ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুরের গড়পুকুরে নির্মাণ হচ্ছে আকর্ষণীয় বিনোদন কেন্দ্র

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৪৪:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৩ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
বর্গীদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে রাজা গোয়ালা চৌধুরী সমগ্র বাড়ির চারপাশে পরিখা খনন করেন। যার ধ্বংসাবশেষ মেহেরপুর গড়পুকুর। এই গড়পুকুর কালের সাক্ষী হয়ে এখনো টিকে আছে। ঐতিহ্যবাহী গড়পুকুরকে আকর্ষণীয় বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে নির্মাণ কাজ শুরু করেছে মেহেরপুর পৌরসভা। মেহেরপুরের পৌর মেয়র ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ১১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১ বিঘার গড়পুকুরকে বিনোদন কেন্দ্রে রূপান্তর করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কাজ অনেকটা দৃশ্যমান। কাজ শেষ হলে গড়পুকুর হবে জেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। ২০০৮ সালে সাবেক পৌর মেয়রের সময় কোটি টাকা ব্যয়ে গড়পুকুরে ক্যাবলকারসহ নাগরদোলা দিয়ে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন। তবে ক্যাবলকার পুকুরের মাঝখানে বন্ধ হয়ে শিশুরা আটকে যাওয়ায় এবং নাগরদোলা মানসম্মত না হওয়ায় মানুষ বিমুখ হয়ে পড়ে। ফলে এটি বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় গড়পুকুর পাড়ে মাছ ব্যবসায়ীরা মাছের বাজার তৈরি করেন। তাতে গড়পাড়ের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়া ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার আরো একটি কারণ বলে মনে করেন অনেক পৌরবাসী। বর্তমান মেয়র রিটন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন গড়পুকুরকে ঘিরে পৌরবাসীর জন্য বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলবেন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি’র) অর্থায়নে। প্রাক্কলিত মূল্য ১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা ধরা হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বগুড়ার মেসার্স মাসুমা বেগম এন্টারপ্রাইজ চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ১১ কোটি ৫৬ লাখ টাকায়। কাজ দৃশ্যমান হয়েছে। জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো: মিলন আশা প্রকাশ করছেন।
মেয়র রিটন জানান, বিভিন্ন কারণে গড়পুকুরকে ঘিরে বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ এতদিন আটকে ছিল। বিভিন্ন দেশের পুকুর ও নদীভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্র দেখে নকশা করা হয়েছে। এটি নির্মাণ হলে খুলনা বিভাগের মধ্যে এটি হবে এক ব্যতিক্রম বিনোদন কেন্দ্র। বিনোদন কেন্দ্র শিশুদের সামাজিকীকরণে বড়ই প্রভাব ফেলে। শিশুদের ভাবনার সীমাবদ্ধতাকে দূর করতেই গড়পুকুরকে কেন্দ্র করে বিনোদন কেন্দ্র গড়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। তিনি জানান, গড়পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধনে ঢাল সুরক্ষা বেস্টনি, থাকবে গণমানুষের জন্য দুটি পাবলিক টয়লেট, নিরাপত্তা রক্ষীর কামরা, শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা, পুরো গড় এলাকা হবে সবুজ বেস্টনি, পুকুরের চতুর্দিকে ওয়াকওয়ে, পুকুরের দক্ষিণ দিকে থাকবে নাট্যমঞ্চ, থাকবে চারদিকজুড়ে কংক্রিট বেঞ্চ, দুটি ফুড কর্নার, নারী-পুরুষের জন্য আলাদা চেঞ্জিং রুম, দুটি কফি হাউজ, গড়ের মাঝখানে ওভারব্রিজ, পুরো পুকুরজুড়ে থাকবে ৭টি সিঁড়ি, গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, শিশুদের বিনোদনের জন্য থাকবে বিভিন্ন ধরনের রাইড, টিকিট কাউন্টার ইত্যাদি। মেহেরপুরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাহবুবুল হক মন্টু জানান, এই বিনোদন কেন্দ্র নির্মিত হলে গড়পুকুর, মুজিবনগর স্মৃতি প্রকল্প, আমঝুপি কুঠিবাড়ি, নিগমানন্দ আশ্রম ও ভাটপাড়া কুঠিবাড়ি নিয়ে আন্তঃজেলা পর্যটন জোন গড়ে তুলতে হবে।
মেহেরপুরের ইতিহাস লেখক তোজাম্মেল আযম ঐতিহাসিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, একসময় অবিভক্ত নদীয়ার অন্তর্গত ছিল মেহেরপুরের জনপদ। নদীয়ার বিখ্যাত শাসক রাজা কৃষ্ণচন্দ্রও বেশ কিছুদিন মেহেরপুর শাসন করেছেন। রাজা গোয়ালা চৌধুরী পলাশীর যুদ্ধের আগে কৃষ্ণনগর থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণ করেছিলেন। ওই সড়ক ধরেই বর্গী দস্যুরা মেহেরপুরে এসে ধন-সম্পদ লুট করে নিয়ে যেত।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মেহেরপুরের গড়পুকুরে নির্মাণ হচ্ছে আকর্ষণীয় বিনোদন কেন্দ্র

