ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ভূয়া চেক দিয়ে নগদ টাকা ও মোবাইলফোন নিয়ে চম্পট

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৪৭:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০১৭
  • / ৩৬৭ বার পড়া হয়েছে

গাইবান্ধায় বন্যার পানিতে সর্বস্ব হারানোর পর চুয়াডাঙ্গায় এসেও শেষ সম্বলটুকুও খোয়ালো জিয়ারুল
ভূয়া চেক দিয়ে নগদ টাকা ও মোবাইলফোন নিয়ে চম্পট
Sap2সোহেল সজীব: বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি হারানোর পর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে শেষ সম্বল সামান্য কিছু টাকাও হারালো গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ চর অঞ্চলের বাসিন্দা জিয়ারুল ইসলাম। বন্যার পানিতে ঘর-বাড়ি ডুবে যাওয়ায় বিশ দিন আগে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে এসে বসতি গেড়েছেন তিনি। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ৯ বছরের মেয়ে চম্পাকে সাপে দংশন করে। গতকাল সকাল সাড়ে ৮তার দিকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। জিয়ারুলের অসহায়ত্বের সুযোগে তার পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়ায় মুখোশধারী এক প্রতারক। সুযোগ বুঝে ১০ হাজার টাকার জাল চেক দিয়ে জিয়ারুলের মোবাইলফোন সমেত কাছে থাকা নগদ টাকাও নিয়ে চম্পট দিয়েছে ওই প্রতারক। অপরদিকে, গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় আরও দুজনকে সাপে দংশন করে। তাদের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়, গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জের কালিরখামার গ্রামের চর অঞ্চলের বাসিন্দা জিয়ারুল ইসলামের ঘর-বাড়ি বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় প্রায় বিশ দিন আগে চুয়াডাঙ্গা জীবননগরের তেঁতুলিয়া গ্রামে এসে অস্থায়ী বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন তিনি। তাদের সাথে ওই অঞ্চলের আরও তিনটি পরিবার এসেছে তেঁতুলিয়া গ্রামে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে জিয়ারুলের মেয়ে চম্পা খাতুনকে (৯) সাপে দংশন করে। চম্পা তার বুকে জ্বালা-পোড়া করার কথা বললেও প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারেনি কেউ। সকাল ৬টার দিকে ঘরের পাশে সাপ দেখতে পেয়ে সাপটি মেরে ফেলে চম্পার পরিবারের লোকজন। সকাল ৭টার দিকে চম্পাকে নেয়া হয় জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে অ্যান্টি স্নেকভেনম ইনজেকশন না থাকায় তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সকাল সাড়ে ৮তার দিকে চম্পাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন সদর হাসপাতালেও অ্যান্টিস্নেকভেনম ইনজেকশন সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাহায্যে চম্পাকে ১০টি ইনজেকশনের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। ঠিক এসময় দেবদূতের মতো হাজির হয়ে নিজেকে সমাজসেবক পরিচয় দিয়ে জিয়ারুলের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে এক যুবক। দুজনে একসাথে সকালের নাস্তাও করে। নিজের পকেটে খুচরা টাকা নেই বলে জিয়ারুলের কাছ থেকে ওই নাস্তার টাকা দেয় সে। দীর্ঘসময় রোগী ও তার স্বজনদের পাশে থাকার দুপুরে জিয়ারুলের হাতে একটি ১০ হাজার টাকার চেক তুলে দেয় ওই প্রতারক। সে দরিদ্র মানুষের চিকিৎস্বার্থে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে বলেও জানায়। ১০ হাজার টাকার চেক দেওয়ার পর তার কাছে কোন টাকা নেই বলে জিয়ারুলের পকেটের নগদ ৫শ’ টাকা নিয়ে নেয় সে। এদিকে, সাহায্যের আবেদন জানিয়ে জীবননগর এলাকায় একটি বিকাশ ন¤॥^র দেয়া ছিলো জিয়ারুলের। সেই বিকাশ ন¤॥^রেও সাহায্যের তিন হাজার টাকা ছিলো। প্রতারক শুধু ৫শ টাকা নিয়েই শান্ত হয়নি, মোবাইল সমেত বিকাশের ৩ হাজার টাকাও নিয়ে চম্পট দেয় সে। দুপুরে ১০ হাজার টাকার নিয়ে ব্যাংকে যান জিয়ারুল। জাল চেকে টাকা তুলতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি।  শেষ স¤॥^ল কিছু টাকা হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। হাসপাতালে ফিরে বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষোভের সাথে স্থানীয়রা বলেন, এত ঘটনার পরও প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। এখন হাসপাতালে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। ক্যামেরার ফুটেজ দেখেও গত দিনের ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতারে তেমন পদক্ষেপ নিতে পারিনি। তবে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা সম্ভব। এদিকে, শিশুকন্যার চিকিৎসার জন্য সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সাহায্যের আবেদন করেছেন জিয়ারুল ইসলাম।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার বিষ্ণুপুর হাইস্কুলপাড়ার ইছাহক আলীর ছেলে লিখন আলীকে (২২) সাপে দংশন করেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে নিজঘর থেকে তাকে সাপে কামড় দেয়। পরে লিখনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। এছাড়া, দামুড়হুদার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের জিরাট স্কুলপাড়ার মৃত রবগুল ম-লের ছেলে হাফিজুল ইসলামকে (৪৫) সাপে কামড় দেয়। সকাল ৯টার দিকে মাঠে চাষ করতে গিয়ে সে দংশিত হয়। হাফিজুলকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ভূয়া চেক দিয়ে নগদ টাকা ও মোবাইলফোন নিয়ে চম্পট

