ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মানবতা ফাউন্ডেশনের সহায়তায় কুমারী সাজলো অন্তঃসত্ত্বা : গোমর ফাঁস

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪৪:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭
  • / ৩৯২ বার পড়া হয়েছে

অর্থশালী গৃহকর্তার অর্থ লুটতে ষড়যন্ত্র : মিথ্যা মামলা দায়েরে প্ররোচণার অভিযোগ অ্যাড. মানি খন্দকারের বিরুদ্ধে
জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক: টাকা ও জমির লোভেই ষাটোর্ধ্ব গৃহকর্তার বিরুদ্ধে গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কিশোরী গৃহপরিচারিকাকে সাজানো হয়েছে দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সে হিসেবে রয়েছে আল্ট্রাসনো রিপোর্টও। আর এর সবই করেছে স্বয়ং সমাজ উন্নয়নের নামে কাজ করা কথিত সংস্থা মানবতা ফাউন্ডেশন। ঘটনাটি ঘটেছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার জীবনা গ্রামে। তবে মিথ্যা নাটকটি চলেনি বেশিদিন। অবশেষে প্রকাশ পেয়েছে সত্য ঘটনা। পুলিশের কাছে সব অকপটে স্বীকার করেছে কথিত ধর্ষিতা শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের হায়দারপুর গ্রামের চম্পা। অন্তঃসত্ত্বা হওয়াতো দূরের কথা, তার সাথে কখনও অশ্লীল আচরণও করেননি গৃহকর্তা মন্টু বিশ্বাস। গতকাল এমনটিই জানায় চম্পা খাতুন। অভিযোগ উঠেছে, নগদ তিন লাখ টাকা ও দুই বিঘা জমি দেয়ার প্রলোভনে মিথ্যা অন্তঃসত্ত্বা ও গর্ভপাতের অভিযোগ এনে বিত্তবান গৃহকর্তা মণ্টু বিশ্বাস, তার স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে প্ররোচিত করেন মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. মানি খন্দকার। মিথ্যা প্রমাণ হিসেবে একটি ভূয়া আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টও আদালতে দাখিল করা হয়। দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বার ভূয়া আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টটির সন্ধানও দিয়েছেন মানি খন্দকার। আর জালিয়াতির এ ঘটনায় সহযোগিতা করেন মানবতা ফাউন্ডেশনের সদস্য হায়দারপুর গ্রামের আরিফুল ইসলাম। এর মূল নেপথ্যে রয়েছে ওই কিশোরীর খালা ফাতেমা খাতুন ওরফে ফতে।
গতকাল সরেজমিনে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের হায়দারপুর গ্রামের মাঝেরপাড়ার আব্দুস শুকুরের মেয়ে কিশোরী চম্পা খাতুন (১৫) আনুমানিক ১০ বছর আগে কুতুবপুর ইউনিয়নের জীবনা গ্রামের মৃত ওয়াজেদ বিশ্বাসের ছেলে মণ্টু বিশ্বাসের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ নেয়। তারপর থেকে ওই বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে সাংসারিক কাজের সাহায্য করে আসছিলো সে। থাকতোও ওই বাড়িতে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে কিশোরী চম্পা খাতুনের বিয়ের একাধিক প্রস্তাবও আসে। তবে তা আর বিয়েতে গড়াইনি। ওই সময় চম্পার বিয়ের জন্য নগদ ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথাও বলেন মণ্টু বিশ্বাস। এদিকে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর কাউকে কিছু না বলে মন্টু বিশ্বাসের বাড়ি থেকে চলে যায় চম্পা। এর দু’দিন পর গত ১ নভেম্বর গৃহকর্তা মণ্টু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ওই গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয় একটি দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়- গত ১ সেপ্টেম্বর কিশোরী চম্পাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন মণ্টু। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে মণ্টুকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় চম্পা। এ সময় তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয় বলেও উল্লেখ করা হয়। পরে গত ২৮ সেপ্টেম্বর পালিয়ে নিজ বাড়ি চলে আসে ওই কিশোরী। এরপর আইনি সহায়তা চেয়ে মানবতা সংস্থায় আবেদন করে সে।