ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামেও মিলছে ডিস লাইসেন্স!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল ২০২১
  • / ৭৭ বার পড়া হয়েছে

গাংনী অফিস:
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় একের পর এক ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ডিস ক্যাবল নেটওয়ার্কের ফিড লাইসেন্স আবেদন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। এ নিয়ে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নতুন করে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে আবেদন করায় এ সময় চরম বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, গাংনী উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ৫৬টি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ডিস ক্যাবল ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ উপজেলার প্রায় শতভাগ এলাকায় ডিস ক্যাবল নেটওয়ার্কের কাভারেজ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আবারও তিনটি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য বিটিভিতে আবেদন করেছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছে- গাংনী পৌরসভা এলাকার এসআর ক্যাবল নেটওয়ার্ক, মটমুড়া ইউনিয়নে এসএম ক্যাবল নেটওয়ার্ক এবং বামন্দী ইউনিয়নে কামরুল ইসলাম ক্যাবল নেটওয়ার্ক। এ তিনটি প্রতিষ্ঠান স্যাটেলাইট ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসা পরিচালনা করছে মর্মে মিথ্য তথ্য ও ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করেছে। প্রকৃতপক্ষে তারা ইন্টারনেট ব্যবসায়ী। তাদের লাইসেন্স প্রদান না করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছে গাংনী উপজেলা স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক। আবেদনের সঙ্গে দাখিলকৃত ট্রেড লাইসেন্স ও বণিক সমিতির কাগজপত্র ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট পৌর মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেহেরপুর জেলা শিল্প ও বণিক সমিতি।
গাংনীর ক্যাবল নেটওয়ার্ক মালিকরা জানান, শতভাগ এলাকায় সংযোগ রয়েছে। এর মধ্যে নতুন লাইসেন্স দেওয়া হলে শুধুই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য দিয়ে লাইসেন্স পেলে সে বিশৃঙ্খলা আরও বেড়ে যাবে। তাই বিষয়টি দ্রুত সুরাহা চান তারা।
গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী এসআর ক্যাবল নেটওয়ার্ক নামীয় প্রতিষ্ঠানকে ভুয়া ডিস ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ২০২০ সালের ৮ জুলাই ইস্যুকৃত ট্রেড লাইসেন্স যার নম্বর ০১৬৫৬, লাইসেন্স আইডি নম্বর ০৬-০২৯-০১৬৫৬ নামের কোনো লাইসেন্স পৌরসভা থেকে গ্রহণ করেন নাই। উক্ত ট্রেড লাইসেন্সটি ভুয়া হিসেবে প্রতীয়মান। উপরোক্ত নামীয় ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে ডিস ক্যাবল নেটওয়ার্ক সনদের জন্য আবেদন করেছে এসআর ক্যাবল নেটওয়ার্ক।
একইভাবে মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ বলেছেন, এসএম ট্রেডার্স মুদি ব্যবসায়ী হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করেছেন। যার নম্বর ১৭৪-২০-২১। অপরিকে মেহেরপুর শিল্প ও বণিক সমিতির প্রত্যয়নে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, এসআর কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক মেহেরপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রথম শ্রেণির সদস্য। এছাড়া অন্য কোনো নামে চেম্বারের সদস্য নয়। একইভাবে মটমুড়া ইউনিয়নের এসএম ট্রেডার্স মুদি ব্যবসায়ী বলে মেহেরপুর শিল্প ও বণিক সমিতির প্রত্যয়নে নিশ্চিত করেছেন সাধারণ সম্পাদক আরিফুল এনাম বকুল।
অভিযোগে জানা গেছে, কিছু দিন আগে কাজিপুর ইউনিয়নের বেতবাড়ীয়া গ্রামের তারিন ক্যাবল নেটওয়ার্ক প্রো. মাসুদ রেজা ক্যাবল নেটওয়ার্ক লাইসেন্স পেলে এলাকায় বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। ডিস ক্যাবল লাইসেন্স প্রাপ্তির সকল তথ্য মিথ্যা দিয়ে লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য সুপারিশ করেন গাংনী সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়ানুর রহমান। ওই প্রতিষ্ঠানটির কন্ট্রোলরুম ও ডিস সংযোগ লাইন না থাকা সত্বেও লাইসেন্স পাওয়ায় ক্ষোভ শুরু হয় ডিস ক্যাবল অপারেটরদের মধ্যে। মাসুদ রেজা লাইসেন্স পাওয়ার পর বিভিন্ন বাড়িতে চলমান সংযোগ কেটে দিয়ে তার প্রতিষ্ঠানের সংযোগ দিতে গেলে মারামারির ঘটনাও ঘটে।
এদিকে লাইসেন্স প্রাপ্তি নিয়ে বামন্দী ইউনিয়নে কামরুল ইসলাম ক্যাবল নেটওয়ার্কের সত্ত্বাধিকারী সেলিম রেজার লোকজনের সঙ্গে ডিস ক্যাবল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মারামারি হয়। বিষয়টি গড়ায় থানা পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত উভয়পক্ষের মধ্যে আপস করে দেয় পুলিশ। এ তিনটি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পেলে এলাকায় চরম বিশৃঙ্খলা যে ঘটবেই, তা এ মারামারির ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়।
জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, মিথ্যা তথ্য ও ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আবেদনের বিষয়টি আমি অবহিত হয়েছি। তদন্তের জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামেও মিলছে ডিস লাইসেন্স!

