ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুরে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে গ্রাহকের ভোগান্তি চরমে!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩০:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অগাস্ট ২০১৮
  • / ৫০৬ বার পড়া হয়েছে

মাসুদ রানা, মেহেরপুর: মেহেরপুর শহরে ফুলবাগানপাড়ার ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মেহেরপুর বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসে সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বসে আছেন। ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে তার নিকট থেকে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হিসেবে নেওয়া হয়েছে ১০৬৫ টাকা। অথচ তিনি প্রতিমাসে ঠিকমত বিল দিয়ে আসছেন।
বিদ্যুৎ অফিসে মনিরুল ইসলামকে বলা হয়, ‘হাতের লেখা লেজার বুকে বিল দেওয়া থাকলে সেই বিল সমন্বয় করা হবে।’ এই কথা বলে অফিস সহকারী কাজ ফেলে চলে যান চা খেতে। তাই তিনি সেখানেই অপেক্ষায় রয়েছেন। শহরের কাশ্যবপাড়ার আনোয়ারা খাতুন। তার স্বামী বাবু বিশ্বাস একই ঝামেলা নিয়ে এসেছেন বিদ্যুৎ অফিসে। তিনি জানান, চলতি জুলাই মাসের বিল এসেছে ২৭৮৩ টাকা। অথচ ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে বকেয়া দেখিয়ে বিল দেখানো হয়েছে ২০২২ টাকা। তিনিও সকালে অফিসে এসে বিষয়টি জানালে হাতে লেখার লেজার দেখে নিশ্চিত হন তার ওই মাসের বিল দেওয়া আছে। কর্মকর্তারা তখন হাতে লেখা লেজার বইতে গ্রাহকের বকেয়া নেই বলে প্রত্যায়ন দিলে কম্পিউটার শাখা থেকে নতুন করে বিল তৈরি করে দেওয়া হয়।
একই সমস্যা নিয়ে এসেছেন ফুলবাগানপাড়ার ইদ্রিস আলী, শহরের তাতীপাড়ার জাকিরুল ইসলাম, ফুলবাগান পাড়ার আব্দুস সাত্তার, তাতীপাড়ার আব্দুল কুদ্দুসসহ প্রায় শতাধিক গ্রাহক।
গ্রাহকরা অভিযোগ করে জানান, ১১ বছর আগে বিল দেওয়া হয়নি বলে চলতি বিলের কপির সঙ্গে সেই বকেয়া তুলে দেওয়া হচ্ছে কয়েকমাস আগে থেকে। পরপর দুই মাসের বিল বাকি থাকলেই লাইন কেটে (বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন) দেওয়া হয়। সেখানে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসের বিল বকেয়া দেখানো হচ্ছে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের হিসাব মতে সকাল থেকে যে পরিমাণ গ্রাহক এই অভিযোগ নিয়ে এসেছেন তাতে মনে হচ্ছে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে মেহেরপুরের কেউ বিদ্যুৎ বিল দেননি। গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ১১ বছর আগে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের কাগজ কিভাবে সংরক্ষণ করে রাখবো। যদি এই বিল দেওয়া লাগে তবে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনের শরণাপন্ন হবো।
মেহেরপুর বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর বিদ্যুৎ সরবরাহ শাখায় গ্রাহক রয়েছে ১৫ হাজার। ২০০৭ সালে গ্রাহক ছিল ৭ হাজার। লেজার বহির ঝামেলায় ওই সাত হাজার গ্রাহক প্রতিনিয়ত বকেয়া বিলের হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
মেহেরপুর বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশল আব্দুল আজিজ জানান, ২০০৭ সালের দিকে কোন কম্পিউটারইজ সিস্টেম ছিল না। তখন হাতে লেখা লেজার বহিতে পরিশোধিত বিলের তথ্য লিখে রাখা হতো।
অডিট আপত্তি চলায়, ২০০৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বিলের বকেয়াগুলো বিলের কাগজে লেখা হচ্ছে। যারা আপত্তি জানাচ্ছেন, তাদেরটা লেজার বহি দেখে সংশোধিত বিল করে দেওয়া হচ্ছে। তবে লেজার বহিতে ওই বিল পরিশোধ না উঠানো থাকলে সেক্ষেত্রে গ্রাহককে বকেয়া হিসেবে পরিশোধ করতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মেহেরপুরে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে গ্রাহকের ভোগান্তি চরমে!

