ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

লাখ টাকা খুইয়ে নকল সোনার পুতুল পেল মিনাজ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:০০:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ ২০২১
  • / ৮০ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহে কথিত জ্বিনের বাদশার সেজে প্রতারণা, সর্বশান্ত মানুষ
ঝিনাইদহ অফিস:
ঝিনাইদহে কথিত জ্বিনের বাদশার কাছে মানুষ সর্বশান্ত হচ্ছে। মধ্যরাতে ঘুম ভাঙিয়ে বড়লোক হওয়ার গল্প শোনায়। এভাবে গ্রামের সহজ-সরল ১০ জন মানুষকে ফোন করলে অন্তত ২-৩ জন তাদের টার্গেটে পরিণত হয়। আবার মুসলিম হলে দুর্বল জায়গায় আঘাত করে ফায়দা লুটে নেয়। ফোন করে প্রথমে কোরআন শরিফ ও জায়নামাজ দাবি করে জিনের বাদশাহ সেজে প্রতারকরা। সেগুলো পেয়ে খুশি হয়ে একটি ‘সোনর পুতুল’ উপহার দেয়। এবার তাদের গড়া মসজিদে কোরবানির গরু কেনার টাকা দিলে রাতারাতি ধনী করে দেবে বলে জানালে প্রলোভনে পড়ে লাখ লাখ টাকা দেন কেউ কেউ। মিনাজ উদ্দীন প্রতারিত হওয়া এক ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী। তারপর যা হওয়ার তাই হয়েছে। মিনাজ এখন পথের ফকির। টাকা খুইয়ে দিশেহারা। কথিত জ্বিনের বাদশাহ নিয়ে সমাজে এ রকম হাজারো গল্পের কথা সবারই জানা। এ ধরণের প্রতারণার শিকার মিনাজ উদ্দীন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের গোপালপুর বাজারের ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী ও দুর্গাপুর গ্রামের আছমত মণ্ডলের ছেলে।
মিনহাজ জানান, ‘এক রাতে আমার মোবাইলে কল আসে। কল রিসিভ করার পর প্রথমে জিনের বাদশাহ পরিচয় দিয়ে বলে ‘তুমি কি নামাজ পড়ো।’ উত্তরে আমি বলি ফজরের নামাজ পড়ে আসলাম। তখন সে বলে ‘তুমি এখন দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নাও।’ নামাজ শেষ হলে বলে ‘আমি জিনের বাদশাহ, দিনাজপুর পৌর মসজিদে থাকি। ইমামের কাছেই থাকি এবং তার মাধ্যমেই কথা বলছি। তোমার কাছে বিশেষ আবেদন, আমাদের এখানে মসজিদে তিনটা কোরআন শরিফ এবং একটা জায়নামাজ দিতে হবে। আমি সেটা দিইনি। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমাকে ফোন দিয়ে বলে ‘তুই আমার শর্ত রাখিসনি। তোর সন্তানের মুখ দিয়ে রক্ত উঠে মারা যাবে, তুই কি তোর ক্ষতি চাস।’ এ কথা শুনার পর ভয়ে আমি তাদের বিকাশ নম্বরে ১ হাজার ৫০ টাকা পাঠিয়ে দেই। এভাবে দিনের পর দিন নানা প্রলোভন দেখিয়ে আমার কাছ থেকে প্রায় এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারক চক্রটি সর্বশেষ বলে আমরা ৭০ হাজার সাহাবি এবং অলি-আউলিয়া মিলে তোর জন্য দোয়া করছি। তুই নিকটস্থ আটলিয়া বাজারে আয়। সেখানে গিয়ে আমি কিছুই পায়নি। পরে জিনের বাদশাহ বলে ‘পাশেই দেখো টিউবওয়েল আছে সেখানে যাও, ওখানে দেখ একটা বদনা আছে।’ বদনাটা উঁচু করে আমি সোনার রঙের পুতুল দেখে হতবাক হয়ে যাই। তখন আমার বিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। সে আমাকে বলে- ‘তুমি সোজা বাড়ি গিয়ে পুতুলটি ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখবে এবং বিষয়টা কাউকে বলবে না। বিষয়টি জানাজানি হলে বড় ক্ষতি হবে বলে জানায়।’ এভাবেই আমার কাছ থেকে প্রথমে ৪২ হাজার, তারপর ৪০ হাজার ও সর্বশেষ ২১ হাজার টাকা বিকাশ করে সর্বশান্ত হয়ে পড়ি।
গোপালপুর বাজারের বিকাশ এজেন্ট মো. বাবুল হোসেন বলেন, ‘মিনাজ আমার পাশেই ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ব্যবসা করে। ঘটনার দিন সকালে (গত ১৭ মার্চ) আমার দোকানে এসে বলে, গরমে ফ্যানের দাম বেড়ে যাবে। এ জন্য বেশি করে ফ্যান কিনবে, জরুরিভাবে তার মহাজনের কাছে টাকা পাঠাতে হবে। তখন আমি ০১৩০২-১৬২২০৯ ও ০১৮৯২-১৯৫৬৫১ নম্বরে ৮২ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিই। এরপর আমি টাকা চাইলে বলে একটু পরে দেবে। এ ঘটনার এক দিন পর অন্য দোকান থেকেও সে টাকা পাঠিয়েছে। তারপর আমরা জানতে পারি সে আসলে জিনের বাদশাহর খপ্পড়ে পড়েছে।
মধুহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, মিনাজ বাজারে দীর্ঘদিন ধরে ইলেকট্রনিক্সের ব্যবস্যা করে আসছেন। তিনি একজন সহজ-সরল মানুষ। জিনের বাদশাহ সেজে প্রতারক চক্র তাঁর সরলতাকে কাজে লাগিয়ে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রতারক চক্রটি এলাকার হতে পারে। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

লাখ টাকা খুইয়ে নকল সোনার পুতুল পেল মিনাজ

আপলোড টাইম : ০২:০০:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ ২০২১

ঝিনাইদহে কথিত জ্বিনের বাদশার সেজে প্রতারণা, সর্বশান্ত মানুষ
ঝিনাইদহ অফিস:
ঝিনাইদহে কথিত জ্বিনের বাদশার কাছে মানুষ সর্বশান্ত হচ্ছে। মধ্যরাতে ঘুম ভাঙিয়ে বড়লোক হওয়ার গল্প শোনায়। এভাবে গ্রামের সহজ-সরল ১০ জন মানুষকে ফোন করলে অন্তত ২-৩ জন তাদের টার্গেটে পরিণত হয়। আবার মুসলিম হলে দুর্বল জায়গায় আঘাত করে ফায়দা লুটে নেয়। ফোন করে প্রথমে কোরআন শরিফ ও জায়নামাজ দাবি করে জিনের বাদশাহ সেজে প্রতারকরা। সেগুলো পেয়ে খুশি হয়ে একটি ‘সোনর পুতুল’ উপহার দেয়। এবার তাদের গড়া মসজিদে কোরবানির গরু কেনার টাকা দিলে রাতারাতি ধনী করে দেবে বলে জানালে প্রলোভনে পড়ে লাখ লাখ টাকা দেন কেউ কেউ। মিনাজ উদ্দীন প্রতারিত হওয়া এক ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী। তারপর যা হওয়ার তাই হয়েছে। মিনাজ এখন পথের ফকির। টাকা খুইয়ে দিশেহারা। কথিত জ্বিনের বাদশাহ নিয়ে সমাজে এ রকম হাজারো গল্পের কথা সবারই জানা। এ ধরণের প্রতারণার শিকার মিনাজ উদ্দীন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের গোপালপুর বাজারের ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী ও দুর্গাপুর গ্রামের আছমত মণ্ডলের ছেলে।
