ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়ায় বেকার হাজারো শ্রমিক, হাইকমিশনে অভিযোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪০:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ জুন ২০২৩
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
মালয়েশিয়ার কোম্পানিতে কাজ নেই, তারপরও কোনোধরনের যাচাই-বাছাই না করে শ্রমিক পাঠিয়েছে ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। এর ফলে দেশটিতে গিয়ে কাজ না পাওয়া হাজারো শ্রমিককে এখন বেকার সময় কাটাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ কমিউনিটি এবং হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানো কর্মীদের মধ্য থেকে ৩-৪ হাজার শ্রমিক তাদের কাজ না থাকার কারণ উল্লেখ করে বাংলাদেশ হাইকমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গত এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে জমা পড়া এসব অভিযোগের পর হাইকমিশনের শ্রম কল্যাণ উইং থেকে নিয়োগকারী কোম্পানির প্রতিনিধিদের ডেকে কর্মীদের সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য বলা হয়েছে। তারপরও গতকাল পর্যন্ত অনেক কোম্পানির শ্রমিকের ভাগ্যে কাজ জুটেনি। গতকাল মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে একাধিক বাংলাদেশী ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, যতটুকু শুনেছি, হাইকমিশনে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার শ্রমিক সশরীরে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে শৃগাল মালয়েশিয়া এসডিএন বিএসডি, শৃগাল ইঞ্জিনিয়ারিং মালয়েশিয়া এসডিএন বিএসডিসহ বেশ কিছু নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। এসব ‘এ’ টু ‘বি’ কোম্পানিতে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় আসার পর থেকেই কাজ পাচ্ছেন না। এর মধ্যে জহুরবারুর শৃগাল এসডিএন বিএসডির এক কোম্পানির সমস্যায় থাকা কর্মীর সংখ্যা ৭০ জন। এমন অনেক কোম্পানির লোক প্রায় প্রতিদিন হাইকমিশনে এসে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছেন। তাদের সবার সমস্যা একই, কাজ নাই বেতন নাই। পরে অভিযোগকারীদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে কোম্পানির তত্ত্বাবধানকারীদের ডেকে আনা হয়। তাদের বলে দেয়া হয়, কর্মীদের পুনরায় কাজের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য। কিন্তু এখনো অনেক শ্রমিকের সমস্যা কোম্পানির মালিকরা সমাধান করতে পারেননি বলে তারা শুনেছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, গত এক থেকে দেড় মাসের ভেতরে বাংলাদেশ থেকে আসা শ্রমিকরা সমস্যায় রয়েছে জানিয়ে তারা বলছেন, বিশেষ করে কনস্ট্রাকশন ও সার্ভিস সেক্টরের কর্মীদের কাজ না পাওয়ার অভিযোগ বেশি। সবমিলিয়ে চার হাজার শ্রমিকের ফাইলে সমস্যা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আর যেসব কোম্পানির ফাইলে সমস্যা ছিল সেগুলোতে হাইকমিশনে গড়ে ওঠা কর্মচারী ও দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আন্ডারহ্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে ‘কর্মী আসতে কোনো সমস্যা নাই’ উল্লেখ করে সত্যায়ন দেয়া হয়েছে বলে ভুক্তভোগী ও সচেতন ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন। ‘সত্যায়ন’ চক্রে হাইকমিশনের আর কারা কারা জড়িত জানতে চাইলে তারা অভিযোগ করে বলেন, যতগুলো ফাইলে প্রবলেম হয়েছে সবগুলো ফাইলই এটুবি ওয়ার্কারদের ফাইল। আর এসব ফাইল যারা সংগ্রহ করেছিলেন, তাদের মধ্যে অ্যাম্বাসির ড্রাইভার পরিচয়ে পলাশ নামে একজন এবং অন্যজন ওয়েলফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট জাহাঙ্গীর আলম শুভর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা প্রতি ওয়ার্কারের ফাইল সত্যায়ন করিয়ে দেয়ার জন্য ১২০ রিংগিট করে এজেন্টদের সাথে অলিখিত চুক্তি করেছিলেন। ওই শ্রমিকরাই এখন বেকার বসে আছেন। অথচ এসব কর্মীর যারা দায়িত্ব নিয়ে পাঠিয়েছেন ঢাকায় থাকা সেই রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা এখনো রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। গতকাল মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রমবিভাগের কর্মকর্তা মো: জহিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এর আগে অবশ্য তিনি কিছু শ্রমিকদের সমস্যায় থাকার কথা স্বীকার করে নয়া দিগন্তেকে বলেছিলেন, যেসব শ্রমিক হাইকমিশনে তাদের সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন তাদের বিষয়গুলো ইতোমধ্যে মিটমাট করা হয়েছে। তবে কর্মীদের সত্যায়ন দেয়ার বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে পারব না। এটা আমার স্যার বলবেন। এ দিকে দেশটিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ইদানীং দেখা যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট প্রদান ও লাখ লাখ নতুন কর্মীর কর্মসংস্থানের কার্যক্রম পরিচালনায় হাইকমিশনের কঠোর স্বচ্ছতার নীতি গ্রহণের কারণে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী পূর্বের ন্যায় অতি সহজে সাধারণ প্রবাসীদের ঠকিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারছে না। তাই তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য প্রচার করে সাধারণ প্রবাসী ও বাংলাদেশে তাদের আত্মীয়-পরিজন বা শুভানুধ্যায়ীদের বিভ্রান্ত করে হাইকমিশনের তথা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে। তারপরও হাইকমিশন সীমিত সম্পদ এবং লোকবল নিয়ে সবার সহযোগিতায় প্রবাসীদের কল্যাণমূলক কাজ অব্যাহত রেখেছে বলে জানানো হয়। উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর কূটনৈতিক তৎপরতায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি উন্মুক্ত করা হয়। এরপর দেশটিতে এফডব্লিওসিএমএস পদ্ধতিতে দেড় লাখের বেশি শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছে। এখনো প্রতিনিয়ত কর্মীরা মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ছে। তবে এই মুহূর্তে নতুন করে দেশটির সরকার কোনো কোম্পানির নামে চাহিদাপত্র (এপ্রুভাল) ইস্যু করছে না। শোনা যাচ্ছে আবারো নতুন এপ্রুভাল দেয়ার কার্যক্রম দেশটির সরকার শুরু করতে যাচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে কোনোভাবেই কর্মীরা যাতে দেশটিতে গিয়ে বিপদে না পড়েন, বেকার না থাকেন সে ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিএম্বইটি ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা উচিত বলে অভিবাসন বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কারণ এই শ্রমবাজারটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার। মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রবাসীমন্ত্রীর বিনিয়োগের আহ্বান: আশরাফুল মামুন, মালয়েশিয়া থেকে জানান, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। গত বৃহস্পতিবার দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি। এ সময় মন্ত্রী ইমরান আহমদ বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়নে বিএমসিসিআইর ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে এর সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সেমিনারে। মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়া দক্ষ জনশক্তি খাতে বিনিয়োগ করে এবং বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে লাভবান হতে পরে। বিএমসিসিআইর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশ তার উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে উন্নীত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সব মানদণ্ড সফলভাবে পূরণ করেছে বাংলাদেশ। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের বিপুল কর্মক্ষম যুব জনগোষ্ঠী বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ এ খাস্তগীর, পিএইচপি অটোমোবাইলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আক্তার পারভেজ চৌধুরী, ম্যাট্রেডের কেন্দ্রীয় (দক্ষিণ-পশ্চিম ও আফ্রিকা) পরিচালক ইদহাম আব্দুল হামিদ, গঅঝঝঅ-এর নির্বাহী সচিব এনজি সু ফান প্যানেলিস্ট হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা আলহাজ মকবুল হোসেন মুকুল, ওয়াহিদুর রহমান অহিদ, রাশেদ বাদল, বিএমসিসিআইর সহসভাপতি মাহবুব আলম শাহসহ দুই দেশের ব্যবসায়ীবৃন্দ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মালয়েশিয়ায় বেকার হাজারো শ্রমিক, হাইকমিশনে অভিযোগ

