ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বেড়াতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরছে জায়ান

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৪৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৯
  • / ২৬৪ বার পড়া হয়েছে

শেখ সেলিমের নাতি জায়ানের সঙ্গে গুরুতর আহত তার বাবাও
সমীকরণ প্রতিবেদন:
দাদা মতিনুল হক পারুল চৌধুরী সুনামগঞ্জের দিরাই ভাটিপাড়ার জমিদার পরিবারের উত্তরাধিকারী। আসছে নভেম্বরে প্রথমবারের মতো দাদার জমিদার বাড়ি দেখতে যাওয়ার কথা ছিল জায়ান চৌধুরীর। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় নির্মম হামলার শিকার হয়ে দাদাবাড়ি আর দেখা হলো না জায়ানের। গত রবিবার বোমা হামলায় নিহত শিশু জায়ানের পরিবারে এখন শোকের মাতম। গতকাল সোমবার সকালে বনানীতে তার নানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও দাদা পারুল চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকাবহ পরিবেশ।
জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স, মা শেখ সোনিয়া ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ভ্রমণে যায় জায়ান চৌধুরী। রবিবার সকালে বাবার সঙ্গে সকালের নাশতা করতে একটি রেস্টুরেন্টে যায় জায়ান। সেখানেই বোমা হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারায় জায়ান। বাবা প্রিন্সও গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। তাঁর দুই পা-ই অকেজো হয়ে গেছে। আগামীকাল বুধবার জায়ানের মরদেহ দেশে আসার কথা রয়েছে। শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় নিহত শিশু জায়ানের পরিবারে গতকাল ছিল শোকের মাতম। গতকাল সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকায় বনানীর বাসায় ফেরেন জায়ানের দাদা পারুল চৌধুরী। সকালে তিনি বেয়াই ও প্রতিবেশী শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বাসায় যান। সেখানে তাঁদের সান্ত¡না দিতে আসেন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন নেতা ও মন্ত্রী।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ সেলিমের বাসা থেকে বেরিয়ে আসেন। এর আগে তাঁরা শেখ সেলিমের বাসভবনে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত করেন এবং শেখ সেলিম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সান্ত¡না দেন। এ সময় খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘শেখ সেলিমের মেয়ে জামাই খুব বাজেভাবে আহত হয়েছেন। তাঁর দুটি পা ড্যামেজ হয়ে গেছে। কমপক্ষে ১৫ দিন না গেলে তাঁকে হাসপাতাল থেকে মুভ করানো সম্ভব হবে না। ব্রেকফাস্ট করার জন্য জামাই এবং তাঁর ছেলে জায়ান চৌধুরী একটি হোটেলে পৌঁছেছিলেন। হোটেলের নিচেই আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে জায়ান নিহত হয়।’ শেখ সেলিমকে সান্ত¡না দিতে গতকাল সকালে তাঁর বাসায় যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। শেখ সেলিমের পারিবারিক সূত্রগুলো জানায়, শেখ সেলিমের ছেলে শেখ ফাহিম প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে ব্রুনেই গিয়েছিলেন। তিনি সেখান থেকে শ্রীলঙ্কা গেছেন। শেখ ফাহিমের ভাই শেখ নাইম ও তাঁর মা গতকাল শ্রীলঙ্কা পৌঁছেছেন। শেখ আয়ানের লাশ নিয়ে তাঁরা ঢাকায় ফিরবেন। তবে এক-দুজন গুরুতর আহত জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্সের পাশে থেকে যাবেন।
আগামী নভেম্বর মাসে গ্রামের বাড়ি আসার কথা ছিল সুনামগঞ্জের দিরাই ভাটিপাড়ার জমিদার পরিবারের সন্তান জায়ান চৌধুরীর। প্রিয় নাতির সঙ্গে নিজেদের জমিদারির গৌরব ও আভিজাত্যের গল্প করতেন দাদা মতিনুল হক চৌধুরী। হাওর ঘেরা গ্রামের বর্ণনা শুনে গ্রামে আসতে আগ্রহ জন্ম নেয় জায়ানের। তাই দাদুর কাছে বায়না ধরে, বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে। নাতির হাত ধরে নিজেদের জমিদারির সীমানা ঘুরে ঘুরে দেখানোর সুপ্ত ইচ্ছাও ছিল দাদুর। নাতি প্রথমবারের মতো বাড়ি আসবে এই আহ্লাদে বেজায় খুশি ছিলেন দাদু। তাই ঢাকা থেকে এক সপ্তাহ আগে বাড়ি এসে বনেদি পুরনো ভবনের সংস্কারকাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেই সুখ ও আহ্লাদ দুর্ঘটনায় বিষাদে পরিণত হয়েছে। পুরো পরিবার এখন শোকে স্তব্ধ। গ্রামের বাড়ির স্বজনরাও মর্মাহত। স্বজনরা জানায়, এক সপ্তাহ আগে ঢাকা থেকে মতিনুল হক পারুল চৌধুরী গ্রামের বাড়ি ছুটে আসেন। শ্রমিক লাগিয়ে বাড়িঘর পরিষ্কার, বসতঘর সংস্কার, বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন সংস্কারসহ রাস্তাঘাট সংস্কারের কাজ করান। বাড়িতে আনেন ফ্রিজ, জেনারেটরসহ নানা ধরনের মূল্যবান আসবাব। এই কাজ নিয়েই এক সপ্তাহ ধরে তিনি ব্যস্ত ছিলেন। এরই মধ্যে রবিবার পান ছেলে ও নাতির দুঃসংবাদ।
মতিন চৌধুরীর ভাতিজা সুজাত বখত চৌধুরী বলেন, ‘সম্পর্কে আমার চাচা হলেও আমরা সমবয়সী। তিনি ঢাকা থেকে আসার সময় আমাকে সিলেট থেকে নিয়ে এসেছেন। গল্প করেছেন, তাঁর নাতি আগামী নভেম্বরে বাড়িতে আসবে। গত এক সপ্তাহ ধরেই আনন্দের সঙ্গে তিনি শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ তদারকি করছিলেন। রবিবার বিকেলেও আমরা একসঙ্গে ছিলাম। এ সময়ই দুর্ঘটনার ফোন আসে। হাস্যোজ্জ্বল মানুষটি হঠাৎ মুষড়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ঢাকায় রওনা দিয়েছেন। সেখানে গিয়ে প্রিয় নাতি ও ছেলের জন্য বিলাপ করছেন।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বেড়াতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরছে জায়ান

