ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মাদক নির্মূলে বিকল্প পথ খুঁজুন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৫:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ জুন ২০১৮
  • / ৩৪৬ বার পড়া হয়েছে

মাদকবিরোধী যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে এটা দিয়ে মাদক নির্মূল করা অসম্ভব। কেবলমাত্র সাময়িক দমন করা সম্ভব। এতে করে যা হবে তা হলো আপাতত কিছুদিন মাদকের ব্যবহার কমবে আর দাম বাড়বে। এ ছাড়া তেমন কিছু হবে না। কারণ মাদকের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধ নতুন কিছু নয়। কলম্বিয়া, মেক্সিকোতে বিশ-ত্রিশ বছর ধরে এই যুদ্ধ চলেছে। আমেরিকা এই যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সত্তরের দশকে। যদিও বারাক ওবামা এসে বলেছিলেন যে এটাকে ‘যুদ্ধ’ বলব না আমরা, কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প এসে আবার বলছেন সেই ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’। তাই এটা নতুন কিছু নয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে পৃথিবীর যেখানেই এই অভিযান চালনা করা হয়েছে সেখানে মাদকের বিস্তার সাময়িকভাবে কিছুটা দমন করা গিয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন বড় কোনো ফল আসেনি। কলম্বিয়াতে মাদক দমনে ২৬ বছর ধরে অভিযান চলছে। সেখানে এ অভিযানে এ পর্যন্ত ৯.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ওখানে কোকেনের চাষ তো কমেইনি আরো বেড়েছে। দেশের বিরাট ভূখ- প্রায় ৫ মিলিয়ন হেক্টর জমি এখনো কোকেন স¤্রাটরা দখল করে রেখেছে। আফগানিস্তানে আমেরিকার ড্রোন উপেক্ষা করে কোকেনের চাষ বেড়েছে। ২০০৮ সালে যেখানে ছিল মাত্র ২০০ টন, বর্তমানে বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ১০ হাজার টন। সুতরাং শুধু সাপ্লাই সাইড নিয়ে কাজ করলে মাদক নির্মূল করা যাবে না। আমাদের এর ডিমান্ড সাইড নিয়ে কাজ করতে হবে। ডিমান্ডটা কোথায় এটা খুঁজে দেখতে হবে। আসলে মানুষ নেশা করবেই। মানুষ হাজার বছর ধরেই নেশা করে আসছে। আমাদের দাদা-দাদি নানা-নানিরা তামাক, হুক্কা এ সব খেতেন, পানে জর্দা খেতেন। এ সবও নেশা। গাঁজা, চরস, ভাঙ এ সব নেশার ইতিহাসও হাজার বছরের। মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি এই অভিযানের পেছনেও কারণ আছে। ছোটখাটো কেউ একবার মাদক ব্যবসা করে জেলে গেলেও সে জামিনে বেরিয়ে আসে এবং তখন দেখা যায় তার বস হাতে একটা অস্ত্র তুলে দিয়ে তার পদোন্নতি দিয়েছে। তাই ভয়াবহ এই অবস্থা দমন করার জন্য এরকম অভিযান সাধারণত পরিচালনা করা হয়। তাই সাময়িক এই অভিযান শেষে আমাদের মাদকের ডিমান্ড সাইডের ওপর নজর দিতে হবে। মাদকের টার্গেট হিসেবে সাধারণত এতিম ছেলেমেয়েদের ঠিক করে সাপ্লাইয়াররা। এতিম আবার দুই প্রকার। এক শ্রেণির এতিম হলো আসলেই যাদের বাবা-মা নেই। আরেক শ্রেণি হলো বাবা-মায়ের স্নেহ ভালোবাসা বঞ্চিত এতিম। যাদের বাবা মা থেকেও নেই। এরা একটা সময় একাকী ও হতাশ হয়ে পড়ে। তখন এদের অবলম্বন হয়ে যায় মাদক। তাই আমরা পারিবারিক, সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বগুলোতে যদি জোর না দেই তাহলে শুধু মাদকের সাপ্লাই চেইন বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে মাদকের সর্বগ্রাসী আক্রমণ থেকে আর আমরা রক্ষা পাব না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মাদক নির্মূলে বিকল্প পথ খুঁজুন

