের এই তেল আমদানি করে চট্টগ্রামের এস আলম সুপার এডিবল অয়েল। জাহাজ আসার দুই মাস পর ফেব্রুয়ারিতে এসব পণ্য খালাস করতে সক্ষম হয় তারা। আমদানিকারকদের গচ্চা দিতে হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
চিনি আনতে বাড়তি ব্যয় ১২ কোটি টাকা:
এস আলম গ্রুপের আমদানি করা চিনি নিয়ে ‘এমভি একিলিস’ নামের জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে গত ২৪ ডিসেম্বর। ৫৫ হাজার ৬৫০ টন চিনি নিয়ে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়ায় নোঙর করে জাহাজটি। এ জাহাজটিও সাগরে ভেসে ছিল এক মাসের বেশি সময়। এ জন্য গচ্চা দিতে হয়েছে সাড়ে ১২ কোটি টাকারও বেশি। এ ছাড়া ব্রাজিল থেকে মেঘনা গ্রুপের ৬০ হাজার ৫০০ টন চিনি নিয়ে ‘এমভি কমন অ্যাটলাস’ জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে গত ৫ জানুয়ারি। এই জাহাজ থেকে শুরুতে ২৩ হাজার ৬৫০ টন চিনি খালাস হয়েছিল। কিন্তু ডলারে এলসির টাকা না পাওয়ায় ১১ জানুয়ারি থেকে খালাস স্থগিত করে দেয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।
জাহাজ পাল্টেও ক্ষতি কমেনি:
ব্রাজিল থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল নিয়ে মেঘনা গ্রুপের ‘এমটি সোগান’ নামের জাহাজ বন্দরে ভেড়ে ৬ জানুয়ারি। এ জাহাজে আমদানিকারক বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ও মেঘনা অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের তেল ছিল। বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের তেল খালাস করার পরই আটকা পড়ে জাহাজটি। মেঘনা এডিবলের ৬২ লাখ ডলারের প্রায় ৫ হাজার টন তেল খালাস করতে আমদানিকারককে অপর একটি ছোট জাহাজের সাহায্য নিতে হয়। জাহাজটির স্থানীয় প্রতিনিধি প্যানমেরিন শিপিং লাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসলাম বলেন, বিদেশি জাহাজের প্রতিদিনের ক্ষতিপূরণ অনেক বেশি। তাই জাহাজটিতে থাকা অবশিষ্ট তেল দেশীয় একটি ছোট জাহাজে স্থানান্তর করা হয়। তা না হলে অনেক টাকা গচ্চা যেত। তার পরও পণ্য খালাস করতে এক মাসেরও বেশি সময় লেগেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

শতকোটি টাকা ক্ষতির বোঝা ভোক্তার কাঁধে

আপলোড টাইম : ০৭:০০:৩১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ মার্চ ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদন:
দেশে রমজানের পণ্য এনে এবার অবিশ্বাস্য তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে কয়েকটি বড় আমদানিকারক গোষ্ঠী এবং বিদেশি পাঁচ জাহাজ। জরুরি প্রয়োজনে আমদানি করা পণ্য যেখানে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে খালাস হওয়ার কথা, সেখানে তা করতে ১৪ থেকে ১৫ গুণ বাড়তি সময় লেগেছে। নজিরবিহীনভাবে জাহাজগুলো অতিরিক্ত দাঁড়িয়ে ছিল সব মিলিয়ে ২৫০ দিনেরও বেশি। এর মধ্যে একটি জাহাজকে সর্বোচ্চ ১৩৬ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি জাহাজের বিপরীতে প্রতিদিন ৪২ লাখ টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে আমদানিকারকদের। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মূল্য পরিশোধ করলেও ডলার সংকটে বাংলাদেশের ব্যাংক তা বিদেশে পাঠাতে না পারায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। জাহাজগুলোকে বসিয়ে রাখায় অতিরিক্ত প্রায় ১০৭ কোটি টাকা গচ্চা গেছে আমদানিকারকদের।
কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, আমদানিকারকরা ক্ষতির এ টাকা এবার তুলে দেবেন ভোক্তার কাঁধে। প্রতি কেজি পণ্যে এখন বাড়তি দাম গুনতে হবে ভোক্তাকে ৫ থেকে ১০ টাকা। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- এস আলম গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও দেশবন্ধু গ্রুপ। এসব প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। কিন্তু ফের এলসি জটিলতা তৈরি হওয়ার শঙ্কায় এ বিষয়টি নিয়ে পরিচয় প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি কেউ-ই। এস আলম গ্রুপের এক পরিচালক বলেন, ‘রমজানের পণ্য এনে অতীতে এভাবে মাসের পর মাস বসে থাকার ঘটনা ঘটেনি। আমদানিকারকরা মূল্য পরিশোধ করার পরও ডলার সংকটে বিদেশিদের কাছে পরিশোধ করতে পারছিল না ব্যাংক। কোনো অপরাধ না থাকার পরও শাস্তি ভোগ করতে হলো আমাদের। এ ঘটনা বিদেশেও আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। নতুন করে বিপদে পড়তে চাই না।’
