ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রাতে গাঢ় কুয়াশা, দিনেও কাঁপছে মানুষ, দুর্বিষহ জীবনযাত্রা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৫:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২০
  • / ১৮২ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, অব্যাহত থাকতে পারে আরও দুই-তিন দিন

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শীতজনিত কারণে প্রতিদিন শিশুসহ চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় ৩ শতাধিক রোগী
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঘন কুয়াশার আড়ালে সূর্য ঢাকা না থাকলেও হাড় কাপানো হিমেল হাওয়া বইছে সারাদিন। রাতের তাপমাত্রার পারদও নেমে গেছে অনেকটা। চুয়াডাঙ্গায় মাঝখানে কয়েকদিন একটু কম শীত থাকলেও গত দুই-তিন দিন যাবৎ দিন এবং রাতের বেলায় তাপমাত্রার পার্থক্য কমে গেছে খুবই অস্বাভাবিক পর্যায়ে। তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং ওঠা-নামার কারণে হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতে গাঢ় কুয়াশা ও আকাশ মেঘলা, সেই সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর দিক থেকে হিমেল হাড় কনকনে হাওয়া বইছে চুয়াডাঙ্গায়। এ অবস্থায় চুয়াডাঙ্গার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। দিনের বেলায়ও কাঁপছে মানুষ, ঘন কুয়াশা না থাকলেও হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেশ বেশি। যা আজও অব্যাহত থাকার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত এক সপ্তাহে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতলে জরুরি বিভাগ, অন্তবিভাগ ও বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ২ হাজরের অধিক রোগী। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু।
গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হযেছেন ১৫ জন এবং আগের রোগি ছিলেন ১৮জন। ডায়েরিয়া ওয়ার্ডে গতকাল ২০ জন ভর্তি হয়েছেন এবং আগের ভর্তি ছিলেন ৩০জন। এক সপ্তাহে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৫ জন নিউমোনিয়াসহ ১৩০ শিশু, কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১২০ জন শিশু, ১৫ জন পুরুষ, ৪৪ নারীসহ ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ১৮০ জন, জ্বর, সর্দি-কাশি, হাইপার টেনশন, শ্বাস কষ্ট, পেটেরপীড়াসহ সাত দিনে হাসপাতলের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৩০ জন ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন আরো ২২ জন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাপতলে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত চিকিৎসাধিন রোগীর সংখ্যা ৮৩ জন। এছাড়াও জরুরি বিভাগ ও বর্হিবিভাগ থেকে প্রতিদিন গড়ে শিশুসহ চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় ৩ শতাধিক রোগী।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শামীম কবির জানান, শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাইপার টেনশন, শ্বাস কষ্ট, ডায়রিয়া, পেটেরপীড়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়ছে। শীতের তীব্রতা বাড়ায় শীতজনিত রোগের শিকার বেশি হয়েছে শিশুরা।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান জানান, শীত বাড়লেই শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। শীতজনিত জনিত রোগে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক সামাদুল হক জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় তাপমাত্রার পারদ কিছুটা বাড়লে শীতল হাওয়া বয়ে যাওয়ায় শীতের মাত্রা বেশি অনুভুত হচ্ছে। সোমবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বম্নি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশ অঞ্চল দিয়ে যে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা আরও দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
শুধু চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে নয়, রাতে-দিনে তীব্র হীমেল হাওয়া এখন দেশজুড়ে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে থমকে গেছে স্বাভাবিক জনজীবনের গতি। কুয়াশার সঙ্গে ধূলোবালি, ধোঁয়ায় দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধিতে মানুষ ঘরে ঘরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর ভিড়। সড়ক-মহাসড়ক, নৌ ও রেলপথে যানবাহনের গতি থমকে গেছে। বেড়েছে ঝুঁকি। আকাশপথেও বিলম্বে ছাড়ছে ফ্লাইট। সর্বত্র মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট ও অপচয় ঘটছে বৈরি আবহাওয়ায়।
এদিকে উত্তর-পশ্চিম দিকে থেকে আসা হিমালয়ের হিমেল কনকনে হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় সর্বত্র মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। পৌষ মাসের প্রথম তিন দিন পর টানা প্রায় তিন সপ্তাহেরও বেশিদিন যাবৎ শীতের দাপটে দেশজুড়ে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন, কর্মজীবী মানুষের আয়-রোজগার ও কর্মচাঞ্চল্য, মালামাল ডেলিভারি পরিবহন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা, গ্রামীণ অর্থনীতি, কৃষি-খামারসহ সর্বক্ষেত্রে স্থবিরতা বিরাজ করছে। প্রায় মাসজুড়ে শীতকষ্টে দিশেহারা হয়ে পড়েছে দিনে এনে দিনে খাওয়া হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষজন। সকালবেলায় শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের স্কুল-মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া ব্যাহত হচ্ছে। আবার অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

