ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মক্কাতুল মুকাররমার সম্মান ও আদব

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৬:৩৬:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জুন ২০২২
  • / ৯ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম প্রতিবেদন:

মোমিনের অন্তরে পবিত্র মক্কা নগরীর প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ, তা আবহমানকাল থেকেই চলে আসছে। যার ফলে এ নগরীর নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে শ্রদ্ধাপূর্ণ বিশেষণ। মহান আল্লাহ এ ঘরকে নগরসমূহের মাতা বলে উল্লেখ করেছেন। আর এভাবে আমি আপনার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়, যাতে আপনি সতর্ক করতে পারেন নগরসমূহের মা মক্কা ও তার চারদিকের লোকজনকে। সুরা শুরা, আয়াত ৭। ত্বিন, জয়তুন, সিনাই পর্বত এবং এ নিরাপদ নগরীর শপথ। সুরা ত্বিন। শপথ এ নগরীর, আর আপনি এ নগরীর অধিকারী। সুরা বালাদ। নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা বাক্কায় (মক্কায়) এটা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারি। সুরা আলে ইমরান। এ নগরীকে নবী করিম (সা.) প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। তাই হিজরতের সময় মক্কা ত্যাগকালে তিনি আফসোস করে বলেছিলেন, তুমি কতই না উত্তম নগরী এবং আমার কাছে কতই না প্রিয় নগরী, আমার সম্প্রদায় যদি আমাকে বের করে না দিত, তাহলে তোমাকে ছেড়ে অন্য কোথাও আমি বসবাস করতাম না। বুখারি। হজরত ইবরাহিম (আ.) বলেছিলেন, হে আমার পরওয়ারদেগার! একে তুমি নিরাপদ নগরী কর এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতে ইমান আনে, তাদের ফলমূল থেকে জীবিকা দান কর। সুরা বাকারা। এ সেই নগরী, যেখানে মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁর বাল্যকাল, কৈশোর ও যৌবন অতিবাহিত করে বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছেন। জীবনের ৫৩ বছর এ নগরীতেই কাটিয়েছেন, এখানেই তিনি ওহি ও নবুয়ত লাভ করেছেন। এখান থেকেই তিনি মেরাজে গমন করেছেন। আল্লাহর পবিত্র ঘর কাবা শরিফ এ পবিত্র মক্কা নগরীতেই অবস্থিত। যাকে আল্লাহ তাঁর নিজের ঘর বলে অভিহিত করেছেন। তোমরা আমার পবিত্র ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর। সুরা বাকারা। আল্লাহ পবিত্র কাবাকে সম্মানিত ঘর এবং মানুষের কল্যাণের জন্য নির্ধারণ করেছেন। সুরা মায়িদা। আমি আদিষ্ট সেই ঘরের প্রভুর ইবাদত করতে, যাকে তিনি হারাম (সম্মানিত) সাব্যস্ত করেছেন। সুরা নামল। নবীজি ইরশাদ করেন, আমার উম্মত তত দিন পর্যন্ত নিরাপদে থাকবে, যত দিন পর্যন্ত তারা মক্কার যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করবে। যখন তারা এর অন্যথা করবে তখন তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। মিশকাত। মক্কা ও কাবাঘরের সম্মান করা এবং অত্যন্ত বিনয় ও আদবের সঙ্গে সব আচার-আচরণ অবলম্বন করা মুসলমান মাত্রই কর্তব্য। তাই ইমাম বুখারি তাঁর সহি গ্রন্থে ‘মক্কা প্রবেশের আগে গোসল’ শিরোনামে হাদিস বর্ণনা করেছেন। হজরত ইবনে ওমর (রা.) যখন মক্কা আসতেন