ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মনের ঘরে জ্বলুক হেরার আলো

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৫:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অগাস্ট ২০২১
  • / ৪০ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম প্রতিবেদন:
হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন মুহাম্মদকে দিয়ে ইসলামবৃক্ষের বীজ বুনলেন আল্লাহতায়ালা। সিরাতে ইবনে হিশাম থেকে জানা যায়, নারীদের মধ্যে হজরত খাদিজা (রা.) এবং পুরুষদের মধ্যে হজরত আলী (রা.) প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। এভাবেই একদিন ইসলামবৃক্ষ মহিরুহে পরিণত হয় মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে। হিজরির দশম সনে বিদায় হজের সময় ৯ জিলহজ শুক্রবার আসরের পর আরাফার মাঠে লাখো মোমিনের নুরানি কাফেলা নিয়ে ‘জাবালে রহমতে’ দাঁড়িয়ে আছেন মরুফুল মুহাম্মদ রসুল। হৃদয় সমুদ্রে আনন্দের ঢেউ। শত বাধা পেরিয়ে আজ তিনি সফল। সফলতার স্বীকৃতি ও সাক্ষ্য দুটিই নিলেন সমবেত জনসমুদ্র থেকে। সাক্ষী রাখলেন দয়াময় প্রভুকে। রসুল (সা.)-এর আনন্দকে তৃপ্তিতে ভরিয়ে দিতে আল্লাহতায়ালা নাজিল করলেন, ‘আজ আমি তোমাদের আনুগত্যের বিধান পূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবনবিধান হিসেবে পরিপূর্ণ করলাম।’ সুরা মায়েদাহ, আয়াত ৩।
আল্লাহ বান্দার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে নিয়ামত পূর্ণ করেছেন এটি মামুলি কথা নয়। তাই তো সব সাহাবি আনন্দে আতিশয্যে খোদার কদমে সিজদায় লুটিয়ে পড়েছেন বারবার। একবার ইহুদি পন্ডিতরা হজরত ওমর ফারুক (রা.)-কে বললেন, ‘আপনাদের কোরআনে এমন একটি আয়াত আছে যা আমাদের থাকলে আমরা এর অবতীর্ণের দিনকে ঈদ হিসেবে উদ্যাপন করতাম।’ ফারুকে আজম বললেন, ‘তোমরা কোন আয়াতের কথা বলছ?’ তারা সুরা মায়েদার ৩ নম্বর আয়াতের কথা বললেন। ওমর (রা.) বললেন, ‘সত্যিই সে দিনটি আমাদের জন্য ঈদের দিন ছিল।’ (শরহে জালালাইন)। আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং দীনের পূর্ণতার আনন্দে সাহাবিরা যখন নামাজ, তাসবিহ-তাহলিলে ব্যস্ত তখন ওমর ফারুক (রা.) শিশুর মতো ডুকরে কেঁদে উঠলেন। অন্যরা বলল, ওমর! আজকের এ খুশির দিনে আপনি কাঁদছেন কেন? আল্লাহ তো আমাদের পূর্ণতা দান করেছেন।’ ওমর (রা.) বললেন, ‘পূর্ণতার পরই তো অপূর্ণতা শুরু হয়।’ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া।
বিচক্ষণ ওমর (রা.) খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছিলেন দীনের এ পূর্ণতা ক্রমান্বয়ে অপূর্ণ হবে। নবী (সা.) চলে যাবেন। অন্যান্য উম্মতের মতো এ উম্মতও একসময় খোদার ফরমান ভুলে যাবে। পৃথিবী আবার শুধু বেশধারী দরবেশদের দখলে চলে যাবে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মদিনার ইসলাম মদিনায় ফিরে আসবে, সাপ যেমন তার গর্তে ফিরে যায়।’ বুখারি, মুসলিম। তিনি (সা.) আরও বলেছেন, ‘আমার পর এমন সব লোক আসবে যারা মধুর সুরে কোরআন পড়বে, কিন্তু কোরআন তাদের গলার নিচে নামবে না। আত্মা স্পর্শ করবে না, মন ছুঁয়ে যাবে না। শুধু কোরআন শুনেই মুগ্ধ হয়ে কেউ ইসলাম গ্রহণ করবে না।’ বায়হাকি। আজ ১৪০০ বছর পর আমরা ঠিক যেন তা-ই দেখতে পাচ্ছি। বিশ্বব্যাপী শুধু লেবাসধারী মুসলমানদের হাঁকডাকে ধর্ম বলে যেন কিছু নেই। মুসলমানদের মধ্যে মানবতা নেই বললেই চলে। মানুষের প্রতি ভালোবাসা নেই। অথচ কোরআন পড়া হচ্ছে নিয়মিত। কোরআন মাহফিল হচ্ছে, গবেষণা হচ্ছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মনের ঘরে জ্বলুক হেরার আলো

