ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রাজউককে দায়ভার নিতে হবে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:৫৫:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ মার্চ ২০১৯
  • / ২৮৫ বার পড়া হয়েছে

কোথাও আগুন লাগলে বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হলেই সবাই সাময়িকভাবে সতর্ক হওয়ার চেষ্টা করি। বাস্তবতা হচ্ছে, ভবন নির্মাণের সময়ে কেউই নিয়মকানুন মানেন না। বনানীতে অগ্নিকা-ের পর বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে জোরালোভাবে আলোচনা হচ্ছে। সামনে আসছে রাজধানীতে অবৈধ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের অবস্থান নিয়েও। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীতে বহুতল ভবন রয়েছে ২ হাজার ৯শর বেশি। এসব ভবনের প্রায় ৯০ শতাংশেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। সে হিসাবে প্রায় ২ হাজার ৭শ ভবনই অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। একটু অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে তাকালে স্পষ্ট দেখা যাবে, রাজধানীতে যেন বহুতল ভবন নির্মাণের ধুম পড়েছে। কিন্তু এর কোনটি নিয়ম মেনে আর কোনটি নিয়ম ভেঙে উঠছে তা সাদা চোখে বোঝার উপায় নেই। রাজধানীতে যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের মূল তদারকির দায়িত্বে রয়েছে রাজউক কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে রাজউক চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। দেশে নিরাপদ ভবন বা ঝুঁকিমুক্ত অট্টালিকা নির্মাণের জন্য যথোপযুক্ত আইন রয়েছে। ১৯৫২ সালে প্রণীত এই আইনের আওতায় পরবর্তীকালে তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড এবং ইমারত নির্মাণ বিধিমালা। কিন্তু এসব আছে শুধু নথিপত্রে। আইনটি বাস্তবায়নের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এমনকি এসব আইন ও বিধিবিধান বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রের তরফে সমন্বিত কোনো ব্যবস্থা যেমন নেই, তেমনি তদারকির জন্যও নেই কোনো কর্তৃপক্ষ। মূলত এ কারণেই দেশে একের পর এক ভবন ধসের মতো মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকার ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) আওতাধীন এলাকায় ২২ লাখ স্থাপনা রয়েছে। এক তলা থেকে ছয় তলার স্থাপনা ২১ লাখ ১২ হাজার আর সাত তলা থেকে ২৪-২৫ তলা ভবন আছে ৮৮ হাজার। এর মধ্যে ১০ তলা এবং ১০ তলার বেশি উচ্চতাসম্পন্ন বহুতল ইমারত রয়েছে ২ হাজার ৯শর বেশি। নগরীর বহুতল ভবনের ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমের সক্ষমতার ওপর ২০১১ সালে একটি সার্ভে করা হয়। বুয়েট ও ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে এ সার্ভে পরিচালনা করে। সার্ভের সময় রাজধানীর ৫৩টি ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। তাতে দেখা গেছে, নগরীর বহুতল ভবনের ৯০ শতাংশেরই অর্থাৎ প্রায় ২ হাজার ৭শ ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সঠিক পাওয়া যায়নি। আমরা ভেবে বিস্মিত হই যে, রাজউকের অনুমোদন ছাড়া রাজধানীতে বহুতল ভবন তৈরি হতে পারে কীভাবে! আমরা লক্ষ করি, ভবনধস, অগ্নিকা-ের মতো দুর্ঘটনা ঘটলেই কেবল সংশ্লিষ্টরা নড়েচড়ে বসেন, কিছুদিন কর্মতৎপরতা বেড়ে যায়। অথচ রাজধানীকে বাসযোগ্য রাখতে অবৈধভাবে, কোড না মেনে, অনিয়ম করে স্থাপনা নির্মাণ রোধ করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, নির্মাণ প্রকল্প শনাক্ত করে অনিয়মকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ভবনের পরিকল্পনা, নকশা প্রণয়ন, স্ট্রাকচারাল ডিজাইন ও নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত সব পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি ও প্রকৌশলীর দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজন হলে আইনি সংস্কার করতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

