ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুরে সপ্তাহে ২ দিন দলিল রেজিষ্ট্রি : ভোগান্তি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • / ২৬৭ বার পড়া হয়েছে

মাসুদ রানা: মেহেরপুর সদর উপজেলার উজুলপুর গ্রাম থেকে সম্প্রতি সাব রেজিষ্টার অফিসে জমি রেজিষ্ট্রি করতে এসেছিলেন মসলেম উদ্দিন নামের এক বৃদ্ধ। এসে শুনালেন সপ্তাহে বুধ ও বৃহস্পতিবার এই দুইদিন ছাড়া জমি রেজিষ্ট্রি হয় না। বাধ্য হয়ে জমি রেজিষ্ট্রি না করেই পেরে ফিরে গেলেন বাড়িতে। পরে বুধবারে গিয়ে তিনি ওই জমি রেজিষ্ট্রি করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সংসারের অন্যান্য কাজ ফেলে রেখে ক্রয় করা জমি রেজিষ্ট্রি করতে এসেছেন। কিন্তু সাহেব (সাব-রেজিষ্টার) না থাকায় রেজিষ্ট্রি না করে বাড়ি চলে যেতে হচ্ছে। আগে থেকে জানলে কাজ কামায় করে আসতে হতো না। সরকারি অফিসে প্রত্যেকদিন রেজিষ্ট্রি হলে আর এই ঝাঁমেলা পোহাতে হয় না।
মেহেরপুর জেলা রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ের নিচতলায় সদর উপজেলার সাব-রেজিষ্ট্রার কাযালয়। দুই মাস আগেও সপ্তাহের রবি থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন লোকসমাগম লেগেই থাকতো। দিনে দিনে রেজিষ্ট্র শেষ করে মানুষজন যার যার কাজে ফিরে যেত। কিন্তু বর্তমানে সাব রেজিষ্ট্রার পদটি শুন্য থাকায় সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতিবার এই দুইদিন জমি রেজিষ্ট্রির কাজ চলছে। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সাব রেজিষ্টার শফিকুল ইসলামকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে মেহেরপুর সদর উপজেলার সাব রেজিষ্টার কার্যালয় পরিচালনা করতে হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে বর্তমানে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব রেজিষ্ট্রার শফিকুল ইসলাম এর আগে মেহেরপুর সাব রেজিষ্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি উর্দ্ধতন কার্যালয়কে ম্যানেজ করে নিজেই মেহেরপুর সাব রেজিষ্টার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়েছেন। অথচ জেলার গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা সাব রেজিষ্টার থাকা সত্ত্বেও তাঁকে দায়িত্ব দেয়াতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দুটি অফিসের রেজিষ্ট্রারের দায়িত্বে থাকায় নিজে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি একই সঙ্গে বাড়িতে যাতে ছুটি কাটাতে পারেন সে কারণেই তিনি এই অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়েছেন বলে অনেকই ধারণা করছেন। এছাড়া মেহেরপুর সাব রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ে দলিল প্রতি মোটা অংকের অর্থের বিনিময় না হলে দলিল রেজিষ্ট্রি করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। কিছু অসাধু দলিল লেখক ও অফিসের স্টাফদের যোগসাজশে সাব রেজিষ্ট্রার এই কাজটি করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব রেজিষ্টার শফিকুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাত্র দেড়শ দলিল দুই দিনে রেজিষ্ট্রি করা খুব বেশি ঝাঁমেলার কাজ না। সপ্তাহে দুইদিন দলিল রেজিষ্ট্রি হওয়াতে সবার একটু ভালোই হয়েছে। অন্যান্য দিনগুলোতে কাজের চাপ কমে গেছে। দলিল প্রতি টাকা নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই । কেউ আমার নাম ভাঙিয়ে টাকা নিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে মেহেরপুর সাব রেজিষ্টার অফিসে গড়ে ১৫০টি দলিল রেজিষ্ট্রি হয়। যে দলিলগুলো দুই মাস আগেও পাঁচ দিনে হত। সেগুলো করতে হচ্ছে মাত্র দুইদিনে। ফলে দলিল লেখক ও কার্যালয়ের স্টাফদের অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়।
মেহেরপুর সাব রেজিষ্টার অফিসের দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল খালেক বলেন, সপ্তাহে মাত্র দুইদিন দলিল রেজিষ্ট্রি করার কারণে অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। সাধারণ মানুষরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ থেকে রেহায় পাওয়ার দাবি জানাচ্ছি। মেহেরপুর জেলা রেজিষ্টার মিশনা চাকমা সরকারি সফরে ইংল্যান্ডে থাকায় তার সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, আশা করি শুন্য পদে খুব শিঘ্রই সাব রেজিষ্ট্রার পদায়ন হবে। সে পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে একটু ধৈয্য ধরতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মেহেরপুরে সপ্তাহে ২ দিন দলিল রেজিষ্ট্রি : ভোগান্তি

