ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে মিয়ানমারে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১০:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ মার্চ ২০২১
  • / ৭৪ বার পড়া হয়েছে

গুলিতে নিহত আরো ৫; মিয়ানমার নাগরিকদের বিতাড়িত করবে না যুক্তরাষ্ট্র; শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার ২ সন্তানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
সমীকরণ প্রতিবেদন:
মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত পাঁচ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল শনিবার মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী মান্দালয়ে জান্তাবিরোধী প্রতিবাদ ও গ্রেফতার করা ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হলে পুলিশের গুলিতে দু’জন নিহতসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। রয়টার্স ও আলজাজিরা। এ ছাড়া দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় পিয়ায়ি শহরে একজনের মৃত্যু হয় এবং গত শুক্রবার রাতে বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের থারকেটায় পুলিশ স্টেশনের বাইরে গুলিবর্ষণে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে বিক্ষোভে নিরাপত্তাবাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত ৭০ জনের অধিক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ১৯৮৮ সালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নিহত এক ছাত্রের মৃত্যুবার্ষিকী ঘিরে যখন জোরালো প্রতিবাদের ডাক দেয়া হয়েছে, তখন নতুন করে পাঁচজনের প্রাণহানির খবর এসেছে। ১৯৮৮ সালের বিক্ষোভে কমপক্ষে তিন হাজার বিক্ষোভকারী মারা যায়, আর ২০০৭ সালে মারা গিয়েছিলেন ৩০ জন। দুই ঘটনাতেই হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। এ দিকে পুলিশের বহু কর্মকর্তা এই ধরপাকড়ে অংশ নিতে অস্বীকার জানিয়েছেন। তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতীয় রাজ্য মিজোরামে প্রবেশ করেন। শুক্রবার পর্যন্ত ২৬৪ জন মিয়ানমারের নাগরিক পালিয়ে ভারতে চলে গেছেন। তাদের মধ্যে ১৯৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার। সামরিক বাহিনীর অধীন পুলিশ বাহিনীতে কাজ করতে অনীহা থেকেই তারা ভারতে আশ্রয় নেন বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সম্প্রতি মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ-আন্দোলন ঠেকাতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সেনা সরকার। রাজপথের বিক্ষোভ ঠেকাতে প্রতিদিনই গুলি চালানো হচ্ছে। রাতের আঁধারে ঘরে ঘরে চালানো হচ্ছে তল্লাশি অভিযান। পুলিশ হেফাজতে হত্যা, গুম-খুন-অপহরণ চলছে অহরহ।
এবার টার্গেট করা হয়েছে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। ডাক্তার-নার্স-ইঞ্জিনিয়ার ও সরকারি চাকরিজীবীদের উদ্দেশে আগেই হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল, কাজে না ফিরলে ৮ মার্চের পর থেকে গণহারে বরখাস্ত করা হবে। পসই রেশ ধরেই বুধবার দিনেদুপুরে অভিযান চালানো হলো ইয়াঙ্গুনের একটি বড় রেলস্টেশন ও রেলস্টাফ কলোনিতে। উচ্ছেদ করা হলো শত শত রেল পরিবারকে।
উল্লেখ্য, সাধারণ নির্বাচনের পর এনএলডি পার্টি বিপুল ব্যবধানে জয় পাওয়ার পর গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। এর আগে ১৯৮৮ ও ২০০৭ সালে দেশটির কয়েক দশকব্যাপী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।
মিয়ানমারের নাগরিকদের বিতাড়িত করবে না যুক্তরাষ্ট্র: সেনা অভ্যুত্থানের ফলে মিয়ানমারে সৃষ্টি হওয়া বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে আপাতত দেশটির নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত না করার এবং তাদের কাজের অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট থেকে শুক্রবার এ ঘোষণা দেয়া হয়। এর অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা মিয়ানমারের প্রায় ১৬ শ’ নাগরিক, যাদের মধ্যে কূটনীতিকরাও আছেন তারা ১৮ মাসের জন্য টেম্পোরারি প্রোটেক্টেড স্ট্যাটাস (টিপিএস) পাচ্ছেন। টিপিএস প্রকল্পের আওতায় ওই সব শরণার্থী যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যুদ্ধের কারণে নিজ দেশে নিরাপদে ফিরতে পারছেন না তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার এবং কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়। উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে টিপিএস নবায়নের সুযোগও রয়েছে। বাইডেন প্রশাসন থেকে বলা হয়, সেনাবাহিনী মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের পর নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে দমনপীড়ন চলাচ্ছে, নির্বিচারে ধরপাড়ক চলছে এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি দিন দিন আরো বেশি খারাপ হচ্ছে; যে কারণে মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য নিজ দেশে ফেরা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া এই সুবিধা সবাই পাবেন না। ‘মিয়ানমার প্রকল্প’র আওতায় দেশটির ওই সব নাগরিক যারা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এবং ২০২১ সালের ১১ মার্চ পর্যন্ত বসবাসের বৈধ অনুমতিপত্র আছে; কেবল তারাই এই সুবিধা পাবেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা মিয়ানমারের কয়েকজন কূটনীতিক সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলেছেন এবং গণতন্ত্রের পক্ষে নিজেদের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। এমন একজন জাতিসঙ্ঘে মিয়ানমারের স্থায়ী দূত কিয়াও মোয়ে তুন।
বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, ওই সব কূটনীতিক যারা সাহসের সাথে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া গণবিক্ষোভের পক্ষে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন, তারাও এই প্রকল্পের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করতে পারবেন। ‘আমরা তাদের জানাতে চাই, আপনারা নিরাপদেই এ কাজ করতে পারবেন।’
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার ২ সন্তান: মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা মিন অং হ্লাইংয়ের দুই সন্তান এবং সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত ছয়টি কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিক্ষোভ দমনে ক্রমেই সহিংস হয়ে ওঠা সেনা-সরকারের বিরুদ্ধে চাপ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাইডেন প্রশাসনের অর্থবিভাগ থেকে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
এ দিকে মিয়ানমারবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইরাবতির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জেনারেল মিনের দুই সন্তান অং পায়ে সোন এবং খিন থিরি থেট মনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একই সাথে তাদের পরিচালিত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন ট্রেজারি অফিসের বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ (ওএফএসি)।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑ অ্যা অ্যান্ড এম মাহার কোম্পানি লিমিটেড, স্কাই ওয়ান কনস্ট্রাকশন, দ্য ইয়াঙ্গুন রেস্টুরেন্ট, ইয়াঙ্গুন গ্যালারি এবং এভারফিট কোম্পানি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এবং বাবার নাম ব্যবহার করে অবৈধভাবে প্রভাব খাটাতেন অং পায়ে সোন এবং খিন থিরি থেট মন।
মহাকাশে মিয়ানমারের প্রথম স্যাটেলাইট আটকে দিলো জাপান: সেনা অভ্যুত্থানের জেরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মিয়ানমারের প্রথম স্যাটেলাইট আটকে দিয়েছে জাপান। জাপানের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র এবং জাপানি একটি বিশ্ববিদ্যালয় মিয়ানমারের স্যাটেলাইটের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কর্মকর্তা। মিয়ানমার সরকারের অর্থায়নে মিয়ানমার অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি (এমএইইউ) এবং জাপানের হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে এক কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয়ে ওই স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করে।
ওই স্যাটেলাইটটি মূলত মিয়ানমারের কৃষি ও মৎস্য খাতের ওপর নজরদারির জন্য তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর এখন কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন এবং জাপানের কয়েকজন কর্মকর্তা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, জান্তাবাহিনী হয়তো স্যাটেলাইটটি সামরিক খাতে ব্যবহার করতে চাইবে। গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতার দখল নেয় দেশটির সেনাবাহিনী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কর্মকর্তা বলেন, স্যাটেলাইটের পরবর্তী উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে জাপানের মহাকাশ গবেষণা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান জেএএক্সএর সাথে আলোচনা করছে। ‘সেনাবাহিনীর কাজে লাগে এমন কিছুর সাথে আমরা কোনোভাবেই জড়াব না। স্যাটেলাইটটি সে জন্য নকশা করা হয়নি।’
‘এখন কী করা হবে আমরা সেটি নিয়ে আলোচনা করছি। কিন্তু কবে নাগাদ পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে এ মুহূর্তে আমরা সে সম্পর্কে কিছুই বলতে পারছি না। যদি এটি বন্ধ রাখা হয়, তবে আশা করি প্রকল্পটি আবার ঠিক সেই জায়গা থেকেই শুরু হবে।’ মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একজন জাপান দেশটির সর্ববৃহৎ দাতা দেশ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে মিয়ানমারে

