ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রমজান মাসে সেহরী খাওয়াতে ছুটে যায় হাসপাতালে নুর নাহার বেগম

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৬:৪০:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ মে ২০১৮
  • / ৪৫৭ বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুর প্রতিনিধি: মেহেরপুরের জেনারেল হাসপাতাল। প্রতিবছর রমজান এলে সেহরীর সময় এ হাসপাতালের দৃশ্য পাল্টে যায়। রমজান মাস এলেই হাসপাতালের রোগী এবং রোগীর স্বজনদের মাঝে বিনামূল্যে তিনি সেহরী বিতরণ করেন। হাসপাতালে থাকা রোগীদের চোখে-মুখে হাসি ফোটে। মনের স্বাচ্ছন্দে সেহরী খায় তারা। এ খাবারের জোগান দেন নূর নাহার বেগম। তিনি শহরের ওয়াপদা রোডের বাসিন্দা মঙ্গল হোসেনের স্ত্রী। প্রতিরাতে সেহরীর সময় হাসপাতালে ছুটে আসেন। হাসপাতালে থাকা রাতজাগা রোগী ও রোগীদের স্বজনদের পাতে খাবার তুলে দেন। সেহরি খেতে তিনি বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। এরপর নিজের হাতে কোনো দিন সাদা ভাতের সঙ্গে ডাল, ডিম, সবজি; কোনো দিন মাছ কিংবা মাংস দিয়ে সব রোগী এবং রোগীর স্বজনদের মাঝে সেহরির খাবার বিতরণ করেন। তিন বছর ধরেই তিনি খাওয়াচ্ছেন। ২০১৬ সালে তার ছেলে নাহিদ হোসেন মারা যাওয়ার পর তিনি তখন পাগল প্রায়। এরপর থেকে ছেলের শান্তি কামনায় বিভিন্ন স্থানে ছুটে যেতেন। দান-খায়রাত করতেন। কিন্তু সেখানে তার মন টিকেনি। তাই তিনি বেছে নিলেন প্রতিবছর রমজান এলেই হাসপাতালে ছুটে আসবেন। প্রতি রাতে সেহরির সময় হাসপাতালে থাকার রোগীদের খাওয়াবেন। এসময় তার সহযোগী থাকেন কয়েকজন। তাদের একজন সাইফুল ইসলাম। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন- নূর নাহারের এ উদ্যোগকে স্থানীয়রা স্বাগত জানিয়েছেন। তার এ কাজে সহযোগিতা করতে পেরে ধন্য হই। প্রতিরাতে হাসপাতালে শতাধিক রোগী রোজা রাখতে সেহরি খায়। সন্ধ্যার সময় হাসাপাতালে রোগীর সংখ্যা গুণে আসি। রোগীদের মধ্যে আবুল হোসেন, সালেহা বেগমসহ আরো অনেকের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন- হাসপাতালের ঠিকাদার যে খাবার দিয়ে যায় তা খেতে কষ্ট হয়। কিন্তু নূর নাহার আপা টাটকা খাবার দিচ্ছেন তাও বিনামূল্যে। এ ভালোলাগা কোনোদিন প্রকাশ করার মতো নয়। তিনি যে খাবার দিচ্ছেন সে খাবারে আমরা দারুণ খুশি। আল¬াহ যেন তার সে আশা পূর্ণ করেন। কথা হয় নূর নাহার বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন- সহায় সম্পত্তি সন্তানের জন্য। আর সেই সন্তান যদি বেঁচে না থাকে তবে সম্পত্তি কার জন্য রাখব? আমার হারানো সন্তানের আত্মার শান্তি কামনায় এ কাজ করি। হাসপাতালে থাকা রোগী এবং স্বজনদের এ খাবার খাইয়ে আমি নিজেও বেশ স্বাচ্ছন্দবোধ করি। তবে আমি যতোদিন থাকবো ততোদিন তাদের খাইয়ে যাবো।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

