ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মেয়েকে শ্বাসরোধে করে হত্যা করেন পিতা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১২:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ মে ২০২১
  • / ৮১ বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুরে ভৈরব নদ থেকে অর্ধগলিত নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনা
প্রতিবেদক, মেহেরপুর:
পরিবারের অবাধ্য হয়ে চলাচল করায় পিতা শ্বাসরোধ করে তাঁর মেয়েকে হত্যা করেন। লাশ উদ্ধারের ঘটনার ৫৮ দিন পর অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করা মৃত ব্যক্তির পরিচয় জানার পর পিতা ফজলুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ। আটক পিতা বজলুর রহমান আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার পর বজলুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বজলুর রহমান তাঁর একমাত্র মেয়ে ববিতা ইয়াসমিনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পর বস্তাবন্দি করে ভৈরব নদী ফেলে দিয়েছিল। গত ২৫ মার্চ রাতে ভৈরব নদ থেকে অর্ধগলিত ববিতার লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় মৃতব্যক্তির কোনো পরিচয় না পাওয়ায় অজ্ঞাত হিসেবে লাশ দাফন করা হয। ঘটনার পর থেকে মেহেরপুর সদর থানার ইন্সপেক্টর রাসুল সামদানী বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের একপর্যায়ে মৃত ব্যক্তির গায়ের কামিজ দেখে ববিতার একটি ছবি সংগ্রহ করে ছবির কামিজের সঙ্গে মিলে যাওয়ার পর ববিতার পিতা বজলুর রহমান কে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন যে তাঁর কন্যা ববিতাকে কীভাবে খুন করে ভৈরব নদী ফেলে রাখা হয়। বজলুর রহমান জানান, এক পুত্র এক কন্যা সন্তানের মধ্যে কবিতা ছোট। তিন বছর পূর্বে সদর উপজেলার বেলতলা পাড়া গ্রামে জনৈক রাসেলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পরে তাঁর স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। বজলুর রহমান জানান, ‘স্বামীর সঙ্গে আমার মেয়ে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর পরিবারের কথা অমান্য করে ইচ্ছা মতো চলাফেরা শুরু করে। মাঝে মাঝেই ববিতার নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, মার্চ মাসের ২০-২১ তারিখে সন্ধ্যার দিকে কাথুলী গ্রামে তার এক আত্মীয় বাড়ি থেকে লেগুনাযোগে নিয়ে আসেন। সন্ধ্যার পর কুলবাড়িয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাছাকাছি পৌঁছে হঠাৎ করেই বজলুর রহমান তাঁর মেয়ে ববিতা ইয়াসমিনকে গলাটিপে ধরেন। ওই সময়ে সে মৃত্যুবরণ করলে মরদেহটি মাঠের মধ্যে কলাবাগানে নিয়ে রাখেন। পরে বাড়ি গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর ভৈরব নদে মাছ ধরার নাম করে একটি বস্তা এনে মরদেহটি বস্তার মধ্যে নিয়ে ভৈরব নদের ফেলে দেয়। পরে ২৫ মার্চ রাতে অর্ধগলিত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হলেও ওই সময় তাঁকে কেউ শনাক্ত করতে পারেনি। পরে অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মেহেরপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর ২৯, তারিখ ২৬ মার্চ ২০২১। পরে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় মেহেরপুর সদর থানার ইন্সপেক্টর রাসুল সামদানিকে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা সাসুল সামদানী জানান, তদন্তভার পাওয়ার পর থেকেই একাধিক সোর্স নিয়োগ করি। একপর্যায়ে মৃতব্যক্তির কামিজ নিয়ে লাশের পরিচয় জানার চেষ্টা করার একপর্যায়ে সোর্সের মাধ্যমে ববিতার একটি ছবি সংগ্রহ করি। ববিতার ছবির কামিজের সঙ্গে মৃতব্যক্তির গায়ে থাকা কামিজ মিলে যাওয়ার পর শনিবার সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বজলুর রহমানকে থানায় নিয়ে আসেন। থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করার এক পর্যায়ে তিনি তার কন্যা হত্যার দায় স্বীকার করেন।
বজলুর রহমান জানান, পরিবারের সকলের সাথে তাঁর সম্পর্ক ভালো ছিল না। তাঁর মেয়ে খারাপ পথে ধাবিত হয়েছে বিষয়টি জানতে পেরে তাঁকে খুন করা হয়। এদিকে শনিবার বিকেলের দিকে বজলুর রহমানকে মেহেরপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে বিচারক বেগম রাফিয়া সুলতানার কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। আর এরই সাথে টানা ৫৮ দিন পর অজ্ঞাত মহিলার পরিচয় উদ্ঘাটন এবং খুনের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে আটক করা হলো।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মেয়েকে শ্বাসরোধে করে হত্যা করেন পিতা

