ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রুপালি ইলিশের বছর

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:১১:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬
  • / ৩৮০ বার পড়া হয়েছে

image_1767_271269সমীকরণ ডেস্ক: ‘বড় বড় ইলিশ, খাইতে স্বাদ-দামে কম, দেইখ্যা-শুইন্যা-বাইছ্যা লন, শ্যাষ হইলে পাইবেন না’ ইত্যাদি সস্নোগানে বিদায়ী বছর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন জেলায় মাইকিং করে ইলিশ বিক্রি হয়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়ায় ছিল ইলিশের প্রাচুর্য। বিদায়ী বছরে সারা দেশেই ইলিশের সরবরাহ ছিল ব্যাপক। জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় সারা দেশেই এ নিয়ে উচ্ছ্বাস চলেছে বলা যায়। আগের বছরগুলোর তুলনায় দাম কম হওয়ায় মধ্যবিত্তের ঘরেও চলেছে ইলিশ খাওয়ার ধুম। জেলেরা বলেছেন, ১৯৯১ সালের পর এই বছরই সবচেয়ে বেশি ইলিশ আহরণ করা হয়েছে। আর মৎস্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, অনেক বছর পর বিদায়ী বছরে বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ আহরণে নতুন করে তালিকায় এসেছে দেশের আট জেলা। এই জেলাগুলোতে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার জেলে বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ আহরণ করছে। ১৯৮৩-৮৪ সালের পর থেকে ফিশারিজ রিসোর্স সার্ভে সিস্টেম কর্তৃক দেশে ইলিশ আহরণের সুনির্দিষ্ট রেকর্ড তৈরি শুরু হয়। সেই হিসাব থেকে দেখা যায়, গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে এই অঞ্চলে ইলিশের আহরণ ছিল এক থেকে দেড় লাখ টন। যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ আসত অভ্যন্তরীণ নদীগুলো থেকে। প্রথম পাঁচ-সাত বছর দেশের অভ্যন্তরীণ নদীগুলো থেকে সন্তোষজনক ইলিশ আহরণ হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। যেমন, ১৯৯১ সালে মোট এক লাখ ৮২ হাজার টন ইলিশ আহরণ করা হয়। এর মধ্যে ৬৬ হাজার টন ইলিশ আসে অভ্যন্তরীণ নদীগুলো থেকে। ক্রমান্বয়ে তা আরো কমতে থাকে। এই সময়গুলোতে মোট ইলিশ আহরণ বাড়লেও নদী থেকে আহরণ কমতে থাকে। ২০০৬-৭ সালে মোট দুই লাখ ৮০ হাজার টন ইলিশ আহরণ হয়। যার মাত্র ২৮ শতাংশ আসে নদীগুলো থেকে। ইলিশ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে ইলিশের দাম এবারের মতো কমেনি। আর ষাটের দশকের পর এবারের মতো ইলিশও জালে ধরা পড়েনি। যে কারণে এবার ইলিশ খেতে পেরেছে প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক বলেন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পরামর্শ মোতাবেক মা-ইলিশ সংরক্ষণের সময়সীমা ১৫ দিন থেকে বাড়িয়ে ২২ দিন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার কারণেই এ সাফল্য এসেছে। বর্তমান সরকার ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ‘ইলিশ ব্যবস্থাপনা কৌশল’ গ্রহণ করেছে। আর এই কৌশল হিসেবে ইলিশের অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা, প্রচার ও প্রকাশনা, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, বাজার পরিদর্শন, আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করেছে। এতে যেখানে সারা বিশ্বে ইলিশের উৎপাদন ক্রমহ্রাসমান, সেখানে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। ৯ অক্টোবর শুক্রবার রাত ১২টার পর ইলিশ শিকার শুরু করলে জেলেপল্লীতে বইতে থাকে আনন্দের জোয়ার, জেলেদের মুখে ফুটে ওঠে আনন্দের হাসি। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাব অনুযায়ী, যেখানে ইলিশের উৎপাদন ২০০৮-০৯ সালে ছিল ২ দশমিক ৯৯ লাখ মেট্রিক টন, সেখানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩ দশমিক ৮৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা আরও বৃদ্ধি পেয়ে উৎপাদন হয়েছে ৩২ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন। তবে সামনের বছর ইলিশের উৎপাদন কমপক্ষে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইলিশ গবেষকরা জানিয়েছেন, সরকারি উদ্যোগে জাটকা নিধন রোধ ও মা ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় এই সাফল্য এসেছে। বর্ষাকালকে ইলিশের মৌসুম বলা হয়। শীতে থাকে ইলিশের আকাল। কিন্তু বিদায়ী বছরের শীত মৌসুমেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ইলিশ। অসময়ে প্রচুর ইলিশ পাওয়ায় সরগরম চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাট। এখানকার ব্যবসায়ী সুমন মিয়া বলেন, বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান কালু জানান, বিদায়ী বছরে শীতের সময়েও ইলিশ বেশ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন আড়তে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ মণ ইলিশ। পটুয়াখালীর প্রধান ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র মহিপুর বন্দরের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিমাই চন্দ্র দাস জানান, দেশের মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করার লক্ষ্যে জেলেদের মাঝে আরো সচেতনতা তৈরির জন্য তারা কাজ করে যাবেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

