ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডে নির্বাচন : ত্রিমুখী লড়াইয়ে আ’লীগ-বিএনপি-জামায়াত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০৫:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭
  • / ৩৫৫ বার পড়া হয়েছে

জীবননগর উপজেলাধীন উথলী, মনোহরপুর ও কেডিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক/জীবননগর অফিস: অনিশ্চয়তা, হতাশা আর সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর পর চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার তিনটি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে তিন ইউপি’র ২৭টি অস্থায়ী ভোট কেন্দ্রে নিজ নিজ ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে ভোটাররা। গতকাল মঙ্গলবার দিনগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে সকল প্রকার প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন সর্বত্র বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে গোটা নির্বাচনী এলাকা। ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে কেন্দ্রগুলোতে। পুলিশের পক্ষ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তার চাঁদরে ঢাকা হয়েছে ভোট কেন্দ্র ও তার আশপাশ এলাকা। এ ছাড়াও র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরাও মাঠে থাকবে। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণে কোন বাঁধায় প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাড়াতে পারবে না। ফলে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদী সাধারণ ভোটাররা।
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমন্বয়ে ঘাটতি আর অর্ন্তদ্বন্ধের কারণে দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী, জোট ভেঙে বিএনপির বিপক্ষে জামায়াতের অবস্থান নেয়ায় লড়াই হবে ত্রিমুখী। এলাকার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র একটাই আলোচনা এবার কারা নির্বাচিত হবেন চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে? চেয়ারম্যান প্রার্থী, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী ও সাধারণ সদস্য প্রার্থীরা বিরামহীনভাবে এলাকায় জনসংযোগ চালিয়েছেন। হাড় কাপানো শীতকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণায় মূখর ছিল তিন ইউপিতেই। দোকান-পাট, হাট-ঘাট, বাজারসহ সর্বত্র ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টার। উপজেলার তিন ইউনিয়নে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিটি প্রার্থীই নিজ নিজ বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই হিসেবে দেখছেন। সেই সঙ্গে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নির্বাচনী মাঠে জয় ছিনিয়ে আনতে মরিয়া। এরমধ্যে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের বেশ ফুরফুরে মেজাজে থাকতে দেখা গেছে। তাদের দাবি পুরুষ ভোটারদের তুলনায় নারী ভোটাররা জামায়াতের প্রতি আস্থাশীল। তাই নারী ভোটারদের রায়ে নিরব বিপ্লব হবে সবকটি ইউপিতে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের। এবারই প্রথম এ তিন ইউনিয়নে দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হওয়ায় নির্বাচনে বাড়তি আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে সবরকম নির্বাচনী কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছেন বড় দুই দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। ভোটারদের দৃষ্টিতে তিনটি ইউনিয়নেই নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের মধ্যে লড়াই হবে। তবে ভোটারদের ধারণা বড় দু’দল বাদেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই নির্বাচনী মাঠে। অপরদিকে, জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে তাদের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। অতীতে এলাকাটি বিএনপি ও জামায়াতের ঘাঁটি বলে পরিচিত। তবে আওয়ামী লীগও তাদের আসন ধরে রাখতে বদ্ধ পরিকর। তবে ভোটাররা প্রার্থীর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনটি ইউনিয়নের ২৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫টি কেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১২টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ইতোমধ্যেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহা. কলিমুল্লাহ সময়ের সমীকরণকে জানান, ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, নাশকতাসহ যে কোন ধরণের অপ্রিতিকর ঘটনা মোকাবেলায়ও কাজ করছে সহ¯্রতাধিক পুলিশ সদস্য। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পুলিশের সাথে আনসার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়াও ১২টি মোবাইল টিম, ৮টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও রিজার্ভ ফোর্স মাঠে থাকছে। প্রতিটি টিমে একজন করে পুলিশ পরিদর্শক (ইনচার্জ) এর নেতৃত্বে ৮জন করে ফোর্স দেয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। সর্বপরি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ নিরাপত্তা কার্যক্রম ও নির্বাচনী আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করবে।’
