ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রাজাসনের রাজনীতি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৪:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ অক্টোবর ২০১৮
  • / ৪৫৫ বার পড়া হয়েছে

– মোহা. হারুন-উর-রশিদ
আজ থেকে প্রায় দুই হাজার তিনশ বছর (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৫-৩২২) আগে গ্রিক দার্শনীক এরিস্টটল রচনা করেন তাঁর অনন্য গ্রন্থ ‘পলিটিক্স’। সমাজ , রাষ্ট্র, শাসনব্যবস্থা ও নৈতিকতা বিষয়ে এটি পৃথিবীর প্রথম একাডেমিক সন্দর্ভ। স্বর্গ থেকে যদি মর্তে দেখার কোন ব্যবস্থা থেকে থাকে তাহলে এরিস্টটল নিশ্চয় বাঙালিকে ধন্যবাদ দেবেন তাঁর সন্দর্ভকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্য। পলিটিক্স এর বাংলা পরিভাষা হলো রাজনীতি। আমাদের দেশে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, আকাশ, ভূমি, সমুদ্র ও মহাশুন্যে কোথায় নেই পলিটিক্স। আবার অনেকে মজা করে বলেন, পলিটিক্স এর ভিতর রাজনীতি ঢুকে গেছে। রাজনীতির জটিলতা বুঝাবার জন্য কথাটি প্রায়শই বলা হয়। বাংলাদেশের মানুষের মতো এমন রাজনীতি পাগল জনগণ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এদেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ রাজনীতির সাথে কোন না কোনভাবে জড়িত। কয়েক বছর আগে আমেরিকান পিউ রিসার্চ সেন্টারের করা জরিপের ফলাফল তারই প্রমাণ বহন করে। সংস্থাটির পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ উচ্চমাত্রায়, ২৯ শতাংশ মানুষ মধ্যম মাত্রায় ও ৫ শতাংশ মানুষ নিম্নমাত্রায় রাজনীতিতে সক্রিয়। মানে এদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ রাজনীতিতে সক্রিয়। আমেরিকান রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেনস ব্রুম বার্নিকাট তার এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, “বাংলাদেশের মতো এমন রাজনীতিতে আচ্ছন্ন দেশ আমি আর দেখিনি।”
ঠিক তাই। এদেশে রাজনীতি হলো নেশার মতো। তবে তা হলো ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতায় থাকার নেশা। বাস্তবতা হলো, এদেশে সবাই ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থাকতে চায়। ক্ষমতার খুব কাছে থেকে হালুয়া রুটির ভাগ ও স্বাদ সবাই উপভোগ করতে চায়। সবাই বড়বড় চেয়ারে বসতে চায়। আর যারা একবার চেয়ারে বসে, তারা আর চেয়ার ছাড়তে চায় না। যে যাই লঙ্কা সেই হয় রাবণ। এর ব্যতিক্রম এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য বিভিন্ন অসাধু পন্থা অবলম্বন করেছেন। উত্তরবঙ্গে একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘মোদের পোলা রাজা হবো।’ সাবেক স্বৈরাচার হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যে আমাদের দেশের রাজনীতিতে টিকে আছেন তার বড় কারণ এটি। উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষের অসাধারণ চাওয়া, তাদের ছেলে রাজা হবে! আসলেই তাই, এদেশে নির্বচনে জিতে ক্ষমতায় যাওয়া আর রাজ হওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। অতীতের রাজারাও বোধ হয় এতটা ক্ষমতা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারতেন না। যতটা ক্ষমতা আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী ও সাংসদরা ভোগ করেন। এই অবাধ ক্ষমতা ভোগ করার উন্মত্ততা এদেশে অদ্ভূত সব অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।
