ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চার জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩১:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুন ২০২১
  • / ৫২ বার পড়া হয়েছে

জাল টাকা তৈরি ও ইয়াবা ব্যবসায় জঙ্গিরা, অর্থ আসে ছয় দেশ থেকে
সমীকরণ প্রতিবেদন:
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলছে চার জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা। মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস্তানসহ ছয় দেশ থেকে আসা টাকা দিয়ে ক্যাম্পগুলোতে পাতা হচ্ছে জঙ্গিবাদের জাল। শুধু তা-ই নয়, সংগঠনগুলোর সদস্যরা জাল নোট তৈরি এবং ইয়াবা ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়েছে। তাদের এমন কাজকর্মকে অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। সামরিক বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের উচিত মাথাচাড়া দেওয়ার আগে রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা। নইলে এসব সংগঠন বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে।’ পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলতে চান না প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা। তবে সম্প্রতি দেওয়া এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতার কথা। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়- রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানকারী আলেমদের টার্গেট করে কাজ করছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। তারা আলেমদের তুলে নিয়ে জঙ্গি সংগঠনগুলোর পক্ষে ‘ফতোয়া’ দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। যেসব আলেম তাদের মতের বিরোধিতা করেন, তাদের ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। এ ছাড়া জঙ্গি সংগঠনগুলো জাল নোট এবং ইয়াবা ব্যবসায় লগ্নি করছে। এ দুই খাত থেকে আসা টাকা-পয়সা সাংগঠনিক কাজে ব্যয় করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বর্তমানে চারটি জঙ্গি সংগঠন তৎপরতা চালাচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছে পুরনো দুই জঙ্গি সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইসলামী মাহাজ এবং জমিউয়তুল মুজাহিদীন নামে নতুন দুই সংগঠন। ৩২টি শরণার্থী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে ২৭টিতে রয়েছে আরসার আধিপত্য। এ সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন সৌদি আরবে বেড়ে ওঠা পাকিস্তানি নাগরিক আবু আম্মর জুনুনী ওরফে আতাউল্লাহ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রত্যেক ব্লকে রয়েছে এ সংগঠনের তৎপরতা। এ সংগঠন ‘ওলামা কাউন্সিল’, ‘ওলামা বোর্ড’, ‘মজলিসে আম’ এবং ‘আরকান আরমট’ এ পাঁচ শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে ক্যাম্পগুলোতে তৎপরতা চালাচ্ছে। আরসা ভেঙে নতুন আরেকটি গ্রুপ তৈরি করেছেন মুন্না নামে এক নেতা। আতাউল্লাহর এক সময়ের সহযোগী মুন্না আরসা থেকে বের হয়ে তৎপরতা চালাচ্ছেন ক্যাম্পের কিছু কিছু ব্লকে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তৎপর রয়েছে ইসলামী মাহাজ নামে আরেকটি সংগঠন। পাঁচ শরণার্থী ক্যাম্পে রয়েছে নতুন সংগঠনটির তৎপরতা। এ সংগঠনের নেপথ্যে রয়েছেন জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বার্মার কয়েকজন নেতা। এ সংগঠনের আমির শেখ সালামত নামে এক ব্যক্তি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তৎপর আরেক জঙ্গি সংগঠন ‘আরএসও’র নেতৃত্বে রয়েছেন দুই পাকিস্তানি নাগরিক হাফেজ সালাহুল ইসলাম এবং মাওলানা মোহাম্মদ আতাউল্লাহ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এ সংগঠনটি ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। জমিউয়তুল মুজাহিদীন নামে আরেকটি জঙ্গি সংগঠন তৎপরতা শুরু করেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এ সংগঠনটির নেপথ্যে রয়েছেন মাওলানা হানিফ রাগেব নামে এক ব্যক্তি। এ চার জঙ্গি সংগঠনের অর্থায়ন হয় সৌদি আরব, আরব আমিরাত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। মূলত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তৎপর বিভিন্ন এনজিও, হুন্ডির মাধ্যমে এসব দেশ থেকে আসা টাকা সংগঠনগুলোর কাছে পৌঁছানো হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চার জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা

আপলোড টাইম : ০৯:৩১:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুন ২০২১

জাল টাকা তৈরি ও ইয়াবা ব্যবসায় জঙ্গিরা, অর্থ আসে ছয় দেশ থেকে
সমীকরণ প্রতিবেদন:
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলছে চার জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা। মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস্তানসহ ছয় দেশ থেকে আসা টাকা দিয়ে ক্যাম্পগুলোতে পাতা হচ্ছে জঙ্গিবাদের জাল। শুধু তা-ই নয়, সংগঠনগুলোর সদস্যরা জাল নোট তৈরি এবং ইয়াবা ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়েছে। তাদের এমন কাজকর্মকে অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। সামরিক বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের উচিত মাথাচাড়া দেওয়ার আগে রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা। নইলে এসব সংগঠন বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে।’ পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলতে চান না প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা। তবে সম্প্রতি দেওয়া এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতার কথা। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়- রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানকারী আলেমদের টার্গেট করে কাজ করছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। তারা আলেমদের তুলে নিয়ে জঙ্গি সংগঠনগুলোর পক্ষে ‘ফতোয়া’ দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। যেসব আলেম তাদের মতের বিরোধিতা করেন, তাদের ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। এ ছাড়া জঙ্গি সংগঠনগুলো জাল নোট এবং ইয়াবা ব্যবসায় লগ্নি করছে। এ দুই খাত থেকে আসা টাকা-পয়সা সাংগঠনিক কাজে ব্যয় করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বর্তমানে চারটি জঙ্গি সংগঠন তৎপরতা চালাচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছে পুরনো দুই জঙ্গি সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইসলামী মাহাজ এবং জমিউয়তুল মুজাহিদীন নামে নতুন দুই সংগঠন। ৩২টি শরণার্থী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে ২৭টিতে রয়েছে আরসার আধিপত্য। এ সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন সৌদি আরবে বেড়ে ওঠা পাকিস্তানি নাগরিক আবু আম্মর জুনুনী ওরফে আতাউল্লাহ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রত্যেক ব্লকে রয়েছে এ সংগঠনের তৎপরতা। এ সংগঠন ‘ওলামা কাউন্সিল’, ‘ওলামা বোর্ড’, ‘মজলিসে আম’ এবং ‘আরকান আরমট’ এ পাঁচ শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে ক্যাম্পগুলোতে তৎপরতা চালাচ্ছে। আরসা ভেঙে নতুন আরেকটি গ্রুপ তৈরি করেছেন মুন্না নামে এক নেতা। আতাউল্লাহর এক সময়ের সহযোগী মুন্না আরসা থেকে বের হয়ে তৎপরতা চালাচ্ছেন ক্যাম্পের কিছু কিছু ব্লকে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তৎপর রয়েছে ইসলামী মাহাজ নামে আরেকটি সংগঠন। পাঁচ শরণার্থী ক্যাম্পে রয়েছে নতুন সংগঠনটির তৎপরতা। এ সংগঠনের নেপথ্যে রয়েছেন জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বার্মার কয়েকজন নেতা। এ সংগঠনের আমির শেখ সালামত নামে এক ব্যক্তি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তৎপর আরেক জঙ্গি সংগঠন ‘আরএসও’র নেতৃত্বে রয়েছেন দুই পাকিস্তানি নাগরিক হাফেজ সালাহুল ইসলাম এবং মাওলানা মোহাম্মদ আতাউল্লাহ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এ সংগঠনটি ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। জমিউয়তুল মুজাহিদীন নামে আরেকটি জঙ্গি সংগঠন তৎপরতা শুরু করেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এ সংগঠনটির নেপথ্যে রয়েছেন মাওলানা হানিফ রাগেব নামে এক ব্যক্তি। এ চার জঙ্গি সংগঠনের অর্থায়ন হয় সৌদি আরব, আরব আমিরাত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। মূলত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তৎপর বিভিন্ন এনজিও, হুন্ডির মাধ্যমে এসব দেশ থেকে আসা টাকা সংগঠনগুলোর কাছে পৌঁছানো হয়।