ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদানকারী প্লাটুন কমান্ডার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ অক্টোবর ২০১৮
  • / ১৬০৮ বার পড়া হয়েছে

মুক্তিযোদ্ধা ইয়াদ আলীর ভাতা বন্ধ! মানবেতর জীবনযাপন
বারাদী প্রতিনিধি: মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদানকারী ১২ আনসার সদস্যের প্লাটুন কমান্ডার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইয়াদ আলীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন না তাঁর স্ত্রী আকলিমা খাতুন। নিয়মিতভাবে ভাতা পেলেও ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস থেকে ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন ইয়াদ আলীর স্ত্রী আশির উর্ধ বয়সী আকলিমা খাতুন। এরপর থেকে বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিয়েও এর সুরাহা করতে পারেননি তিনি। ২০০৫ সালের গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা ইয়াদ আলীর স্থলে একই নম্বরে ইয়াসিন আলীর নাম সংযোজন হয়। এটা ভুলক্রমেই হোক অথবা কোন মহলের ইন্ধনে হোক এই ভুলের খেসারত পাচ্ছেন এখন ইয়াদ আলীর স্ত্রী আকলিমা খাতুনসহ পরিবারের সদস্যরা।
মুক্তিযোদ্ধার ইয়াদ আলীর পিতার নাম ইনসান আলী ওরফে আবুল হোসেন। যার মুক্তিবার্তা নম্বর-০৪১০০১০৪৬৯। সদর উপজেলার বারাদী হাসানাবাদ গ্রামে বাড়ি। মুক্তিবার্তায় তার পিতার নাম হয় শুধু আবুল হোসেন। বাবার নামের সাথে মিল হওয়ায় পাশের গ্রাম মোমিনপুরের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে ইয়াসিন আলীর নাম সেখানে সংযোজন করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো নম্বর ঠিক রেখে কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা পরিবর্তন হলো? এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কোন দপ্তর। ২০০৫ সালের গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ইয়াদ আলীর কোন নাম নেই।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে ১২জন আনসার সদস্য গার্ড অব অনার প্রদান করেন। তাদের প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন ইয়াদ আলী। সেদিন থেকেই তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। স্বাধীনতার পরে সরকারের পক্ষ থেকে চাষাবাদের জন্য ৫৭ শতক জমি, বিদ্যুৎ সুবিধাসহ দুইকক্ষ বিশিষ্ট বাড়ি এবং দুই লাখ টাকার অনুদান দেয়া হয়েছে। পরে তিনি সাহসিকতার পুরষ্কার হিসেবে পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি আনসার ও ভিডিপি পদক। তার নামে গাজীপুরের শফিপুরে আনসার ও ভিডিপি প্রধান কার্যালয়ে ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ড নামে একটি প্যারেড গ্রাউন্ডের নামকরণ করা হয়েছে। তার নিজ গ্রাম হাসানাবাদে ইয়াদ আলী নামে আনসার ও ভিডিপি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তিনি ২০০২ সালের ১৫ এপ্রিল মারা যান।

অথচ ইতিহাস খ্যাত একজন মুক্তিযোদ্ধার গেজেটে নাম প্রকাশ না হওয়া এবং পরে ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এলাকাবাসীর মনে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাতা চালু করার দাবি জানিয়েছে তার সতীর্থ মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসীরা।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বশির আহমেদ বলেন, ইয়াদ আলী গার্ড অব অনার প্রদানকারী ১২ আনছার সদস্যদের কমান্ডার। তার ভাতা বন্ধ হয়েছে বিষয়টি জানা নেই। তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে তার ভাতা চালুর ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে।


জেলা আনছার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট আব্দুর রশীদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ইয়াদ আলী ভাতা পাচ্ছেন না এটা অসম্ভব ব্যাপার। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। তবে তার ভাতা যাতে পুনরায় চালু হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সদর উপজেলার পুরাতন দরবেশপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মুসা করিম জানান, ইয়াদ আলী মুক্তিযোদ্ধাদের গর্ব। তার নেতৃত্বেই প্রথম সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়েছিল। আজ একটি কুচক্রি মহল একযোগ হয়ে তার ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে যেটা জাতির জন্য কলঙ্ক।
মেহেরপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের রেজিষ্ট্রার রুমানা ইয়াসমিন জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। ইয়াদ আলীর বাবার নাম ভুল পাওয়া গেছে। সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে ইয়াদ আলী ভাতা পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে প্রতিবেদন দেয়া হবে।
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাসের সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা ইয়াদ আলী। ইতিহাসে তাঁর নাম লেখা রয়েছে। তাঁর ভাতা বন্ধ হয়ে গেলে বা গেজেটে তার নাম না থাকলে পুরো ইতিহাস পরিবর্তন হয়ে যাবে। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁর ভাতা চালুকরণ ও গেজেট সংশোধনের ব্যাপারে প্রদক্ষেপ নেয়া হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদানকারী প্লাটুন কমান্ডার