আমেরিকার ভোটের ক্ষেত্রে একটা কথা প্রচলিত আছে, উইনার টেকস অল। একথা অন্যভাবে আমাদের দেশে সকল ক্ষেত্রে অনেকাংশে প্রযোজ্য। আমাদের দেশে জাতীয় নির্বাচনে একবার জিতে গেলে, এরপর কবরস্থান কমিটি থেকে চাঁদদেখা কমিটি, সংরক্ষিত নারী আসন থেকে স্থানীয় সরকার, পুলিশ-প্রশাসন সব আপনার। আর কে পায়। ফুটপাত থেকে উড়ালপথ, হাট, বিল, বাওড়, বালিমহল, খাল, নদী, সমুদ্র, টেন্ডার, সরকারি সকল সস্পত্তি ভোগ করার অবাধ অধিকার।
নিরুঙ্কুশ ক্ষমতা ভোগ করার দুয়ার যে উপলক্ষটা খুলে দেয় তা হলো নির্বাচন। এদেশে নির্বাচন মানে উৎসবের মতো। আমাদের সংবিধানে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। রাষ্ট্রের মালিকগণ ভোটের দিনে তার মালিকানা জাহির করতে পারেন। একদিনের জন্য রাষ্ট্রের মালিক হন। ভোট কাছাকাছি আসলে জনগণের দাম বাড়ে। বড়বড় ক্ষমতাবান ব্যক্তিগণ সাধারণ জনগণের সাথে নরম সুরে কথা বলেন, বুকে জড়িয়ে ধরেন, প্রতিশ্রুতির সিন্দুক খুলে বসেন তাদের সামনে। তবে এক্ষেত্রে দুর্ভাগ্য হলো ভোটের দিন মালিকানার প্রয়োগ করলেও জনগণ তাঁর সকল ক্ষমতা দিয়ে আসেন আর একজনের হাতে। এরপর যাহা লাউ তাহাই কদু। আবার অপেক্ষা কবে ভোট আসবে।
রাজনীতি নিয়ে অতি প্রচলিত একটি অনু গল্প আছে। গল্পটি হলো, একদিন একটি ছোট ছেলে তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো, বাবা রাজনীতি কাকে বলে? উত্তরে বাবা বলল, আসো তোমাকে বিষটি বুঝিয়ে বলি। দেখ, আমি এই পরিবারে আয় করি। আমি হচ্ছি পুঁজিবাদের প্রতিনিধি। সংসারের কোন কোন খাতে টাকা খরচ হবে, এই সিন্ধান্ত নেন তোমার মা। তার মানে, তোমার মা হচ্ছে সরকার। আমরা দু’জনে মিলে তোমার খেয়াল রাখি ও প্রয়োজন মেটায়। কাজেই তুমি হলে জনগণ। আমাদের বাড়ির কাজের মেয়েটা হলো শ্রমজীবী। আর তোমার ছোট বোন যে ফিডার খায়, সে হলো ভবিষ্যত প্রজন্ম। রাতের ঘটনা প্রবাহের পর, পরদিন সকালে রাজনীতি সম্পর্কে ছেলেটির উত্তর: পুঁজিবাদী সমাজ যখন শ্রমজীবী সমাজের ওপর শোষণ-নির্যাতন চালায়, সরকার তখন নাক ডেকে ঘুমায়। জনগণ সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যায়। আর ভবিষ্যত প্রজন্ম তখন বাস করে নোংরা পরিবেশে।
দেশ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দোড়গোড়ায়। ফেসবুক থেকে গলির দেয়ালের পোস্টারে সব জায়গায় প্রবাহিত হচ্ছে নির্বাচনী হাওয়া। জাতির জীবনের এবারের নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুসারে, বর্তমানে দেশের মোট ভোটারের সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন। এদের মধ্যে ৫ কোটি ২৫ লাখ ১২ হাজার ১০৫ জন পুরুষ ভোটার আর নারী ভোটারে সংখ্যা হলো ৫ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৬ জন। ভোটার তালিকা অনুসারে, আমাদের নারী ও পুরুষ ভোটারের সংখ্যা প্রায় সমান। কিন্তু নারীদের জাতীয় সংসদে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে সাংসদ হবার দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেই। সংরক্ষিত নারী আসন সংরক্ষন করে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়নের পথে রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ মধ্যে। অর্থাৎ আমাদের জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ হলো তরুণ। বাস্তবতা হলো, জাতীয় জীবনে তরুণদের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ সৃষ্টির কথা কোথাও কমবেশী শোনা যাচ্ছে না। সবাই নির্বাচনী হিসেব নিয়ে ব্যস্ত। জাতীয় জীবনে অংশীজনদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করা ও তাদের জন্য সুযোগ তৈরীর পথ প্রশস্ত করা প্রয়োজন। তা না হলে আমরা ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতা ধরে রাখার রাজনীতিতেই ঘুরপাক খেতে থাকবো। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে জনগনের মুক্তির প্রতীক্ষা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