আপলোড টাইম : ১০:১২:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ মে ২০২১

মেহেরপুরে ভৈরব নদ থেকে অর্ধগলিত নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনা
প্রতিবেদক, মেহেরপুর:
পরিবারের অবাধ্য হয়ে চলাচল করায় পিতা শ্বাসরোধ করে তাঁর মেয়েকে হত্যা করেন। লাশ উদ্ধারের ঘটনার ৫৮ দিন পর অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করা মৃত ব্যক্তির পরিচয় জানার পর পিতা ফজলুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ। আটক পিতা বজলুর রহমান আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার পর বজলুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বজলুর রহমান তাঁর একমাত্র মেয়ে ববিতা ইয়াসমিনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পর বস্তাবন্দি করে ভৈরব নদী ফেলে দিয়েছিল। গত ২৫ মার্চ রাতে ভৈরব নদ থেকে অর্ধগলিত ববিতার লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় মৃতব্যক্তির কোনো পরিচয় না পাওয়ায় অজ্ঞাত হিসেবে লাশ দাফন করা হয। ঘটনার পর থেকে মেহেরপুর সদর থানার ইন্সপেক্টর রাসুল সামদানী বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের একপর্যায়ে মৃত ব্যক্তির গায়ের কামিজ দেখে ববিতার একটি ছবি সংগ্রহ করে ছবির কামিজের সঙ্গে মিলে যাওয়ার পর ববিতার পিতা বজলুর রহমান কে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন যে তাঁর কন্যা ববিতাকে কীভাবে খুন করে ভৈরব নদী ফেলে রাখা হয়। বজলুর রহমান জানান, এক পুত্র এক কন্যা সন্তানের মধ্যে কবিতা ছোট। তিন বছর পূর্বে সদর উপজেলার বেলতলা পাড়া গ্রামে জনৈক রাসেলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পরে তাঁর স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। বজলুর রহমান জানান, ‘স্বামীর সঙ্গে আমার মেয়ে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর পরিবারের কথা অমান্য করে ইচ্ছা মতো চলাফেরা শুরু করে। মাঝে মাঝেই ববিতার নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, মার্চ মাসের ২০-২১ তারিখে সন্ধ্যার দিকে কাথুলী গ্রামে তার এক আত্মীয় বাড়ি থেকে লেগুনাযোগে নিয়ে আসেন। সন্ধ্যার পর কুলবাড়িয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাছাকাছি পৌঁছে হঠাৎ করেই বজলুর রহমান তাঁর মেয়ে ববিতা ইয়াসমিনকে গলাটিপে ধরেন। ওই সময়ে সে মৃত্যুবরণ করলে মরদেহটি মাঠের মধ্যে কলাবাগানে নিয়ে রাখেন। পরে বাড়ি গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর ভৈরব নদে মাছ ধরার নাম করে একটি বস্তা এনে মরদেহটি বস্তার মধ্যে নিয়ে ভৈরব নদের ফেলে দেয়। পরে ২৫ মার্চ রাতে অর্ধগলিত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হলেও ওই সময় তাঁকে কেউ শনাক্ত করতে পারেনি। পরে অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মেহেরপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর ২৯, তারিখ ২৬ মার্চ ২০২১। পরে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় মেহেরপুর সদর থানার ইন্সপেক্টর রাসুল সামদানিকে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা সাসুল সামদানী জানান, তদন্তভার পাওয়ার পর থেকেই একাধিক সোর্স নিয়োগ করি। একপর্যায়ে মৃতব্যক্তির কামিজ নিয়ে লাশের পরিচয় জানার চেষ্টা করার একপর্যায়ে সোর্সের মাধ্যমে ববিতার একটি ছবি সংগ্রহ করি। ববিতার ছবির কামিজের সঙ্গে মৃতব্যক্তির গায়ে থাকা কামিজ মিলে যাওয়ার পর শনিবার সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বজলুর রহমানকে থানায় নিয়ে আসেন। থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করার এক পর্যায়ে তিনি তার কন্যা হত্যার দায় স্বীকার করেন।
বজলুর রহমান জানান, পরিবারের সকলের সাথে তাঁর সম্পর্ক ভালো ছিল না। তাঁর মেয়ে খারাপ পথে ধাবিত হয়েছে বিষয়টি জানতে পেরে তাঁকে খুন করা হয়। এদিকে শনিবার বিকেলের দিকে বজলুর রহমানকে মেহেরপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে বিচারক বেগম রাফিয়া সুলতানার কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। আর এরই সাথে টানা ৫৮ দিন পর অজ্ঞাত মহিলার পরিচয় উদ্ঘাটন এবং খুনের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে আটক করা হলো।