ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ভূয়া সনদে সরকারি চাকুরীর অভিযোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৭:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০১৮
  • / ৪২৭ বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুরের মহিমার বিরুদ্ধে স্বামীকে তালাকের আগে দ্বিতীয় বিয়ে
মাসুদ রানা: মেহেরপুর সদর উপজেলার চাঁদবিল গ্রামের ফয়েজ উদ্দীনের মেয়ে মহিমা খাতুনের বিরুদ্ধে বয়স গোপন করে সরকারি চাকুরী গ্রহণ, স্বামী থাকাকালীন দ্বিতীয় বিয়ে এবং প্রথম স্বামীর বাড়ী থেকে গহনা চুরির অভিযোগ উঠেছে।
একই গ্রামের মৃত মহসীন আলীর ছেলে মহিমার প্রথম স্বামী হাফিজ উদ্দিন তার অভিযোগে জানায়, প্রায় পনের বছর আগে মহিমার সাথে তার বিয়ে হয়। তাদের দু’টি সন্তানও আছে। বড় মেয়ে বিপাশা নাজনীন রিয়া ৮ম ও ছেলে ছায়েম আল রকিম ২য় শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী। স্ত্রী মহিমা আমঝুপিতে ইম্প্যাক্ট জীবন মেলা হেলথ সেন্টারে আয়া কাম ক্লিনারের চাকরী করতো। ওই সময় মহিমা তার এক সহকর্মী মেহেরপুর শহরের ঘোষপাড়ার মতিন খানের ছেলে আমির খসরু খানের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি লোক জানাজানি হলে উভয়কে সতর্কও করেন তিনি। তা সত্ত্বেও গোপণে তাদের সম্পর্ক চলতে থাকে। মহিমা ইম্প্যাক্টের ওই চাকরী ছেড়ে লক্ষীপুর জজকোর্ট আদালতে চাকরীর জন্য চেষ্টা করতে থাকে এবং চাকরী পেতে আমার তার নিকট হতে ৬ লাখ টাকা নেয় সে। মহিমা তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি-১৯৮৫৫৭১৮৭১৯১৯৯২৬০) এর তথ্যাদি অনুসারে জন্ম তারিখ ৩ এপ্রিল’১৯৮৫, শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি ও স্বামীর নাম হাফিজ উদ্দীন গোপণ করে এবং দ্বিতীয় স্বামীর সহায়তায় নিজের নাম মরিয়ম খাতুন ধারণ করে আলমডাঙ্গা উপজেলার আলিয়ারপুর আজিজ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণী পাশ সনদপত্র সংগ্রহ করে। সেখানে প্রকৃত বয়স আড়াল করে ২৫ এপ্রিল’১৯৯০ করা হয়। এ ছাড়াও আলুকদিয়া ইউপি’র স্থায়ী বাসিন্দা দেখিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ইসলাম উদ্দিনের নিকট থেকে নাগরিক সনদ ও চারিত্রিক সনদপত্র সংগ্রহ করে। এ ভঅবে মহিমা তার সকল প্রকৃত তথ্য গোপণ করে মিথ্যা তথ্যের বুনিয়াদে লক্ষিপুর জজকোর্টে ঝাড়–দারের চাকরী নেয়।
মহিমার বিরুদ্ধে তার প্রথম স্বামীর আরও অভিযোগ, তার ও তার কন্যার অনুপস্থিতিতে তালাকের পূর্বে তার স্ত্রী মহিমা খাতুন তার বাড়ি থেকে নগদ ৮০ হাজার টাকা ও প্রায় ৬ ভরি সোনার গহনা (যার মূল্য আনুমানিক ৩ লাখ ৫০ হাজার ঠাকা) চুরি করে নিয়ে যায়। এসব ঘটনায় বাদী আসামীদের বিরুদ্ধে দঃবিঃ ৪৯৭/৪৯৮/৩৮০/৪৬৫/৪৬৭/৪৭১/১০৯ ধারা মতে ওয়ারেন্ট আদেশ চেয়ে সুবিচারের প্রার্থনা করেন। যার মামলা নংÑসিআর ৪০৪/২০১৭।
আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহম্মদ আলী বলেন, যে ছাত্রী একবার এসএসসি পাশ করেছে; সে ছাত্রী আবার অন্য বিদ্যালয় থেকে কিভাবে ৮ম শ্রেণী পাশ সার্টিফিকেট যোগাড় করল তা আমার বোধগম্য নয়।
