ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ; ইউরোপে নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২
  • / ৮ বার পড়া হয়েছে

রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্ববাসীর উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। অপেক্ষাকৃত ছোট ও নিরস্ত্র দেশগুলো জাতিসঙ্ঘে সে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিবদমান পক্ষগুলোর কোনোটির প্রতি অবস্থান গ্রহণ নয়; বরং তাদের নিজেদের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তারই প্রভাব পড়েছে বিশ্বের অস্ত্রের বাজারে। এই প্রতিযোগিতা বিগত কয়েক দশকে বড় দেশগুলোর মধ্যে থেকেছে। এসব দেশের মধ্যে অস্ত্র উৎপাদন, সংগ্রহ ও রফতানি সীমাবদ্ধ ছিল। এখন সেটিা বড় আকারে ছোট-বড় সব দেশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল, ইউরোপ শান্তি ও সমৃদ্ধির মহাদেশে পরিণত হয়েছে এবং তারা নিজেরা আবার কোনো যুদ্ধে জড়াবে না। সেখানেই শুরু হয়েছে অস্ত্র সংগ্রহের নতুন প্রতিযোগিতা। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সামরিক ব্যয়-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিয়মিত। প্রতিষ্ঠানটি বছর বছর বৈশ্বিক অস্ত্রের আমদানি-রফতানি প্রবণতা বিশ্লেষণ করে। তাদের হিসাবে ২০১৯ সালে সামরিক খাতে বৈশ্বিক ব্যয় ছিল এক হাজার ৯১৭ বিলিয়ন ডলার। তাদের মতে, তিন দশকের মধ্যে ওই বছরটি সবচেয়ে বেশি সামরিক ব্যয় হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে- চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোর সামরিক খাতে বিপুল ব্যয় বাড়িয়ে দেয়া। শতাংশের হিসাবে এই সময়ে সামরিক ব্যয় বেড়েছে ভারতের সবচেয়ে বেশি- ২৫৯ শতাংশ। সামরিক ব্যয়ের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র্র ও চীনের পরই তৃতীয় হিসেবে ভারতের নাম উঠে এসেছে। এই প্রতিযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব বরাবরই তালিকার উপরের দিকে ছিল। তবে এই দেশটি অস্ত্র কেবল আমদানিই করে যাচ্ছে। সুইডেন-ভিত্তিক অন্য একটি প্রতিষ্ঠান স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কিভাবে অস্ত্রবাণিজ্য বাড়ছে। তাদের গষেণায় দেখা যাচ্ছে, ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল- এই পাঁচ বছরে তার আগের পাঁচ বছরের তুলনায় অস্ত্রবাণিজ্য বেড়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্য দিকে ২০১৪ সালের পরের পাঁচ বছরে তা বেড়েছে আরো ২০ শতাংশ। এই সময় দেখা গেল সৌদি আরব ও ভারতের পর বেশি অস্ত্র আমদানি করেছে মিসর, অস্ট্রেলিয়া ও চীন। এই দেশগুলোর মধ্যে চীন নিজেই এশিয়ায় বৃহৎ অস্ত্র রফতানিকারক দেশ। অস্ত্র রফতানিতে তালিকার শীষে রয়েছে যথাক্রমে- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানি। তারপরই রয়েছে চীনের অবস্থান। ভারতের পর এশিয়ার বড় অস্ত্র আমদানিকারক দক্ষিণ কোরিয়া। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের মতো দেশগুলোও অস্ত্র আমদানি করে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ দরিদ্রতা সত্ত্বেও অস্ত্র সংগ্রহের প্রতি উৎসাহ রয়েছে। মূলত অস্ত্র আমদানি ও সংগ্রহের প্রতি ঝোঁক দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রো ডলারের মালিক কয়েকটি দেশে। ইউক্রেন নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে এই যাত্রায় নতুন করে ঝুঁকছে ইউরোপের দেশগুলো। এ যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বলছে, প্রতিপক্ষের কাছে টেকসই অস্ত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ যুদ্ধে রাশিয়া কতটা ইউক্রেনকে ধরাশায়ী করতে পারবে তা নির্ভর করছে ইউক্রেনের সেনা ও স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে কতটা যুতসই অস্ত্র রয়েছে তার ওপর। ট্যাংক-বিধ্বংসী