আপলোড টাইম : ০৮:৪৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল ২০২১

গাংনী অফিস:
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় একের পর এক ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ডিস ক্যাবল নেটওয়ার্কের ফিড লাইসেন্স আবেদন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। এ নিয়ে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নতুন করে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে আবেদন করায় এ সময় চরম বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, গাংনী উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ৫৬টি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ডিস ক্যাবল ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ উপজেলার প্রায় শতভাগ এলাকায় ডিস ক্যাবল নেটওয়ার্কের কাভারেজ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আবারও তিনটি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য বিটিভিতে আবেদন করেছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছে- গাংনী পৌরসভা এলাকার এসআর ক্যাবল নেটওয়ার্ক, মটমুড়া ইউনিয়নে এসএম ক্যাবল নেটওয়ার্ক এবং বামন্দী ইউনিয়নে কামরুল ইসলাম ক্যাবল নেটওয়ার্ক। এ তিনটি প্রতিষ্ঠান স্যাটেলাইট ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসা পরিচালনা করছে মর্মে মিথ্য তথ্য ও ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করেছে। প্রকৃতপক্ষে তারা ইন্টারনেট ব্যবসায়ী। তাদের লাইসেন্স প্রদান না করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছে গাংনী উপজেলা স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক। আবেদনের সঙ্গে দাখিলকৃত ট্রেড লাইসেন্স ও বণিক সমিতির কাগজপত্র ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট পৌর মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেহেরপুর জেলা শিল্প ও বণিক সমিতি।
গাংনীর ক্যাবল নেটওয়ার্ক মালিকরা জানান, শতভাগ এলাকায় সংযোগ রয়েছে। এর মধ্যে নতুন লাইসেন্স দেওয়া হলে শুধুই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য দিয়ে লাইসেন্স পেলে সে বিশৃঙ্খলা আরও বেড়ে যাবে। তাই বিষয়টি দ্রুত সুরাহা চান তারা।
গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী এসআর ক্যাবল নেটওয়ার্ক নামীয় প্রতিষ্ঠানকে ভুয়া ডিস ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ২০২০ সালের ৮ জুলাই ইস্যুকৃত ট্রেড লাইসেন্স যার নম্বর ০১৬৫৬, লাইসেন্স আইডি নম্বর ০৬-০২৯-০১৬৫৬ নামের কোনো লাইসেন্স পৌরসভা থেকে গ্রহণ করেন নাই। উক্ত ট্রেড লাইসেন্সটি ভুয়া হিসেবে প্রতীয়মান। উপরোক্ত নামীয় ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে ডিস ক্যাবল নেটওয়ার্ক সনদের জন্য আবেদন করেছে এসআর ক্যাবল নেটওয়ার্ক।
একইভাবে মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ বলেছেন, এসএম ট্রেডার্স মুদি ব্যবসায়ী হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করেছেন। যার নম্বর ১৭৪-২০-২১। অপরিকে মেহেরপুর শিল্প ও বণিক সমিতির প্রত্যয়নে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, এসআর কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক মেহেরপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রথম শ্রেণির সদস্য। এছাড়া অন্য কোনো নামে চেম্বারের সদস্য নয়। একইভাবে মটমুড়া ইউনিয়নের এসএম ট্রেডার্স মুদি ব্যবসায়ী বলে মেহেরপুর শিল্প ও বণিক সমিতির প্রত্যয়নে নিশ্চিত করেছেন সাধারণ সম্পাদক আরিফুল এনাম বকুল।
অভিযোগে জানা গেছে, কিছু দিন আগে কাজিপুর ইউনিয়নের বেতবাড়ীয়া গ্রামের তারিন ক্যাবল নেটওয়ার্ক প্রো. মাসুদ রেজা ক্যাবল নেটওয়ার্ক লাইসেন্স পেলে এলাকায় বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। ডিস ক্যাবল লাইসেন্স প্রাপ্তির সকল তথ্য মিথ্যা দিয়ে লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য সুপারিশ করেন গাংনী সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়ানুর রহমান। ওই প্রতিষ্ঠানটির কন্ট্রোলরুম ও ডিস সংযোগ লাইন না থাকা সত্বেও লাইসেন্স পাওয়ায় ক্ষোভ শুরু হয় ডিস ক্যাবল অপারেটরদের মধ্যে। মাসুদ রেজা লাইসেন্স পাওয়ার পর বিভিন্ন বাড়িতে চলমান সংযোগ কেটে দিয়ে তার প্রতিষ্ঠানের সংযোগ দিতে গেলে মারামারির ঘটনাও ঘটে।
এদিকে লাইসেন্স প্রাপ্তি নিয়ে বামন্দী ইউনিয়নে কামরুল ইসলাম ক্যাবল নেটওয়ার্কের সত্ত্বাধিকারী সেলিম রেজার লোকজনের সঙ্গে ডিস ক্যাবল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মারামারি হয়। বিষয়টি গড়ায় থানা পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত উভয়পক্ষের মধ্যে আপস করে দেয় পুলিশ। এ তিনটি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পেলে এলাকায় চরম বিশৃঙ্খলা যে ঘটবেই, তা এ মারামারির ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়।
জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, মিথ্যা তথ্য ও ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আবেদনের বিষয়টি আমি অবহিত হয়েছি। তদন্তের জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।