রাত পোহালেই তিতুদহ ইউনিয়নে ভোট : মামা-ভাগ্নেতে জমবে লড়াই
- আপলোড টাইম : ০২:২৪:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২
- / ৯ বার পড়া হয়েছে
প্রচার-প্রচারণার শেষ দিনে নির্বাচনী মাঠে প্রার্থীরা সরব, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের গণবিজ্ঞপ্তি জারি
আকিমুল ইসলাম, তিতুদহ:
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সকল প্রকার প্রচার-প্রচারণা বন্ধ হয়েছে। রাত পোহালেই অর্থাৎ আগামীকাল সোমবার তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের সকল প্রকার প্রস্তুতিও ইতঃমধ্যে শেষ করেছে নির্বাচন অফিস। তবে শেষ দিনে প্রার্থীরা মাঠে বেশ সরব ছিলেন। শেষদিনে প্রত্যেক প্রার্থীই ছুটেছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। শেষ সময়টুকু কাজে লাগাতে দেখা গেছে প্রত্যেক মেম্বার ও সংরক্ষিত নারী প্রার্থীদেরও। কোথাও কোথাও দেখা গেছে, ঝটিকা মিছিল, আবার কোথাও কোথাও ছোট ছোট আলোচনা ও পথসভা।
এবারের তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১০ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৪১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান হিসেবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শুকুর আলি নৌকা প্রতীকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান টিপু আনারস প্রতীকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক হোসেন (ঘোড়া) ও ইসলামী আন্দোলনের আব্দুর রাজ্জাক (হাতপাখা) প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। সব প্রার্থীই ভোটারদের নিকট ভোট প্রার্থনা করছেন। তবে সাধারণ ভোটারদের মুখে মুখে আলোচনা এবার লড়াই হবে মামা-ভাগ্নেতে। অর্থাৎ নৌকা প্রতীকে শুকুর আলী ও আনরস প্রতীকে টিপু মিয়ার মধ্যে। কারণ তারা সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে। এছাড়া নির্বাচনী মাঠে তাদের আধিপত্য বেশি। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনী প্রচারণায় নৌকা এবং আনারস বেশি এগিয়ে। তাঁদের মধ্যেই হয়তোবা কেউ হতে পারেন আগামীর তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তবে আরো দুজন প্রার্থী হাতপাখা ও ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীরাও প্রচার-প্রচারণায় পিছিয়ে নেই।
এদিকে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। আজ রোববার (৬ জানুয়ারী) ভোট কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হবে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি। এছাড়া কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নির্বাচনী এলাকায় জোর টহল দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিধি অনুযায়ী কোনো নির্বাচনী এলাকার ভোট গ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৩২ ঘণ্টা, নির্বাচনী এলাকায় কোনো জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করতে বা তাতে অংশ নিতে পারবে না। ওই সময়ে কোনো আক্রমণাত্মক কাজ বা বিশৃঙ্খলামূলক আচরণ করতে পারবে না। ভোটার বা নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত বা দায়িত্বরত কোনো ব্যক্তিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না। কোনো অস্ত্র বা শক্তিও প্রদর্শন বা ব্যবহার করতে পারবেন না কেউ।
এদিকে, বিধি অনুযায়ী যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান। সবধরনের ইঞ্জিনচালিত যানবাহন (মোটরসাইকেল, বেবি ট্যাক্সি, মাইক্রোবাস, জীপ, ট্রাক, পিকআপ) চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে, নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বহনকারী গাড়ি, মহাসড়কে চলাচলকারী দূরপাল্লার গাড়ি, বন্দর ও জরুরি পণ্য পরিবহনের গাড়ি নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়া প্রার্থী ও তার এজেন্টদের গাড়ি, সাংবাদিক, নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের গাড়ি, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিযোগাযোগ ও ডাকের গাড়ির ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। জরুরি প্রয়োজনে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে ব্যক্তিগত গাড়িও চলতে পারবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ‘আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে সকল প্রকার প্রচার-প্রচারণা বন্ধ হয়েছে শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে। নির্বাচনী এলাকায় কোনো জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করতে পারবে না।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আহমেমদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। আজ রোববার কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। নির্বাচনের দিন প্রত্যেক কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবেন।
তিতুদহের ৯টি ওয়ার্ডের ১০টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে:
তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে ১০টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৬ হাজার ৭৪ জন। চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১ হাজার ৬৫১ জন, গিরিশনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১ হাজার ৪১১ জন, ৬২ নং আড়িয়াসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১ হাজার ২৪১ জন, ছোটশলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ হাজার ৫৬৫ জন, বলদিয়া সিদ্দিকিয়া নুরানী ও হাফিজিয়া লিল্লাহ বোডিং কেন্দ্রে ১ হাজার ৫১৩ জন, আরাফাত হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১ হাজার ২০৪ জন, বড়শলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১ হাজার ৯৯৪ জন, বড়শলুয়া উত্তর পাড়া কেন্দ্রের ১ হাজার ৫৪৮ জন, হুলিয়ামারী হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ১ হাজার ৩২৪ জন ও তিতুদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১ হাজার ৬২৩ জন ভোটার অংশগ্রহণ করবে। ইউনিয়নে মোট পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ১৬০ জন ও মহিলা ভোটার রয়েছে ৭ হাজার ৯১৪ জন।