রাজউককে দায়ভার নিতে হবে

আপলোড টাইম : ১২:৫৫:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ মার্চ ২০১৯

কোথাও আগুন লাগলে বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হলেই সবাই সাময়িকভাবে সতর্ক হওয়ার চেষ্টা করি। বাস্তবতা হচ্ছে, ভবন নির্মাণের সময়ে কেউই নিয়মকানুন মানেন না। বনানীতে অগ্নিকা-ের পর বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে জোরালোভাবে আলোচনা হচ্ছে। সামনে আসছে রাজধানীতে অবৈধ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের অবস্থান নিয়েও। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীতে বহুতল ভবন রয়েছে ২ হাজার ৯শর বেশি। এসব ভবনের প্রায় ৯০ শতাংশেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। সে হিসাবে প্রায় ২ হাজার ৭শ ভবনই অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। একটু অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে তাকালে স্পষ্ট দেখা যাবে, রাজধানীতে যেন বহুতল ভবন নির্মাণের ধুম পড়েছে। কিন্তু এর কোনটি নিয়ম মেনে আর কোনটি নিয়ম ভেঙে উঠছে তা সাদা চোখে বোঝার উপায় নেই। রাজধানীতে যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের মূল তদারকির দায়িত্বে রয়েছে রাজউক কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে রাজউক চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। দেশে নিরাপদ ভবন বা ঝুঁকিমুক্ত অট্টালিকা নির্মাণের জন্য যথোপযুক্ত আইন রয়েছে। ১৯৫২ সালে প্রণীত এই আইনের আওতায় পরবর্তীকালে তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড এবং ইমারত নির্মাণ বিধিমালা। কিন্তু এসব আছে শুধু নথিপত্রে। আইনটি বাস্তবায়নের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এমনকি এসব আইন ও বিধিবিধান বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রের তরফে সমন্বিত কোনো ব্যবস্থা যেমন নেই, তেমনি তদারকির জন্যও নেই কোনো কর্তৃপক্ষ। মূলত এ কারণেই দেশে একের পর এক ভবন ধসের মতো মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকার ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) আওতাধীন এলাকায় ২২ লাখ স্থাপনা রয়েছে। এক তলা থেকে ছয় তলার স্থাপনা ২১ লাখ ১২ হাজার আর সাত তলা থেকে ২৪-২৫ তলা ভবন আছে ৮৮ হাজার। এর মধ্যে ১০ তলা এবং ১০ তলার বেশি উচ্চতাসম্পন্ন বহুতল ইমারত রয়েছে ২ হাজার ৯শর বেশি। নগরীর বহুতল ভবনের ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমের সক্ষমতার ওপর ২০১১ সালে একটি সার্ভে করা হয়। বুয়েট ও ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে এ সার্ভে পরিচালনা করে। সার্ভের সময় রাজধানীর ৫৩টি ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। তাতে দেখা গেছে, নগরীর বহুতল ভবনের ৯০ শতাংশেরই অর্থাৎ প্রায় ২ হাজার ৭শ ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সঠিক পাওয়া যায়নি। আমরা ভেবে বিস্মিত হই যে, রাজউকের অনুমোদন ছাড়া রাজধানীতে বহুতল ভবন তৈরি হতে পারে কীভাবে! আমরা লক্ষ করি, ভবনধস, অগ্নিকা-ের মতো দুর্ঘটনা ঘটলেই কেবল সংশ্লিষ্টরা নড়েচড়ে বসেন, কিছুদিন কর্মতৎপরতা বেড়ে যায়। অথচ রাজধানীকে বাসযোগ্য রাখতে অবৈধভাবে, কোড না মেনে, অনিয়ম করে স্থাপনা নির্মাণ রোধ করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, নির্মাণ প্রকল্প শনাক্ত করে অনিয়মকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ভবনের পরিকল্পনা, নকশা প্রণয়ন, স্ট্রাকচারাল ডিজাইন ও নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত সব পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি ও প্রকৌশলীর দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজন হলে আইনি সংস্কার করতে হবে।