আপলোড টাইম : ১০:২৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ অক্টোবর ২০১৮

মুক্তিযোদ্ধা ইয়াদ আলীর ভাতা বন্ধ! মানবেতর জীবনযাপন
বারাদী প্রতিনিধি: মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদানকারী ১২ আনসার সদস্যের প্লাটুন কমান্ডার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইয়াদ আলীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন না তাঁর স্ত্রী আকলিমা খাতুন। নিয়মিতভাবে ভাতা পেলেও ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস থেকে ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন ইয়াদ আলীর স্ত্রী আশির উর্ধ বয়সী আকলিমা খাতুন। এরপর থেকে বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিয়েও এর সুরাহা করতে পারেননি তিনি। ২০০৫ সালের গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা ইয়াদ আলীর স্থলে একই নম্বরে ইয়াসিন আলীর নাম সংযোজন হয়। এটা ভুলক্রমেই হোক অথবা কোন মহলের ইন্ধনে হোক এই ভুলের খেসারত পাচ্ছেন এখন ইয়াদ আলীর স্ত্রী আকলিমা খাতুনসহ পরিবারের সদস্যরা।
মুক্তিযোদ্ধার ইয়াদ আলীর পিতার নাম ইনসান আলী ওরফে আবুল হোসেন। যার মুক্তিবার্তা নম্বর-০৪১০০১০৪৬৯। সদর উপজেলার বারাদী হাসানাবাদ গ্রামে বাড়ি। মুক্তিবার্তায় তার পিতার নাম হয় শুধু আবুল হোসেন। বাবার নামের সাথে মিল হওয়ায় পাশের গ্রাম মোমিনপুরের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে ইয়াসিন আলীর নাম সেখানে সংযোজন করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো নম্বর ঠিক রেখে কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা পরিবর্তন হলো? এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কোন দপ্তর। ২০০৫ সালের গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ইয়াদ আলীর কোন নাম নেই।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে ১২জন আনসার সদস্য গার্ড অব অনার প্রদান করেন। তাদের প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন ইয়াদ আলী। সেদিন থেকেই তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। স্বাধীনতার পরে সরকারের পক্ষ থেকে চাষাবাদের জন্য ৫৭ শতক জমি, বিদ্যুৎ সুবিধাসহ দুইকক্ষ বিশিষ্ট বাড়ি এবং দুই লাখ টাকার অনুদান দেয়া হয়েছে। পরে তিনি সাহসিকতার পুরষ্কার হিসেবে পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি আনসার ও ভিডিপি পদক। তার নামে গাজীপুরের শফিপুরে আনসার ও ভিডিপি প্রধান কার্যালয়ে ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ড নামে একটি প্যারেড গ্রাউন্ডের নামকরণ করা হয়েছে। তার নিজ গ্রাম হাসানাবাদে ইয়াদ আলী নামে আনসার ও ভিডিপি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তিনি ২০০২ সালের ১৫ এপ্রিল মারা যান।

অথচ ইতিহাস খ্যাত একজন মুক্তিযোদ্ধার গেজেটে নাম প্রকাশ না হওয়া এবং পরে ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এলাকাবাসীর মনে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাতা চালু করার দাবি জানিয়েছে তার সতীর্থ মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসীরা।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বশির আহমেদ বলেন, ইয়াদ আলী গার্ড অব অনার প্রদানকারী ১২ আনছার সদস্যদের কমান্ডার। তার ভাতা বন্ধ হয়েছে বিষয়টি জানা নেই। তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে তার ভাতা চালুর ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে।


জেলা আনছার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট আব্দুর রশীদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ইয়াদ আলী ভাতা পাচ্ছেন না এটা অসম্ভব ব্যাপার। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। তবে তার ভাতা যাতে পুনরায় চালু হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সদর উপজেলার পুরাতন দরবেশপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মুসা করিম জানান, ইয়াদ আলী মুক্তিযোদ্ধাদের গর্ব। তার নেতৃত্বেই প্রথম সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়েছিল। আজ একটি কুচক্রি মহল একযোগ হয়ে তার ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে যেটা জাতির জন্য কলঙ্ক।
মেহেরপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের রেজিষ্ট্রার রুমানা ইয়াসমিন জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। ইয়াদ আলীর বাবার নাম ভুল পাওয়া গেছে। সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে ইয়াদ আলী ভাতা পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে প্রতিবেদন দেয়া হবে।
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাসের সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা ইয়াদ আলী। ইতিহাসে তাঁর নাম লেখা রয়েছে। তাঁর ভাতা বন্ধ হয়ে গেলে বা গেজেটে তার নাম না থাকলে পুরো ইতিহাস পরিবর্তন হয়ে যাবে। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁর ভাতা চালুকরণ ও গেজেট সংশোধনের ব্যাপারে প্রদক্ষেপ নেয়া হবে।