ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মুজিববর্ষে বাল্যবিবাহ ও মাদকের ক্ষেত্রে কোনো আপস নয়

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৮:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / ২০২ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেছেন, ‘এখন সময় আমাদের, এখন সময় বাংলাদেশের। কাউকে পেছনে ফেলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশকে সুখী সমৃদ্ধ উন্নত দেশে পরিণত করতে হবে। সমাজ থেকে সব প্রকার অপশক্তি রোধে আমাদের কাজ করতে হবে।’ গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গা জেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় সিভিল সার্জনের প্রতিনিধির উদ্দেশে জেলা প্রশাসক বলেন, করোনা ভাইরাস এই সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দর্শনা চেকপোস্টে সব সময় সবোর্চ্চ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। কমপক্ষে একজন এমবিবিএস ডাক্তার সব সময় থাকবেন। প্রয়োজনে রোস্টার করে ২৪ ঘণ্টায় ৬ ঘণ্টা করে চারজনকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যাঁরা ওখানে দায়িত্বে থাকবেন, তাঁদেরকেও সেইফ থাকতে হবে, মাস্ক-অ্যাপ্রোন পরতে হবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘সব ক্লাস রুমে ক্রমান্বয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর জন্য স্কুলগুলোকে তাগিদ দিন। চেষ্টা করলেই হবে। এবারে যে মেয়েগুলো এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি, তাদের খোঁজ নিয়ে আমাকে আগামী মিটিংয়ের আগেই জানাবেন। দেখতে হবে কেন তারা পরীক্ষা দিল না। স্কুলে স্কুলে শিক্ষকদের ভাগ করে দায়িত্ব দিয়ে দেন। শিক্ষকেরা সব সময় খোঁজ রাখবেন, কেন কেউ স্কুলে আসছে না। অনুপস্থিত হলেই খোঁজ নিতে হবে। আনুপাতিকভাবে ভাগ করে দায়িত্ব দিলে এটা খুব সহজ কাজ।’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে জেলার সর্বোচ্চ এ কর্মকর্তা বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুজিববর্ষে একটিও বাল্যবিবাহ হবে না। কোনোক্রমেই হতে দেওয়া যাবে না। বাল্যবিবাহের সঙ্গে জড়িত থাকলে চেয়ারম্যান কিংবা মেম্বার যেই হোক না কেন, ছাড় দেওয়া হবে না। কয়েকদিন আগেই দামুড়হুদায় একজন মেম্বারকে ছয় মাসের জেল দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী দুই বছরের মধ্যে শাস্তির বিধান আছে। সুতরাং বাল্যবিবাহ হওয়ার পরে সন্ধান পাওয়া যায়, তাহলেও শাস্তি দেওয়া হবে।
জেলা রেজিস্ট্রারের উদ্দেশে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, রেজিস্ট্রি অফিসের নামে বহু অভিযোগ। আবার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেজিস্ট্রি অফিসের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে। মাননীয় প্রদানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা আছে। দুর্নীতিকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মাদকের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে হবে। কমপক্ষে ছয় মাসের জেল দেওয়া হচ্ছে। আমি জেলখানায় তিনজন শিক্ষক রেখেছি, তাঁদেরকে ভালো শিক্ষা দেওয়ার জন্য। নৈতিক ও হাতের কাজের পাশাপাশি মাদকের কুফলের বিষয়েও তাঁদের জানানো হচ্ছে।’
সভায় চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু জানুয়ারি মাসে মাদক এবং বাল্যবিবাহের কারণে ২০টি প্রাণ ঝরে গেছে। এই দুটির ক্ষেত্রে পুলিশ সর্বদা সতর্ক। যেভাবেই হোক বাল্যবিবাহ ও মাদক শূন্যের কোটায় আনতে হবে। আগামী ১৫ তারিখ থেকে মহাসড়কে কোনোভাবেই নসিমন-করিমন, ভটভটি উঠতে দেওয়া হবে না। এ সময় পুলিশ সুপার আরও বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ অনেক এগিয়ে গেছে। এখন পুলিশ জনতার। এখন পুলিশকে কেউ গালি দেয় না। পুলিশ মানুষের বন্ধু হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ দেখিয়ে দিয়েছে, জঙ্গি দমন করে। বিদেশীরা এখন জানতে চাই, বাংলাদেশ পুলিশ কীভাবে এটা করল। বাংলাদেশ পুলিশের সুনাম করছে বিদেশীরা। আমরা নিজের বুকের রক্ত দিয়ে কাজ করছি। জনগণকে শান্তিতে ঘুমাতে দিচ্ছি। এ দেশের ভালোর জন্য সব করব। আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
সভায় চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমাদেরও কঠোর নির্দেশনা আছে। আমরা সবোর্চ্চ চেষ্টা করছি সব প্রকার চোরাচালান বন্ধ করতে। মাদক ব্যবসায়ীদের ধরলে সব বন্ধ হবে। তাই প্রমাণসহ আমরা মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, কাউকে ছাড় দেব না। কিছু নাম এসেছে, যা আপনারা শুনলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে পারেন। তবে আমি বলছি, প্রমাণসহ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, আটক করা হবে। আমরা সীমান্তে জনবল বৃদ্ধি করেছি। প্রতিনিয়ত সভা সমাবেশ করে মাদকের কুফলও মানুষকে জানানো হচ্ছে।’
সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিকুর রহমান, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিটন আলী, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মুনিম লিংকন, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম, জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, এনএসআইয়ের উপপরিচালক জামিল সিদ্দিক, জেলা জজ আদালতের পিপি বেলাল হোসেনসহ জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মুজিববর্ষে বাল্যবিবাহ ও মাদকের ক্ষেত্রে কোনো আপস নয়