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার মণ্টু বিশ্বাস জানান- গত ১ নভেম্বর পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর জীবনা গ্রামের কয়েকজনসহ মণ্টু বিশ্বাসের আত্মীয়রা এ ধরণের মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের কারণ জানতে হায়দারপুর গ্রামে চম্পার বাড়িতে যায়। এ সময় চম্পার পরিবারের লোকজন বিষয়টি সত্য ঘটনা বলে জানিয়ে তাদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে এবং চাহিদামত টাকা পেলে বিষয়টি মিমাংসা করার কথা জানান তারা। দশমাইল বাজার কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ মিন্টু বলেন- আমরা হায়দারপুর গ্রামে কিশোরীর বাড়িতে গেলে ঘটনাটি মিমাংসার জন্য তার খালা ফাতেমা খাতুন ফতে এবং একই এলাকার আরিফুল ইসলাম আমাদের কাছে টাকা দাবি করেন। কিন্তু ওই সময় তাদের আচরণ দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা মর্মে প্রমাণ পাওয়ায় আমরা টাকা দিতে অস্বীকার করে সেখান থেকে চলে আসি। মন্টু বিশ্বাসের ভাতিজা বলেন- এ ঘটনার পর আমরা চম্পার খালার বাড়িতে গেলে ফাতেমা খাতুন ইঙ্গিত দিয়ে বলে ‘মন্টু বিশ্বাস বড়লোক মানুষ, আমাদের কিছু টাকা দেন, মিমাংসা করে দিই।’ তবে ঘটনার প্রমাণ ছাড়া আমরা একটি টাকাও দেবনা বলে সাফ জানিয়ে দিই। পরে ফিরে এসে কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে একটি অভিযোগ করি। আমাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মানিক কিশোরী চম্পা ও তার পরিবারের লোকজনকে ডেকে আনেন। এবং ঘটনার সত্যতা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা নয় বলে স্বীকার করে। এরপর তারা সকলেই বাড়ি ফিরে যায়।
এর বেশ কিছুদিন পর বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে ওই কিশোরীকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান মন্টু বিশ্বাস এবং গত ১৭ নভেম্বর মন্টুর স্ত্রী মাফুজা ও ছেলে মাসুদ জোরপূর্বক ওষুধ খাইয়ে তার গর্ভপাত ঘটায় এমন অভিযোগ তুলে কিশোরী চম্পা খাতুন চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করে। আদালত মামলাটি চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় প্রেরণ করলে মামলার তদন্তের প্রয়োজনে তদন্তকারী কর্মকর্তা বাদিপক্ষের দাখিলকৃত আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সিভিল সার্জন বরাবর আবেদন করেন। সেখানে ডাক্তারি পরিক্ষা শেষে গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. আকলিমা খাতুন এবং হাসপাতালের আরএমও ডা. শামীম কবির জানান- এই কিশোরী কখনোই অন্তঃসত্ত্বা ছিলো না। তাই তার গর্ভপাতের প্রশ্ন অবান্তর। এরপরেই উন্মোচিত হতে শুরু করে ঘটনার নেপথ্য-রহস্য। এ সময় চিকিৎসক ও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে কিশোরী চম্পা খাতুন অকপটে সবকিছু স্বীকার করে।
চম্পা জানায়- সে বাড়ি ফেরার পর স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিবার এবং প্রতিবেশী আরিফুল তার কাছে এসে মন্টু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করার জন্য বলে। মামলা করলে নগদ তিন লাখ টাকা ও দুই বিঘা জমি দেয়ার প্রলোভনও দেখায় তারা। এই প্রস্তাবে প্রলুব্ধ হয়ে গর্ভবতী না হয়েও মিথ্যা অভিযোগে মন্টু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করতে রাজি হয় চম্পা। এরপর তার খালা হায়দারপুরের শাহাদতের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন ফতে ও একই গ্রামের ইউসুফের ছেলে আরিফুল ইসলাম তাকে নিয়ে যায় মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. মানি খন্দকারের কাছে। সেখানে তার খালা ও আরিফুলের কথামত সব করেছে বলেও জানায় সে। কিশোরীর খালা হায়দারপুরের শাহাদতের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন ফতে বলেন- প্রতিবেশী আরিফুলের কথামত মানবতা ফাউন্ডেশনে গেলে অ্যাড. মানি খন্দকার চম্পার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর জন্য একটি ঠিকানাও লিখে দেন। সেখানে আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর পর জানতে পারি চম্পা দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পরে রিপোর্ট নিয়ে আবার মানবতা ফাউন্ডেশনে আসি। পরেরদিন এ ঘটনার সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি তোজাম্মেল হক জানান- তদন্তে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচনে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট যাচাই শেষে চিকিৎসকদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যা পরবর্তি আইনি পদক্ষেপ গ্রহনে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- মামলা তদন্তে বাদিপক্ষের অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হলে আইন অনুযায়ি পরবর্তি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মানবতা ফাউন্ডেশনের সহায়তায় কুমারী সাজলো অন্তঃসত্ত্বা : গোমর ফাঁস