আপলোড টাইম : ০৯:৩০:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অগাস্ট ২০১৮

মাসুদ রানা, মেহেরপুর: মেহেরপুর শহরে ফুলবাগানপাড়ার ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মেহেরপুর বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসে সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বসে আছেন। ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে তার নিকট থেকে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হিসেবে নেওয়া হয়েছে ১০৬৫ টাকা। অথচ তিনি প্রতিমাসে ঠিকমত বিল দিয়ে আসছেন।
বিদ্যুৎ অফিসে মনিরুল ইসলামকে বলা হয়, ‘হাতের লেখা লেজার বুকে বিল দেওয়া থাকলে সেই বিল সমন্বয় করা হবে।’ এই কথা বলে অফিস সহকারী কাজ ফেলে চলে যান চা খেতে। তাই তিনি সেখানেই অপেক্ষায় রয়েছেন। শহরের কাশ্যবপাড়ার আনোয়ারা খাতুন। তার স্বামী বাবু বিশ্বাস একই ঝামেলা নিয়ে এসেছেন বিদ্যুৎ অফিসে। তিনি জানান, চলতি জুলাই মাসের বিল এসেছে ২৭৮৩ টাকা। অথচ ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে বকেয়া দেখিয়ে বিল দেখানো হয়েছে ২০২২ টাকা। তিনিও সকালে অফিসে এসে বিষয়টি জানালে হাতে লেখার লেজার দেখে নিশ্চিত হন তার ওই মাসের বিল দেওয়া আছে। কর্মকর্তারা তখন হাতে লেখা লেজার বইতে গ্রাহকের বকেয়া নেই বলে প্রত্যায়ন দিলে কম্পিউটার শাখা থেকে নতুন করে বিল তৈরি করে দেওয়া হয়।
একই সমস্যা নিয়ে এসেছেন ফুলবাগানপাড়ার ইদ্রিস আলী, শহরের তাতীপাড়ার জাকিরুল ইসলাম, ফুলবাগান পাড়ার আব্দুস সাত্তার, তাতীপাড়ার আব্দুল কুদ্দুসসহ প্রায় শতাধিক গ্রাহক।
গ্রাহকরা অভিযোগ করে জানান, ১১ বছর আগে বিল দেওয়া হয়নি বলে চলতি বিলের কপির সঙ্গে সেই বকেয়া তুলে দেওয়া হচ্ছে কয়েকমাস আগে থেকে। পরপর দুই মাসের বিল বাকি থাকলেই লাইন কেটে (বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন) দেওয়া হয়। সেখানে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসের বিল বকেয়া দেখানো হচ্ছে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের হিসাব মতে সকাল থেকে যে পরিমাণ গ্রাহক এই অভিযোগ নিয়ে এসেছেন তাতে মনে হচ্ছে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে মেহেরপুরের কেউ বিদ্যুৎ বিল দেননি। গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ১১ বছর আগে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের কাগজ কিভাবে সংরক্ষণ করে রাখবো। যদি এই বিল দেওয়া লাগে তবে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনের শরণাপন্ন হবো।
মেহেরপুর বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর বিদ্যুৎ সরবরাহ শাখায় গ্রাহক রয়েছে ১৫ হাজার। ২০০৭ সালে গ্রাহক ছিল ৭ হাজার। লেজার বহির ঝামেলায় ওই সাত হাজার গ্রাহক প্রতিনিয়ত বকেয়া বিলের হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
মেহেরপুর বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশল আব্দুল আজিজ জানান, ২০০৭ সালের দিকে কোন কম্পিউটারইজ সিস্টেম ছিল না। তখন হাতে লেখা লেজার বহিতে পরিশোধিত বিলের তথ্য লিখে রাখা হতো।
অডিট আপত্তি চলায়, ২০০৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বিলের বকেয়াগুলো বিলের কাগজে লেখা হচ্ছে। যারা আপত্তি জানাচ্ছেন, তাদেরটা লেজার বহি দেখে সংশোধিত বিল করে দেওয়া হচ্ছে। তবে লেজার বহিতে ওই বিল পরিশোধ না উঠানো থাকলে সেক্ষেত্রে গ্রাহককে বকেয়া হিসেবে পরিশোধ করতে হবে।