ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মহাসড়কে মহা অপচয়

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২১:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • / ২৮৬ বার পড়া হয়েছে

নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নিন
বাংলাদেশে সড়ক-মহাসড়কের নির্মাণ ব্যয় অস্বাভাবিক। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাভাবিকের তুলনায় তা কয়েক গুণ বেশি। সংশ্লিষ্টদের কৈফিয়ত হচ্ছে, নরম মাটির কারণে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত ব্যয়ও স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। এ নিয়ে অতীতেও গণমাধ্যমে বহু আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। তাতে খরচের অঙ্ক খুব একটা কমেনি। কয়েক বছরে মেরামতের পেছনে যে ব্যয় করা হচ্ছে, তা নির্মাণ ব্যয়কেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কেন এমন ‘ব্যয়-উল্লাস’? বিশেষজ্ঞরা এর জন্য দায়ী করছেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের সিন্ডিকেটকে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন কি? সড়ক-মহাসড়কগুলো নির্মাণের পর নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চলাচলের উপযোগী থাকছে না। সড়কগুলোতে অতিরিক্ত ওজনের গাড়ি চলাচল রোধ করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্ধারিত ওজনের দ্বিগুণ ওজনের কোনো গাড়ি চললে সড়কের ক্ষতি হয় ১৬ গুণ। ফলাফল সড়কে ফাটল বা গর্তের সৃষ্টি। গর্ত ছোট থাকতে সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ খুব একটা দেখা যায় না। এগুলো বড় হতে হতে সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেলে তখন প্রকল্প নেওয়া হয়। এতে ঠিকাদারদের পোয়াবারো, প্রকৌশলীদেরও ভালো ‘কমিশন বাণিজ্য’ হয়। কিন্তু অর্থের অপচয় হয় রাষ্ট্রের, যার জোগানদাতা জনগণ। সড়ক নির্মাণে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় ইউরোপের দেশগুলোতে। সেখানে নির্মাণশ্রমিকদের পেছনে বেশি খরচ করতে হয়। তার পরও সেখানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয় গড়ে ২৯ কোটি টাকার মতো। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও চীনে এই ব্যয় ১০ কোটি টাকার মতো। আর বাংলাদেশে ব্যয় হচ্ছে ৫৪ কোটি টাকা। এত খরচের পরও সড়কগুলোর মান নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার অবকাশ কম। যে সড়কে নির্মাণ-পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে হাত দেওয়ার কথা নয়, সেগুলোও দু-তিন বছরের মধ্যে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কিছু অংশ তিন মাস না যেতেই দেবে গিয়েছিল। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এই মহাসড়কের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এমন অপচয় রোধ করা এখন সবচেয়ে জরুরি হয়ে উঠেছে। নির্মাণ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সড়কের ব্যয় বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় গুরুতর ঘাটতি রয়েছে। তাঁরা এর জন্য বিশেষ সুবিধাভোগী চক্রের আছর ও কমিশন বাণিজ্যের আশঙ্কা করছেন। তাঁদের মতে, এসব বিষয়ে সরকারকে এখনই সতর্ক হতে হবে। এটা ঠিক, একেক দেশের বাস্তবতা একেক রকম। জমির দামের হেরফের, অধিক পরিমাণে সেতু-ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রয়োজনীয়তাসহ নানা কারণে আনুষঙ্গিক ব্যয়ের কিছু হেরফের হতে পারে। কিন্তু ব্যয়ের এমন আকাশ-পাতাল পার্থক্য কোনো বিচারেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আশা করি, বড় বড় নির্মাণ ও মেরামতের প্রতিটি কাজে সরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের দিয়ে কিংবা স্বাধীন কোনো তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট দিকগুলো পুনর্মূল্যায়ন করাতে হবে। কোনোমতেই অপচয়কে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মহাসড়কে মহা অপচয়

আপলোড টাইম : ১০:২১:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নিন
বাংলাদেশে সড়ক-মহাসড়কের নির্মাণ ব্যয় অস্বাভাবিক। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাভাবিকের তুলনায় তা কয়েক গুণ বেশি। সংশ্লিষ্টদের কৈফিয়ত হচ্ছে, নরম মাটির কারণে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত ব্যয়ও স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। এ নিয়ে অতীতেও গণমাধ্যমে বহু আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। তাতে খরচের অঙ্ক খুব একটা কমেনি। কয়েক বছরে মেরামতের পেছনে যে ব্যয় করা হচ্ছে, তা নির্মাণ ব্যয়কেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কেন এমন ‘ব্যয়-উল্লাস’? বিশেষজ্ঞরা এর জন্য দায়ী করছেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের সিন্ডিকেটকে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন কি? সড়ক-মহাসড়কগুলো নির্মাণের পর নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চলাচলের উপযোগী থাকছে না। সড়কগুলোতে অতিরিক্ত ওজনের গাড়ি চলাচল রোধ করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্ধারিত ওজনের দ্বিগুণ ওজনের কোনো গাড়ি চললে সড়কের ক্ষতি হয় ১৬ গুণ। ফলাফল সড়কে ফাটল বা গর্তের সৃষ্টি। গর্ত ছোট থাকতে সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ খুব একটা দেখা যায় না। এগুলো বড় হতে হতে সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেলে তখন প্রকল্প নেওয়া হয়। এতে ঠিকাদারদের পোয়াবারো, প্রকৌশলীদেরও ভালো ‘কমিশন বাণিজ্য’ হয়। কিন্তু অর্থের অপচয় হয় রাষ্ট্রের, যার জোগানদাতা জনগণ। সড়ক নির্মাণে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় ইউরোপের দেশগুলোতে। সেখানে নির্মাণশ্রমিকদের পেছনে বেশি খরচ করতে হয়। তার পরও সেখানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয় গড়ে ২৯ কোটি টাকার মতো। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও চীনে এই ব্যয় ১০ কোটি টাকার মতো। আর বাংলাদেশে ব্যয় হচ্ছে ৫৪ কোটি টাকা। এত খরচের পরও সড়কগুলোর মান নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার অবকাশ কম। যে সড়কে নির্মাণ-পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে হাত দেওয়ার কথা নয়, সেগুলোও দু-তিন বছরের মধ্যে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কিছু অংশ তিন মাস না যেতেই দেবে গিয়েছিল। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এই মহাসড়কের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এমন অপচয় রোধ করা এখন সবচেয়ে জরুরি হয়ে উঠেছে। নির্মাণ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সড়কের ব্যয় বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় গুরুতর ঘাটতি রয়েছে। তাঁরা এর জন্য বিশেষ সুবিধাভোগী চক্রের আছর ও কমিশন বাণিজ্যের আশঙ্কা করছেন। তাঁদের মতে, এসব বিষয়ে সরকারকে এখনই সতর্ক হতে হবে। এটা ঠিক, একেক দেশের বাস্তবতা একেক রকম। জমির দামের হেরফের, অধিক পরিমাণে সেতু-ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রয়োজনীয়তাসহ নানা কারণে আনুষঙ্গিক ব্যয়ের কিছু হেরফের হতে পারে। কিন্তু ব্যয়ের এমন আকাশ-পাতাল পার্থক্য কোনো বিচারেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আশা করি, বড় বড় নির্মাণ ও মেরামতের প্রতিটি কাজে সরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের দিয়ে কিংবা স্বাধীন কোনো তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট দিকগুলো পুনর্মূল্যায়ন করাতে হবে। কোনোমতেই অপচয়কে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।