ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মুক্তিযোদ্ধার তালিকা আবার যাচাই-বাছাই

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১৬:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুলাই ২০১৮
  • / ৩৫৬ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক: আবার শুরু হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া। বর্তমান সরকারের সময়েই যাতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা যায়, সে জন্য এ বিষয়ে আগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছে সরকার। গত ১২ মার্চ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। এই পদক্ষেপের সমালোচনা হয় বিভিন্ন স্তরে। প্রশ্ন ওঠে, টানা প্রায় ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে পারল না আওয়ামী লীগ সরকার? ফলে যেভাবেই হোক এ তালিকা চূড়ান্ত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয় উচ্চপর্যায় থেকে। এরপর ৫ জুলাই জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিল-জামুকার সর্বশেষ বৈঠকে নতুনভাবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি জানিয়ে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জেলা-উপজেলা কমিটি থেকে আসা প্রতিবেদনকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করেছি। এক. শতাধিক জেলা ও উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি আইনানুগভাবে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সঠিক তালিকা করেছে। দুই. আরও শতাধিক জেলার প্রতিবেদন মোটামুটি গ্রহণযোগ্য। তারা আইনানুগ বা নিরপেক্ষভাবে করেছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে অমুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধাবিরোধী কাউকে তারা তালিকাভুক্ত করেনি। বাদবাকি জেলাগুলো থেকে যেসব প্রতিবেদন এসেছে, তাতে অনেক ত্রুটি রয়েছে। সেগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ওই সব জেলায় কমিটিতে যিনিই আবেদন করেছেন, তাঁর নামই তালিকায় তোলা হয়েছে। হতে পারে অর্থের বিনিময়ে, হতে পারে অনিয়ম করে এটা হয়েছে। কিন্তু সবই হয়েছে আমাদের নীতিমালা উপেক্ষা করে।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, দুই ঘণ্টার বৈঠকে বসে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের তালিকা করা সম্ভব নয়। তাই আট বিভাগের জন্য আটজনকে তালিকা পর্যালোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এখন সহজ হবে। জামুকার বৈঠকে ঢাকা বিভাগের তালিকা পর্যালোচনার দায়িত্ব নৌপরিবহনমন্ত্রী, চট্টগ্রামের দায়িত্ব গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনকে, বরিশালের দায়িত্ব সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে, সিলেটের দায়িত্ব সাংসদ আব্দুস শহিদকে, রংপুরের দায়িত্ব সাংসদ মোতাহার হোসেনকে, রাজশাহীর দায়িত্ব সাংসদ সাধন চন্দ্র মজুমদার, খুলনার দায়িত্ব যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা রশিদুল আলম এবং ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্ব মুক্তিযোদ্ধা ওয়াকার হাসানকে দেওয়া হয়। এই আটজন যাঁর যাঁর বিভাগের বিভিন্ন থানা, উপজেলা ও জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জামুকায় প্রতিবেদন দেবেন।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে এখন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৪৩৮ জন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জামুকার সদস্যদের মতে, যাচাই-বাছাইয়ের পর হাজার দশেক মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকায় যুক্ত হতে পারে, এর বেশি নয়। তবে স্থানীয় কমিটিগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রায় ২৫ হাজার নতুন নাম জামুকায় পাঠিয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আটজন লোক ১৫ দিনে কোনোভাবেই এত বড় তালিকা যাচাই-বাছাই করতে পারবে না। আর নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে এই তালিকা করলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। গত বছরের জানুয়ারিতে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। ৪৭২টি উপজেলা ও ৮টি মহানগর কমিটি কাজ শুরু করে ওই বছরের ২১ জানুয়ারি। এর মধ্যে ৩৬৫টি কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে, বাকি কমিটিগুলোর প্রতিবেদন জমা পড়েনি। বড় সংখ্যক প্রতিবেদনে কমিটির সব সদস্যের স্বাক্ষর নেই, মুক্তিযুদ্ধ করার প্রমাণ নেই, বয়স প্রমাণের সনদ নেই, যে ছকে তথ্য দেওয়ার কথা তা যথাযথভাবে পূরণ করা হয়নি, কমিটির সভার কার্যবিবরণী নেই, কিছু কিছু এলাকার তালিকায় অস্বাভাবিক সংখ্যায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুন করে সরকারি গেজেটভুক্ত হয়েছেন ৩১ হাজার ৫৪৯ জন। একই সময়ে ভাতা পাওয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ থেকে বেড়ে ১ লাখ ৮৬ হাজার হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মুক্তিযোদ্ধার তালিকা আবার যাচাই-বাছাই

