ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ভয় যখন ইংরেজি ও গণিতে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৬:০১:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ মে ২০১৮
  • / ৪১১ বার পড়া হয়েছে

এইবারের এসএসসি পরীক্ষায় ৯ বছরের মধ্যে সবচাইতে খারাপ ফলাফল দেখা গেল। এই খারাপ ফলের নেপথ্যে রয়েছে ইংরেজি ও গণিত। আমরা দেখেছি, যুগের পর যুগ ধওে পাবলিক পরীক্ষা খারাপ ও ভালো বার নেপথ্যে প্রধান ভূমিকা পালন করে ইংরেজি ও গণিত। এইবার ঢাকা বোর্ডে গতবারের চাইতে ইংরেজিতে ৪ শতাংশ এবং গণিতে প্রায় ৩ শতাংশ বেশি ফেল করেছে। যশোর বোর্ডে এই হার ইংরেজি ও গণিতে যথাক্রমে ৬ ও ৪ শতাংশ। আর এইক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি খারাপ ফল করেছে সিলেট বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। গতবারের তুলনায় এইবার এই বোর্ডে ইংরেজিতে ৫ শতাংশ এবং গণিতে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি ফেল করেছে।
বিশ্বায়নের এই যুগে উচ্চশিক্ষা হইতে শুরু করিয়া চাকুরি, ব্যবসা-বাণিজ্য বিদেশ গমন সর্বক্ষেত্রেই ইংরেজিতে দক্ষতা জরুরি। দ্বিতীয় প্রধান ভাষা হিসাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়েই ইংরেজি বিষয়ে হাতেখড়ি হয় শিক্ষার্থীদের। কিন্তু জরিপে দেখা যাইতেছে, প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ইংরেজিতে ন্যূনতম দক্ষতাও অর্জন করিতে পারছে না বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। বরং তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ইংরেজি-ভীতি। গণিতের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে শিখনমান কেমন, তা যাচাইয়ে সর্বশেষ তিন বছর আগে একটি জরিপ চালায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। তাতে দেখা গিয়েছে, অষ্টম শ্রেণির অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীর ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে দক্ষতা কাক্ষিত মানের নয়। অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকরা যেইভাবে পড়ান, তাহা বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য ঠিকমতো অনুধাবনযোগ্য হয় না। শিক্ষাবিদরা মনে করেন, ইংরেজি ও গণিত সহজবোধ্য কওে পড়ানোর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ শিক্ষকেরই অভাব রয়েছে যথাযথ প্রশিক্ষণের। তাছাড়া প্রায় ক্ষেত্রেই শিক্ষকরা পাঠদান করান ভালো নম্বরের উদ্দেশ্যে, শেখানোর উদ্দেশ্যে নয়। পাঠদানের ক্ষেত্রে শিক্ষাক্রম ও শিক্ষক সহায়িকা অনুসরণের কথা বলা হলেও অধিকাংশ শিক্ষকই তা অনুসরণ করেন না। দেশের অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। শিক্ষাখাতের বিশ্লেষকদের মতে, অনেক ক্ষেত্রেই এই সকল বিদ্যালয়ের আর্থিক সংগতির অভাব রয়েছে, ফলে পর্যাপ্ত দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও সম্ভবপর হয় না। শিক্ষার্থীদের নিকট গণিত ও ইংরেজিকে সহজবোধ্য করবার জন্য পাঠদান ও শিক্ষাপদ্ধতিতে পরিবর্তন আনিবার সুপারিশের বিষয়টি নূতন নয়। অন্যদিকে, আমাদের সার্বিক শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এই ধরনের শিক্ষায় দক্ষ মানবসম্পদ গড়িয়া তোলা সম্ভবপর হচ্ছে না বিধায় বিদেশি দক্ষকর্মীদের প্রয়োজনীয়তাও কমছে না। শিক্ষার ভীতি যেহেতু প্রাথমিক পর্যায়েই হয়ে থাকে, সুতরাং গোড়ায় গলদ রাখলে চলিবে না। ইংরেজি ও গণিতে শিক্ষার্থীদের এই ভীতি দূর করবার যুগোপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ভয় যখন ইংরেজি ও গণিতে