একটি হালকা ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবহার করেছে। রাশিয়ান ট্যাংকগুলোকে ইউক্রেন এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে নাস্তানাবুদ করছে। এর সরবরাহ পেয়েছে তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে।। খবর বেরিয়েছে, রাশিয়া অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এ খবরের সত্যতা জানা যায়নি। তবে অস্ত্রই যে যুদ্ধের নির্ধারক হয়ে উঠছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ইউক্রেন অভিযানের পর সামরিক শক্তি বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো। সামরিক ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের পুরনো শক্তিধর দেশ জার্মানি। একই যাত্রায় তাদের সাথে রয়েছে অনেকটা শান্তিপ্রিয় ইউরোপীয় দেশ ডেনমার্ক ও সুইডেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসআইপিআরআইয়ের একজন গবেষক জানান, ইউরোপ অস্ত্র সংগ্রহের নতুন কেন্দ্র হচ্ছে। এ অঞ্চলের দেশগুলো সামরিক ব্যয় ব্যাপকভাবে বাড়াচ্ছে। সবার এখন নতুন অস্ত্র দরকার। হঠাৎ করে মানসিকতার এমন পরিবর্তনের পেছনে যৌক্তিক কারণ রয়েছে। দেশগুলো মনে করছে, তাদের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার একমাত্র রক্ষাকবচ নিজেদের হাতে থাকা উন্নতমানের টেকসই অস্ত্র। অথচ এ ধরনের একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি বিশ্বের জন্য কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত হতে পারে না। আমরা মনে করি, দেশগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে বৈশ্বিক নেতাদের ভাবা উচিত। হুমকি-ধমকি দিয়ে এ অবস্থার উন্নতি হবে না। অস্ত্র দিয়ে প্রকৃতপক্ষে কারো নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না; বরং এতে সবার নিরাপত্তা আরো বেশি হুমকির মধ্যে পড়বে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ; ইউরোপে নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা

আপলোড টাইম : ০৯:০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২

রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্ববাসীর উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। অপেক্ষাকৃত ছোট ও নিরস্ত্র দেশগুলো জাতিসঙ্ঘে সে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিবদমান পক্ষগুলোর কোনোটির প্রতি অবস্থান গ্রহণ নয়; বরং তাদের নিজেদের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তারই প্রভাব পড়েছে বিশ্বের অস্ত্রের বাজারে। এই প্রতিযোগিতা বিগত কয়েক দশকে বড় দেশগুলোর মধ্যে থেকেছে। এসব দেশের মধ্যে অস্ত্র উৎপাদন, সংগ্রহ ও রফতানি সীমাবদ্ধ ছিল। এখন সেটিা বড় আকারে ছোট-বড় সব দেশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল, ইউরোপ শান্তি ও সমৃদ্ধির মহাদেশে পরিণত হয়েছে এবং তারা নিজেরা আবার কোনো যুদ্ধে জড়াবে না। সেখানেই শুরু হয়েছে অস্ত্র সংগ্রহের নতুন প্রতিযোগিতা। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সামরিক ব্যয়-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিয়মিত। প্রতিষ্ঠানটি বছর বছর বৈশ্বিক অস্ত্রের আমদানি-রফতানি প্রবণতা বিশ্লেষণ করে। তাদের হিসাবে ২০১৯ সালে সামরিক খাতে বৈশ্বিক ব্যয় ছিল এক হাজার ৯১৭ বিলিয়ন ডলার। তাদের মতে, তিন দশকের মধ্যে ওই বছরটি সবচেয়ে বেশি সামরিক ব্যয় হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে- চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোর সামরিক খাতে বিপুল ব্যয় বাড়িয়ে দেয়া। শতাংশের হিসাবে এই সময়ে সামরিক ব্যয় বেড়েছে ভারতের সবচেয়ে বেশি- ২৫৯ শতাংশ। সামরিক ব্যয়ের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র্র ও চীনের পরই তৃতীয় হিসেবে ভারতের নাম উঠে