আপলোড টাইম : ১০:৩৮:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২০

চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেছেন, ‘এখন সময় আমাদের, এখন সময় বাংলাদেশের। কাউকে পেছনে ফেলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশকে সুখী সমৃদ্ধ উন্নত দেশে পরিণত করতে হবে। সমাজ থেকে সব প্রকার অপশক্তি রোধে আমাদের কাজ করতে হবে।’ গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গা জেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় সিভিল সার্জনের প্রতিনিধির উদ্দেশে জেলা প্রশাসক বলেন, করোনা ভাইরাস এই সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দর্শনা চেকপোস্টে সব সময় সবোর্চ্চ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। কমপক্ষে একজন এমবিবিএস ডাক্তার সব সময় থাকবেন। প্রয়োজনে রোস্টার করে ২৪ ঘণ্টায় ৬ ঘণ্টা করে চারজনকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যাঁরা ওখানে দায়িত্বে থাকবেন, তাঁদেরকেও সেইফ থাকতে হবে, মাস্ক-অ্যাপ্রোন পরতে হবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘সব ক্লাস রুমে ক্রমান্বয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর জন্য স্কুলগুলোকে তাগিদ দিন। চেষ্টা করলেই হবে। এবারে যে মেয়েগুলো এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি, তাদের খোঁজ নিয়ে আমাকে আগামী মিটিংয়ের আগেই জানাবেন। দেখতে হবে কেন তারা পরীক্ষা দিল না। স্কুলে স্কুলে শিক্ষকদের ভাগ করে দায়িত্ব দিয়ে দেন। শিক্ষকেরা সব সময় খোঁজ রাখবেন, কেন কেউ স্কুলে আসছে না। অনুপস্থিত হলেই খোঁজ নিতে হবে। আনুপাতিকভাবে ভাগ করে দায়িত্ব দিলে এটা খুব সহজ কাজ।’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে জেলার সর্বোচ্চ এ কর্মকর্তা বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুজিববর্ষে একটিও বাল্যবিবাহ হবে না। কোনোক্রমেই হতে দেওয়া যাবে না। বাল্যবিবাহের সঙ্গে জড়িত থাকলে চেয়ারম্যান কিংবা মেম্বার যেই হোক না কেন, ছাড় দেওয়া হবে না। কয়েকদিন আগেই দামুড়হুদায় একজন মেম্বারকে ছয় মাসের জেল দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী দুই বছরের মধ্যে শাস্তির বিধান আছে। সুতরাং বাল্যবিবাহ হওয়ার পরে সন্ধান পাওয়া যায়, তাহলেও শাস্তি দেওয়া হবে।
জেলা রেজিস্ট্রারের উদ্দেশে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, রেজিস্ট্রি অফিসের নামে বহু অভিযোগ। আবার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেজিস্ট্রি অফিসের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে। মাননীয় প্রদানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা আছে। দুর্নীতিকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মাদকের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে হবে। কমপক্ষে ছয় মাসের জেল দেওয়া হচ্ছে। আমি জেলখানায় তিনজন শিক্ষক রেখেছি, তাঁদেরকে ভালো শিক্ষা দেওয়ার জন্য। নৈতিক ও হাতের কাজের পাশাপাশি মাদকের কুফলের বিষয়েও তাঁদের জানানো হচ্ছে।’
সভায় চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু জানুয়ারি মাসে মাদক এবং বাল্যবিবাহের কারণে ২০টি প্রাণ ঝরে গেছে। এই দুটির ক্ষেত্রে পুলিশ সর্বদা সতর্ক। যেভাবেই হোক বাল্যবিবাহ ও মাদক শূন্যের কোটায় আনতে হবে। আগামী ১৫ তারিখ থেকে মহাসড়কে কোনোভাবেই নসিমন-করিমন, ভটভটি উঠতে দেওয়া হবে না। এ সময় পুলিশ সুপার আরও বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ অনেক এগিয়ে গেছে। এখন পুলিশ জনতার। এখন পুলিশকে কেউ গালি দেয় না। পুলিশ মানুষের বন্ধু হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ দেখিয়ে দিয়েছে, জঙ্গি দমন করে। বিদেশীরা এখন জানতে চাই, বাংলাদেশ পুলিশ কীভাবে এটা করল। বাংলাদেশ পুলিশের সুনাম করছে বিদেশীরা। আমরা নিজের বুকের রক্ত দিয়ে কাজ করছি। জনগণকে শান্তিতে ঘুমাতে দিচ্ছি। এ দেশের ভালোর জন্য সব করব। আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
সভায় চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমাদেরও কঠোর নির্দেশনা আছে। আমরা সবোর্চ্চ চেষ্টা করছি সব প্রকার চোরাচালান বন্ধ করতে। মাদক ব্যবসায়ীদের ধরলে সব বন্ধ হবে। তাই প্রমাণসহ আমরা মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, কাউকে ছাড় দেব না। কিছু নাম এসেছে, যা আপনারা শুনলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে পারেন। তবে আমি বলছি, প্রমাণসহ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, আটক করা হবে। আমরা সীমান্তে জনবল বৃদ্ধি করেছি। প্রতিনিয়ত সভা সমাবেশ করে মাদকের কুফলও মানুষকে জানানো হচ্ছে।’
সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিকুর রহমান, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিটন আলী, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মুনিম লিংকন, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম, জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, এনএসআইয়ের উপপরিচালক জামিল সিদ্দিক, জেলা জজ আদালতের পিপি বেলাল হোসেনসহ জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।