আপলোড টাইম : ০৯:১৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মাসুদ রানা: মেহেরপুর সদর উপজেলার উজুলপুর গ্রাম থেকে সম্প্রতি সাব রেজিষ্টার অফিসে জমি রেজিষ্ট্রি করতে এসেছিলেন মসলেম উদ্দিন নামের এক বৃদ্ধ। এসে শুনালেন সপ্তাহে বুধ ও বৃহস্পতিবার এই দুইদিন ছাড়া জমি রেজিষ্ট্রি হয় না। বাধ্য হয়ে জমি রেজিষ্ট্রি না করেই পেরে ফিরে গেলেন বাড়িতে। পরে বুধবারে গিয়ে তিনি ওই জমি রেজিষ্ট্রি করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সংসারের অন্যান্য কাজ ফেলে রেখে ক্রয় করা জমি রেজিষ্ট্রি করতে এসেছেন। কিন্তু সাহেব (সাব-রেজিষ্টার) না থাকায় রেজিষ্ট্রি না করে বাড়ি চলে যেতে হচ্ছে। আগে থেকে জানলে কাজ কামায় করে আসতে হতো না। সরকারি অফিসে প্রত্যেকদিন রেজিষ্ট্রি হলে আর এই ঝাঁমেলা পোহাতে হয় না।
মেহেরপুর জেলা রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ের নিচতলায় সদর উপজেলার সাব-রেজিষ্ট্রার কাযালয়। দুই মাস আগেও সপ্তাহের রবি থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন লোকসমাগম লেগেই থাকতো। দিনে দিনে রেজিষ্ট্র শেষ করে মানুষজন যার যার কাজে ফিরে যেত। কিন্তু বর্তমানে সাব রেজিষ্ট্রার পদটি শুন্য থাকায় সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতিবার এই দুইদিন জমি রেজিষ্ট্রির কাজ চলছে। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সাব রেজিষ্টার শফিকুল ইসলামকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে মেহেরপুর সদর উপজেলার সাব রেজিষ্টার কার্যালয় পরিচালনা করতে হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে বর্তমানে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব রেজিষ্ট্রার শফিকুল ইসলাম এর আগে মেহেরপুর সাব রেজিষ্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি উর্দ্ধতন কার্যালয়কে ম্যানেজ করে নিজেই মেহেরপুর সাব রেজিষ্টার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়েছেন। অথচ জেলার গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা সাব রেজিষ্টার থাকা সত্ত্বেও তাঁকে দায়িত্ব দেয়াতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দুটি অফিসের রেজিষ্ট্রারের দায়িত্বে থাকায় নিজে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি একই সঙ্গে বাড়িতে যাতে ছুটি কাটাতে পারেন সে কারণেই তিনি এই অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়েছেন বলে অনেকই ধারণা করছেন। এছাড়া মেহেরপুর সাব রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ে দলিল প্রতি মোটা অংকের অর্থের বিনিময় না হলে দলিল রেজিষ্ট্রি করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। কিছু অসাধু দলিল লেখক ও অফিসের স্টাফদের যোগসাজশে সাব রেজিষ্ট্রার এই কাজটি করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব রেজিষ্টার শফিকুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাত্র দেড়শ দলিল দুই দিনে রেজিষ্ট্রি করা খুব বেশি ঝাঁমেলার কাজ না। সপ্তাহে দুইদিন দলিল রেজিষ্ট্রি হওয়াতে সবার একটু ভালোই হয়েছে। অন্যান্য দিনগুলোতে কাজের চাপ কমে গেছে। দলিল প্রতি টাকা নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই । কেউ আমার নাম ভাঙিয়ে টাকা নিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে মেহেরপুর সাব রেজিষ্টার অফিসে গড়ে ১৫০টি দলিল রেজিষ্ট্রি হয়। যে দলিলগুলো দুই মাস আগেও পাঁচ দিনে হত। সেগুলো করতে হচ্ছে মাত্র দুইদিনে। ফলে দলিল লেখক ও কার্যালয়ের স্টাফদের অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়।
মেহেরপুর সাব রেজিষ্টার অফিসের দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল খালেক বলেন, সপ্তাহে মাত্র দুইদিন দলিল রেজিষ্ট্রি করার কারণে অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। সাধারণ মানুষরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ থেকে রেহায় পাওয়ার দাবি জানাচ্ছি। মেহেরপুর জেলা রেজিষ্টার মিশনা চাকমা সরকারি সফরে ইংল্যান্ডে থাকায় তার সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, আশা করি শুন্য পদে খুব শিঘ্রই সাব রেজিষ্ট্রার পদায়ন হবে। সে পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে একটু ধৈয্য ধরতে হবে।