রমজান মাসে সেহরী খাওয়াতে ছুটে যায় হাসপাতালে নুর নাহার বেগম

আপলোড টাইম : ০৬:৪০:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ মে ২০১৮

মেহেরপুর প্রতিনিধি: মেহেরপুরের জেনারেল হাসপাতাল। প্রতিবছর রমজান এলে সেহরীর সময় এ হাসপাতালের দৃশ্য পাল্টে যায়। রমজান মাস এলেই হাসপাতালের রোগী এবং রোগীর স্বজনদের মাঝে বিনামূল্যে তিনি সেহরী বিতরণ করেন। হাসপাতালে থাকা রোগীদের চোখে-মুখে হাসি ফোটে। মনের স্বাচ্ছন্দে সেহরী খায় তারা। এ খাবারের জোগান দেন নূর নাহার বেগম। তিনি শহরের ওয়াপদা রোডের বাসিন্দা মঙ্গল হোসেনের স্ত্রী। প্রতিরাতে সেহরীর সময় হাসপাতালে ছুটে আসেন। হাসপাতালে থাকা রাতজাগা রোগী ও রোগীদের স্বজনদের পাতে খাবার তুলে দেন। সেহরি খেতে তিনি বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। এরপর নিজের হাতে কোনো দিন সাদা ভাতের সঙ্গে ডাল, ডিম, সবজি; কোনো দিন মাছ কিংবা মাংস দিয়ে সব রোগী এবং রোগীর স্বজনদের মাঝে সেহরির খাবার বিতরণ করেন। তিন বছর ধরেই তিনি খাওয়াচ্ছেন। ২০১৬ সালে তার ছেলে নাহিদ হোসেন মারা যাওয়ার পর তিনি তখন পাগল প্রায়। এরপর থেকে ছেলের শান্তি কামনায় বিভিন্ন স্থানে ছুটে যেতেন। দান-খায়রাত করতেন। কিন্তু সেখানে তার মন টিকেনি। তাই তিনি বেছে নিলেন প্রতিবছর রমজান এলেই হাসপাতালে ছুটে আসবেন। প্রতি রাতে সেহরির সময় হাসপাতালে থাকার রোগীদের খাওয়াবেন। এসময় তার সহযোগী থাকেন কয়েকজন। তাদের একজন সাইফুল ইসলাম। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন- নূর নাহারের এ উদ্যোগকে স্থানীয়রা স্বাগত জানিয়েছেন। তার এ কাজে সহযোগিতা করতে পেরে ধন্য হই। প্রতিরাতে হাসপাতালে শতাধিক রোগী রোজা রাখতে সেহরি খায়। সন্ধ্যার সময় হাসাপাতালে রোগীর সংখ্যা গুণে আসি। রোগীদের মধ্যে আবুল হোসেন, সালেহা বেগমসহ আরো অনেকের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন- হাসপাতালের ঠিকাদার যে খাবার দিয়ে যায় তা খেতে কষ্ট হয়। কিন্তু নূর নাহার আপা টাটকা খাবার দিচ্ছেন তাও বিনামূল্যে। এ ভালোলাগা কোনোদিন প্রকাশ করার মতো নয়। তিনি যে খাবার দিচ্ছেন সে খাবারে আমরা দারুণ খুশি। আল¬াহ যেন তার সে আশা পূর্ণ করেন। কথা হয় নূর নাহার বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন- সহায় সম্পত্তি সন্তানের জন্য। আর সেই সন্তান যদি বেঁচে না থাকে তবে সম্পত্তি কার জন্য রাখব? আমার হারানো সন্তানের আত্মার শান্তি কামনায় এ কাজ করি। হাসপাতালে থাকা রোগী এবং স্বজনদের এ খাবার খাইয়ে আমি নিজেও বেশ স্বাচ্ছন্দবোধ করি। তবে আমি যতোদিন থাকবো ততোদিন তাদের খাইয়ে যাবো।