আপলোড টাইম : ১১:১৬:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুলাই ২০১৮

সমীকরণ ডেস্ক: আবার শুরু হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া। বর্তমান সরকারের সময়েই যাতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা যায়, সে জন্য এ বিষয়ে আগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছে সরকার। গত ১২ মার্চ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। এই পদক্ষেপের সমালোচনা হয় বিভিন্ন স্তরে। প্রশ্ন ওঠে, টানা প্রায় ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে পারল না আওয়ামী লীগ সরকার? ফলে যেভাবেই হোক এ তালিকা চূড়ান্ত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয় উচ্চপর্যায় থেকে। এরপর ৫ জুলাই জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিল-জামুকার সর্বশেষ বৈঠকে নতুনভাবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি জানিয়ে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জেলা-উপজেলা কমিটি থেকে আসা প্রতিবেদনকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করেছি। এক. শতাধিক জেলা ও উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি আইনানুগভাবে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সঠিক তালিকা করেছে। দুই. আরও শতাধিক জেলার প্রতিবেদন মোটামুটি গ্রহণযোগ্য। তারা আইনানুগ বা নিরপেক্ষভাবে করেছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে অমুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধাবিরোধী কাউকে তারা তালিকাভুক্ত করেনি। বাদবাকি জেলাগুলো থেকে যেসব প্রতিবেদন এসেছে, তাতে অনেক ত্রুটি রয়েছে। সেগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ওই সব জেলায় কমিটিতে যিনিই আবেদন করেছেন, তাঁর নামই তালিকায় তোলা হয়েছে। হতে পারে অর্থের বিনিময়ে, হতে পারে অনিয়ম করে এটা হয়েছে। কিন্তু সবই হয়েছে আমাদের নীতিমালা উপেক্ষা করে।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, দুই ঘণ্টার বৈঠকে বসে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের তালিকা করা সম্ভব নয়। তাই আট বিভাগের জন্য আটজনকে তালিকা পর্যালোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এখন সহজ হবে। জামুকার বৈঠকে ঢাকা বিভাগের তালিকা পর্যালোচনার দায়িত্ব নৌপরিবহনমন্ত্রী, চট্টগ্রামের দায়িত্ব গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনকে, বরিশালের দায়িত্ব সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে, সিলেটের দায়িত্ব সাংসদ আব্দুস শহিদকে, রংপুরের দায়িত্ব সাংসদ মোতাহার হোসেনকে, রাজশাহীর দায়িত্ব সাংসদ সাধন চন্দ্র মজুমদার, খুলনার দায়িত্ব যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা রশিদুল আলম এবং ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্ব মুক্তিযোদ্ধা ওয়াকার হাসানকে দেওয়া হয়। এই আটজন যাঁর যাঁর বিভাগের বিভিন্ন থানা, উপজেলা ও জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জামুকায় প্রতিবেদন দেবেন।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে এখন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৪৩৮ জন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জামুকার সদস্যদের মতে, যাচাই-বাছাইয়ের পর হাজার দশেক মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকায় যুক্ত হতে পারে, এর বেশি নয়। তবে স্থানীয় কমিটিগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রায় ২৫ হাজার নতুন নাম জামুকায় পাঠিয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আটজন লোক ১৫ দিনে কোনোভাবেই এত বড় তালিকা যাচাই-বাছাই করতে পারবে না। আর নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে এই তালিকা করলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। গত বছরের জানুয়ারিতে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। ৪৭২টি উপজেলা ও ৮টি মহানগর কমিটি কাজ শুরু করে ওই বছরের ২১ জানুয়ারি। এর মধ্যে ৩৬৫টি কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে, বাকি কমিটিগুলোর প্রতিবেদন জমা পড়েনি। বড় সংখ্যক প্রতিবেদনে কমিটির সব সদস্যের স্বাক্ষর নেই, মুক্তিযুদ্ধ করার প্রমাণ নেই, বয়স প্রমাণের সনদ নেই, যে ছকে তথ্য দেওয়ার কথা তা যথাযথভাবে পূরণ করা হয়নি, কমিটির সভার কার্যবিবরণী নেই, কিছু কিছু এলাকার তালিকায় অস্বাভাবিক সংখ্যায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুন করে সরকারি গেজেটভুক্ত হয়েছেন ৩১ হাজার ৫৪৯ জন। একই সময়ে ভাতা পাওয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ থেকে বেড়ে ১ লাখ ৮৬ হাজার হয়েছে।