রুপালি ইলিশের বছর

আপলোড টাইম : ১২:১১:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬

image_1767_271269সমীকরণ ডেস্ক: ‘বড় বড় ইলিশ, খাইতে স্বাদ-দামে কম, দেইখ্যা-শুইন্যা-বাইছ্যা লন, শ্যাষ হইলে পাইবেন না’ ইত্যাদি সস্নোগানে বিদায়ী বছর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন জেলায় মাইকিং করে ইলিশ বিক্রি হয়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়ায় ছিল ইলিশের প্রাচুর্য। বিদায়ী বছরে সারা দেশেই ইলিশের সরবরাহ ছিল ব্যাপক। জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় সারা দেশেই এ নিয়ে উচ্ছ্বাস চলেছে বলা যায়। আগের বছরগুলোর তুলনায় দাম কম হওয়ায় মধ্যবিত্তের ঘরেও চলেছে ইলিশ খাওয়ার ধুম। জেলেরা বলেছেন, ১৯৯১ সালের পর এই বছরই সবচেয়ে বেশি ইলিশ আহরণ করা হয়েছে। আর মৎস্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, অনেক বছর পর বিদায়ী বছরে বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ আহরণে নতুন করে তালিকায় এসেছে দেশের আট জেলা। এই জেলাগুলোতে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার জেলে বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ আহরণ করছে। ১৯৮৩-৮৪ সালের পর থেকে ফিশারিজ রিসোর্স সার্ভে সিস্টেম কর্তৃক দেশে ইলিশ আহরণের সুনির্দিষ্ট রেকর্ড তৈরি শুরু হয়। সেই হিসাব থেকে দেখা যায়, গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে এই অঞ্চলে ইলিশের আহরণ ছিল এক থেকে দেড় লাখ টন। যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ আসত অভ্যন্তরীণ নদীগুলো থেকে। প্রথম পাঁচ-সাত বছর দেশের অভ্যন্তরীণ নদীগুলো থেকে সন্তোষজনক ইলিশ আহরণ হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। যেমন, ১৯৯১ সালে মোট এক লাখ ৮২ হাজার টন ইলিশ আহরণ করা হয়। এর মধ্যে ৬৬ হাজার টন ইলিশ আসে অভ্যন্তরীণ নদীগুলো থেকে। ক্রমান্বয়ে তা আরো কমতে থাকে। এই সময়গুলোতে মোট ইলিশ আহরণ বাড়লেও নদী থেকে আহরণ কমতে থাকে। ২০০৬-৭ সালে মোট দুই লাখ ৮০ হাজার টন ইলিশ আহরণ হয়। যার মাত্র ২৮ শতাংশ আসে নদীগুলো থেকে। ইলিশ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে ইলিশের দাম এবারের মতো কমেনি। আর ষাটের দশকের পর এবারের মতো ইলিশও জালে ধরা পড়েনি। যে কারণে এবার ইলিশ খেতে পেরেছে প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক বলেন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পরামর্শ মোতাবেক মা-ইলিশ সংরক্ষণের সময়সীমা ১৫ দিন থেকে বাড়িয়ে ২২ দিন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার কারণেই এ সাফল্য এসেছে। বর্তমান সরকার ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ‘ইলিশ ব্যবস্থাপনা কৌশল’ গ্রহণ করেছে। আর এই কৌশল হিসেবে ইলিশের অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা, প্রচার ও প্রকাশনা, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, বাজার পরিদর্শন, আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করেছে। এতে যেখানে সারা বিশ্বে ইলিশের উৎপাদন ক্রমহ্রাসমান, সেখানে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। ৯ অক্টোবর শুক্রবার রাত ১২টার পর ইলিশ শিকার শুরু করলে জেলেপল্লীতে বইতে থাকে আনন্দের জোয়ার, জেলেদের মুখে ফুটে ওঠে আনন্দের হাসি। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাব অনুযায়ী, যেখানে ইলিশের উৎপাদন ২০০৮-০৯ সালে ছিল ২ দশমিক ৯৯ লাখ মেট্রিক টন, সেখানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩ দশমিক ৮৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা আরও বৃদ্ধি পেয়ে উৎপাদন হয়েছে ৩২ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন। তবে সামনের বছর ইলিশের উৎপাদন কমপক্ষে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইলিশ গবেষকরা জানিয়েছেন, সরকারি উদ্যোগে জাটকা নিধন রোধ ও মা ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় এই সাফল্য এসেছে। বর্ষাকালকে ইলিশের মৌসুম বলা হয়। শীতে থাকে ইলিশের আকাল। কিন্তু বিদায়ী বছরের শীত মৌসুমেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ইলিশ। অসময়ে প্রচুর ইলিশ পাওয়ায় সরগরম চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাট। এখানকার ব্যবসায়ী সুমন মিয়া বলেন, বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান কালু জানান, বিদায়ী বছরে শীতের সময়েও ইলিশ বেশ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন আড়তে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ মণ ইলিশ। পটুয়াখালীর প্রধান ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র মহিপুর বন্দরের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিমাই চন্দ্র দাস জানান, দেশের মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করার লক্ষ্যে জেলেদের মাঝে আরো সচেতনতা তৈরির জন্য তারা কাজ করে যাবেন।