আপলোড টাইম : ০৯:৪০:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ জুন ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদন:
মালয়েশিয়ার কোম্পানিতে কাজ নেই, তারপরও কোনোধরনের যাচাই-বাছাই না করে শ্রমিক পাঠিয়েছে ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। এর ফলে দেশটিতে গিয়ে কাজ না পাওয়া হাজারো শ্রমিককে এখন বেকার সময় কাটাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ কমিউনিটি এবং হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানো কর্মীদের মধ্য থেকে ৩-৪ হাজার শ্রমিক তাদের কাজ না থাকার কারণ উল্লেখ করে বাংলাদেশ হাইকমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গত এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে জমা পড়া এসব অভিযোগের পর হাইকমিশনের শ্রম কল্যাণ উইং থেকে নিয়োগকারী কোম্পানির প্রতিনিধিদের ডেকে কর্মীদের সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য বলা হয়েছে। তারপরও গতকাল পর্যন্ত অনেক কোম্পানির শ্রমিকের ভাগ্যে কাজ জুটেনি। গতকাল মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে একাধিক বাংলাদেশী ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, যতটুকু শুনেছি, হাইকমিশনে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার শ্রমিক সশরীরে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে শৃগাল মালয়েশিয়া এসডিএন বিএসডি, শৃগাল ইঞ্জিনিয়ারিং মালয়েশিয়া এসডিএন বিএসডিসহ বেশ কিছু নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। এসব ‘এ’ টু ‘বি’ কোম্পানিতে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় আসার পর থেকেই কাজ পাচ্ছেন না। এর মধ্যে জহুরবারুর শৃগাল এসডিএন বিএসডির এক কোম্পানির সমস্যায় থাকা কর্মীর সংখ্যা ৭০ জন। এমন অনেক কোম্পানির লোক প্রায় প্রতিদিন হাইকমিশনে এসে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছেন। তাদের সবার সমস্যা একই, কাজ নাই বেতন নাই। পরে অভিযোগকারীদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে কোম্পানির তত্ত্বাবধানকারীদের ডেকে আনা হয়। তাদের বলে দেয়া হয়, কর্মীদের পুনরায় কাজের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য। কিন্তু এখনো অনেক শ্রমিকের সমস্যা কোম্পানির মালিকরা সমাধান করতে পারেননি বলে তারা শুনেছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, গত এক থেকে দেড় মাসের ভেতরে বাংলাদেশ থেকে আসা শ্রমিকরা সমস্যায় রয়েছে জানিয়ে তারা বলছেন, বিশেষ করে কনস্ট্রাকশন ও সার্ভিস সেক্টরের কর্মীদের কাজ না পাওয়ার অভিযোগ বেশি। সবমিলিয়ে চার হাজার শ্রমিকের ফাইলে সমস্যা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আর যেসব কোম্পানির ফাইলে সমস্যা ছিল সেগুলোতে হাইকমিশনে গড়ে ওঠা কর্মচারী ও দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আন্ডারহ্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে ‘কর্মী আসতে কোনো সমস্যা নাই’ উল্লেখ করে সত্যায়ন দেয়া হয়েছে বলে ভুক্তভোগী ও সচেতন ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন। ‘সত্যায়ন’ চক্রে হাইকমিশনের আর কারা কারা জড়িত জানতে চাইলে তারা অভিযোগ করে বলেন, যতগুলো ফাইলে প্রবলেম হয়েছে সবগুলো ফাইলই এটুবি ওয়ার্কারদের ফাইল। আর এসব ফাইল যারা সংগ্রহ করেছিলেন, তাদের মধ্যে অ্যাম্বাসির ড্রাইভার পরিচয়ে পলাশ নামে একজন এবং অন্যজন ওয়েলফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট জাহাঙ্গীর আলম শুভর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা প্রতি ওয়ার্কারের ফাইল সত্যায়ন করিয়ে দেয়ার জন্য ১২০ রিংগিট করে এজেন্টদের সাথে অলিখিত চুক্তি করেছিলেন। ওই শ্রমিকরাই এখন বেকার বসে আছেন। অথচ এসব কর্মীর যারা দায়িত্ব নিয়ে পাঠিয়েছেন ঢাকায় থাকা সেই রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা এখনো রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। গতকাল মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রমবিভাগের কর্মকর্তা মো: জহিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এর আগে অবশ্য তিনি কিছু শ্রমিকদের সমস্যায় থাকার কথা স্বীকার করে নয়া দিগন্তেকে বলেছিলেন, যেসব শ্রমিক হাইকমিশনে তাদের সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন তাদের বিষয়গুলো ইতোমধ্যে মিটমাট করা হয়েছে। তবে কর্মীদের সত্যায়ন দেয়ার বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে পারব না। এটা আমার স্যার বলবেন। এ দিকে দেশটিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ইদানীং দেখা যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট প্রদান ও লাখ লাখ নতুন কর্মীর কর্মসংস্থানের কার্যক্রম পরিচালনায় হাইকমিশনের কঠোর স্বচ্ছতার নীতি গ্রহণের কারণে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী পূর্বের ন্যায় অতি সহজে সাধারণ প্রবাসীদের ঠকিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারছে না। তাই তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য প্রচার করে সাধারণ প্রবাসী ও বাংলাদেশে তাদের আত্মীয়-পরিজন বা শুভানুধ্যায়ীদের বিভ্রান্ত করে হাইকমিশনের তথা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে। তারপরও হাইকমিশন সীমিত সম্পদ এবং লোকবল নিয়ে সবার সহযোগিতায় প্রবাসীদের কল্যাণমূলক কাজ অব্যাহত রেখেছে বলে জানানো হয়। উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর কূটনৈতিক তৎপরতায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি উন্মুক্ত করা হয়। এরপর দেশটিতে এফডব্লিওসিএমএস পদ্ধতিতে দেড় লাখের বেশি শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছে। এখনো প্রতিনিয়ত কর্মীরা মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ছে। তবে এই মুহূর্তে নতুন করে দেশটির সরকার কোনো কোম্পানির নামে চাহিদাপত্র (এপ্রুভাল) ইস্যু করছে না। শোনা যাচ্ছে আবারো নতুন এপ্রুভাল দেয়ার কার্যক্রম দেশটির সরকার শুরু করতে যাচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে কোনোভাবেই কর্মীরা যাতে দেশটিতে গিয়ে বিপদে না পড়েন, বেকার না থাকেন সে ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিএম্বইটি ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা উচিত বলে অভিবাসন বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কারণ এই শ্রমবাজারটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার। মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রবাসীমন্ত্রীর বিনিয়োগের আহ্বান: আশরাফুল মামুন, মালয়েশিয়া থেকে জানান, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। গত বৃহস্পতিবার দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি। এ সময় মন্ত্রী ইমরান আহমদ বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়নে বিএমসিসিআইর ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে এর সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সেমিনারে। মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়া দক্ষ জনশক্তি খাতে বিনিয়োগ করে এবং বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে লাভবান হতে পরে। বিএমসিসিআইর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশ তার উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে উন্নীত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সব মানদণ্ড সফলভাবে পূরণ করেছে বাংলাদেশ। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের বিপুল কর্মক্ষম যুব জনগোষ্ঠী বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ এ খাস্তগীর, পিএইচপি অটোমোবাইলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আক্তার পারভেজ চৌধুরী, ম্যাট্রেডের কেন্দ্রীয় (দক্ষিণ-পশ্চিম ও আফ্রিকা) পরিচালক ইদহাম আব্দুল হামিদ, গঅঝঝঅ-এর নির্বাহী সচিব এনজি সু ফান প্যানেলিস্ট হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা আলহাজ মকবুল হোসেন মুকুল, ওয়াহিদুর রহমান অহিদ, রাশেদ বাদল, বিএমসিসিআইর সহসভাপতি মাহবুব আলম শাহসহ দুই দেশের ব্যবসায়ীবৃন্দ।