ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুরে ফসলি জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে ক্ষতিকর পার্থেনিয়াম

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৫:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • / ৫৭২ বার পড়া হয়েছে

মেহের আমজাদ: পার্থেনিয়াম একটি আগাছার নাম। এটি ফসল, মানবদেহ এমনিক গবাদি পশুর জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর আগাছা। এটির আদি আবাস নর্থ আমেরিকায় হলেও এখন বিস্তার লাভ করেছে মেহেরপুরের বিভন্ন সড়ক ও ফসলি জমিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমিতে এ আগাছা বিস্তার লাভ করলে ফসলের ফলন ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এছাড়াও মানবদেহ ও গবাদিপশুর মিউট্রেশনও ঘটিয়ে দিতে পারে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে আগাছাটির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করার পাশাপাশি আগাছাটি নিধনে কাজ করছেন তারা।
কৃষির নিরব ঘাতক নামে পরিচিত পার্থেনিয়াম। এর বৈজ্ঞানিক নাম পর্থেনিয়াম হাইড্রোফোরাস। ভয়ঙ্কর এ আগাছাটি ইতোমধ্যে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী। একটি আগাছা থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার বীজ হতে পারে। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় সড়কের দু’পাশ ও ফসলের মাঠে ঝোপ ঝোপ আকারে ছোট ছোট সাদা ফুল ও ফল ধরা আগাছাগুলো চোখে পড়ে সকলের। গেল কয়েক বছর আগে মেহেরপুরের বিভিন্ন সড়কের দু’পাশে এসব আগাছা দেখা দিলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে কৃষি জমিতেও। তবে কৃষকরা জানেনা এ আগাছাটির ব্যাপক ক্ষতিকর দিক। আগাছা নিরোধক বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করেও দমন করা কঠিন হয়ে পড়ছে এটি। ফলে এসব আগাছার প্রভাবে ফসলের উৎপাদনও কমে যাচ্ছে বলে জানান কৃষকরা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের কৃষক কায়েম উদ্দীন বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে রাস্তার দু’পাশে আগাছাগুলো দেখা যেত। এসব আগাছা এখন ফসলের জমিতেও ছড়িয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই জমিতে আগাছা থাকলে ফসলের উৎপাদন কমে যায়। তার উপরে এসব আগাছা নাকি মানুষেরও ক্ষতি করে তা আগে জানতাম না। কৃষি বিভাগের লোকজন জানান ওইসব আগাছা কোন ক্রমেই বাড়তে দেওয়া যাবেনা। কারন তা ফসল সহ জীবেরও ক্ষতি করে। গাংনী উপজেলার সহগোলপুর গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান জানান, আগাছা গুলো রাস্তার ধারে ফুল ফলে ভরে থাকতো, দেখতে বেশ ভালই লাগতো। এখন দেখছি এই আগাছা আমাদের সর্বনাশ করছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে আগাছা উপড়ে ফেলা সহ বিষ প্রয়োগ করে মারার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এসব আগাছায় বিষ প্রয়োগে কাজ হচ্ছে কম ।
মেহেরপুর সরকারী কলেজের জীব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন খান জানান, পার্থেনিয়াম একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এটি অত্যান্ত ক্ষতিকর। এ আগাছাটির প্রভাবে জমিতে ফসলের উৎপাদন ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ধান, গম, ডাল সহ নানা রকম ফসল আমাদানির মাধ্যমে এটি দেশে বিস্তার লাভ করেছে বলে জানান তিনি। আগাছাটির ক্ষতিকর প্রভাব শুধু ফসলেই নয় এটি মানবদেহ ও গবাদি পশুর মিউট্রেশন ঘটিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও এটির সংস্পর্শে আসলে এ্যালার্জি, এ্যাজমা, স্কিন ডিজিজ, ব্রঙ্কোলাইটিস সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আক্তারুজ্জামান বলেন, আগাছাটি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন মাঠ দিবসে এটির ক্ষতিকর দিকগুলো কৃষকদের মাঝে তুলে ধরা হচ্ছে। কৃষকরাও কৃষি বিভাগের পরামর্শ মেনে আগাছা নিধন করে ভাল ফল পাচ্ছে। তবে আগাছটি নির্মূলে সামাজিকভাবে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মেহেরপুরে ফসলি জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে ক্ষতিকর পার্থেনিয়াম

