ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

লাখে কর্মকর্তাদের দিতে হয় ২৫০০ টাকা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০৫:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ নভেম্বর ২০২০
  • / ১৩৮ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ রূপালী ব্যাংকে শিক্ষক ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ
ঝিনাইদহ অফিস:
ঝিনাইদহ রূপালী ব্যাংকে (কর্পোরেট শাখা) শিক্ষক ঋণ বিতরণে টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে হেড অফিসের দোহায় দিয়ে ব্যাংকের ঋণ শাখার কর্মকর্তা মো. ইদ্রীস আলী শিক্ষকদের কাছ থেকে লাখ প্রতি ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন। তবে ব্যাংক ম্যানেজার বলছেন, ‘হয়ত আগে নেওয়া হলেও আমি আসার পর থেকে কোনো টাকা আদায় করা হচ্ছে না। বরং ঋণ পেয়ে শিক্ষকরা বেজায় খুশি। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে শিক্ষকদের বেতনের বিপরীতে ৮০% হারে স্বল্প সুদে ৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকটি। ইতোমধ্যে ব্যাংকটি প্রায় ৩ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে সদর উপজেলার বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে।
ঋণ বিতরণ ও কমিশনের বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা মো. ইদ্রীস আলী বলেন, ‘আমরা বেসরকারি শিক্ষকদের বাড়ি মেরামত ও জমিক্রয় ইত্যাদির জন্য বেতনের ৮০% হারে ঋণ বিতরণ করছি।’ লাখে কত করে নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিবিএ খরচ, ভ্যাট, কাগজ প্রসেসিং ইত্যাদি বাবদ টাকা নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত টাকার কোনো রশিদ দেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন না, ‘আমরা কোনো রশিদ দিচ্ছি না।’ তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ম্যানেজার আমাদের যেভাবে বলেছেন, আমরা সেভাবেই টাকা আদায় করছি।’
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার প্রত্যেকটি বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের বিপরীতে ঋণ করেছে ঝিনাইদহ রূপালী। ঝিনাইদহ শহরের শিশুকুঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং চন্ডিপুর বিষ্ণুপদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রায় ২৫ জন শিক্ষক বেতনের বিপরীতে ঋণ গ্রহণ করেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই ব্যাংক কর্মকর্তা ইদ্রিস আলীকে লাখ প্রতি ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা কমিশন দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষ্ণুপদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষক জানান, তিনি দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এ জন্য ইদ্রিস আলীকে ২৫০০ টাকা কমিশন দিতে হয়েছে। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তসলিমা খাতুন বলেন, ‘এ রকম অনিয়মের কথা আমিও শুনেছি। কিন্তু আমরা জিজ্ঞাসা করলে শিক্ষকরা স্বীকার করেন না। ফলে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না।’ ঝিনাইদহের এক টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষকদের বেতনের বিপরীতে যে ঋণ বিতরণ হচ্ছে, তাতে রিস্ক নেই। তারপরও কেন ঘুষ নিচ্ছে, তা আমাদের বুঝে আসে না। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দীন জানান, ‘আমিও এমন অভিযোগ শুনেছি। তবে বর্তমান ম্যানেজার যোগদানের পর থেকে বিষয়টি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন।’
ব্যাংক ম্যানেজার মো. ইমদাদুল ইসলাম নূরানী গতকাল রোববার বিকেলে জানান, ‘এই শাখায় যারা কর্মরত, তাদের বেশির ভাগ স্থানীয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে আছেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা আমিও শুনেছি। তবে সার্কুলারের বাইরে তো টাকা নেওয়ার কথা নয়। সরকারের বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন গতকাল রোববার সকালে বিষয়টি তদন্ত করছে। তারা ব্যাংকের কার্যক্রম দেখে গেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘আমি আসার পর থেকে ব্যাংকে কোনো অনৈতিক লেনদেন হচ্ছে না।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