আপলোড টাইম : ০৪:৪৪:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদন:
বর্গীদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে রাজা গোয়ালা চৌধুরী সমগ্র বাড়ির চারপাশে পরিখা খনন করেন। যার ধ্বংসাবশেষ মেহেরপুর গড়পুকুর। এই গড়পুকুর কালের সাক্ষী হয়ে এখনো টিকে আছে। ঐতিহ্যবাহী গড়পুকুরকে আকর্ষণীয় বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে নির্মাণ কাজ শুরু করেছে মেহেরপুর পৌরসভা। মেহেরপুরের পৌর মেয়র ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ১১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১ বিঘার গড়পুকুরকে বিনোদন কেন্দ্রে রূপান্তর করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কাজ অনেকটা দৃশ্যমান। কাজ শেষ হলে গড়পুকুর হবে জেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। ২০০৮ সালে সাবেক পৌর মেয়রের সময় কোটি টাকা ব্যয়ে গড়পুকুরে ক্যাবলকারসহ নাগরদোলা দিয়ে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন। তবে ক্যাবলকার পুকুরের মাঝখানে বন্ধ হয়ে শিশুরা আটকে যাওয়ায় এবং নাগরদোলা মানসম্মত না হওয়ায় মানুষ বিমুখ হয়ে পড়ে। ফলে এটি বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় গড়পুকুর পাড়ে মাছ ব্যবসায়ীরা মাছের বাজার তৈরি করেন। তাতে গড়পাড়ের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়া ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার আরো একটি কারণ বলে মনে করেন অনেক পৌরবাসী। বর্তমান মেয়র রিটন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন গড়পুকুরকে ঘিরে পৌরবাসীর জন্য বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলবেন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি’র) অর্থায়নে। প্রাক্কলিত মূল্য ১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা ধরা হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বগুড়ার মেসার্স মাসুমা বেগম এন্টারপ্রাইজ চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ১১ কোটি ৫৬ লাখ টাকায়। কাজ দৃশ্যমান হয়েছে। জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো: মিলন আশা প্রকাশ করছেন।
মেয়র রিটন জানান, বিভিন্ন কারণে গড়পুকুরকে ঘিরে বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ এতদিন আটকে ছিল। বিভিন্ন দেশের পুকুর ও নদীভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্র দেখে নকশা করা হয়েছে। এটি নির্মাণ হলে খুলনা বিভাগের মধ্যে এটি হবে এক ব্যতিক্রম বিনোদন কেন্দ্র। বিনোদন কেন্দ্র শিশুদের সামাজিকীকরণে বড়ই প্রভাব ফেলে। শিশুদের ভাবনার সীমাবদ্ধতাকে দূর করতেই গড়পুকুরকে কেন্দ্র করে বিনোদন কেন্দ্র গড়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। তিনি জানান, গড়পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধনে ঢাল সুরক্ষা বেস্টনি, থাকবে গণমানুষের জন্য দুটি পাবলিক টয়লেট, নিরাপত্তা রক্ষীর কামরা, শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা, পুরো গড় এলাকা হবে সবুজ বেস্টনি, পুকুরের চতুর্দিকে ওয়াকওয়ে, পুকুরের দক্ষিণ দিকে থাকবে নাট্যমঞ্চ, থাকবে চারদিকজুড়ে কংক্রিট বেঞ্চ, দুটি ফুড কর্নার, নারী-পুরুষের জন্য আলাদা চেঞ্জিং রুম, দুটি কফি হাউজ, গড়ের মাঝখানে ওভারব্রিজ, পুরো পুকুরজুড়ে থাকবে ৭টি সিঁড়ি, গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, শিশুদের বিনোদনের জন্য থাকবে বিভিন্ন ধরনের রাইড, টিকিট কাউন্টার ইত্যাদি। মেহেরপুরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাহবুবুল হক মন্টু জানান, এই বিনোদন কেন্দ্র নির্মিত হলে গড়পুকুর, মুজিবনগর স্মৃতি প্রকল্প, আমঝুপি কুঠিবাড়ি, নিগমানন্দ আশ্রম ও ভাটপাড়া কুঠিবাড়ি নিয়ে আন্তঃজেলা পর্যটন জোন গড়ে তুলতে হবে।
মেহেরপুরের ইতিহাস লেখক তোজাম্মেল আযম ঐতিহাসিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, একসময় অবিভক্ত নদীয়ার অন্তর্গত ছিল মেহেরপুরের জনপদ। নদীয়ার বিখ্যাত শাসক রাজা কৃষ্ণচন্দ্রও বেশ কিছুদিন মেহেরপুর শাসন করেছেন। রাজা গোয়ালা চৌধুরী পলাশীর যুদ্ধের আগে কৃষ্ণনগর থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণ করেছিলেন। ওই সড়ক ধরেই বর্গী দস্যুরা মেহেরপুরে এসে ধন-সম্পদ লুট করে নিয়ে যেত।