আপলোড টাইম : ১০:৪৪:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭

অর্থশালী গৃহকর্তার অর্থ লুটতে ষড়যন্ত্র : মিথ্যা মামলা দায়েরে প্ররোচণার অভিযোগ অ্যাড. মানি খন্দকারের বিরুদ্ধে
জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক: টাকা ও জমির লোভেই ষাটোর্ধ্ব গৃহকর্তার বিরুদ্ধে গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কিশোরী গৃহপরিচারিকাকে সাজানো হয়েছে দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সে হিসেবে রয়েছে আল্ট্রাসনো রিপোর্টও। আর এর সবই করেছে স্বয়ং সমাজ উন্নয়নের নামে কাজ করা কথিত সংস্থা মানবতা ফাউন্ডেশন। ঘটনাটি ঘটেছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার জীবনা গ্রামে। তবে মিথ্যা নাটকটি চলেনি বেশিদিন। অবশেষে প্রকাশ পেয়েছে সত্য ঘটনা। পুলিশের কাছে সব অকপটে স্বীকার করেছে কথিত ধর্ষিতা শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের হায়দারপুর গ্রামের চম্পা। অন্তঃসত্ত্বা হওয়াতো দূরের কথা, তার সাথে কখনও অশ্লীল আচরণও করেননি গৃহকর্তা মন্টু বিশ্বাস। গতকাল এমনটিই জানায় চম্পা খাতুন। অভিযোগ উঠেছে, নগদ তিন লাখ টাকা ও দুই বিঘা জমি দেয়ার প্রলোভনে মিথ্যা অন্তঃসত্ত্বা ও গর্ভপাতের অভিযোগ এনে বিত্তবান গৃহকর্তা মণ্টু বিশ্বাস, তার স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে প্ররোচিত করেন মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. মানি খন্দকার। মিথ্যা প্রমাণ হিসেবে একটি ভূয়া আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টও আদালতে দাখিল করা হয়। দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বার ভূয়া আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টটির সন্ধানও দিয়েছেন মানি খন্দকার। আর জালিয়াতির এ ঘটনায় সহযোগিতা করেন মানবতা ফাউন্ডেশনের সদস্য হায়দারপুর গ্রামের আরিফুল ইসলাম। এর মূল নেপথ্যে রয়েছে ওই কিশোরীর খালা ফাতেমা খাতুন ওরফে ফতে।
গতকাল সরেজমিনে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের হায়দারপুর গ্রামের মাঝেরপাড়ার আব্দুস শুকুরের মেয়ে কিশোরী চম্পা খাতুন (১৫) আনুমানিক ১০ বছর আগে কুতুবপুর ইউনিয়নের জীবনা গ্রামের মৃত ওয়াজেদ বিশ্বাসের ছেলে মণ্টু বিশ্বাসের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ নেয়। তারপর থেকে ওই বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে সাংসারিক কাজের সাহায্য করে আসছিলো সে। থাকতোও ওই বাড়িতে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে কিশোরী চম্পা খাতুনের বিয়ের একাধিক প্রস্তাবও আসে। তবে তা আর বিয়েতে গড়াইনি। ওই সময় চম্পার বিয়ের জন্য নগদ ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথাও বলেন মণ্টু বিশ্বাস। এদিকে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর কাউকে কিছু না বলে মন্টু বিশ্বাসের বাড়ি থেকে চলে যায় চম্পা। এর দু’দিন পর গত ১ নভেম্বর গৃহকর্তা মণ্টু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ওই গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয় একটি দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়- গত ১ সেপ্টেম্বর কিশোরী চম্পাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন মণ্টু। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে মণ্টুকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় চম্পা। এ সময় তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয় বলেও উল্লেখ করা হয়। পরে গত ২৮ সেপ্টেম্বর পালিয়ে নিজ বাড়ি চলে আসে ওই কিশোরী। এরপর আইনি সহায়তা চেয়ে মানবতা সংস্থায় আবেদন করে সে।