ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রবিউল আউয়াল মাসের শিক্ষা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪২:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর ২০২১
  • / ১০ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম প্রতিবেদন:
বছর ঘুরে আবার আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে রবিউল আউয়াল মাস। ইসলামে এটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক মাস। এ মাসে পাপাচার ও মূর্খতার নিকশ কালো রাতের পর সৌভাগ্যের আলোঝলমলে দিনের সূচনা হয়েছিল। শরতের নির্জীব শুষ্কতার পর বসন্তের প্রাণ সজীব সমীরণ প্রবাহিত হয়েছিল। এ মাসে সেই মহামানব পৃথিবীর বুকে আগমন করেছিলেন, যিনি জীবন সায়াহ্নে উপনীত মানবতাকে উদ্ধার করেছিলেন এবং অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষগুলোকে এক খোদার আলোকিত পথের সন্ধান দিয়েছিলেন, যিনি শয়তানের প্রভুত্ব দূর করে দুনিয়াজুড়ে আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং মিথ্যার পতন ঘটিয়ে সত্যের কেতন উড্ডীন করেছিলেন।
মহানবী (সা.) এর এ ধরণিতে শুভাগমনের মাস এটি। যখনই এ মাস আসে মুসলমানদের অন্তরে নবীপ্রেমের এক নতুন হাওয়া জাগে। আবার সঙ্গে সঙ্গে অন্তরকে ঘিরে ধরে এক ধরনের বিষাদের কালো ছায়া। কারণ এ মাসেই তিনি ইন্তেকাল করেছিলেন। রসুল (সা.)-কে ভালোবাসা ইমানের অঙ্গ। কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবী! আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন’। (সুরা আলেইমরান)। হাদিস শরিফে রসুল (সা.) বলেন, ‘ওই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তার কাছে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সব মানুষ থেকে প্রিয় না হব’। (বুখারি ও মুসলিম)। তবে এ ভালোবাসার প্রকাশ ঘটবে রসুল (সা.)-এর জীবন সাধনা, দীন ও শরিয়তের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ও সমর্পণের মাধ্যমে। এ মর্মে আল্লাহতায়ালা বলেন, রসুল তোমাদের যা দেন তা গ্রহণ কর, আর তোমাদের যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক। (সুরা হাশর)। রসুল (সা.) এর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে আমাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে আছে, রসুলের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ-এমন ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণ স্মরণ করে। (সুরা আহজাব)। মনে রাখতে হবে রসুলের প্রতি এ ভালোবাসা শুধু রবিউল আউয়াল মাসেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতি মুহূর্তে সিরাত চর্চা করা, তাঁর সুন্নতের অনুসরণ করা ও তাঁর আদর্শকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা জরুরি। এটিই রবিউল আউয়াল মাসের মূল শিক্ষা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো- রবিউল আউয়াল মাস এলে আমরা প্রিয় নবী (সা.) এর প্রেম, আবেগ-ভালোবাসায় উজ্জীবিত হই। কিন্তু মাসটি চলে গেলে সেই আবেগ-অনুভূতি ও ভালোবাসা আর থাকে না। তাইতো কবি নজরুল বলেছিলেন, ‘রবিউল আউয়াল এলে তোমারই গান গাই; রবিউল আউয়াল গেলে তোমায় ভুলে যাই’। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি কঠিন সতর্ক বার্তা। এমনটি যেন কোনোভাবেই না হয়। বিশ্বনবী (সা.) এর অতুলনীয় সুমহান আদর্শ নিজেদের জীবনে ধারণ ও বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টাই মুসলিম উম্মাহর রবিউল আউয়াল মাসের শিক্ষা। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে এর ওপর আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

রবিউল আউয়াল মাসের শিক্ষা

আপলোড টাইম : ০৮:৪২:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর ২০২১

ধর্ম প্রতিবেদন:
বছর ঘুরে আবার আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে রবিউল আউয়াল মাস। ইসলামে এটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক মাস। এ মাসে পাপাচার ও মূর্খতার নিকশ কালো রাতের পর সৌভাগ্যের আলোঝলমলে দিনের সূচনা হয়েছিল। শরতের নির্জীব শুষ্কতার পর বসন্তের প্রাণ সজীব সমীরণ প্রবাহিত হয়েছিল। এ মাসে সেই মহামানব পৃথিবীর বুকে আগমন করেছিলেন, যিনি জীবন সায়াহ্নে উপনীত মানবতাকে উদ্ধার করেছিলেন এবং অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষগুলোকে এক খোদার আলোকিত পথের সন্ধান দিয়েছিলেন, যিনি শয়তানের প্রভুত্ব দূর করে দুনিয়াজুড়ে আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং মিথ্যার পতন ঘটিয়ে সত্যের কেতন উড্ডীন করেছিলেন।
মহানবী (সা.) এর এ ধরণিতে শুভাগমনের মাস এটি। যখনই এ মাস আসে মুসলমানদের অন্তরে নবীপ্রেমের এক নতুন হাওয়া জাগে। আবার সঙ্গে সঙ্গে অন্তরকে ঘিরে ধরে এক ধরনের বিষাদের কালো ছায়া। কারণ এ মাসেই তিনি ইন্তেকাল করেছিলেন। রসুল (সা.)-কে ভালোবাসা ইমানের অঙ্গ। কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবী! আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন’। (সুরা আলেইমরান)। হাদিস শরিফে রসুল (সা.) বলেন, ‘ওই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তার কাছে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সব মানুষ থেকে প্রিয় না হব’। (বুখারি ও মুসলিম)। তবে এ ভালোবাসার প্রকাশ ঘটবে রসুল (সা.)-এর জীবন সাধনা, দীন ও শরিয়তের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ও সমর্পণের মাধ্যমে। এ মর্মে আল্লাহতায়ালা বলেন, রসুল তোমাদের যা দেন তা গ্রহণ কর, আর তোমাদের যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক। (সুরা হাশর)। রসুল (সা.) এর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে আমাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে আছে, রসুলের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ-এমন ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণ স্মরণ করে। (সুরা আহজাব)। মনে রাখতে হবে রসুলের প্রতি এ ভালোবাসা শুধু রবিউল আউয়াল মাসেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতি মুহূর্তে সিরাত চর্চা করা, তাঁর সুন্নতের অনুসরণ করা ও তাঁর আদর্শকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা জরুরি। এটিই রবিউল আউয়াল মাসের মূল শিক্ষা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো- রবিউল আউয়াল মাস এলে আমরা প্রিয় নবী (সা.) এর প্রেম, আবেগ-ভালোবাসায় উজ্জীবিত হই। কিন্তু মাসটি চলে গেলে সেই আবেগ-অনুভূতি ও ভালোবাসা আর থাকে না। তাইতো কবি নজরুল বলেছিলেন, ‘রবিউল আউয়াল এলে তোমারই গান গাই; রবিউল আউয়াল গেলে তোমায় ভুলে যাই’। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি কঠিন সতর্ক বার্তা। এমনটি যেন কোনোভাবেই না হয়। বিশ্বনবী (সা.) এর অতুলনীয় সুমহান আদর্শ নিজেদের জীবনে ধারণ ও বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টাই মুসলিম উম্মাহর রবিউল আউয়াল মাসের শিক্ষা। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে এর ওপর আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।