ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ভেজাল খাদ্য থেকে ভোক্তাদের মুক্তি দিন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫৫:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ জুন ২০১৮
  • / ৩১৯ বার পড়া হয়েছে

ভেজাল খাদ্যের রাজ্যে যেন বন্দি এদেশের সর্বস্তরের মানুষ। এক সময় সুপারশপগুলো সমাজের উঁচু শ্রেণির নাগরিকদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হলেও রমজানে ভেজালবিরোধী অভিযানে শপগুলোর প্রতারণা সেখানেও ধস নামিয়ে দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রমজানে খাদ্যপণ্যের মূল্য কমানো হলেও আমাদের দেশে হয় এর উল্টো। রোজাদারদের ইফতার এবং সেহেরির জন্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে এবং অধিকাংশ খাদ্যপণ্য হবে ভেজালদুষ্ট। এটি নিয়মিত একটি বিষয়ে পরিণত হয়ে গেছে। প্রতিবছর একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এতদিন অন্তত সুপারশপগুলোর প্রতি একশ্রেণির ভোক্তাদের আস্থা বাজায় ছিল। অনেকেই কাঁচাবাজারের ময়লা-কাদা-দুর্গন্ধ থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে সুপারশপগুলোতে কেনাকাটা করতেন। এর জন্য তাদের বাড়তি অর্থও খরচ করতে হতো। সবচেয়ে বড় কথা, এই সুপারশপগুলোর ওপর ক্রেতাদের একটা আস্থা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ভেজালবিরোধী অভিযানে সে মোহ কাটতে সময় লাগেনি। তবে সব সময় শুধু সরকার বা দায়িত্বশীল মহলই ক্রেতা অধিকার রক্ষায় উদ্যোগ নেবেন তা নয়। এ ব্যাপারে ভোক্তাদেরও সতর্ক হতে হবে।
সুস্থ স্বাস্থ্যের জন্য ভেজালমুক্ত খাবার প্রথম এবং প্রধান শর্ত। মানুষ খাদ্য গ্রহণ করে শুধু উদরপূর্তির জন্য নয়, স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও। কারণ একজন সুস্থ মানুষ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য সম্পদ। স্বাস্থ্য সুস্থ না থাকলে একজন ব্যক্তি সবার কাছে বোঝা এমনকি তার নিজের কাছেও। কিন্তু কারো অর্থ লোভের কারণে যদি কোনো ব্যক্তি অসুস্থতায় ভোগেন এবং তার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে তবে এর দায় যে বা যারা খাদ্যে ভেজাল যুক্ত করে কাউকে তা তার অগোচরে খেতে বাধ্য করেছে তার বা তাদের। পাড়া-মহল্লায় খাদ্যে ভেজালের পাশাপাশি আধুনিক জীবনের প্রধান অনুষঙ্গ সুপারশপগুলোতে একইরকম ভেজালের অস্তিত্ব মেলে তবে ভোক্তারা কোথায় যাবে? একজন ভোক্তা কোনো পণ্য ক্রয়ের আগে শুধু তার অর্থ নয়, বিশ্বাস ও আস্থা বিনিয়োগেও প্রস্তুত থাকেন। সেই ভোক্তা যখন সর্বতোভাবে প্রতারিত হন তখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে- এদেশের জনগণ তবে কিসের বিনিময়ে, কোথায় গেলে ভেজালমুক্ত খাবারের নিশ্চয়তা পেতে পারে? তবে আশ্চর্যের বিষয়, অভিযুক্ত শপগুলোর কোনো কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যপণ্য সংরক্ষণ ও বিক্রির কারণে জরিমানার শিকার হয়েও এ কারণে তাদের ক্রেতা সংকট ঘটেনি বলে আত্মতৃপ্তি প্রকাশ করেছেন। এরা কি তবে এটিই জানে না যে, ক্রেতার আস্থাকে পুঁজি করে ক্রেতাকে লাগাতার ঠকিয়ে যাওয়াটা বড় ধরনের অপরাধ? নাকি তাদের নীতি-নৈতিকতার এতটাই অধঃপতন ঘটেছে যে অপরাধকে তারা অপরাধই মনে করেন না? সে ক্ষেত্রে তাদের বোধোদয় ঘটানোর জন্য আইনকেই আরো কঠোর ও কঠিন করতে হবে।
খাদ্যে ভেজালের মিশ্রণ মানে একটি দেশের অভ্যন্তরে একটি অসুস্থ, অথর্ব জাতি তৈরির সূক্ষ্ম পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। ধীরে ধীরে এটি হয়তো এমন এক সময় দৃশ্যমান অথবা উপলব্ধিতে আসবে যখন আর কিছুই করার থাকবে না। তাই সময় থাকতেই সতর্ক হওয়াটা জরুরি বলে মনে করি। শুধু রমজান বলে কথা নয়, ভেজালবিরোধী অভিযান সারাবছর ধরে চলুক এবং এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের কঠোর বিধানে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হলে আগামীতে এ ধরনের অপরাধে সংযুক্ত হতে অনেকেই ভয় পাবে বলে বিশ্বাস করি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ভেজাল খাদ্য থেকে ভোক্তাদের মুক্তি দিন