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পুনর্গঠিত উথলী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে আব্দুল হান্নান, বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকে আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী আনারস প্রতীকে আবজালুর রহমান ধীরু, বিএনপির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী চশমা প্রতীকে আসাদুর রহমান ভেদু ও জামায়াত সমর্থিত (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকে মোহাম্মদ মহিউদ্দীন। এ ছাড়াও এ ইউনিয়নে সংরক্ষিত সদস্য পদে ১২ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৪০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নবগঠিত কেডিকে ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে খায়রুল বাশার শিপলু, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী আনারস প্রতীকে আবুল বাসার এবং চশমা প্রতীকে আলমগীর হোসেন, বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকে তানভীর হোসেন রাজিব এবং জামায়াত সমর্থিত (স্বতন্ত্র) মোটরসাইকেল প্রতীকে আব্দুস সাত্তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়াও সংরক্ষিত সদস্য পদে ১২ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
নবগঠিত মনোহরপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে সোহরাব হোসেন খাঁন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী আনারস প্রতীকে রাজা মিয়া, বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকে কামরুজ্জামান এবং জামায়াত সমর্থিত (স্বতন্ত্র) মোটরসাইকেল প্রতীকে আসাবুল হক মল্লিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ ইউনিয়নে সংরক্ষিত সদস্য পদে ৯ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
উল্লেখ্য, হাইকোর্টে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে দীর্ঘ ১৪ বছর এসব ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। সাবেক অবিভক্ত উথলী ইউনিয়ন পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০০৩ সালের ২৫ জানুয়ারি। এর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৮ সালের ১০ মার্চ। কিন্তু ওই সময় বৃহত্তর উথলী ইউনিয়ন পরিষদকে তিনভাগে বিভক্ত করার পর সীমানা নির্ধারণ নিয়ে ওই ইউনিয়নের সদস্য মো. ইউনুছ আলী হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। ওই সময় হাইকোর্ট রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশ দেয়। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) মামলা নিষ্পত্তি না হলেও উপজেলার এ তিন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আজ ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডে নির্বাচন : ত্রিমুখী লড়াইয়ে আ’লীগ-বিএনপি-জামায়াত

আপলোড টাইম : ১১:০৫:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

জীবননগর উপজেলাধীন উথলী, মনোহরপুর ও কেডিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক/জীবননগর অফিস: অনিশ্চয়তা, হতাশা আর সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর পর চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার তিনটি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে তিন ইউপি’র ২৭টি অস্থায়ী ভোট কেন্দ্রে নিজ নিজ ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে ভোটাররা। গতকাল মঙ্গলবার দিনগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে সকল প্রকার প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন সর্বত্র বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে গোটা নির্বাচনী এলাকা। ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে কেন্দ্রগুলোতে। পুলিশের পক্ষ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তার চাঁদরে ঢাকা হয়েছে ভোট কেন্দ্র ও তার আশপাশ এলাকা। এ ছাড়াও র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরাও মাঠে থাকবে। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণে কোন বাঁধায় প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাড়াতে পারবে না। ফলে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদী সাধারণ ভোটাররা।
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমন্বয়ে ঘাটতি আর অর্ন্তদ্বন্ধের কারণে দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী, জোট ভেঙে বিএনপির বিপক্ষে জামায়াতের অবস্থান নেয়ায় লড়াই হবে ত্রিমুখী। এলাকার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র একটাই আলোচনা এবার কারা নির্বাচিত হবেন চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে? চেয়ারম্যান প্রার্থী, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী ও সাধারণ সদস্য প্রার্থীরা বিরামহীনভাবে এলাকায় জনসংযোগ চালিয়েছেন। হাড় কাপানো শীতকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণায় মূখর ছিল তিন ইউপিতেই। দোকান-পাট, হাট-ঘাট, বাজারসহ সর্বত্র ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টার। উপজেলার তিন ইউনিয়নে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিটি প্রার্থীই নিজ নিজ বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই হিসেবে দেখছেন। সেই