লাখে কর্মকর্তাদের দিতে হয় ২৫০০ টাকা

আপলোড টাইম : ১০:০৫:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ নভেম্বর ২০২০

ঝিনাইদহ রূপালী ব্যাংকে শিক্ষক ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ
ঝিনাইদহ অফিস:
ঝিনাইদহ রূপালী ব্যাংকে (কর্পোরেট শাখা) শিক্ষক ঋণ বিতরণে টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে হেড অফিসের দোহায় দিয়ে ব্যাংকের ঋণ শাখার কর্মকর্তা মো. ইদ্রীস আলী শিক্ষকদের কাছ থেকে লাখ প্রতি ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন। তবে ব্যাংক ম্যানেজার বলছেন, ‘হয়ত আগে নেওয়া হলেও আমি আসার পর থেকে কোনো টাকা আদায় করা হচ্ছে না। বরং ঋণ পেয়ে শিক্ষকরা বেজায় খুশি। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে শিক্ষকদের বেতনের বিপরীতে ৮০% হারে স্বল্প সুদে ৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকটি। ইতোমধ্যে ব্যাংকটি প্রায় ৩ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে সদর উপজেলার বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে।
ঋণ বিতরণ ও কমিশনের বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা মো. ইদ্রীস আলী বলেন, ‘আমরা বেসরকারি শিক্ষকদের বাড়ি মেরামত ও জমিক্রয় ইত্যাদির জন্য বেতনের ৮০% হারে ঋণ বিতরণ করছি।’ লাখে কত করে নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিবিএ খরচ, ভ্যাট, কাগজ প্রসেসিং ইত্যাদি বাবদ টাকা নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত টাকার কোনো রশিদ দেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন না, ‘আমরা কোনো রশিদ দিচ্ছি না।’ তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ম্যানেজার আমাদের যেভাবে বলেছেন, আমরা সেভাবেই টাকা আদায় করছি।’
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার প্রত্যেকটি বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের বিপরীতে ঋণ করেছে ঝিনাইদহ রূপালী। ঝিনাইদহ শহরের শিশুকুঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং চন্ডিপুর বিষ্ণুপদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রায় ২৫ জন শিক্ষক বেতনের বিপরীতে ঋণ গ্রহণ করেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই ব্যাংক কর্মকর্তা ইদ্রিস আলীকে লাখ প্রতি ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা কমিশন দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষ্ণুপদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষক জানান, তিনি দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এ জন্য ইদ্রিস আলীকে ২৫০০ টাকা কমিশন দিতে হয়েছে। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তসলিমা খাতুন বলেন, ‘এ রকম অনিয়মের কথা আমিও শুনেছি। কিন্তু আমরা জিজ্ঞাসা করলে শিক্ষকরা স্বীকার করেন না। ফলে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না।’ ঝিনাইদহের এক টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষকদের বেতনের বিপরীতে যে ঋণ বিতরণ হচ্ছে, তাতে রিস্ক নেই। তারপরও কেন ঘুষ নিচ্ছে, তা আমাদের বুঝে আসে না। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দীন জানান, ‘আমিও এমন অভিযোগ শুনেছি। তবে বর্তমান ম্যানেজার যোগদানের পর থেকে বিষয়টি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন।’
ব্যাংক ম্যানেজার মো. ইমদাদুল ইসলাম নূরানী গতকাল রোববার বিকেলে জানান, ‘এই শাখায় যারা কর্মরত, তাদের বেশির ভাগ স্থানীয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে আছেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা আমিও শুনেছি। তবে সার্কুলারের বাইরে তো টাকা নেওয়ার কথা নয়। সরকারের বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন গতকাল রোববার সকালে বিষয়টি তদন্ত করছে। তারা ব্যাংকের কার্যক্রম দেখে গেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘আমি আসার পর থেকে ব্যাংকে কোনো অনৈতিক লেনদেন হচ্ছে না।’