ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর শুরু

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২০
  • / ১৬৬ বার পড়া হয়েছে

স্বদেশে প্রত্যাবাসনই হতে হবে মূল লক্ষ্য
ভাসানচরে আনন্দের ঢেউ জেগেছে যেন। দেড় সহস্রাধিক রোহিঙ্গা এক মহোৎসবে মেতেছে সেখানে। অনেকদিন ধরেই জল্পনা-কল্পনা চলছিল, রোহিঙ্গারা সেখানে যাবে তো! শেষ পর্যন্ত ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১ হাজার ৬৪২ জনকে শুক্রবার ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প থেকে রওনা দেয় রোহিঙ্গাদের প্রথম দল, যাদের মধ্যে ছিল ৩৬৮ জন পুরুষ, ৪৬৪ জন নারী এবং ৮১০ জন শিশু। চট্টগ্রামে রাত্রিযাপনের পর শুক্রবার তাদের নিয়ে রওনা হয় সেনা ও নৌবাহিনীর জাহাজ। নতুন ঠিকানায় তাদের স্বাগত জানানো হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। বর্ণিল ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছিল ভাসানচরের অস্থায়ী আবাসস্থল। সেখানে তৈরি হয় এক মহা আনন্দমুখর পরিবেশ। বসবাসের জন্য নতুন ঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ পেয়ে আনন্দে ফেটে পড়ে ভাসানচরে স্বেচ্ছায় আসা রোহিঙ্গারা। শিশুরা এক নতুন খোলামেলা পরিবেশ পেয়ে আনন্দে মাতোয়ারা হয়। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য যে আবাসস্থল তৈরি করা হয়েছে, তা আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় সমৃদ্ধ। সব মিলিয়ে কক্সবাজারের চেয়ে ১৮টি উন্নত সুবিধা রয়েছে ভাসানচরে। পুনর্বাসিত রোহিঙ্গাদের কাছে এটা হয়ে উঠেছে যেন রূপকথার জগৎ।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নতুন আবাসস্থলে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া তো শুরু হল, প্রশ্ন হচ্ছে ভাসানচর কি হয়ে উঠবে তাদের জন্য স্থায়ী ঠিকানা? তারা কি স্বদেশে প্রত্যাবাসিত হতে পারবে না? রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তটিকে সাধুবাদ জানিয়েই বলতে হয়, পুনর্বাসন নয়, তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনই হতে হবে মূল লক্ষ্য। প্রকৃতপক্ষে, কক্সবাজারে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, তারা চিরকালই সেখানে থেকে যাবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা বলছেন, মিয়ানমারকে অবশ্যই তার নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে। বস্তুত, মিয়ানমার যেসব রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে আপত্তি নেই বলে নিশ্চিত করেছে, তাদের একটি তালিকা তৈরি করেই ভাসানচরে প্রাথমিক স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কথা হচ্ছে, মিয়ানমার কি সত্যি সত্যি তালিকাভুক্তদের ফেরত নেবে? মিয়ানমারের অতীত কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রটির কোনো সদিচ্ছা নেই। নানা ধরনের টালবাহানা করে তারা মূল ইস্যু থেকে সরে গেছে ও যাচ্ছে। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। এই চাপ আরও বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘ এবং শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। লক্ষ করার বিষয়, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ও উপেক্ষা করছে। এ অবস্থায় দেশটির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের উচিত, একদিকে রোহিঙ্গাদের স্বচ্ছন্দ জীবন নিশ্চিত করা, অন্যদিকে তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর শুরু

আপলোড টাইম : ০৯:৫৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২০

স্বদেশে প্রত্যাবাসনই হতে হবে মূল লক্ষ্য
ভাসানচরে আনন্দের ঢেউ জেগেছে যেন। দেড় সহস্রাধিক রোহিঙ্গা এক মহোৎসবে মেতেছে সেখানে। অনেকদিন ধরেই জল্পনা-কল্পনা চলছিল, রোহিঙ্গারা সেখানে যাবে তো! শেষ পর্যন্ত ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১ হাজার ৬৪২ জনকে শুক্রবার ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প থেকে রওনা দেয় রোহিঙ্গাদের প্রথম দল, যাদের মধ্যে ছিল ৩৬৮ জন পুরুষ, ৪৬৪ জন নারী এবং ৮১০ জন শিশু। চট্টগ্রামে রাত্রিযাপনের পর শুক্রবার তাদের নিয়ে রওনা হয় সেনা ও নৌবাহিনীর জাহাজ। নতুন ঠিকানায় তাদের স্বাগত জানানো হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। বর্ণিল ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছিল ভাসানচরের অস্থায়ী আবাসস্থল। সেখানে তৈরি হয় এক মহা আনন্দমুখর পরিবেশ। বসবাসের জন্য নতুন ঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ পেয়ে আনন্দে ফেটে পড়ে ভাসানচরে স্বেচ্ছায় আসা রোহিঙ্গারা। শিশুরা এক নতুন খোলামেলা পরিবেশ পেয়ে আনন্দে মাতোয়ারা হয়। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য যে আবাসস্থল তৈরি করা হয়েছে, তা আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় সমৃদ্ধ। সব মিলিয়ে কক্সবাজারের চেয়ে ১৮টি উন্নত সুবিধা রয়েছে ভাসানচরে। পুনর্বাসিত রোহিঙ্গাদের কাছে এটা হয়ে উঠেছে যেন রূপকথার জগৎ।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নতুন আবাসস্থলে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া তো শুরু হল, প্রশ্ন হচ্ছে ভাসানচর কি হয়ে উঠবে তাদের জন্য স্থায়ী ঠিকানা? তারা কি স্বদেশে প্রত্যাবাসিত হতে পারবে না? রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তটিকে সাধুবাদ জানিয়েই বলতে হয়, পুনর্বাসন নয়, তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনই হতে হবে মূল লক্ষ্য। প্রকৃতপক্ষে, কক্সবাজারে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, তারা চিরকালই সেখানে থেকে যাবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা বলছেন, মিয়ানমারকে অবশ্যই তার নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে। বস্তুত, মিয়ানমার যেসব রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে আপত্তি নেই বলে নিশ্চিত করেছে, তাদের একটি তালিকা তৈরি করেই ভাসানচরে প্রাথমিক স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কথা হচ্ছে, মিয়ানমার কি সত্যি সত্যি তালিকাভুক্তদের ফেরত নেবে? মিয়ানমারের অতীত কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রটির কোনো সদিচ্ছা নেই। নানা ধরনের টালবাহানা করে তারা মূল ইস্যু থেকে সরে গেছে ও যাচ্ছে। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। এই চাপ আরও বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘ এবং শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। লক্ষ করার বিষয়, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ও উপেক্ষা করছে। এ অবস্থায় দেশটির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের উচিত, একদিকে রোহিঙ্গাদের স্বচ্ছন্দ জীবন নিশ্চিত করা, অন্যদিকে তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া।