সঙ্গে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নির্বাচনী মাঠে জয় ছিনিয়ে আনতে মরিয়া। এরমধ্যে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের বেশ ফুরফুরে মেজাজে থাকতে দেখা গেছে। তাদের দাবি পুরুষ ভোটারদের তুলনায় নারী ভোটাররা জামায়াতের প্রতি আস্থাশীল। তাই নারী ভোটারদের রায়ে নিরব বিপ্লব হবে সবকটি ইউপিতে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের। এবারই প্রথম এ তিন ইউনিয়নে দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হওয়ায় নির্বাচনে বাড়তি আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে সবরকম নির্বাচনী কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছেন বড় দুই দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। ভোটারদের দৃষ্টিতে তিনটি ইউনিয়নেই নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের মধ্যে লড়াই হবে। তবে ভোটারদের ধারণা বড় দু’দল বাদেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই নির্বাচনী মাঠে। অপরদিকে, জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে তাদের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। অতীতে এলাকাটি বিএনপি ও জামায়াতের ঘাঁটি বলে পরিচিত। তবে আওয়ামী লীগও তাদের আসন ধরে রাখতে বদ্ধ পরিকর। তবে ভোটাররা প্রার্থীর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনটি ইউনিয়নের ২৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫টি কেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১২টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ইতোমধ্যেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহা. কলিমুল্লাহ সময়ের সমীকরণকে জানান, ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, নাশকতাসহ যে কোন ধরণের অপ্রিতিকর ঘটনা মোকাবেলায়ও কাজ করছে সহ¯্রতাধিক পুলিশ সদস্য। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পুলিশের সাথে আনসার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়াও ১২টি মোবাইল টিম, ৮টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও রিজার্ভ ফোর্স মাঠে থাকছে। প্রতিটি টিমে একজন করে পুলিশ পরিদর্শক (ইনচার্জ) এর নেতৃত্বে ৮জন করে ফোর্স দেয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। সর্বপরি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ নিরাপত্তা কার্যক্রম ও নির্বাচনী আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করবে।’
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পুনর্গঠিত উথলী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে আব্দুল হান্নান, বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকে আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী আনারস প্রতীকে আবজালুর রহমান ধীরু, বিএনপির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী চশমা প্রতীকে আসাদুর রহমান ভেদু ও জামায়াত সমর্থিত (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকে মোহাম্মদ মহিউদ্দীন। এ ছাড়াও এ ইউনিয়নে সংরক্ষিত সদস্য পদে ১২ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৪০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নবগঠিত কেডিকে ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে খায়রুল বাশার শিপলু, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী আনারস প্রতীকে আবুল বাসার এবং চশমা প্রতীকে আলমগীর হোসেন, বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকে তানভীর হোসেন রাজিব এবং জামায়াত সমর্থিত (স্বতন্ত্র) মোটরসাইকেল প্রতীকে আব্দুস সাত্তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়াও সংরক্ষিত সদস্য পদে ১২ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
নবগঠিত মনোহরপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে সোহরাব হোসেন খাঁন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী আনারস প্রতীকে রাজা মিয়া, বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকে কামরুজ্জামান এবং জামায়াত সমর্থিত (স্বতন্ত্র) মোটরসাইকেল প্রতীকে আসাবুল হক মল্লিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ ইউনিয়নে সংরক্ষিত সদস্য পদে ৯ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
উল্লেখ্য, হাইকোর্টে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে দীর্ঘ ১৪ বছর এসব ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। সাবেক অবিভক্ত উথলী ইউনিয়ন পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০০৩ সালের ২৫ জানুয়ারি। এর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৮ সালের ১০ মার্চ। কিন্তু ওই সময় বৃহত্তর উথলী ইউনিয়ন পরিষদকে তিনভাগে বিভক্ত করার পর সীমানা নির্ধারণ নিয়ে ওই ইউনিয়নের সদস্য মো. ইউনুছ আলী হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। ওই সময় হাইকোর্ট রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশ দেয়। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) মামলা নিষ্পত্তি না হলেও উপজেলার এ তিন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আজ ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।