মিনহাজ জানান, ‘এক রাতে আমার মোবাইলে কল আসে। কল রিসিভ করার পর প্রথমে জিনের বাদশাহ পরিচয় দিয়ে বলে ‘তুমি কি নামাজ পড়ো।’ উত্তরে আমি বলি ফজরের নামাজ পড়ে আসলাম। তখন সে বলে ‘তুমি এখন দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নাও।’ নামাজ শেষ হলে বলে ‘আমি জিনের বাদশাহ, দিনাজপুর পৌর মসজিদে থাকি। ইমামের কাছেই থাকি এবং তার মাধ্যমেই কথা বলছি। তোমার কাছে বিশেষ আবেদন, আমাদের এখানে মসজিদে তিনটা কোরআন শরিফ এবং একটা জায়নামাজ দিতে হবে। আমি সেটা দিইনি। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমাকে ফোন দিয়ে বলে ‘তুই আমার শর্ত রাখিসনি। তোর সন্তানের মুখ দিয়ে রক্ত উঠে মারা যাবে, তুই কি তোর ক্ষতি চাস।’ এ কথা শুনার পর ভয়ে আমি তাদের বিকাশ নম্বরে ১ হাজার ৫০ টাকা পাঠিয়ে দেই। এভাবে দিনের পর দিন নানা প্রলোভন দেখিয়ে আমার কাছ থেকে প্রায় এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারক চক্রটি সর্বশেষ বলে আমরা ৭০ হাজার সাহাবি এবং অলি-আউলিয়া মিলে তোর জন্য দোয়া করছি। তুই নিকটস্থ আটলিয়া বাজারে আয়। সেখানে গিয়ে আমি কিছুই পায়নি। পরে জিনের বাদশাহ বলে ‘পাশেই দেখো টিউবওয়েল আছে সেখানে যাও, ওখানে দেখ একটা বদনা আছে।’ বদনাটা উঁচু করে আমি সোনার রঙের পুতুল দেখে হতবাক হয়ে যাই। তখন আমার বিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। সে আমাকে বলে- ‘তুমি সোজা বাড়ি গিয়ে পুতুলটি ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখবে এবং বিষয়টা কাউকে বলবে না। বিষয়টি জানাজানি হলে বড় ক্ষতি হবে বলে জানায়।’ এভাবেই আমার কাছ থেকে প্রথমে ৪২ হাজার, তারপর ৪০ হাজার ও সর্বশেষ ২১ হাজার টাকা বিকাশ করে সর্বশান্ত হয়ে পড়ি।
গোপালপুর বাজারের বিকাশ এজেন্ট মো. বাবুল হোসেন বলেন, ‘মিনাজ আমার পাশেই ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ব্যবসা করে। ঘটনার দিন সকালে (গত ১৭ মার্চ) আমার দোকানে এসে বলে, গরমে ফ্যানের দাম বেড়ে যাবে। এ জন্য বেশি করে ফ্যান কিনবে, জরুরিভাবে তার মহাজনের কাছে টাকা পাঠাতে হবে। তখন আমি ০১৩০২-১৬২২০৯ ও ০১৮৯২-১৯৫৬৫১ নম্বরে ৮২ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিই। এরপর আমি টাকা চাইলে বলে একটু পরে দেবে। এ ঘটনার এক দিন পর অন্য দোকান থেকেও সে টাকা পাঠিয়েছে। তারপর আমরা জানতে পারি সে আসলে জিনের বাদশাহর খপ্পড়ে পড়েছে।
মধুহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, মিনাজ বাজারে দীর্ঘদিন ধরে ইলেকট্রনিক্সের ব্যবস্যা করে আসছেন। তিনি একজন সহজ-সরল মানুষ। জিনের বাদশাহ সেজে প্রতারক চক্র তাঁর সরলতাকে কাজে লাগিয়ে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রতারক চক্রটি এলাকার হতে পারে। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।