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার মণ্টু বিশ্বাস জানান- গত ১ নভেম্বর পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর জীবনা গ্রামের কয়েকজনসহ মণ্টু বিশ্বাসের আত্মীয়রা এ ধরণের মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের কারণ জানতে হায়দারপুর গ্রামে চম্পার বাড়িতে যায়। এ সময় চম্পার পরিবারের লোকজন বিষয়টি সত্য ঘটনা বলে জানিয়ে তাদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে এবং চাহিদামত টাকা পেলে বিষয়টি মিমাংসা করার কথা জানান তারা। দশমাইল বাজার কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ মিন্টু বলেন- আমরা হায়দারপুর গ্রামে কিশোরীর বাড়িতে গেলে ঘটনাটি মিমাংসার জন্য তার খালা ফাতেমা খাতুন ফতে এবং একই এলাকার আরিফুল ইসলাম আমাদের কাছে টাকা দাবি করেন। কিন্তু ওই সময় তাদের আচরণ দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা মর্মে প্রমাণ পাওয়ায় আমরা টাকা দিতে অস্বীকার করে সেখান থেকে চলে আসি। মন্টু বিশ্বাসের ভাতিজা বলেন- এ ঘটনার পর আমরা চম্পার খালার বাড়িতে গেলে ফাতেমা খাতুন ইঙ্গিত দিয়ে বলে ‘মন্টু বিশ্বাস বড়লোক মানুষ, আমাদের কিছু টাকা দেন, মিমাংসা করে দিই।’ তবে ঘটনার প্রমাণ ছাড়া আমরা একটি টাকাও দেবনা বলে সাফ জানিয়ে দিই। পরে ফিরে এসে কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে একটি অভিযোগ করি। আমাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মানিক কিশোরী চম্পা ও তার পরিবারের লোকজনকে ডেকে আনেন। এবং ঘটনার সত্যতা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা নয় বলে স্বীকার করে। এরপর তারা সকলেই বাড়ি ফিরে যায়।
এর বেশ কিছুদিন পর বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে ওই কিশোরীকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান মন্টু বিশ্বাস এবং গত ১৭ নভেম্বর মন্টুর স্ত্রী মাফুজা ও ছেলে মাসুদ জোরপূর্বক ওষুধ খাইয়ে তার গর্ভপাত ঘটায় এমন অভিযোগ তুলে কিশোরী চম্পা খাতুন চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করে। আদালত মামলাটি চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় প্রেরণ করলে মামলার তদন্তের প্রয়োজনে তদন্তকারী কর্মকর্তা বাদিপক্ষের দাখিলকৃত আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সিভিল সার্জন বরাবর আবেদন করেন। সেখানে ডাক্তারি পরিক্ষা শেষে গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. আকলিমা খাতুন এবং হাসপাতালের আরএমও ডা. শামীম কবির জানান- এই কিশোরী কখনোই অন্তঃসত্ত্বা ছিলো না। তাই তার গর্ভপাতের প্রশ্ন অবান্তর। এরপরেই উন্মোচিত হতে শুরু করে ঘটনার নেপথ্য-রহস্য। এ সময় চিকিৎসক ও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে কিশোরী চম্পা খাতুন অকপটে সবকিছু স্বীকার করে।
চম্পা জানায়- সে বাড়ি ফেরার পর স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিবার এবং প্রতিবেশী আরিফুল তার কাছে এসে মন্টু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করার জন্য বলে। মামলা করলে নগদ তিন লাখ টাকা ও দুই বিঘা জমি দেয়ার প্রলোভনও দেখায় তারা। এই প্রস্তাবে প্রলুব্ধ হয়ে গর্ভবতী না হয়েও মিথ্যা অভিযোগে মন্টু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করতে রাজি হয় চম্পা। এরপর তার খালা হায়দারপুরের শাহাদতের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন ফতে ও একই গ্রামের ইউসুফের ছেলে আরিফুল ইসলাম তাকে নিয়ে যায় মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. মানি খন্দকারের কাছে। সেখানে তার খালা ও আরিফুলের কথামত সব করেছে বলেও জানায় সে। কিশোরীর খালা হায়দারপুরের শাহাদতের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন ফতে বলেন- প্রতিবেশী আরিফুলের কথামত মানবতা ফাউন্ডেশনে গেলে অ্যাড. মানি খন্দকার চম্পার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর জন্য একটি ঠিকানাও লিখে দেন। সেখানে আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর পর জানতে পারি চম্পা দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পরে রিপোর্ট নিয়ে আবার মানবতা ফাউন্ডেশনে আসি। পরেরদিন এ ঘটনার সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি তোজাম্মেল হক জানান- তদন্তে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচনে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট যাচাই শেষে চিকিৎসকদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যা পরবর্তি আইনি পদক্ষেপ গ্রহনে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- মামলা তদন্তে বাদিপক্ষের অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হলে আইন অনুযায়ি পরবর্তি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।