ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মৌসুমি ফলে বিষ আতঙ্ক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৭:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০১৯
  • / ২৫৩ বার পড়া হয়েছে

আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে
চলছে জ্যৈষ্ঠ মাস মৌসুমি ফলের মৌসুম। বাজারে আম জাম লিচু কাঁঠালসহ নানা রকম মৌসুমি ফলের সমাহার। কিন্তু বাজারের এসব ফল খাওয়া কতটা নিরাপদ এ প্রশ্ন সবাইকেই তাড়া করছে, শঙ্কিত করছে। কারণ ফল দ্রুত পাকানো এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ভয়াবহ রকম বেড়ে গেছে, যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এবারো রাসায়নিক দিয়ে পাকানো ফলে বাজার সয়লাব- এমন খবর প্রকশিত হয়েছে দৈনিক পত্রিকায়। যা খুবই উদ্বেগের। জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এমন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিগত এক দশকের তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, মৌসুমি ফল আমসহ বেশিরভাগ ফলই পাকানো হয় রাসায়নিক উপাদান দিয়ে। স্বাভাবিক সময়ে কাঁচা ফল পাওয়ার কথা থাকলেও অধিক মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা এ কাঁচা ফলকেই ক্ষতিকারক রাসায়নিকের মাধ্যমে পাকিয়ে বাজারে নিয়ে আসেন। এতে করে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন ক্রেতা বা ভোক্তারা। ক্ষতিকারক রাসায়নিক মেশানো ফল খেয়ে মানুষ নানা দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করা এসব রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে মহিলারা বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম দিতে পারেন। বিশেষ করে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখিও হয়েছে পত্রপত্রিকায়। যাদের কাজ এসবের ওপর নজরদারি রাখা, প্রতিরোধ করা, তারা কতটুকু দায়িত্ব পালন করছেন সেটা দেখার বিষয়। তদারকি সংস্থাগুলোর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আইনের তোয়াক্কা না করে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফলে ফরমালিনসহ অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করছেন। প্রায় অর্ধযুগের বেশি সময় ধরেই খাদ্যে ভেজাল ও ফরমালিন রোধে বিচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু এ অপতৎপরতার লাগাম টানা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের বিরুদ্ধে জোরদার কোনো অভিযান না থাকায় ব্যবসায়ীরা ফরমালিন মিশিয়ে সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো ঠেকাতে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, কমিটি করে বছরব্যাপী ফলের বাজার ও সংরক্ষণাগার পর্যবেক্ষণ করতে হবে, যাতে কেউ রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত ফল বিক্রি করতে না পারে। ফলে ভেজাল ও রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়োগ করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে রায়ে। কিন্তু এই রায়ের কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না। বিএসটিআই, সিটি করপোরেশন ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা অভিযান চলেছে মাঝেমধ্যে। কিন্তু তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব প্রকট। ফরমালিনমুক্ত বাজার গড়তে অবশ্যই কড়া নজরদারি রাখতে হবে। নিরাপদ খাদ্য সংক্রান্ত আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আগামী প্রজন্মকে সুস্থ-সবল ও মেধা-মননে গড়ে তুলতে হলে নিরাপদ বিষমুক্ত খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। নিরাপদ খাদ্য মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার প্রধানতম পূর্বশর্ত। তাই সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ভেজালের বিরুদ্ধে একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এখনই জরুরি হয়ে পড়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মৌসুমি ফলে বিষ আতঙ্ক

আপলোড টাইম : ০৯:১৭:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০১৯

আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে
চলছে জ্যৈষ্ঠ মাস মৌসুমি ফলের মৌসুম। বাজারে আম জাম লিচু কাঁঠালসহ নানা রকম মৌসুমি ফলের সমাহার। কিন্তু বাজারের এসব ফল খাওয়া কতটা নিরাপদ এ প্রশ্ন সবাইকেই তাড়া করছে, শঙ্কিত করছে। কারণ ফল দ্রুত পাকানো এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ভয়াবহ রকম বেড়ে গেছে, যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এবারো রাসায়নিক দিয়ে পাকানো ফলে বাজার সয়লাব- এমন খবর প্রকশিত হয়েছে দৈনিক পত্রিকায়। যা খুবই উদ্বেগের। জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এমন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিগত এক দশকের তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, মৌসুমি ফল আমসহ বেশিরভাগ ফলই পাকানো হয় রাসায়নিক উপাদান দিয়ে। স্বাভাবিক সময়ে কাঁচা ফল পাওয়ার কথা থাকলেও অধিক মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা এ কাঁচা ফলকেই ক্ষতিকারক রাসায়নিকের মাধ্যমে পাকিয়ে বাজারে নিয়ে আসেন। এতে করে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন ক্রেতা বা ভোক্তারা। ক্ষতিকারক রাসায়নিক মেশানো ফল খেয়ে মানুষ নানা দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করা এসব রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে মহিলারা বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম দিতে পারেন। বিশেষ করে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখিও হয়েছে পত্রপত্রিকায়। যাদের কাজ এসবের ওপর নজরদারি রাখা, প্রতিরোধ করা, তারা কতটুকু দায়িত্ব পালন করছেন সেটা দেখার বিষয়। তদারকি সংস্থাগুলোর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আইনের তোয়াক্কা না করে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফলে ফরমালিনসহ অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করছেন। প্রায় অর্ধযুগের বেশি সময় ধরেই খাদ্যে ভেজাল ও ফরমালিন রোধে বিচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু এ অপতৎপরতার লাগাম টানা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের বিরুদ্ধে জোরদার কোনো অভিযান না থাকায় ব্যবসায়ীরা ফরমালিন মিশিয়ে সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো ঠেকাতে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, কমিটি করে বছরব্যাপী ফলের বাজার ও সংরক্ষণাগার পর্যবেক্ষণ করতে হবে, যাতে কেউ রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত ফল বিক্রি করতে না পারে। ফলে ভেজাল ও রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়োগ করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে রায়ে। কিন্তু এই রায়ের কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না। বিএসটিআই, সিটি করপোরেশন ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা অভিযান চলেছে মাঝেমধ্যে। কিন্তু তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব প্রকট। ফরমালিনমুক্ত বাজার গড়তে অবশ্যই কড়া নজরদারি রাখতে হবে। নিরাপদ খাদ্য সংক্রান্ত আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আগামী প্রজন্মকে সুস্থ-সবল ও মেধা-মননে গড়ে তুলতে হলে নিরাপদ বিষমুক্ত খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। নিরাপদ খাদ্য মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার প্রধানতম পূর্বশর্ত। তাই সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ভেজালের বিরুদ্ধে একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এখনই জরুরি হয়ে পড়েছে।