আপলোড টাইম : ১০:১০:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ মার্চ ২০২১

গুলিতে নিহত আরো ৫; মিয়ানমার নাগরিকদের বিতাড়িত করবে না যুক্তরাষ্ট্র; শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার ২ সন্তানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
সমীকরণ প্রতিবেদন:
মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত পাঁচ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল শনিবার মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী মান্দালয়ে জান্তাবিরোধী প্রতিবাদ ও গ্রেফতার করা ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হলে পুলিশের গুলিতে দু’জন নিহতসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। রয়টার্স ও আলজাজিরা। এ ছাড়া দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় পিয়ায়ি শহরে একজনের মৃত্যু হয় এবং গত শুক্রবার রাতে বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের থারকেটায় পুলিশ স্টেশনের বাইরে গুলিবর্ষণে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে বিক্ষোভে নিরাপত্তাবাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত ৭০ জনের অধিক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ১৯৮৮ সালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নিহত এক ছাত্রের মৃত্যুবার্ষিকী ঘিরে যখন জোরালো প্রতিবাদের ডাক দেয়া হয়েছে, তখন নতুন করে পাঁচজনের প্রাণহানির খবর এসেছে। ১৯৮৮ সালের বিক্ষোভে কমপক্ষে তিন হাজার বিক্ষোভকারী মারা যায়, আর ২০০৭ সালে মারা গিয়েছিলেন ৩০ জন। দুই ঘটনাতেই হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। এ দিকে পুলিশের বহু কর্মকর্তা এই ধরপাকড়ে অংশ নিতে অস্বীকার জানিয়েছেন। তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতীয় রাজ্য মিজোরামে প্রবেশ করেন। শুক্রবার পর্যন্ত ২৬৪ জন মিয়ানমারের নাগরিক পালিয়ে ভারতে চলে গেছেন। তাদের মধ্যে ১৯৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার। সামরিক বাহিনীর অধীন পুলিশ বাহিনীতে কাজ করতে অনীহা থেকেই তারা ভারতে আশ্রয় নেন বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সম্প্রতি মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ-আন্দোলন ঠেকাতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সেনা সরকার। রাজপথের বিক্ষোভ ঠেকাতে প্রতিদিনই গুলি চালানো হচ্ছে। রাতের আঁধারে ঘরে ঘরে চালানো হচ্ছে তল্লাশি অভিযান। পুলিশ হেফাজতে হত্যা, গুম-খুন-অপহরণ চলছে অহরহ।
এবার টার্গেট করা হয়েছে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। ডাক্তার-নার্স-ইঞ্জিনিয়ার ও সরকারি চাকরিজীবীদের উদ্দেশে আগেই হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল, কাজে না ফিরলে ৮ মার্চের পর থেকে গণহারে বরখাস্ত করা হবে। পসই রেশ ধরেই বুধবার দিনেদুপুরে অভিযান চালানো হলো ইয়াঙ্গুনের একটি বড় রেলস্টেশন ও রেলস্টাফ কলোনিতে। উচ্ছেদ করা হলো শত শত রেল পরিবারকে।
উল্লেখ্য, সাধারণ নির্বাচনের পর এনএলডি পার্টি বিপুল ব্যবধানে জয় পাওয়ার পর গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। এর আগে ১৯৮৮ ও ২০০৭ সালে দেশটির কয়েক দশকব্যাপী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।
মিয়ানমারের নাগরিকদের বিতাড়িত করবে না যুক্তরাষ্ট্র: সেনা অভ্যুত্থানের ফলে মিয়ানমারে সৃষ্টি হওয়া বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে আপাতত দেশটির নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত না করার এবং তাদের কাজের অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট থেকে শুক্রবার এ ঘোষণা দেয়া হয়। এর অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা মিয়ানমারের প্রায় ১৬ শ’ নাগরিক, যাদের মধ্যে কূটনীতিকরাও আছেন তারা ১৮ মাসের জন্য টেম্পোরারি প্রোটেক্টেড স্ট্যাটাস (টিপিএস) পাচ্ছেন। টিপিএস প্রকল্পের আওতায় ওই সব শরণার্থী যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যুদ্ধের কারণে নিজ দেশে নিরাপদে ফিরতে পারছেন না তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার এবং কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়। উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে টিপিএস নবায়নের সুযোগও রয়েছে। বাইডেন প্রশাসন থেকে বলা হয়, সেনাবাহিনী মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের পর নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে দমনপীড়ন চলাচ্ছে, নির্বিচারে ধরপাড়ক চলছে এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি দিন দিন আরো বেশি খারাপ হচ্ছে; যে কারণে মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য নিজ দেশে ফেরা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া এই সুবিধা সবাই পাবেন না। ‘মিয়ানমার প্রকল্প’র আওতায় দেশটির ওই সব নাগরিক যারা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এবং ২০২১ সালের ১১ মার্চ পর্যন্ত বসবাসের বৈধ অনুমতিপত্র আছে; কেবল তারাই এই সুবিধা পাবেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা মিয়ানমারের কয়েকজন কূটনীতিক সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলেছেন এবং গণতন্ত্রের পক্ষে নিজেদের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। এমন একজন জাতিসঙ্ঘে মিয়ানমারের স্থায়ী দূত কিয়াও মোয়ে তুন।
বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, ওই সব কূটনীতিক যারা সাহসের সাথে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া গণবিক্ষোভের পক্ষে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন, তারাও এই প্রকল্পের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করতে পারবেন। ‘আমরা তাদের জানাতে চাই, আপনারা নিরাপদেই এ কাজ করতে পারবেন।’
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার ২ সন্তান: মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা মিন অং হ্লাইংয়ের দুই সন্তান এবং সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত ছয়টি কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিক্ষোভ দমনে ক্রমেই সহিংস হয়ে ওঠা সেনা-সরকারের বিরুদ্ধে চাপ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাইডেন প্রশাসনের অর্থবিভাগ থেকে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
এ দিকে মিয়ানমারবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইরাবতির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জেনারেল মিনের দুই সন্তান অং পায়ে সোন এবং খিন থিরি থেট মনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একই সাথে তাদের পরিচালিত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন ট্রেজারি অফিসের বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ (ওএফএসি)।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑ অ্যা অ্যান্ড এম মাহার কোম্পানি লিমিটেড, স্কাই ওয়ান কনস্ট্রাকশন, দ্য ইয়াঙ্গুন রেস্টুরেন্ট, ইয়াঙ্গুন গ্যালারি এবং এভারফিট কোম্পানি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এবং বাবার নাম ব্যবহার করে অবৈধভাবে প্রভাব খাটাতেন অং পায়ে সোন এবং খিন থিরি থেট মন।
মহাকাশে মিয়ানমারের প্রথম স্যাটেলাইট আটকে দিলো জাপান: সেনা অভ্যুত্থানের জেরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মিয়ানমারের প্রথম স্যাটেলাইট আটকে দিয়েছে জাপান। জাপানের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র এবং জাপানি একটি বিশ্ববিদ্যালয় মিয়ানমারের স্যাটেলাইটের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কর্মকর্তা। মিয়ানমার সরকারের অর্থায়নে মিয়ানমার অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি (এমএইইউ) এবং জাপানের হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে এক কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয়ে ওই স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করে।
ওই স্যাটেলাইটটি মূলত মিয়ানমারের কৃষি ও মৎস্য খাতের ওপর নজরদারির জন্য তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর এখন কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন এবং জাপানের কয়েকজন কর্মকর্তা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, জান্তাবাহিনী হয়তো স্যাটেলাইটটি সামরিক খাতে ব্যবহার করতে চাইবে। গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতার দখল নেয় দেশটির সেনাবাহিনী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কর্মকর্তা বলেন, স্যাটেলাইটের পরবর্তী উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে জাপানের মহাকাশ গবেষণা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান জেএএক্সএর সাথে আলোচনা করছে। ‘সেনাবাহিনীর কাজে লাগে এমন কিছুর সাথে আমরা কোনোভাবেই জড়াব না। স্যাটেলাইটটি সে জন্য নকশা করা হয়নি।’
‘এখন কী করা হবে আমরা সেটি নিয়ে আলোচনা করছি। কিন্তু কবে নাগাদ পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে এ মুহূর্তে আমরা সে সম্পর্কে কিছুই বলতে পারছি না। যদি এটি বন্ধ রাখা হয়, তবে আশা করি প্রকল্পটি আবার ঠিক সেই জায়গা থেকেই শুরু হবে।’ মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একজন জাপান দেশটির সর্ববৃহৎ দাতা দেশ।