রাজাসনের রাজনীতি

আপলোড টাইম : ০৯:২৪:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ অক্টোবর ২০১৮

– মোহা. হারুন-উর-রশিদ
আজ থেকে প্রায় দুই হাজার তিনশ বছর (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৫-৩২২) আগে গ্রিক দার্শনীক এরিস্টটল রচনা করেন তাঁর অনন্য গ্রন্থ ‘পলিটিক্স’। সমাজ , রাষ্ট্র, শাসনব্যবস্থা ও নৈতিকতা বিষয়ে এটি পৃথিবীর প্রথম একাডেমিক সন্দর্ভ। স্বর্গ থেকে যদি মর্তে দেখার কোন ব্যবস্থা থেকে থাকে তাহলে এরিস্টটল নিশ্চয় বাঙালিকে ধন্যবাদ দেবেন তাঁর সন্দর্ভকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্য। পলিটিক্স এর বাংলা পরিভাষা হলো রাজনীতি। আমাদের দেশে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, আকাশ, ভূমি, সমুদ্র ও মহাশুন্যে কোথায় নেই পলিটিক্স। আবার অনেকে মজা করে বলেন, পলিটিক্স এর ভিতর রাজনীতি ঢুকে গেছে। রাজনীতির জটিলতা বুঝাবার জন্য কথাটি প্রায়শই বলা হয়। বাংলাদেশের মানুষের মতো এমন রাজনীতি পাগল জনগণ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এদেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ রাজনীতির সাথে কোন না কোনভাবে জড়িত। কয়েক বছর আগে আমেরিকান পিউ রিসার্চ সেন্টারের করা জরিপের ফলাফল তারই প্রমাণ বহন করে। সংস্থাটির পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ উচ্চমাত্রায়, ২৯ শতাংশ মানুষ মধ্যম মাত্রায় ও ৫ শতাংশ মানুষ নিম্নমাত্রায় রাজনীতিতে সক্রিয়। মানে এদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ রাজনীতিতে সক্রিয়। আমেরিকান রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেনস ব্রুম বার্নিকাট তার এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, “বাংলাদেশের মতো এমন রাজনীতিতে আচ্ছন্ন দেশ আমি আর দেখিনি।”
ঠিক তাই। এদেশে রাজনীতি হলো নেশার মতো। তবে তা হলো ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতায় থাকার নেশা। বাস্তবতা হলো, এদেশে সবাই ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থাকতে চায়। ক্ষমতার খুব কাছে থেকে হালুয়া রুটির ভাগ ও স্বাদ সবাই উপভোগ করতে চায়। সবাই বড়বড় চেয়ারে বসতে চায়। আর যারা একবার চেয়ারে বসে, তারা আর চেয়ার ছাড়তে চায় না। যে যাই লঙ্কা সেই হয় রাবণ। এর ব্যতিক্রম এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য বিভিন্ন অসাধু পন্থা অবলম্বন করেছেন। উত্তরবঙ্গে একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘মোদের পোলা রাজা হবো।’ সাবেক স্বৈরাচার হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যে আমাদের দেশের রাজনীতিতে টিকে আছেন তার বড় কারণ এটি। উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষের অসাধারণ চাওয়া, তাদের ছেলে রাজা হবে! আসলেই তাই, এদেশে নির্বচনে জিতে ক্ষমতায় যাওয়া আর রাজ হওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। অতীতের রাজারাও বোধ হয় এতটা ক্ষমতা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারতেন না। যতটা ক্ষমতা আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী ও সাংসদরা ভোগ করেন। এই অবাধ ক্ষমতা ভোগ করার উন্মত্ততা এদেশে অদ্ভূত সব অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।