এসেছে। এই প্রতিযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব বরাবরই তালিকার উপরের দিকে ছিল। তবে এই দেশটি অস্ত্র কেবল আমদানিই করে যাচ্ছে। সুইডেন-ভিত্তিক অন্য একটি প্রতিষ্ঠান স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কিভাবে অস্ত্রবাণিজ্য বাড়ছে। তাদের গষেণায় দেখা যাচ্ছে, ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল- এই পাঁচ বছরে তার আগের পাঁচ বছরের তুলনায় অস্ত্রবাণিজ্য বেড়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্য দিকে ২০১৪ সালের পরের পাঁচ বছরে তা বেড়েছে আরো ২০ শতাংশ। এই সময় দেখা গেল সৌদি আরব ও ভারতের পর বেশি অস্ত্র আমদানি করেছে মিসর, অস্ট্রেলিয়া ও চীন। এই দেশগুলোর মধ্যে চীন নিজেই এশিয়ায় বৃহৎ অস্ত্র রফতানিকারক দেশ। অস্ত্র রফতানিতে তালিকার শীষে রয়েছে যথাক্রমে- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানি। তারপরই রয়েছে চীনের অবস্থান। ভারতের পর এশিয়ার বড় অস্ত্র আমদানিকারক দক্ষিণ কোরিয়া। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের মতো দেশগুলোও অস্ত্র আমদানি করে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ দরিদ্রতা সত্ত্বেও অস্ত্র সংগ্রহের প্রতি উৎসাহ রয়েছে। মূলত অস্ত্র আমদানি ও সংগ্রহের প্রতি ঝোঁক দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রো ডলারের মালিক কয়েকটি দেশে। ইউক্রেন নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে এই যাত্রায় নতুন করে ঝুঁকছে ইউরোপের দেশগুলো। এ যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বলছে, প্রতিপক্ষের কাছে টেকসই অস্ত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ যুদ্ধে রাশিয়া কতটা ইউক্রেনকে ধরাশায়ী করতে পারবে তা নির্ভর করছে ইউক্রেনের সেনা ও স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে কতটা যুতসই অস্ত্র রয়েছে তার ওপর। ট্যাংক-বিধ্বংসী একটি হালকা ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবহার করেছে। রাশিয়ান ট্যাংকগুলোকে ইউক্রেন এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে নাস্তানাবুদ করছে। এর সরবরাহ পেয়েছে তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে।। খবর বেরিয়েছে, রাশিয়া অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এ খবরের সত্যতা জানা যায়নি। তবে অস্ত্রই যে যুদ্ধের নির্ধারক হয়ে উঠছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ইউক্রেন অভিযানের পর সামরিক শক্তি বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো। সামরিক ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের পুরনো শক্তিধর দেশ জার্মানি। একই যাত্রায় তাদের সাথে রয়েছে অনেকটা শান্তিপ্রিয় ইউরোপীয় দেশ ডেনমার্ক ও সুইডেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসআইপিআরআইয়ের একজন গবেষক জানান, ইউরোপ অস্ত্র সংগ্রহের নতুন কেন্দ্র হচ্ছে। এ অঞ্চলের দেশগুলো সামরিক ব্যয় ব্যাপকভাবে বাড়াচ্ছে। সবার এখন নতুন অস্ত্র দরকার। হঠাৎ করে মানসিকতার এমন পরিবর্তনের পেছনে যৌক্তিক কারণ রয়েছে। দেশগুলো মনে করছে, তাদের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার একমাত্র রক্ষাকবচ নিজেদের হাতে থাকা উন্নতমানের টেকসই অস্ত্র। অথচ এ ধরনের একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি বিশ্বের জন্য কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত হতে পারে না। আমরা মনে করি, দেশগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে বৈশ্বিক নেতাদের ভাবা উচিত। হুমকি-ধমকি দিয়ে এ অবস্থার উন্নতি হবে না। অস্ত্র দিয়ে প্রকৃতপক্ষে কারো নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না; বরং এতে সবার নিরাপত্তা আরো বেশি হুমকির মধ্যে পড়বে।