ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রাতারাতি হারিয়ে গেল রোগীর ডকুমেন্ট

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৩:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / ৩৬৬ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা দেশ ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গার সদর হাসপাতালের পেছনে অবস্থিত দেশ ক্লিনিকে ডা. জুয়েল ইমরানের ভুল চিকিৎসা ও ক্লিনিক মালিকের অবহেলার কারণে আহরণ খাতুন (৩০) নামের এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মৃত্যুর পর ক্লিনিক মালিক কৌশলে নিহত রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রাজশাহী পাঠিয়ে দিলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার রোগী অনেক আগেই মারা গেছেন বলে জানান। তবে ক্লিনিক মালিক শান্ত ওই রোগীর অপারেশন দেশ ক্লিনিকে হয়নি বলে জানিয়ে বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। এমনকি ক্লিনিকের এন্ট্রি খাতা থেকেও নিহত রোগীর নাম-ঠিকানা সরিয়ে ফেলেছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় ঘটনাটি মীমাংসা করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে নিহত আহরণ খাতুনের চাচা আশা বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র গ্রামের আইজেল আলীর মেয়ে আহরণ খাতুন গলার টনসিল অপারেশন করার জন্য দেশ ক্লিনিকে ভর্তি হন। রাত ১০টার দিকে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডা. জুয়েল ইমরান তাঁর অপারেশন করেন। এরপর রাত চারটার দিকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক জানিয়ে নিজেরাই তাড়িঘড়ি করে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রোগীকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে নেওয়ার পর সেখানকার ডাক্তারেরা রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ঘটনাটি রোগীর পরিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছে, এ খবর জানতে পেরে অভিযুক্তরা রোগীর পরিবারের লোকজনকে চাপ দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন রোগীর চাচা। রোগীর লাশ গতকাল শুক্রবার রাতে গ্রামের পৌছায় বলে জানা গেছে।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের কয়েকজন বলেন, ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। অভিযুক্ত ডাক্তারের বাড়ি ওই এলাকায় হওয়ায় তাঁরা প্রভাব খাটিয়ে মেম্বারদের দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করেছে। তাঁরা বরেন, এ জন্য প্রথমে মুখ খুললেও পরে ভয়ে আর কেউ মুখ খুলছেন না।
তবে ক্লিনিক মালিক শান্ত ঘটনাটি অস্বীকার করে বলেন, ‘ওই রোগী আমার ক্লিনিকে আপারেশন করায়নি। ক্লিনিক থেকে রাতে কোনো রোগীকে রাজশাহীতে নেওয়াও হয়নি।’ তবে যে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রোগীকে রাজশাহী নেওয়া হয়েছিল, ওই অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষ দেশ ক্লিনিক থেকে ওই রোগীকে রাতে রাজশাহীতে নেওয়া হয়েছিল বলে জানান এবং রোগী মারা গেছেন, এ সত্যতাও নিশ্চিত করেন।
এদিকে, রাতে দেশ ক্লিনিকে গিয়ে তাদের অপারেশনের এন্ট্রি খাতায় ওই নারী নাম পাওয়া যায়নি। ওই রাতে অন্য তিন নারীর অপারেশন করা হয়েছে বলে এন্ট্রি খাতা থেকে জানা যায়।
এ বিষয়ে গ্রামের মেম্বার শওকত মাহফুজের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান এবং ফোনের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আবার তাঁকে ফোন করে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কোনো এক ক্লিনিকে অপারেশন করা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে কোন ক্লিনিকে অপারেশন করা হয়েছে, তা তিনি জানেন না। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগও পাননি বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, শ্বশুরবাড়ির লোকজন লাশ নিয়ে যেতে চাচ্ছেন, আর বাবার বাড়ির লোকজন চাচ্ছেন তাঁদের বাড়িতে দাফন করতে, এ ছাড়া কোনো ঝামেলা হয়নি বলে জানান তিনি। তবে আগামীকাল (আজ) সকালে লাশের দাফনকার্য সম্পন্ন হবে বলে পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন।
নিহত আহরণের বাবা আইজেল আলী বলেন, ‘আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ করলে আমরাই সমস্যায় পড়ব।’ ঘটনাটি তাঁরা মীমাংসা করেছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডা. জুয়েল ইমরান ও চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগযোগ সম্ভব হয়নি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