আপলোড টাইম : ০৮:২৫:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অগাস্ট ২০২১

ধর্ম প্রতিবেদন:
হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন মুহাম্মদকে দিয়ে ইসলামবৃক্ষের বীজ বুনলেন আল্লাহতায়ালা। সিরাতে ইবনে হিশাম থেকে জানা যায়, নারীদের মধ্যে হজরত খাদিজা (রা.) এবং পুরুষদের মধ্যে হজরত আলী (রা.) প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। এভাবেই একদিন ইসলামবৃক্ষ মহিরুহে পরিণত হয় মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে। হিজরির দশম সনে বিদায় হজের সময় ৯ জিলহজ শুক্রবার আসরের পর আরাফার মাঠে লাখো মোমিনের নুরানি কাফেলা নিয়ে ‘জাবালে রহমতে’ দাঁড়িয়ে আছেন মরুফুল মুহাম্মদ রসুল। হৃদয় সমুদ্রে আনন্দের ঢেউ। শত বাধা পেরিয়ে আজ তিনি সফল। সফলতার স্বীকৃতি ও সাক্ষ্য দুটিই নিলেন সমবেত জনসমুদ্র থেকে। সাক্ষী রাখলেন দয়াময় প্রভুকে। রসুল (সা.)-এর আনন্দকে তৃপ্তিতে ভরিয়ে দিতে আল্লাহতায়ালা নাজিল করলেন, ‘আজ আমি তোমাদের আনুগত্যের বিধান পূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবনবিধান হিসেবে পরিপূর্ণ করলাম।’ সুরা মায়েদাহ, আয়াত ৩।
আল্লাহ বান্দার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে নিয়ামত পূর্ণ করেছেন এটি মামুলি কথা নয়। তাই তো সব সাহাবি আনন্দে আতিশয্যে খোদার কদমে সিজদায় লুটিয়ে পড়েছেন বারবার। একবার ইহুদি পন্ডিতরা হজরত ওমর ফারুক (রা.)-কে বললেন, ‘আপনাদের কোরআনে এমন একটি আয়াত আছে যা আমাদের থাকলে আমরা এর অবতীর্ণের দিনকে ঈদ হিসেবে উদ্যাপন করতাম।’ ফারুকে আজম বললেন, ‘তোমরা কোন আয়াতের কথা বলছ?’ তারা সুরা মায়েদার ৩ নম্বর আয়াতের কথা বললেন। ওমর (রা.) বললেন, ‘সত্যিই সে দিনটি আমাদের জন্য ঈদের দিন ছিল।’ (শরহে জালালাইন)। আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং দীনের পূর্ণতার আনন্দে সাহাবিরা যখন নামাজ, তাসবিহ-তাহলিলে ব্যস্ত তখন ওমর ফারুক (রা.) শিশুর মতো ডুকরে কেঁদে উঠলেন। অন্যরা বলল, ওমর! আজকের এ খুশির দিনে আপনি কাঁদছেন কেন? আল্লাহ তো আমাদের পূর্ণতা দান করেছেন।’ ওমর (রা.) বললেন, ‘পূর্ণতার পরই তো অপূর্ণতা শুরু হয়।’ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া।
বিচক্ষণ ওমর (রা.) খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছিলেন দীনের এ পূর্ণতা ক্রমান্বয়ে অপূর্ণ হবে। নবী (সা.) চলে যাবেন। অন্যান্য উম্মতের মতো এ উম্মতও একসময় খোদার ফরমান ভুলে যাবে। পৃথিবী আবার শুধু বেশধারী দরবেশদের দখলে চলে যাবে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মদিনার ইসলাম মদিনায় ফিরে আসবে, সাপ যেমন তার গর্তে ফিরে যায়।’ বুখারি, মুসলিম। তিনি (সা.) আরও বলেছেন, ‘আমার পর এমন সব লোক আসবে যারা মধুর সুরে কোরআন পড়বে, কিন্তু কোরআন তাদের গলার নিচে নামবে না। আত্মা স্পর্শ করবে না, মন ছুঁয়ে যাবে না। শুধু কোরআন শুনেই মুগ্ধ হয়ে কেউ ইসলাম গ্রহণ করবে না।’ বায়হাকি। আজ ১৪০০ বছর পর আমরা ঠিক যেন তা-ই দেখতে পাচ্ছি। বিশ্বব্যাপী শুধু লেবাসধারী মুসলমানদের হাঁকডাকে ধর্ম বলে যেন কিছু নেই। মুসলমানদের মধ্যে মানবতা নেই বললেই চলে। মানুষের প্রতি ভালোবাসা নেই। অথচ কোরআন পড়া হচ্ছে নিয়মিত। কোরআন মাহফিল হচ্ছে, গবেষণা হচ্ছে।