ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ভাষার মান ও ঐতিহ্য রক্ষা হোক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪১:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • / ৩৬২ বার পড়া হয়েছে

ভাষা আন্দোলনের ফলে আমরা বাংলা ভাষা পেয়েছি। এ আন্দোলনের প্রত্যাশা যতটুকু ছিল, অনেকটা পূরণ হয়েছে। আবার কিছু কিছু পূরণ হয়নি। অতীতের আশায় তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। নতুন বাস্তবতায় নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা দরকার। সে বিষয়ে কোনো চিন্তা বা কাজ করার মতো কেউ নেই জনজীবনে। অবস্থা খুবই খারাপ। সমাজের স্তরে স্তরে জুলুম-জবরদস্তি চলছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কাজ করা হচ্ছে। ইসলাম এবং ধর্মনিরপেক্ষতা, আস্তিকতা ও নাস্তিকতা নিয়ে বিরোধে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। গণতন্ত্র নেই, সমাজতন্ত্রও নেই। জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানে আছে; কিন্তু বাস্তবে নেই। শিক্ষাব্যবস্থা ভেতর থেকে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান করতে এবং উন্নত জীবন প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন ইতিহাস তৈরি করা দরকার। অতীতের চিন্তায় মন আচ্ছন্ন রাখা ঠিক নয়।
জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা ভাষার স্থান চতুর্থ থাকলেও বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতিসংঘের মর্যাদাপূর্ণ আসনে নিতে পারছে না। বাংলাদেশ ছাড়াও পশ্চিম বাংলা, আগরতলা, আরাকান, নাগাল্যান্ড, মিউজোরাম, আসাম, মনিপুর প্রভৃতি অঞ্চলে বাংলা ভাষা ছড়িয়ে আছে। তারপরও বাংলা ভাষাকে নিয়ে কোনো কেন্দ্রীয় ঐক্য নেই। বাংলাদেশের সংবিধানে আছে, রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার হলেও ব্যাংকে, উচ্চশিক্ষায় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা নেই। এ অবস্থায় বাংলাদেশের ভেতরে বাংলা ভাষা সতর্কীত রূপে বিকশিত হচ্ছে না। সরকার ইংরেজি ভার্সন চালু করে শিক্ষাব্যবস্থার মূল ধারাকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। অন্যদিকে ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল শেখাচ্ছে। জাতীয় ভাষানীতি বলে বাংলা ভাষার এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রের অনুকূলে কিছু নেই। মাতৃভাষাগুলোকে রক্ষা করার কিছু আয়োজন দেখা যাচ্ছে, এর দ্বারাও বাংলা ভাষার বিকাশের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ভেতরে বাংলা ভাষা সরকারের দিক থেকে যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে না, এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলা ভাষাকে যথাচিত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করবে এমন আশা করার কোনো কারণ নেই।
জাতির লক্ষ্য না থাকার কারণে এবং জাতির রাজনীতি নিকৃষ্ট হওয়ার ফলে দেশের তরুণ সমাজ লক্ষ্যহীন, বিভ্রান্ত ও অস্থির। দেশপ্রেম এবং জাতীয়তাবোধ সৃষ্টির অনুকূল নয় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও রাজনীতি। শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা নিকৃষ্ট রূপ নিয়ে আছে, এসব কারণে দেশের তরুণরা বিভ্রান্তিকর নানা কাজে লিপ্ত হচ্ছে। যারা মেধাবী ও পরিশ্রমী, তারা বাংলাদেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রে গিয়ে নাগরিকত্ব গ্রহণে উৎসাহী। লেখক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে এমন চিন্তা চেতনা নেই যে তাদের থেকে তরুণরা গ্রহণীয় কোনো নির্দেশ পেতে পারে। তরুণদের নিজেদের চেষ্টাই গড়ে উঠতে হবে। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা এবং ইতিহাস থেকে তাদের অবশ্যই শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
সরকারের বিরোধিতার মুখে প্রতিবাদী অবস্থানে থেকে রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাহিত্যিক সর্বোপরি ছাত্র ও তরুণরা একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান করত। ওই অনুষ্ঠানে সৃষ্টিশীলতা ছিল, কিন্তু ১৯৭২ থেকে এটা পরিণত হয় সরকারি উদ্যোগে, রাষ্ট্রীয় এ উৎসবে। ফেব্রুয়ারি মাসের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা অভিব্যক্ত হয়। তার ফলে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ বর্তমান রূপে ঠিক আছে। ফেব্রুয়ারি মাসের এ অনুষ্ঠান না থাকলে দেশের মধ্যে আরো গণবিরোধী রূপ লাভ করত। ফেব্রুয়ারি মাসের অনেকে কিছুই আন্তরিকতাহীনভাবে লোক দেখানোর জন্য করেন। জাতির ভেতরে নতুন প্রাণশক্তির জাগরণ না ঘটা পর্যন্ত অবস্থা এমনই থাকবে। সরকারি উদ্যোগের সঙ্গে স্বাধীন প্রগতিশীল উদ্যোগ দরকার, তাহলেই আমরা আমাদের ভাষার মান ও ঐতিহ্য রক্ষা করতে পারব।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ভাষার মান ও ঐতিহ্য রক্ষা হোক