আমেরিকার ভোটের ক্ষেত্রে একটা কথা প্রচলিত আছে, উইনার টেকস অল। একথা অন্যভাবে আমাদের দেশে সকল ক্ষেত্রে অনেকাংশে প্রযোজ্য। আমাদের দেশে জাতীয় নির্বাচনে একবার জিতে গেলে, এরপর কবরস্থান কমিটি থেকে চাঁদদেখা কমিটি, সংরক্ষিত নারী আসন থেকে স্থানীয় সরকার, পুলিশ-প্রশাসন সব আপনার। আর কে পায়। ফুটপাত থেকে উড়ালপথ, হাট, বিল, বাওড়, বালিমহল, খাল, নদী, সমুদ্র, টেন্ডার, সরকারি সকল সস্পত্তি ভোগ করার অবাধ অধিকার।
নিরুঙ্কুশ ক্ষমতা ভোগ করার দুয়ার যে উপলক্ষটা খুলে দেয় তা হলো নির্বাচন। এদেশে নির্বাচন মানে উৎসবের মতো। আমাদের সংবিধানে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। রাষ্ট্রের মালিকগণ ভোটের দিনে তার মালিকানা জাহির করতে পারেন। একদিনের জন্য রাষ্ট্রের মালিক হন। ভোট কাছাকাছি আসলে জনগণের দাম বাড়ে। বড়বড় ক্ষমতাবান ব্যক্তিগণ সাধারণ জনগণের সাথে নরম সুরে কথা বলেন, বুকে জড়িয়ে ধরেন, প্রতিশ্রুতির সিন্দুক খুলে বসেন তাদের সামনে। তবে এক্ষেত্রে দুর্ভাগ্য হলো ভোটের দিন মালিকানার প্রয়োগ করলেও জনগণ তাঁর সকল ক্ষমতা দিয়ে আসেন আর একজনের হাতে। এরপর যাহা লাউ তাহাই কদু। আবার অপেক্ষা কবে ভোট আসবে।
রাজনীতি নিয়ে অতি প্রচলিত একটি অনু গল্প আছে। গল্পটি হলো, একদিন একটি ছোট ছেলে তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো, বাবা রাজনীতি কাকে বলে? উত্তরে বাবা বলল, আসো তোমাকে বিষটি বুঝিয়ে বলি। দেখ, আমি এই পরিবারে আয় করি। আমি হচ্ছি পুঁজিবাদের প্রতিনিধি। সংসারের কোন কোন খাতে টাকা খরচ হবে, এই সিন্ধান্ত নেন তোমার মা। তার মানে, তোমার মা হচ্ছে সরকার। আমরা দু’জনে মিলে তোমার খেয়াল রাখি ও প্রয়োজন মেটায়। কাজেই তুমি হলে জনগণ। আমাদের বাড়ির কাজের মেয়েটা হলো শ্রমজীবী। আর তোমার ছোট বোন যে ফিডার খায়, সে হলো ভবিষ্যত প্রজন্ম। রাতের ঘটনা প্রবাহের পর, পরদিন সকালে রাজনীতি সম্পর্কে ছেলেটির উত্তর: পুঁজিবাদী সমাজ যখন শ্রমজীবী সমাজের ওপর শোষণ-নির্যাতন চালায়, সরকার তখন নাক ডেকে ঘুমায়। জনগণ সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যায়। আর ভবিষ্যত প্রজন্ম তখন বাস করে নোংরা পরিবেশে।
দেশ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দোড়গোড়ায়। ফেসবুক থেকে গলির দেয়ালের পোস্টারে সব জায়গায় প্রবাহিত হচ্ছে নির্বাচনী হাওয়া। জাতির জীবনের এবারের নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুসারে, বর্তমানে দেশের মোট ভোটারের সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন। এদের মধ্যে ৫ কোটি ২৫ লাখ ১২ হাজার ১০৫ জন পুরুষ ভোটার আর নারী ভোটারে সংখ্যা হলো ৫ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৬ জন। ভোটার তালিকা অনুসারে, আমাদের নারী ও পুরুষ ভোটারের সংখ্যা প্রায় সমান। কিন্তু নারীদের জাতীয় সংসদে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে সাংসদ হবার দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেই। সংরক্ষিত নারী আসন সংরক্ষন করে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়নের পথে রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ মধ্যে। অর্থাৎ আমাদের জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ হলো তরুণ। বাস্তবতা হলো, জাতীয় জীবনে তরুণদের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ সৃষ্টির কথা কোথাও কমবেশী শোনা যাচ্ছে না। সবাই নির্বাচনী হিসেব নিয়ে ব্যস্ত। জাতীয় জীবনে অংশীজনদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করা ও তাদের জন্য সুযোগ তৈরীর পথ প্রশস্ত করা প্রয়োজন। তা না হলে আমরা ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতা ধরে রাখার রাজনীতিতেই ঘুরপাক খেতে থাকবো। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে জনগনের মুক্তির প্রতীক্ষা।