ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পাশে ভারত : মোদি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫২:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • / ৩৪২ বার পড়া হয়েছে

টেকনাফ-ঘুমধুমে ১২ রোহিঙ্গার লাশ : মিয়ানমারের দূতকে ডেকে ঢাকার প্রতিবাদ

সমীকরণ ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ ও বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত থেকে আরও ১২ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ-সংলগ্ন নাফ নদী থেকে পাঁচ শিশুসহ সাতজনের এবং ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা থেকে পাঁচ রোহিঙ্গার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে মোট ৭০ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হলো বাংলাদেশে। এ ছাড়া আরও দুই রোহিঙ্গা নারী বুধবার অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন মিয়ানমার সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক নেত্রী ও ডি ফ্যাক্টো সরকার প্রধান অং সান সু চির সঙ্গে বুধবার রাজধানী নেইপিদোয় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মোদি বলেন, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা নিয়ে মিয়ানমারের উদ্বেগ আমলে নিয়েছে ভারত। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী গড়ে ওঠা নিন্দা ও সমালোচনার ঝড়ে যখন শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চি কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে নেইপিদোর সরকারি অবস্থানকেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী সমর্থন জানালেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি দুই দিনের সরকারি সফরে মিয়ানমারে রয়েছেন।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অখ-তা এবং আঞ্চলিক ঐক্য বজায় রাখতে সব পক্ষকে সচেষ্ট হতে হবে। মোদি বলেন, ভারত মিয়ানমারের পাশে রয়েছে। রাখাইন প্রদেশে সেনা এবং সাধারণ মানুষের জীবনহানি নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যখন দেশটি একটি শান্তি প্রক্রিয়ায় আসছে অথবা সমস্যা সমাধানের পথে আছে, তখন আমরা চাই মিয়ানমারের ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের জন্য সব পক্ষ একসঙ্গে কাজ করবে। রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পাশাপাশি দেশটির উন্নয়নে হাত বাড়ানোর আশ্বাস দিয়ে মোদি বলেন, নেইপিদো যেসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তা মোকাবিলায় ভারত পাশে থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে সুচিও সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে ভারতকে পাশে পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন মোদি ও সু চি। প্রধানমন্ত্রী পদমর্যাদায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শক সু চি বলেন, ভারত ও মিয়ানমার একসঙ্গে নিশ্চিত করতে পারে, যেন কারো মাটিতে সন্ত্রাসীরা শেকড় গাঁড়তে না পারে। সম্প্রতি মিয়ানমার যে সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবিলা করছে, তার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ায় ভারতকে ধন্যবাদ জানান সু চি।
অপরদিকে, মিয়ানমারের দূতকে ডেকে প্রতিবাদ, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতা ও চলমান সেনা অভিযানের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার দুপুরের পরে ঢাকায় দেশটির ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত অং মিন্টকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে তার হাতে ‘পটেস্ট নোট’ ধরিয়ে দেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া উইংয়ের মহাপরিচালক মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী। পাশাপাশি অব্যাহত নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরত নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা সহিংসতার মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। অভিযানে ‘অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়’ বলপ্রয়োগ করায় ব্যাপক হারে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। ভীত-সন্ত্রস্ত রোহিঙ্গারা নজিরবিহীন সংখ্যায় বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, বাংলাদেশ এই সহিংসতার শিকার হতে পারে না (বাংলাদেশ শুড নট বি দ্য ভিকটিম)। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়ার দাবিও জানিয়েছে বাংলাদেশ। ওই রাজ্যে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থার অবাধ প্রবেশাধিকারও চাওয়া হয়েছে। নিপীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে ফেরত নেয়ারও দাবি জানি জানানো হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পাশে ভারত : মোদি

আপলোড টাইম : ০৯:৫২:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

টেকনাফ-ঘুমধুমে ১২ রোহিঙ্গার লাশ : মিয়ানমারের দূতকে ডেকে ঢাকার প্রতিবাদ

সমীকরণ ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ ও বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত থেকে আরও ১২ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ-সংলগ্ন নাফ নদী থেকে পাঁচ শিশুসহ সাতজনের এবং ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা থেকে পাঁচ রোহিঙ্গার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে মোট ৭০ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হলো বাংলাদেশে। এ ছাড়া আরও দুই রোহিঙ্গা নারী বুধবার অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন মিয়ানমার সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক নেত্রী ও ডি ফ্যাক্টো সরকার প্রধান অং সান সু চির সঙ্গে বুধবার রাজধানী নেইপিদোয় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মোদি বলেন, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা নিয়ে মিয়ানমারের উদ্বেগ আমলে নিয়েছে ভারত। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী গড়ে ওঠা নিন্দা ও সমালোচনার ঝড়ে যখন শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চি কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে নেইপিদোর সরকারি অবস্থানকেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী সমর্থন জানালেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি দুই দিনের সরকারি সফরে মিয়ানমারে রয়েছেন।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অখ-তা এবং আঞ্চলিক ঐক্য বজায় রাখতে সব পক্ষকে সচেষ্ট হতে হবে। মোদি বলেন, ভারত মিয়ানমারের পাশে রয়েছে। রাখাইন প্রদেশে সেনা এবং সাধারণ মানুষের জীবনহানি নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যখন দেশটি একটি শান্তি প্রক্রিয়ায় আসছে অথবা সমস্যা সমাধানের পথে আছে, তখন আমরা চাই মিয়ানমারের ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের জন্য সব পক্ষ একসঙ্গে কাজ করবে। রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পাশাপাশি দেশটির উন্নয়নে হাত বাড়ানোর আশ্বাস দিয়ে মোদি বলেন, নেইপিদো যেসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তা মোকাবিলায় ভারত পাশে থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে সুচিও সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে ভারতকে পাশে পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন মোদি ও সু চি। প্রধানমন্ত্রী পদমর্যাদায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শক সু চি বলেন, ভারত ও মিয়ানমার একসঙ্গে নিশ্চিত করতে পারে, যেন কারো মাটিতে সন্ত্রাসীরা শেকড় গাঁড়তে না পারে। সম্প্রতি মিয়ানমার যে সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবিলা করছে, তার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ায় ভারতকে ধন্যবাদ জানান সু চি।
অপরদিকে, মিয়ানমারের দূতকে ডেকে প্রতিবাদ, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতা ও চলমান সেনা অভিযানের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার দুপুরের পরে ঢাকায় দেশটির ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত অং মিন্টকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে তার হাতে ‘পটেস্ট নোট’ ধরিয়ে দেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া উইংয়ের মহাপরিচালক মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী। পাশাপাশি অব্যাহত নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরত নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা সহিংসতার মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। অভিযানে ‘অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়’ বলপ্রয়োগ করায় ব্যাপক হারে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। ভীত-সন্ত্রস্ত রোহিঙ্গারা নজিরবিহীন সংখ্যায় বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, বাংলাদেশ এই সহিংসতার শিকার হতে পারে না (বাংলাদেশ শুড নট বি দ্য ভিকটিম)। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়ার দাবিও জানিয়েছে বাংলাদেশ। ওই রাজ্যে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থার অবাধ প্রবেশাধিকারও চাওয়া হয়েছে। নিপীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে ফেরত নেয়ারও দাবি জানি জানানো হয়েছে।