আপলোড টাইম : ০৮:৩৫:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ জুন ২০১৮

মাদকবিরোধী যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে এটা দিয়ে মাদক নির্মূল করা অসম্ভব। কেবলমাত্র সাময়িক দমন করা সম্ভব। এতে করে যা হবে তা হলো আপাতত কিছুদিন মাদকের ব্যবহার কমবে আর দাম বাড়বে। এ ছাড়া তেমন কিছু হবে না। কারণ মাদকের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধ নতুন কিছু নয়। কলম্বিয়া, মেক্সিকোতে বিশ-ত্রিশ বছর ধরে এই যুদ্ধ চলেছে। আমেরিকা এই যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সত্তরের দশকে। যদিও বারাক ওবামা এসে বলেছিলেন যে এটাকে ‘যুদ্ধ’ বলব না আমরা, কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প এসে আবার বলছেন সেই ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’। তাই এটা নতুন কিছু নয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে পৃথিবীর যেখানেই এই অভিযান চালনা করা হয়েছে সেখানে মাদকের বিস্তার সাময়িকভাবে কিছুটা দমন করা গিয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন বড় কোনো ফল আসেনি। কলম্বিয়াতে মাদক দমনে ২৬ বছর ধরে অভিযান চলছে। সেখানে এ অভিযানে এ পর্যন্ত ৯.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ওখানে কোকেনের চাষ তো কমেইনি আরো বেড়েছে। দেশের বিরাট ভূখ- প্রায় ৫ মিলিয়ন হেক্টর জমি এখনো কোকেন স¤্রাটরা দখল করে রেখেছে। আফগানিস্তানে আমেরিকার ড্রোন উপেক্ষা করে কোকেনের চাষ বেড়েছে। ২০০৮ সালে যেখানে ছিল মাত্র ২০০ টন, বর্তমানে বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ১০ হাজার টন। সুতরাং শুধু সাপ্লাই সাইড নিয়ে কাজ করলে মাদক নির্মূল করা যাবে না। আমাদের এর ডিমান্ড সাইড নিয়ে কাজ করতে হবে। ডিমান্ডটা কোথায় এটা খুঁজে দেখতে হবে। আসলে মানুষ নেশা করবেই। মানুষ হাজার বছর ধরেই নেশা করে আসছে। আমাদের দাদা-দাদি নানা-নানিরা তামাক, হুক্কা এ সব খেতেন, পানে জর্দা খেতেন। এ সবও নেশা। গাঁজা, চরস, ভাঙ এ সব নেশার ইতিহাসও হাজার বছরের। মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি এই অভিযানের পেছনেও কারণ আছে। ছোটখাটো কেউ একবার মাদক ব্যবসা করে জেলে গেলেও সে জামিনে বেরিয়ে আসে এবং তখন দেখা যায় তার বস হাতে একটা অস্ত্র তুলে দিয়ে তার পদোন্নতি দিয়েছে। তাই ভয়াবহ এই অবস্থা দমন করার জন্য এরকম অভিযান সাধারণত পরিচালনা করা হয়। তাই সাময়িক এই অভিযান শেষে আমাদের মাদকের ডিমান্ড সাইডের ওপর নজর দিতে হবে। মাদকের টার্গেট হিসেবে সাধারণত এতিম ছেলেমেয়েদের ঠিক করে সাপ্লাইয়াররা। এতিম আবার দুই প্রকার। এক শ্রেণির এতিম হলো আসলেই যাদের বাবা-মা নেই। আরেক শ্রেণি হলো বাবা-মায়ের স্নেহ ভালোবাসা বঞ্চিত এতিম। যাদের বাবা মা থেকেও নেই। এরা একটা সময় একাকী ও হতাশ হয়ে পড়ে। তখন এদের অবলম্বন হয়ে যায় মাদক। তাই আমরা পারিবারিক, সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বগুলোতে যদি জোর না দেই তাহলে শুধু মাদকের সাপ্লাই চেইন বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে মাদকের সর্বগ্রাসী আক্রমণ থেকে আর আমরা রক্ষা পাব না।