রাতারাতি হারিয়ে গেল রোগীর ডকুমেন্ট

আপলোড টাইম : ১০:৩৩:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯

চুয়াডাঙ্গা দেশ ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গার সদর হাসপাতালের পেছনে অবস্থিত দেশ ক্লিনিকে ডা. জুয়েল ইমরানের ভুল চিকিৎসা ও ক্লিনিক মালিকের অবহেলার কারণে আহরণ খাতুন (৩০) নামের এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মৃত্যুর পর ক্লিনিক মালিক কৌশলে নিহত রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রাজশাহী পাঠিয়ে দিলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার রোগী অনেক আগেই মারা গেছেন বলে জানান। তবে ক্লিনিক মালিক শান্ত ওই রোগীর অপারেশন দেশ ক্লিনিকে হয়নি বলে জানিয়ে বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। এমনকি ক্লিনিকের এন্ট্রি খাতা থেকেও নিহত রোগীর নাম-ঠিকানা সরিয়ে ফেলেছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় ঘটনাটি মীমাংসা করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে নিহত আহরণ খাতুনের চাচা আশা বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র গ্রামের আইজেল আলীর মেয়ে আহরণ খাতুন গলার টনসিল অপারেশন করার জন্য দেশ ক্লিনিকে ভর্তি হন। রাত ১০টার দিকে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডা. জুয়েল ইমরান তাঁর অপারেশন করেন। এরপর রাত চারটার দিকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক জানিয়ে নিজেরাই তাড়িঘড়ি করে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রোগীকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে নেওয়ার পর সেখানকার ডাক্তারেরা রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ঘটনাটি রোগীর পরিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছে, এ খবর জানতে পেরে অভিযুক্তরা রোগীর পরিবারের লোকজনকে চাপ দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন রোগীর চাচা। রোগীর লাশ গতকাল শুক্রবার রাতে গ্রামের পৌছায় বলে জানা গেছে।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের কয়েকজন বলেন, ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। অভিযুক্ত ডাক্তারের বাড়ি ওই এলাকায় হওয়ায় তাঁরা প্রভাব খাটিয়ে মেম্বারদের দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করেছে। তাঁরা বরেন, এ জন্য প্রথমে মুখ খুললেও পরে ভয়ে আর কেউ মুখ খুলছেন না।
তবে ক্লিনিক মালিক শান্ত ঘটনাটি অস্বীকার করে বলেন, ‘ওই রোগী আমার ক্লিনিকে আপারেশন করায়নি। ক্লিনিক থেকে রাতে কোনো রোগীকে রাজশাহীতে নেওয়াও হয়নি।’ তবে যে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রোগীকে রাজশাহী নেওয়া হয়েছিল, ওই অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষ দেশ ক্লিনিক থেকে ওই রোগীকে রাতে রাজশাহীতে নেওয়া হয়েছিল বলে জানান এবং রোগী মারা গেছেন, এ সত্যতাও নিশ্চিত করেন।
এদিকে, রাতে দেশ ক্লিনিকে গিয়ে তাদের অপারেশনের এন্ট্রি খাতায় ওই নারী নাম পাওয়া যায়নি। ওই রাতে অন্য তিন নারীর অপারেশন করা হয়েছে বলে এন্ট্রি খাতা থেকে জানা যায়।
এ বিষয়ে গ্রামের মেম্বার শওকত মাহফুজের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান এবং ফোনের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আবার তাঁকে ফোন করে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কোনো এক ক্লিনিকে অপারেশন করা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে কোন ক্লিনিকে অপারেশন করা হয়েছে, তা তিনি জানেন না। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগও পাননি বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, শ্বশুরবাড়ির লোকজন লাশ নিয়ে যেতে চাচ্ছেন, আর বাবার বাড়ির লোকজন চাচ্ছেন তাঁদের বাড়িতে দাফন করতে, এ ছাড়া কোনো ঝামেলা হয়নি বলে জানান তিনি। তবে আগামীকাল (আজ) সকালে লাশের দাফনকার্য সম্পন্ন হবে বলে পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন।
নিহত আহরণের বাবা আইজেল আলী বলেন, ‘আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ করলে আমরাই সমস্যায় পড়ব।’ ঘটনাটি তাঁরা মীমাংসা করেছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডা. জুয়েল ইমরান ও চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগযোগ সম্ভব হয়নি।