তখন জি-তুওয়া নামক স্থানে রাতযাপন করতেন। ভোরে গোসল করতেন এবং সেখানে ফজরের নামাজ আদায় করতেন, পরে মক্কায় প্রবেশ করতেন এবং এ মর্মে হাদিস বর্ণনা করতেন যে নবী করিম (সা.) এ রূপই করতেন। বুখারি, মুসলিম। হারাম সীমানায় শিকার করা, এমনকি শিকারিকে শিকারের ব্যাপারে পথপ্রদর্শন ও সাহায্য-সহযোগিতা করাও যে হারাম, তা এ হারাম শরিফের সম্মানের কারণেই। আবহমানকাল থেকেই হারাম নিরাপদ ও সম্মানিত স্থান বলেই গণ্য হয়ে আসছে। যুদ্ধরত আরব গোত্রগুলো সেই জাহিলিয়াতের যুগেও শত্রুকে হাতের মুঠোয় পেয়েও হারাম সীমানায় বধ করত না বা তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করত না। আর এ সম্মান কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে। নবীজি ইরশাদ করেন, কেয়ামত অবধি এটা আল্লাহ-প্রদত্ত সম্মানের ভিত্তিতে সম্মানিত। সুতরাং হারাম এলাকায় কাঁটাযুক্ত গাছও কাটা যাবে না এবং তার শিকার জন্তুকে হাঁকানো যাবে না। বুখারি, মুসলিম। কেননা আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, যে হারাম শরিফে প্রবেশ করবে সে সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ। কেননা হারাম শরিফে অবস্থানরত সবাই আল্লাহর সম্মানিত মেহমান। চিরশত্রুকেও সেখানে কোনোরূপ অসদাচরণ করা যাবে না। কোনোরূপ আঘাত করা ও কষ্ট দেওয়া যাবে না। তাই হারাম শরিফে প্রবেশের আগেই উত্তমরূপে গোসল করে শরীর পাক, কাপড় পাক, মানসিক ও মানবিক পবিত্রতা অর্জন করে প্রবেশ করা সুন্নত। যখন মহাবরকতময় আল্লাহর ঘর বায়তুল্লাহ নজরে আসবে, তখন আল্লাহু আকবার ও লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ উচ্চারণ করবে। হজরত ইবনে ওমর ওই সময় বলতেন বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার। বাবুসসালাম দিয়ে মসজিদে হারামে প্রবেশ করা উত্তম। নবী করিম (সা.) মসজিদুল হারামে বায়তুল্লাহ দর্শনকালে দুই হাত ঊর্ধ্বে তুলে এরূপ দোয়া করতেন- হে আল্লাহ! এ ঘরের মানসম্মান, মর্যাদা বৃদ্ধি করুন এবং যারা এ ঘরে হজ বা ওমরাহ করে, তাদেরও মানমর্যাদা, সম্ভ্রম বৃদ্ধি করুন। বায়তুল্লাহ প্রথম দর্শনকালে দুই হাত তুলে যত দোয়া করা হয়, সব দোয়া আল্লাহ কবুল করে নেন। তাই পথ থেকে সরে, ভিড় থেকে দূরে নিরাপদ স্থানে দাঁড়িয়ে একিন ও বিশ্বাসের সঙ্গে মনপ্রাণ উজাড় করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। এরপর কাবাচত্বরে সর্বপ্রথম তাওয়াফ করা, তারপর মাকামে ইবরাহিমে দুই রাকাত নামাজ আদায়, এরপর জমজম পানি পান করা। সর্বদা মনে রাখতে হবে, হজ বিনষ্টকারী তিনটি বিষয় থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখা। ১. সব রকমের অশ্লীলতা, এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে পরনারী থেকে নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখা ২. সব রকমের গুনাহর কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা ৩. পরস্পরের সব রকমের ঝগড়াঝাঁটি, গিবত, সমালোচনা, পরশ্রীকাতরতা, তোহমত ও অপবাদ থেকে নিজেকে রক্ষা করা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মক্কাতুল মুকাররমার সম্মান ও আদব