আপলোড টাইম : ০৯:৩৫:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

মেহের আমজাদ: পার্থেনিয়াম একটি আগাছার নাম। এটি ফসল, মানবদেহ এমনিক গবাদি পশুর জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর আগাছা। এটির আদি আবাস নর্থ আমেরিকায় হলেও এখন বিস্তার লাভ করেছে মেহেরপুরের বিভন্ন সড়ক ও ফসলি জমিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমিতে এ আগাছা বিস্তার লাভ করলে ফসলের ফলন ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এছাড়াও মানবদেহ ও গবাদিপশুর মিউট্রেশনও ঘটিয়ে দিতে পারে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে আগাছাটির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করার পাশাপাশি আগাছাটি নিধনে কাজ করছেন তারা।
কৃষির নিরব ঘাতক নামে পরিচিত পার্থেনিয়াম। এর বৈজ্ঞানিক নাম পর্থেনিয়াম হাইড্রোফোরাস। ভয়ঙ্কর এ আগাছাটি ইতোমধ্যে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী। একটি আগাছা থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার বীজ হতে পারে। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় সড়কের দু’পাশ ও ফসলের মাঠে ঝোপ ঝোপ আকারে ছোট ছোট সাদা ফুল ও ফল ধরা আগাছাগুলো চোখে পড়ে সকলের। গেল কয়েক বছর আগে মেহেরপুরের বিভিন্ন সড়কের দু’পাশে এসব আগাছা দেখা দিলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে কৃষি জমিতেও। তবে কৃষকরা জানেনা এ আগাছাটির ব্যাপক ক্ষতিকর দিক। আগাছা নিরোধক বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করেও দমন করা কঠিন হয়ে পড়ছে এটি। ফলে এসব আগাছার প্রভাবে ফসলের উৎপাদনও কমে যাচ্ছে বলে জানান কৃষকরা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের কৃষক কায়েম উদ্দীন বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে রাস্তার দু’পাশে আগাছাগুলো দেখা যেত। এসব আগাছা এখন ফসলের জমিতেও ছড়িয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই জমিতে আগাছা থাকলে ফসলের উৎপাদন কমে যায়। তার উপরে এসব আগাছা নাকি মানুষেরও ক্ষতি করে তা আগে জানতাম না। কৃষি বিভাগের লোকজন জানান ওইসব আগাছা কোন ক্রমেই বাড়তে দেওয়া যাবেনা। কারন তা ফসল সহ জীবেরও ক্ষতি করে। গাংনী উপজেলার সহগোলপুর গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান জানান, আগাছা গুলো রাস্তার ধারে ফুল ফলে ভরে থাকতো, দেখতে বেশ ভালই লাগতো। এখন দেখছি এই আগাছা আমাদের সর্বনাশ করছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে আগাছা উপড়ে ফেলা সহ বিষ প্রয়োগ করে মারার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এসব আগাছায় বিষ প্রয়োগে কাজ হচ্ছে কম ।
মেহেরপুর সরকারী কলেজের জীব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন খান জানান, পার্থেনিয়াম একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এটি অত্যান্ত ক্ষতিকর। এ আগাছাটির প্রভাবে জমিতে ফসলের উৎপাদন ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ধান, গম, ডাল সহ নানা রকম ফসল আমাদানির মাধ্যমে এটি দেশে বিস্তার লাভ করেছে বলে জানান তিনি। আগাছাটির ক্ষতিকর প্রভাব শুধু ফসলেই নয় এটি মানবদেহ ও গবাদি পশুর মিউট্রেশন ঘটিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও এটির সংস্পর্শে আসলে এ্যালার্জি, এ্যাজমা, স্কিন ডিজিজ, ব্রঙ্কোলাইটিস সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আক্তারুজ্জামান বলেন, আগাছাটি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন মাঠ দিবসে এটির ক্ষতিকর দিকগুলো কৃষকদের মাঝে তুলে ধরা হচ্ছে। কৃষকরাও কৃষি বিভাগের পরামর্শ মেনে আগাছা নিধন করে ভাল ফল পাচ্ছে। তবে আগাছটি নির্মূলে সামাজিকভাবে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।