দেশবন্ধু গ্রুপের এক পরিচালক বলেন, ব্যাংকের নাম প্রকাশ করে এসব ব্যাপারে কথা বললে পরবর্তী এলসি আটকে যেতে পারে। সবচেয়ে বেশি সময় অপেক্ষায় থাকা এমভি ট্রঅং মিন প্রসপারিটি জাহাজের লোকাল এজেন্ট জিএম শিপিংয়ের জেনারেল ম্যানেজার মো. ইউসুফ বলেন, ‘রমজানের পণ্য এনে যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি, তা নজিরবিহীন। ক্ষতির কথা বলে আর নতুন ঝামেলায় পড়তে চাই না।’ এ ঘটনাকে দেশের জন্য লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, ডলার সংকট হতে পারে। সমস্যাটির সমাধান দ্রুত আশা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। এখন অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও আমদানিকারকরা বড় ধরনের ক্ষতিতে পড়লেন। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের সমস্যা না হয়, সে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, একটি জাহাজ পণ্য নিয়ে অপেক্ষা করলে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার ডলার বাড়তি খরচ হয়। জাহাজ যদি বড় আকারের হয় কিংবা ভাড়ায় আনা হয়, তাহলে এ খরচ প্রতিদিন ৪০ হাজার ডলারও হতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরে রমজানের পণ্য নিয়ে এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষার ইতিহাস নেই। ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ব্যবসায়ীরা ক্ষতির এ টাকা তুলে দেবেন ভোক্তার কাঁধে। ভোজ্যতেল ও চিনির দাম এ কারণে লাগামছাড়া হয়েছে অনেক আগেই। মনিটরিং জোরদার না হলে রমজানে এটি আরও ভোগাবে ভোক্তাদের।
১৮ অক্টোবর থেকে অপেক্ষা:
দেশবন্ধু গ্রুপের ৫৫ হাজার টন চিনি নিয়ে ট্রঅং মিন প্রসপারিটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে গত ১৮ অক্টোবর। নিয়ম অনুয়াযী এসব পণ্য খালাস করতে তাদের ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগার কথা। কিন্তু পণ্য খালাসে লেগেছে ১৩৬ দিন। গত ২ মার্চ পণ্য খালাস করে চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করে জাহাজটি। প্রতিদিন ৪০ হাজার ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪২ লাখ টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে তাদের। নাবিক-ক্রুদের বেতন, জ্বালানি, পরিচালন ব্যয়সহ বিভিন্ন খাতে প্রতিদিন এ টাকা খরচ হয় একটি জাহাজে। এ হিসাবে শুধু এ জাহাজের জন্য গচ্চা দিতে হয়েছে ৫৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। বাড়তি এ টাকা আমদানিকারক যদি ভোক্তার কাঁধে চাপান, তাহলে প্রতি কেজি চিনিতে বাড়তি গুনতে হবে ১০ টাকা ৩৮ পয়সা। বাজারে আসার আগেই পরিবহন ব্যয় বাবদ বাড়তি খরচ যুক্ত হয়ে গেছে পণ্যের সঙ্গে।
নভেম্বরে আসা পণ্য খালাস ফেব্রুয়ারিতে:
‘এমটি সুপার ফরটি’ জাহাজ মালয়েশিয়া থেকে প্রায় ১২ হাজার টন পাম অয়েল নিয়ে গত বছরের ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ভেড়ে। ১ কোটি ২৪ লাখ ডলার মূল্যের এই তেল আমদানি করে চট্টগ্রামের এস আলম সুপার এডিবল অয়েল। জাহাজ আসার দুই মাস পর ফেব্রুয়ারিতে এসব পণ্য খালাস করতে সক্ষম হয় তারা। আমদানিকারকদের গচ্চা দিতে হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
চিনি আনতে বাড়তি ব্যয় ১২ কোটি টাকা:
এস আলম গ্রুপের আমদানি করা চিনি নিয়ে ‘এমভি একিলিস’ নামের জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে গত ২৪ ডিসেম্বর। ৫৫ হাজার ৬৫০ টন চিনি নিয়ে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়ায় নোঙর করে জাহাজটি। এ জাহাজটিও সাগরে ভেসে ছিল এক মাসের বেশি সময়। এ জন্য গচ্চা দিতে হয়েছে সাড়ে ১২ কোটি টাকারও বেশি। এ ছাড়া ব্রাজিল থেকে মেঘনা গ্রুপের ৬০ হাজার ৫০০ টন চিনি নিয়ে ‘এমভি কমন অ্যাটলাস’ জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে গত ৫ জানুয়ারি। এই জাহাজ থেকে শুরুতে ২৩ হাজার ৬৫০ টন চিনি খালাস হয়েছিল। কিন্তু ডলারে এলসির টাকা না পাওয়ায় ১১ জানুয়ারি থেকে খালাস স্থগিত করে দেয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।
জাহাজ পাল্টেও ক্ষতি কমেনি:
ব্রাজিল থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল নিয়ে মেঘনা গ্রুপের ‘এমটি সোগান’ নামের জাহাজ বন্দরে ভেড়ে ৬ জানুয়ারি। এ জাহাজে আমদানিকারক বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ও মেঘনা অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের তেল ছিল। বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের তেল খালাস করার পরই আটকা পড়ে জাহাজটি। মেঘনা এডিবলের ৬২ লাখ ডলারের প্রায় ৫ হাজার টন তেল খালাস করতে আমদানিকারককে অপর একটি ছোট জাহাজের সাহায্য নিতে হয়। জাহাজটির স্থানীয় প্রতিনিধি প্যানমেরিন শিপিং লাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসলাম বলেন, বিদেশি জাহাজের প্রতিদিনের ক্ষতিপূরণ অনেক বেশি। তাই জাহাজটিতে থাকা অবশিষ্ট তেল দেশীয় একটি ছোট জাহাজে স্থানান্তর করা হয়। তা না হলে অনেক টাকা গচ্চা যেত। তার পরও পণ্য খালাস করতে এক মাসেরও বেশি সময় লেগেছে।