আপলোড টাইম : ০৬:৩৬:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জুন ২০২২

ধর্ম প্রতিবেদন:

মোমিনের অন্তরে পবিত্র মক্কা নগরীর প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ, তা আবহমানকাল থেকেই চলে আসছে। যার ফলে এ নগরীর নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে শ্রদ্ধাপূর্ণ বিশেষণ। মহান আল্লাহ এ ঘরকে নগরসমূহের মাতা বলে উল্লেখ করেছেন। আর এভাবে আমি আপনার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়, যাতে আপনি সতর্ক করতে পারেন নগরসমূহের মা মক্কা ও তার চারদিকের লোকজনকে। সুরা শুরা, আয়াত ৭। ত্বিন, জয়তুন, সিনাই পর্বত এবং এ নিরাপদ নগরীর শপথ। সুরা ত্বিন। শপথ এ নগরীর, আর আপনি এ নগরীর অধিকারী। সুরা বালাদ। নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা বাক্কায় (মক্কায়) এটা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারি। সুরা আলে ইমরান। এ নগরীকে নবী করিম (সা.) প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। তাই হিজরতের সময় মক্কা ত্যাগকালে তিনি আফসোস করে বলেছিলেন, তুমি কতই না উত্তম নগরী এবং আমার কাছে কতই না প্রিয় নগরী, আমার সম্প্রদায় যদি আমাকে বের করে না দিত, তাহলে তোমাকে ছেড়ে অন্য কোথাও আমি বসবাস করতাম না। বুখারি। হজরত ইবরাহিম (আ.) বলেছিলেন, হে আমার পরওয়ারদেগার! একে তুমি নিরাপদ নগরী কর এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতে ইমান আনে, তাদের ফলমূল থেকে জীবিকা দান কর। সুরা বাকারা। এ সেই নগরী, যেখানে মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁর বাল্যকাল, কৈশোর ও যৌবন অতিবাহিত করে বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছেন। জীবনের ৫৩ বছর এ নগরীতেই কাটিয়েছেন, এখানেই তিনি ওহি ও নবুয়ত লাভ করেছেন। এখান থেকেই তিনি মেরাজে গমন করেছেন। আল্লাহর পবিত্র ঘর কাবা শরিফ এ পবিত্র মক্কা নগরীতেই অবস্থিত। যাকে আল্লাহ তাঁর নিজের ঘর বলে অভিহিত করেছেন। তোমরা আমার পবিত্র ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর। সুরা বাকারা। আল্লাহ পবিত্র কাবাকে সম্মানিত ঘর এবং মানুষের কল্যাণের জন্য নির্ধারণ করেছেন। সুরা মায়িদা। আমি আদিষ্ট সেই ঘরের প্রভুর ইবাদত করতে, যাকে তিনি হারাম (সম্মানিত) সাব্যস্ত করেছেন। সুরা নামল। নবীজি ইরশাদ করেন, আমার উম্মত তত দিন পর্যন্ত নিরাপদে থাকবে, যত দিন পর্যন্ত তারা মক্কার যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করবে। যখন তারা এর অন্যথা করবে তখন তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। মিশকাত। মক্কা ও কাবাঘরের সম্মান করা এবং অত্যন্ত বিনয় ও আদবের সঙ্গে সব আচার-আচরণ অবলম্বন করা মুসলমান মাত্রই কর্তব্য। তাই ইমাম বুখারি তাঁর সহি গ্রন্থে ‘মক্কা প্রবেশের আগে গোসল’ শিরোনামে হাদিস বর্ণনা করেছেন। হজরত ইবনে ওমর (রা.) যখন মক্কা আসতেন তখন জি-তুওয়া নামক স্থানে রাতযাপন করতেন। ভোরে গোসল করতেন এবং সেখানে ফজরের নামাজ আদায় করতেন, পরে মক্কায় প্রবেশ করতেন এবং এ মর্মে হাদিস বর্ণনা করতেন যে নবী করিম (সা.) এ রূপই করতেন। বুখারি, মুসলিম। হারাম সীমানায় শিকার করা, এমনকি শিকারিকে শিকারের ব্যাপারে পথপ্রদর্শন ও সাহায্য-সহযোগিতা করাও যে হারাম, তা এ হারাম শরিফের সম্মানের কারণেই। আবহমানকাল থেকেই হারাম নিরাপদ ও সম্মানিত স্থান বলেই গণ্য হয়ে আসছে। যুদ্ধরত আরব গোত্রগুলো সেই জাহিলিয়াতের যুগেও শত্রুকে হাতের মুঠোয় পেয়েও হারাম সীমানায় বধ করত না বা তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করত না। আর এ সম্মান কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে। নবীজি ইরশাদ করেন, কেয়ামত অবধি এটা আল্লাহ-প্রদত্ত সম্মানের ভিত্তিতে সম্মানিত। সুতরাং হারাম এলাকায় কাঁটাযুক্ত গাছও কাটা যাবে না এবং তার শিকার জন্তুকে হাঁকানো যাবে না। বুখারি, মুসলিম। কেননা আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, যে হারাম শরিফে প্রবেশ করবে সে সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ। কেননা হারাম শরিফে অবস্থানরত সবাই আল্লাহর সম্মানিত মেহমান। চিরশত্রুকেও সেখানে কোনোরূপ অসদাচরণ করা যাবে না। কোনোরূপ আঘাত করা ও কষ্ট দেওয়া যাবে না। তাই হারাম শরিফে প্রবেশের আগেই উত্তমরূপে গোসল করে শরীর পাক, কাপড় পাক, মানসিক ও মানবিক পবিত্রতা অর্জন করে প্রবেশ করা সুন্নত। যখন মহাবরকতময় আল্লাহর ঘর বায়তুল্লাহ নজরে আসবে, তখন আল্লাহু আকবার ও লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ উচ্চারণ করবে। হজরত ইবনে ওমর ওই সময় বলতেন বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার। বাবুসসালাম দিয়ে মসজিদে হারামে প্রবেশ করা উত্তম। নবী করিম (সা.) মসজিদুল হারামে বায়তুল্লাহ দর্শনকালে দুই হাত ঊর্ধ্বে তুলে এরূপ দোয়া করতেন- হে আল্লাহ! এ ঘরের মানসম্মান, মর্যাদা বৃদ্ধি করুন এবং যারা এ ঘরে হজ বা ওমরাহ করে, তাদেরও মানমর্যাদা, সম্ভ্রম বৃদ্ধি করুন। বায়তুল্লাহ প্রথম দর্শনকালে দুই হাত তুলে যত দোয়া করা হয়, সব দোয়া আল্লাহ কবুল করে নেন। তাই পথ থেকে সরে, ভিড় থেকে দূরে নিরাপদ স্থানে দাঁড়িয়ে একিন ও বিশ্বাসের সঙ্গে মনপ্রাণ উজাড় করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। এরপর কাবাচত্বরে সর্বপ্রথম তাওয়াফ করা, তারপর মাকামে ইবরাহিমে দুই রাকাত নামাজ আদায়, এরপর জমজম পানি পান করা। সর্বদা মনে রাখতে হবে, হজ বিনষ্টকারী তিনটি বিষয় থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখা। ১. সব রকমের অশ্লীলতা, এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে পরনারী থেকে নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখা ২. সব রকমের গুনাহর কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা ৩. পরস্পরের সব রকমের ঝগড়াঝাঁটি, গিবত, সমালোচনা, পরশ্রীকাতরতা, তোহমত ও অপবাদ থেকে নিজেকে রক্ষা করা।