অভিযুক্ত মহিমা খাতুন জানান, তার স্বামী হাফিজ উদ্দিন তাকে দিনের পর দিন যখন-তখন শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। তার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গত ১ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে সে তার স্বামীকে তালাক দেয়।
আমির খসরু খান বলেন, হাফিজ উদ্দিনের অভিযোগ সত্য নয়। আমি ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী গত ৩ জানুয়ারী ২০১৭ তারিখে মরিয়ম খাতুনকে বিয়ে করি।
চাঁদবিল গ্রামের মফিজুর রহমান ও জিয়ারুল ইসলাম জানান, হাফিজ উদ্দিনের অভিযোগ সত্য। মহিমা হাফিজের ৬ লাখ টাকা বাড়ি থেকে নিয়ে গেছে। আমরা তাকে মহিমা খাতুন বলে চিনি ও জানি। তারা আরো বলেন, বাদী হাফিজ উদ্দিন কখনও আসামী মহিমা খাতুনকে মারধর করেনি। মহিমা খাতুন মোবাইল ফোনে হাফিজ উদ্দিনকে জানায় সে উচ্চ ফ্যামিলির সাথে উঠাবসা করবে। তার গহনা লাগবে তাই সে বাড়ি থেকে ওই গহনা নিয়ে গেছে। হাফিজ-মহিমার মেয়ে বিপাশা নাজনীন (রিয়া) জানায়, তার বাবার অভিযোগ সত্য। তার মা তার সামনে বাড়ি থেকে গহনাগুলো বের করে নিয়ে গেছে। সে আরো জানায়, তার বাবাকে কোনদিন তার মায়ের গায়ে হাত তুলতে দেখিনি সে।
এদিকে আমির খসরু খান প্রেমিকা মহিমা খাতুনকে বিয়ে করতে তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ায় প্রথম স্ত্রী স্বামী আমির খসরু খানের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করেছেন। যার মামলা নং- সিআর-২৭০/১৭।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ভূয়া সনদে সরকারি চাকুরীর অভিযোগ

আপলোড টাইম : ০৮:৩৭:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০১৮

মেহেরপুরের মহিমার বিরুদ্ধে স্বামীকে তালাকের আগে দ্বিতীয় বিয়ে
মাসুদ রানা: মেহেরপুর সদর উপজেলার চাঁদবিল গ্রামের ফয়েজ উদ্দীনের মেয়ে মহিমা খাতুনের বিরুদ্ধে বয়স গোপন করে সরকারি চাকুরী গ্রহণ, স্বামী থাকাকালীন দ্বিতীয় বিয়ে এবং প্রথম স্বামীর বাড়ী থেকে গহনা চুরির অভিযোগ উঠেছে।
একই গ্রামের মৃত মহসীন আলীর ছেলে মহিমার প্রথম স্বামী হাফিজ উদ্দিন তার অভিযোগে জানায়, প্রায় পনের বছর আগে মহিমার সাথে তার বিয়ে হয়। তাদের দু’টি সন্তানও আছে। বড় মেয়ে বিপাশা নাজনীন রিয়া ৮ম ও ছেলে ছায়েম আল রকিম ২য় শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী। স্ত্রী মহিমা আমঝুপিতে ইম্প্যাক্ট জীবন মেলা হেলথ সেন্টারে আয়া কাম ক্লিনারের চাকরী করতো। ওই সময় মহিমা তার এক সহকর্মী মেহেরপুর শহরের ঘোষপাড়ার মতিন খানের ছেলে আমির খসরু খানের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি লোক জানাজানি হলে উভয়কে সতর্কও করেন তিনি। তা সত্ত্বেও গোপণে তাদের সম্পর্ক চলতে থাকে। মহিমা ইম্প্যাক্টের ওই চাকরী ছেড়ে লক্ষীপুর জজকোর্ট আদালতে চাকরীর জন্য চেষ্টা করতে থাকে এবং চাকরী পেতে আমার তার নিকট হতে ৬ লাখ টাকা নেয় সে। মহিমা তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি-১৯৮৫৫৭১৮৭১৯১৯৯২৬০) এর