ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আর কত অপেক্ষা?

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৫১:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৮
  • / ২৭৯ বার পড়া হয়েছে

বৃহস্পতিবার থেকে বহুল প্রত্যাশিত রোহিঙ্গাদের তাদের স্বীয় জন্মভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের কথা। আজ ১৫০ জনের একটি দলকে মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করার কথা। কিন্তু রোহিঙ্গদের প্রত্যাবাসনের সময় দেখা গেল তারা সেখানে জীবনে নিরাপত্তা না পেলে যেতে আগ্রহী নয়। প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গা এ সময় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আগে নিরাপত্তার দাবি করছে। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টেকনাফের কেরুনতলী ট্রানজিট ঘাট এবং নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ঘাট দুটিতে দেখা গেছে সেখানে প্রত্যাবাসনের জন্য কোনো রোহিঙ্গা নাই। টেকনাফের ঘাটে কয়েকজন আনসার সদস্য ট্রানজিট ক্যাম্পটি পাহারা দিচ্ছেন। নাফ নদীতে রোহিঙ্গা পারাপারের কোনো নৌকা বা ট্রলারও দেখা যায়নি। প্রত্যাবাসন করতে হলে এখান থেকে নৌকা নিয়ে পাঁচ কিলোমিটার নদী পার হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে নিতে হবে। ওদিকে ঘুমধুম সীমান্তে ট্রানজিট ক্যাম্পটিও ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা যায়। এখান থেকে স্থলপথে বাংলাদেশ–মিয়ানমার মৈত্রী সেতু পার হয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কথা। উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা সংখ্যা এখন ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৪। এর মধ্যে গত বছরের ২৫ আগস্টের পর এসেছে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা চলে আসছিল। প্রথমে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করতে অস্বীকার করে তাদের ফেরত নিতে চায়নি। কিন্তু বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে জোরালো দাবি তুললে শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার সরকার বাধ্য হয়। গতকাল বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মাদ আবুল কালাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার দেয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান মিয়ানমারের অবস্থা প্রত্যাবাসনের অনুকূলে নয়। এমন এক সময় এই ঘোষণাটি দেয়া হল যখন মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ এমনিতেও জনবহুল একটি দেশ। তার ওপর মানবিক কারণে প্রায় বার লক্ষ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং ভরণ পোষণের সক্ষমতা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর একটি বড় চাপ বলে মনে করা হচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা মনে করি, বাংলাদেশ এই ভার বহন করতে পারবে না। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতির দুষ্টচক্রে পড়ে এই প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের এ দেশে চিরস্থায়ী করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে মনে হচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মিয়ানমারের মংডুতে রোহিঙ্গাদের ওপর ঘটে যাওয়া নৃশংস ঘটনায় যত না বিচলিত, তারও অধিক দেখছি তাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে চিন্তিত। আমরা এই সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে রোহিঙ্গাদের সফল প্রত্যাবাসন দেখতে চাই। আমরা মিয়ানমার ও বাংলাদেশের স্বাক্ষরিত চুক্তির বাস্তবায়ন দেখতে চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আর কত অপেক্ষা?

আপলোড টাইম : ১১:৫১:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

বৃহস্পতিবার থেকে বহুল প্রত্যাশিত রোহিঙ্গাদের তাদের স্বীয় জন্মভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের কথা। আজ ১৫০ জনের একটি দলকে মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করার কথা। কিন্তু রোহিঙ্গদের প্রত্যাবাসনের সময় দেখা গেল তারা সেখানে জীবনে নিরাপত্তা না পেলে যেতে আগ্রহী নয়। প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গা এ সময় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আগে নিরাপত্তার দাবি করছে। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টেকনাফের কেরুনতলী ট্রানজিট ঘাট এবং নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ঘাট দুটিতে দেখা গেছে সেখানে প্রত্যাবাসনের জন্য কোনো রোহিঙ্গা নাই। টেকনাফের ঘাটে কয়েকজন আনসার সদস্য ট্রানজিট ক্যাম্পটি পাহারা দিচ্ছেন। নাফ নদীতে রোহিঙ্গা পারাপারের কোনো নৌকা বা ট্রলারও দেখা যায়নি। প্রত্যাবাসন করতে হলে এখান থেকে নৌকা নিয়ে পাঁচ কিলোমিটার নদী পার হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে নিতে হবে। ওদিকে ঘুমধুম সীমান্তে ট্রানজিট ক্যাম্পটিও ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা যায়। এখান থেকে স্থলপথে বাংলাদেশ–মিয়ানমার মৈত্রী সেতু পার হয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কথা। উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা সংখ্যা এখন ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৪। এর মধ্যে গত বছরের ২৫ আগস্টের পর এসেছে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা চলে আসছিল। প্রথমে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করতে অস্বীকার করে তাদের ফেরত নিতে চায়নি। কিন্তু বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে জোরালো দাবি তুললে শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার সরকার বাধ্য হয়। গতকাল বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মাদ আবুল কালাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার দেয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান মিয়ানমারের অবস্থা প্রত্যাবাসনের অনুকূলে নয়। এমন এক সময় এই ঘোষণাটি দেয়া হল যখন মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ এমনিতেও জনবহুল একটি দেশ। তার ওপর মানবিক কারণে প্রায় বার লক্ষ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং ভরণ পোষণের সক্ষমতা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর একটি বড় চাপ বলে মনে করা হচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা মনে করি, বাংলাদেশ এই ভার বহন করতে পারবে না। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতির দুষ্টচক্রে পড়ে এই প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের এ দেশে চিরস্থায়ী করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে মনে হচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মিয়ানমারের মংডুতে রোহিঙ্গাদের ওপর ঘটে যাওয়া নৃশংস ঘটনায় যত না বিচলিত, তারও অধিক দেখছি তাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে চিন্তিত। আমরা এই সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে রোহিঙ্গাদের সফল প্রত্যাবাসন দেখতে চাই। আমরা মিয়ানমার ও বাংলাদেশের স্বাক্ষরিত চুক্তির বাস্তবায়ন দেখতে চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।