আপলোড টাইম : ০৯:৫৫:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ জুন ২০১৮

ভেজাল খাদ্যের রাজ্যে যেন বন্দি এদেশের সর্বস্তরের মানুষ। এক সময় সুপারশপগুলো সমাজের উঁচু শ্রেণির নাগরিকদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হলেও রমজানে ভেজালবিরোধী অভিযানে শপগুলোর প্রতারণা সেখানেও ধস নামিয়ে দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রমজানে খাদ্যপণ্যের মূল্য কমানো হলেও আমাদের দেশে হয় এর উল্টো। রোজাদারদের ইফতার এবং সেহেরির জন্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে এবং অধিকাংশ খাদ্যপণ্য হবে ভেজালদুষ্ট। এটি নিয়মিত একটি বিষয়ে পরিণত হয়ে গেছে। প্রতিবছর একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এতদিন অন্তত সুপারশপগুলোর প্রতি একশ্রেণির ভোক্তাদের আস্থা বাজায় ছিল। অনেকেই কাঁচাবাজারের ময়লা-কাদা-দুর্গন্ধ থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে সুপারশপগুলোতে কেনাকাটা করতেন। এর জন্য তাদের বাড়তি অর্থও খরচ করতে হতো। সবচেয়ে বড় কথা, এই সুপারশপগুলোর ওপর ক্রেতাদের একটা আস্থা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ভেজালবিরোধী অভিযানে সে মোহ কাটতে সময় লাগেনি। তবে সব সময় শুধু সরকার বা দায়িত্বশীল মহলই ক্রেতা অধিকার রক্ষায় উদ্যোগ নেবেন তা নয়। এ ব্যাপারে ভোক্তাদেরও সতর্ক হতে হবে।
সুস্থ স্বাস্থ্যের জন্য ভেজালমুক্ত খাবার প্রথম এবং প্রধান শর্ত। মানুষ খাদ্য গ্রহণ করে শুধু উদরপূর্তির জন্য নয়, স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও। কারণ একজন সুস্থ মানুষ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য সম্পদ। স্বাস্থ্য সুস্থ না থাকলে একজন ব্যক্তি সবার কাছে বোঝা এমনকি তার নিজের কাছেও। কিন্তু কারো অর্থ লোভের কারণে যদি কোনো ব্যক্তি অসুস্থতায় ভোগেন এবং তার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে তবে এর দায় যে বা যারা খাদ্যে ভেজাল যুক্ত করে কাউকে তা তার অগোচরে খেতে বাধ্য করেছে তার বা তাদের। পাড়া-মহল্লায় খাদ্যে ভেজালের পাশাপাশি আধুনিক জীবনের প্রধান অনুষঙ্গ সুপারশপগুলোতে একইরকম ভেজালের অস্তিত্ব মেলে তবে ভোক্তারা কোথায় যাবে? একজন ভোক্তা কোনো পণ্য ক্রয়ের আগে শুধু তার অর্থ নয়, বিশ্বাস ও আস্থা বিনিয়োগেও প্রস্তুত থাকেন। সেই ভোক্তা যখন সর্বতোভাবে প্রতারিত হন তখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে- এদেশের জনগণ তবে কিসের বিনিময়ে, কোথায় গেলে ভেজালমুক্ত খাবারের নিশ্চয়তা পেতে পারে? তবে আশ্চর্যের বিষয়, অভিযুক্ত শপগুলোর কোনো কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যপণ্য সংরক্ষণ ও বিক্রির কারণে জরিমানার শিকার হয়েও এ কারণে তাদের ক্রেতা সংকট ঘটেনি বলে আত্মতৃপ্তি প্রকাশ করেছেন। এরা কি তবে এটিই জানে না যে, ক্রেতার আস্থাকে পুঁজি করে ক্রেতাকে লাগাতার ঠকিয়ে যাওয়াটা বড় ধরনের অপরাধ? নাকি তাদের নীতি-নৈতিকতার এতটাই অধঃপতন ঘটেছে যে অপরাধকে তারা অপরাধই মনে করেন না? সে ক্ষেত্রে তাদের বোধোদয় ঘটানোর জন্য আইনকেই আরো কঠোর ও কঠিন করতে হবে।
খাদ্যে ভেজালের মিশ্রণ মানে একটি দেশের অভ্যন্তরে একটি অসুস্থ, অথর্ব জাতি তৈরির সূক্ষ্ম পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। ধীরে ধীরে এটি হয়তো এমন এক সময় দৃশ্যমান অথবা উপলব্ধিতে আসবে যখন আর কিছুই করার থাকবে না। তাই সময় থাকতেই সতর্ক হওয়াটা জরুরি বলে মনে করি। শুধু রমজান বলে কথা নয়, ভেজালবিরোধী অভিযান সারাবছর ধরে চলুক এবং এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের কঠোর বিধানে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হলে আগামীতে এ ধরনের অপরাধে সংযুক্ত হতে অনেকেই ভয় পাবে বলে বিশ্বাস করি।