তথ্যাদি অনুসারে জন্ম তারিখ ৩ এপ্রিল’১৯৮৫, শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি ও স্বামীর নাম হাফিজ উদ্দীন গোপণ করে এবং দ্বিতীয় স্বামীর সহায়তায় নিজের নাম মরিয়ম খাতুন ধারণ করে আলমডাঙ্গা উপজেলার আলিয়ারপুর আজিজ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণী পাশ সনদপত্র সংগ্রহ করে। সেখানে প্রকৃত বয়স আড়াল করে ২৫ এপ্রিল’১৯৯০ করা হয়। এ ছাড়াও আলুকদিয়া ইউপি’র স্থায়ী বাসিন্দা দেখিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ইসলাম উদ্দিনের নিকট থেকে নাগরিক সনদ ও চারিত্রিক সনদপত্র সংগ্রহ করে। এ ভঅবে মহিমা তার সকল প্রকৃত তথ্য গোপণ করে মিথ্যা তথ্যের বুনিয়াদে লক্ষিপুর জজকোর্টে ঝাড়–দারের চাকরী নেয়।
মহিমার বিরুদ্ধে তার প্রথম স্বামীর আরও অভিযোগ, তার ও তার কন্যার অনুপস্থিতিতে তালাকের পূর্বে তার স্ত্রী মহিমা খাতুন তার বাড়ি থেকে নগদ ৮০ হাজার টাকা ও প্রায় ৬ ভরি সোনার গহনা (যার মূল্য আনুমানিক ৩ লাখ ৫০ হাজার ঠাকা) চুরি করে নিয়ে যায়। এসব ঘটনায় বাদী আসামীদের বিরুদ্ধে দঃবিঃ ৪৯৭/৪৯৮/৩৮০/৪৬৫/৪৬৭/৪৭১/১০৯ ধারা মতে ওয়ারেন্ট আদেশ চেয়ে সুবিচারের প্রার্থনা করেন। যার মামলা নংÑসিআর ৪০৪/২০১৭।
আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহম্মদ আলী বলেন, যে ছাত্রী একবার এসএসসি পাশ করেছে; সে ছাত্রী আবার অন্য বিদ্যালয় থেকে কিভাবে ৮ম শ্রেণী পাশ সার্টিফিকেট যোগাড় করল তা আমার বোধগম্য নয়।
অভিযুক্ত মহিমা খাতুন জানান, তার স্বামী হাফিজ উদ্দিন তাকে দিনের পর দিন যখন-তখন শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। তার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গত ১ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে সে তার স্বামীকে তালাক দেয়।
আমির খসরু খান বলেন, হাফিজ উদ্দিনের অভিযোগ সত্য নয়। আমি ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী গত ৩ জানুয়ারী ২০১৭ তারিখে মরিয়ম খাতুনকে বিয়ে করি।
চাঁদবিল গ্রামের মফিজুর রহমান ও জিয়ারুল ইসলাম জানান, হাফিজ উদ্দিনের অভিযোগ সত্য। মহিমা হাফিজের ৬ লাখ টাকা বাড়ি থেকে নিয়ে গেছে। আমরা তাকে মহিমা খাতুন বলে চিনি ও জানি। তারা আরো বলেন, বাদী হাফিজ উদ্দিন কখনও আসামী মহিমা খাতুনকে মারধর করেনি। মহিমা খাতুন মোবাইল ফোনে হাফিজ উদ্দিনকে জানায় সে উচ্চ ফ্যামিলির সাথে উঠাবসা করবে। তার গহনা লাগবে তাই সে বাড়ি থেকে ওই গহনা নিয়ে গেছে। হাফিজ-মহিমার মেয়ে বিপাশা নাজনীন (রিয়া) জানায়, তার বাবার অভিযোগ সত্য। তার মা তার সামনে বাড়ি থেকে গহনাগুলো বের করে নিয়ে গেছে। সে আরো জানায়, তার বাবাকে কোনদিন তার মায়ের গায়ে হাত তুলতে দেখিনি সে।
এদিকে আমির খসরু খান প্রেমিকা মহিমা খাতুনকে বিয়ে করতে তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ায় প্রথম স্ত্রী স্বামী আমির খসরু খানের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করেছেন। যার মামলা নং- সিআর-২৭০/১৭।