আপলোড টাইম : ০৬:০১:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ মে ২০১৮

এইবারের এসএসসি পরীক্ষায় ৯ বছরের মধ্যে সবচাইতে খারাপ ফলাফল দেখা গেল। এই খারাপ ফলের নেপথ্যে রয়েছে ইংরেজি ও গণিত। আমরা দেখেছি, যুগের পর যুগ ধওে পাবলিক পরীক্ষা খারাপ ও ভালো বার নেপথ্যে প্রধান ভূমিকা পালন করে ইংরেজি ও গণিত। এইবার ঢাকা বোর্ডে গতবারের চাইতে ইংরেজিতে ৪ শতাংশ এবং গণিতে প্রায় ৩ শতাংশ বেশি ফেল করেছে। যশোর বোর্ডে এই হার ইংরেজি ও গণিতে যথাক্রমে ৬ ও ৪ শতাংশ। আর এইক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি খারাপ ফল করেছে সিলেট বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। গতবারের তুলনায় এইবার এই বোর্ডে ইংরেজিতে ৫ শতাংশ এবং গণিতে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি ফেল করেছে।
বিশ্বায়নের এই যুগে উচ্চশিক্ষা হইতে শুরু করিয়া চাকুরি, ব্যবসা-বাণিজ্য বিদেশ গমন সর্বক্ষেত্রেই ইংরেজিতে দক্ষতা জরুরি। দ্বিতীয় প্রধান ভাষা হিসাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়েই ইংরেজি বিষয়ে হাতেখড়ি হয় শিক্ষার্থীদের। কিন্তু জরিপে দেখা যাইতেছে, প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ইংরেজিতে ন্যূনতম দক্ষতাও অর্জন করিতে পারছে না বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। বরং তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ইংরেজি-ভীতি। গণিতের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে শিখনমান কেমন, তা যাচাইয়ে সর্বশেষ তিন বছর আগে একটি জরিপ চালায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। তাতে দেখা গিয়েছে, অষ্টম শ্রেণির অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীর ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে দক্ষতা কাক্ষিত মানের নয়। অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকরা যেইভাবে পড়ান, তাহা বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য ঠিকমতো অনুধাবনযোগ্য হয় না। শিক্ষাবিদরা মনে করেন, ইংরেজি ও গণিত সহজবোধ্য কওে পড়ানোর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ শিক্ষকেরই অভাব রয়েছে যথাযথ প্রশিক্ষণের। তাছাড়া প্রায় ক্ষেত্রেই শিক্ষকরা পাঠদান করান ভালো নম্বরের উদ্দেশ্যে, শেখানোর উদ্দেশ্যে নয়। পাঠদানের ক্ষেত্রে শিক্ষাক্রম ও শিক্ষক সহায়িকা অনুসরণের কথা বলা হলেও অধিকাংশ শিক্ষকই তা অনুসরণ করেন না। দেশের অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। শিক্ষাখাতের বিশ্লেষকদের মতে, অনেক ক্ষেত্রেই এই সকল বিদ্যালয়ের আর্থিক সংগতির অভাব রয়েছে, ফলে পর্যাপ্ত দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও সম্ভবপর হয় না। শিক্ষার্থীদের নিকট গণিত ও ইংরেজিকে সহজবোধ্য করবার জন্য পাঠদান ও শিক্ষাপদ্ধতিতে পরিবর্তন আনিবার সুপারিশের বিষয়টি নূতন নয়। অন্যদিকে, আমাদের সার্বিক শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এই ধরনের শিক্ষায় দক্ষ মানবসম্পদ গড়িয়া তোলা সম্ভবপর হচ্ছে না বিধায় বিদেশি দক্ষকর্মীদের প্রয়োজনীয়তাও কমছে না। শিক্ষার ভীতি যেহেতু প্রাথমিক পর্যায়েই হয়ে থাকে, সুতরাং গোড়ায় গলদ রাখলে চলিবে না। ইংরেজি ও গণিতে শিক্ষার্থীদের এই ভীতি দূর করবার যুগোপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।