রাতে গাঢ় কুয়াশা, দিনেও কাঁপছে মানুষ, দুর্বিষহ জীবনযাত্রা

আপলোড টাইম : ১০:৩৫:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২০

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, অব্যাহত থাকতে পারে আরও দুই-তিন দিন

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শীতজনিত কারণে প্রতিদিন শিশুসহ চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় ৩ শতাধিক রোগী
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঘন কুয়াশার আড়ালে সূর্য ঢাকা না থাকলেও হাড় কাপানো হিমেল হাওয়া বইছে সারাদিন। রাতের তাপমাত্রার পারদও নেমে গেছে অনেকটা। চুয়াডাঙ্গায় মাঝখানে কয়েকদিন একটু কম শীত থাকলেও গত দুই-তিন দিন যাবৎ দিন এবং রাতের বেলায় তাপমাত্রার পার্থক্য কমে গেছে খুবই অস্বাভাবিক পর্যায়ে। তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং ওঠা-নামার কারণে হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতে গাঢ় কুয়াশা ও আকাশ মেঘলা, সেই সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর দিক থেকে হিমেল হাড় কনকনে হাওয়া বইছে চুয়াডাঙ্গায়। এ অবস্থায় চুয়াডাঙ্গার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। দিনের বেলায়ও কাঁপছে মানুষ, ঘন কুয়াশা না থাকলেও হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেশ বেশি। যা আজও অব্যাহত থাকার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত এক সপ্তাহে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতলে জরুরি বিভাগ, অন্তবিভাগ ও বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ২ হাজরের অধিক রোগী। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু।
গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হযেছেন ১৫ জন এবং আগের রোগি ছিলেন ১৮জন। ডায়েরিয়া ওয়ার্ডে গতকাল ২০ জন ভর্তি হয়েছেন এবং আগের ভর্তি ছিলেন ৩০জন। এক সপ্তাহে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৫ জন নিউমোনিয়াসহ ১৩০ শিশু, কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১২০ জন শিশু, ১৫ জন পুরুষ, ৪৪ নারীসহ ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ১৮০ জন, জ্বর, সর্দি-কাশি, হাইপার টেনশন, শ্বাস কষ্ট, পেটেরপীড়াসহ সাত দিনে হাসপাতলের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৩০ জন ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন আরো ২২ জন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাপতলে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত চিকিৎসাধিন রোগীর সংখ্যা ৮৩ জন। এছাড়াও জরুরি বিভাগ ও বর্হিবিভাগ থেকে প্রতিদিন গড়ে শিশুসহ চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় ৩ শতাধিক রোগী।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শামীম কবির জানান, শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাইপার টেনশন, শ্বাস কষ্ট, ডায়রিয়া, পেটেরপীড়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়ছে। শীতের তীব্রতা বাড়ায় শীতজনিত রোগের শিকার বেশি হয়েছে শিশুরা।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান জানান, শীত বাড়লেই শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। শীতজনিত জনিত রোগে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক সামাদুল হক জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় তাপমাত্রার পারদ কিছুটা বাড়লে শীতল হাওয়া বয়ে যাওয়ায় শীতের মাত্রা বেশি অনুভুত হচ্ছে। সোমবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বম্নি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশ অঞ্চল দিয়ে যে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা আরও দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
শুধু চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে নয়, রাতে-দিনে তীব্র হীমেল হাওয়া এখন দেশজুড়ে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে থমকে গেছে স্বাভাবিক জনজীবনের গতি। কুয়াশার সঙ্গে ধূলোবালি, ধোঁয়ায় দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধিতে মানুষ ঘরে ঘরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর ভিড়। সড়ক-মহাসড়ক, নৌ ও রেলপথে যানবাহনের গতি থমকে গেছে। বেড়েছে ঝুঁকি। আকাশপথেও বিলম্বে ছাড়ছে ফ্লাইট। সর্বত্র মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট ও অপচয় ঘটছে বৈরি আবহাওয়ায়।
এদিকে উত্তর-পশ্চিম দিকে থেকে আসা হিমালয়ের হিমেল কনকনে হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় সর্বত্র মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। পৌষ মাসের প্রথম তিন দিন পর টানা প্রায় তিন সপ্তাহেরও বেশিদিন যাবৎ শীতের দাপটে দেশজুড়ে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন, কর্মজীবী মানুষের আয়-রোজগার ও কর্মচাঞ্চল্য, মালামাল ডেলিভারি পরিবহন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা, গ্রামীণ অর্থনীতি, কৃষি-খামারসহ সর্বক্ষেত্রে স্থবিরতা বিরাজ করছে। প্রায় মাসজুড়ে শীতকষ্টে দিশেহারা হয়ে পড়েছে দিনে এনে দিনে খাওয়া হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষজন। সকালবেলায় শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের স্কুল-মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া ব্যাহত হচ্ছে। আবার অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।