আপলোড টাইম : ০৪:৪৭:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০১৭

গাইবান্ধায় বন্যার পানিতে সর্বস্ব হারানোর পর চুয়াডাঙ্গায় এসেও শেষ সম্বলটুকুও খোয়ালো জিয়ারুল
ভূয়া চেক দিয়ে নগদ টাকা ও মোবাইলফোন নিয়ে চম্পট
Sap2সোহেল সজীব: বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি হারানোর পর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে শেষ সম্বল সামান্য কিছু টাকাও হারালো গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ চর অঞ্চলের বাসিন্দা জিয়ারুল ইসলাম। বন্যার পানিতে ঘর-বাড়ি ডুবে যাওয়ায় বিশ দিন আগে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে এসে বসতি গেড়েছেন তিনি। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ৯ বছরের মেয়ে চম্পাকে সাপে দংশন করে। গতকাল সকাল সাড়ে ৮তার দিকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। জিয়ারুলের অসহায়ত্বের সুযোগে তার পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়ায় মুখোশধারী এক প্রতারক। সুযোগ বুঝে ১০ হাজার টাকার জাল চেক দিয়ে জিয়ারুলের মোবাইলফোন সমেত কাছে থাকা নগদ টাকাও নিয়ে চম্পট দিয়েছে ওই প্রতারক। অপরদিকে, গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় আরও দুজনকে সাপে দংশন করে। তাদের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়, গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জের কালিরখামার গ্রামের চর অঞ্চলের বাসিন্দা জিয়ারুল ইসলামের ঘর-বাড়ি বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় প্রায় বিশ দিন আগে চুয়াডাঙ্গা জীবননগরের তেঁতুলিয়া গ্রামে এসে অস্থায়ী বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন তিনি। তাদের সাথে ওই অঞ্চলের আরও তিনটি পরিবার এসেছে তেঁতুলিয়া গ্রামে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে জিয়ারুলের মেয়ে চম্পা খাতুনকে (৯) সাপে দংশন করে। চম্পা তার বুকে জ্বালা-পোড়া করার কথা বললেও প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারেনি কেউ। সকাল ৬টার দিকে ঘরের পাশে সাপ দেখতে পেয়ে সাপটি মেরে ফেলে চম্পার পরিবারের লোকজন। সকাল ৭টার দিকে চম্পাকে নেয়া হয় জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে অ্যান্টি স্নেকভেনম ইনজেকশন না থাকায় তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সকাল সাড়ে ৮তার দিকে চম্পাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন সদর হাসপাতালেও অ্যান্টিস্নেকভেনম ইনজেকশন সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাহায্যে চম্পাকে ১০টি ইনজেকশনের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। ঠিক এসময় দেবদূতের মতো হাজির হয়ে নিজেকে সমাজসেবক পরিচয় দিয়ে জিয়ারুলের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে এক যুবক। দুজনে একসাথে সকালের নাস্তাও করে। নিজের পকেটে খুচরা টাকা নেই বলে জিয়ারুলের কাছ থেকে ওই নাস্তার টাকা দেয় সে। দীর্ঘসময় রোগী ও তার স্বজনদের পাশে থাকার দুপুরে জিয়ারুলের হাতে একটি ১০ হাজার টাকার চেক তুলে দেয় ওই প্রতারক। সে দরিদ্র মানুষের চিকিৎস্বার্থে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে বলেও জানায়। ১০ হাজার টাকার চেক দেওয়ার পর তার কাছে কোন টাকা নেই বলে জিয়ারুলের পকেটের নগদ ৫শ’ টাকা নিয়ে নেয় সে। এদিকে, সাহায্যের আবেদন জানিয়ে জীবননগর এলাকায় একটি বিকাশ ন¤॥^র দেয়া ছিলো জিয়ারুলের। সেই বিকাশ ন¤॥^রেও সাহায্যের তিন হাজার টাকা ছিলো। প্রতারক শুধু ৫শ টাকা নিয়েই শান্ত হয়নি, মোবাইল সমেত বিকাশের ৩ হাজার টাকাও নিয়ে চম্পট দেয় সে। দুপুরে ১০ হাজার টাকার নিয়ে ব্যাংকে যান জিয়ারুল। জাল চেকে টাকা তুলতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি।  শেষ স¤॥^ল কিছু টাকা হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। হাসপাতালে ফিরে বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষোভের সাথে স্থানীয়রা বলেন, এত ঘটনার পরও প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। এখন হাসপাতালে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। ক্যামেরার ফুটেজ দেখেও গত দিনের ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতারে তেমন পদক্ষেপ নিতে পারিনি। তবে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা সম্ভব। এদিকে, শিশুকন্যার চিকিৎসার জন্য সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সাহায্যের আবেদন করেছেন জিয়ারুল ইসলাম।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার বিষ্ণুপুর হাইস্কুলপাড়ার ইছাহক আলীর ছেলে লিখন আলীকে (২২) সাপে দংশন করেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে নিজঘর থেকে তাকে সাপে কামড় দেয়। পরে লিখনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। এছাড়া, দামুড়হুদার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের জিরাট স্কুলপাড়ার মৃত রবগুল ম-লের ছেলে হাফিজুল ইসলামকে (৪৫) সাপে কামড় দেয়। সকাল ৯টার দিকে মাঠে চাষ করতে গিয়ে সে দংশিত হয়। হাফিজুলকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।