আপলোড টাইম : ০৯:৪১:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

ভাষা আন্দোলনের ফলে আমরা বাংলা ভাষা পেয়েছি। এ আন্দোলনের প্রত্যাশা যতটুকু ছিল, অনেকটা পূরণ হয়েছে। আবার কিছু কিছু পূরণ হয়নি। অতীতের আশায় তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। নতুন বাস্তবতায় নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা দরকার। সে বিষয়ে কোনো চিন্তা বা কাজ করার মতো কেউ নেই জনজীবনে। অবস্থা খুবই খারাপ। সমাজের স্তরে স্তরে জুলুম-জবরদস্তি চলছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কাজ করা হচ্ছে। ইসলাম এবং ধর্মনিরপেক্ষতা, আস্তিকতা ও নাস্তিকতা নিয়ে বিরোধে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। গণতন্ত্র নেই, সমাজতন্ত্রও নেই। জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানে আছে; কিন্তু বাস্তবে নেই। শিক্ষাব্যবস্থা ভেতর থেকে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান করতে এবং উন্নত জীবন প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন ইতিহাস তৈরি করা দরকার। অতীতের চিন্তায় মন আচ্ছন্ন রাখা ঠিক নয়।
জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা ভাষার স্থান চতুর্থ থাকলেও বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতিসংঘের মর্যাদাপূর্ণ আসনে নিতে পারছে না। বাংলাদেশ ছাড়াও পশ্চিম বাংলা, আগরতলা, আরাকান, নাগাল্যান্ড, মিউজোরাম, আসাম, মনিপুর প্রভৃতি অঞ্চলে বাংলা ভাষা ছড়িয়ে আছে। তারপরও বাংলা ভাষাকে নিয়ে কোনো কেন্দ্রীয় ঐক্য নেই। বাংলাদেশের সংবিধানে আছে, রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার হলেও ব্যাংকে, উচ্চশিক্ষায় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা নেই। এ অবস্থায় বাংলাদেশের ভেতরে বাংলা ভাষা সতর্কীত রূপে বিকশিত হচ্ছে না। সরকার ইংরেজি ভার্সন চালু করে শিক্ষাব্যবস্থার মূল ধারাকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। অন্যদিকে ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল শেখাচ্ছে। জাতীয় ভাষানীতি বলে বাংলা ভাষার এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রের অনুকূলে কিছু নেই। মাতৃভাষাগুলোকে রক্ষা করার কিছু আয়োজন দেখা যাচ্ছে, এর দ্বারাও বাংলা ভাষার বিকাশের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ভেতরে বাংলা ভাষা সরকারের দিক থেকে যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে না, এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলা ভাষাকে যথাচিত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করবে এমন আশা করার কোনো কারণ নেই।
জাতির লক্ষ্য না থাকার কারণে এবং জাতির রাজনীতি নিকৃষ্ট হওয়ার ফলে দেশের তরুণ সমাজ লক্ষ্যহীন, বিভ্রান্ত ও অস্থির। দেশপ্রেম এবং জাতীয়তাবোধ সৃষ্টির অনুকূল নয় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও রাজনীতি। শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা নিকৃষ্ট রূপ নিয়ে আছে, এসব কারণে দেশের তরুণরা বিভ্রান্তিকর নানা কাজে লিপ্ত হচ্ছে। যারা মেধাবী ও পরিশ্রমী, তারা বাংলাদেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রে গিয়ে নাগরিকত্ব গ্রহণে উৎসাহী। লেখক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে এমন চিন্তা চেতনা নেই যে তাদের থেকে তরুণরা গ্রহণীয় কোনো নির্দেশ পেতে পারে। তরুণদের নিজেদের চেষ্টাই গড়ে উঠতে হবে। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা এবং ইতিহাস থেকে তাদের অবশ্যই শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
সরকারের বিরোধিতার মুখে প্রতিবাদী অবস্থানে থেকে রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাহিত্যিক সর্বোপরি ছাত্র ও তরুণরা একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান করত। ওই অনুষ্ঠানে সৃষ্টিশীলতা ছিল, কিন্তু ১৯৭২ থেকে এটা পরিণত হয় সরকারি উদ্যোগে, রাষ্ট্রীয় এ উৎসবে। ফেব্রুয়ারি মাসের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা অভিব্যক্ত হয়। তার ফলে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ বর্তমান রূপে ঠিক আছে। ফেব্রুয়ারি মাসের এ অনুষ্ঠান না থাকলে দেশের মধ্যে আরো গণবিরোধী রূপ লাভ করত। ফেব্রুয়ারি মাসের অনেকে কিছুই আন্তরিকতাহীনভাবে লোক দেখানোর জন্য করেন। জাতির ভেতরে নতুন প্রাণশক্তির জাগরণ না ঘটা পর্যন্ত অবস্থা এমনই থাকবে। সরকারি উদ্যোগের সঙ্গে স্বাধীন প্রগতিশীল উদ্যোগ দরকার, তাহলেই আমরা আমাদের ভাষার মান ও ঐতিহ্য রক্ষা করতে পারব।