আপলোড টাইম : ১১:৪৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৯

শেখ সেলিমের নাতি জায়ানের সঙ্গে গুরুতর আহত তার বাবাও
সমীকরণ প্রতিবেদন:
দাদা মতিনুল হক পারুল চৌধুরী সুনামগঞ্জের দিরাই ভাটিপাড়ার জমিদার পরিবারের উত্তরাধিকারী। আসছে নভেম্বরে প্রথমবারের মতো দাদার জমিদার বাড়ি দেখতে যাওয়ার কথা ছিল জায়ান চৌধুরীর। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় নির্মম হামলার শিকার হয়ে দাদাবাড়ি আর দেখা হলো না জায়ানের। গত রবিবার বোমা হামলায় নিহত শিশু জায়ানের পরিবারে এখন শোকের মাতম। গতকাল সোমবার সকালে বনানীতে তার নানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও দাদা পারুল চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকাবহ পরিবেশ।
জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স, মা শেখ সোনিয়া ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ভ্রমণে যায় জায়ান চৌধুরী। রবিবার সকালে বাবার সঙ্গে সকালের নাশতা করতে একটি রেস্টুরেন্টে যায় জায়ান। সেখানেই বোমা হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারায় জায়ান। বাবা প্রিন্সও গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। তাঁর দুই পা-ই অকেজো হয়ে গেছে। আগামীকাল বুধবার জায়ানের মরদেহ দেশে আসার কথা রয়েছে। শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় নিহত শিশু জায়ানের পরিবারে গতকাল ছিল শোকের মাতম। গতকাল সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকায় বনানীর বাসায় ফেরেন জায়ানের দাদা পারুল চৌধুরী। সকালে তিনি বেয়াই ও প্রতিবেশী শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বাসায় যান। সেখানে তাঁদের সান্ত¡না দিতে আসেন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন নেতা ও মন্ত্রী।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ সেলিমের বাসা থেকে বেরিয়ে আসেন। এর আগে তাঁরা শেখ সেলিমের বাসভবনে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত করেন এবং শেখ সেলিম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সান্ত¡না দেন। এ সময় খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘শেখ সেলিমের মেয়ে জামাই খুব বাজেভাবে আহত হয়েছেন। তাঁর দুটি পা ড্যামেজ হয়ে গেছে। কমপক্ষে ১৫ দিন না গেলে তাঁকে হাসপাতাল থেকে মুভ করানো সম্ভব হবে না। ব্রেকফাস্ট করার জন্য জামাই এবং তাঁর ছেলে জায়ান চৌধুরী একটি হোটেলে পৌঁছেছিলেন। হোটেলের নিচেই আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে জায়ান নিহত হয়।’ শেখ সেলিমকে সান্ত¡না দিতে গতকাল সকালে তাঁর বাসায় যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। শেখ সেলিমের পারিবারিক সূত্রগুলো জানায়, শেখ সেলিমের ছেলে শেখ ফাহিম প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে ব্রুনেই গিয়েছিলেন। তিনি সেখান থেকে শ্রীলঙ্কা গেছেন। শেখ ফাহিমের ভাই শেখ নাইম ও তাঁর মা গতকাল শ্রীলঙ্কা পৌঁছেছেন। শেখ আয়ানের লাশ নিয়ে তাঁরা ঢাকায় ফিরবেন। তবে এক-দুজন গুরুতর আহত জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্সের পাশে থেকে যাবেন।
আগামী নভেম্বর মাসে গ্রামের বাড়ি আসার কথা ছিল সুনামগঞ্জের দিরাই ভাটিপাড়ার জমিদার পরিবারের সন্তান জায়ান চৌধুরীর। প্রিয় নাতির সঙ্গে নিজেদের জমিদারির গৌরব ও আভিজাত্যের গল্প করতেন দাদা মতিনুল হক চৌধুরী। হাওর ঘেরা গ্রামের বর্ণনা শুনে গ্রামে আসতে আগ্রহ জন্ম নেয় জায়ানের। তাই দাদুর কাছে বায়না ধরে, বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে। নাতির হাত ধরে নিজেদের জমিদারির সীমানা ঘুরে ঘুরে দেখানোর সুপ্ত ইচ্ছাও ছিল দাদুর। নাতি প্রথমবারের মতো বাড়ি আসবে এই আহ্লাদে বেজায় খুশি ছিলেন দাদু। তাই ঢাকা থেকে এক সপ্তাহ আগে বাড়ি এসে বনেদি পুরনো ভবনের সংস্কারকাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেই সুখ ও আহ্লাদ দুর্ঘটনায় বিষাদে পরিণত হয়েছে। পুরো পরিবার এখন শোকে স্তব্ধ। গ্রামের বাড়ির স্বজনরাও মর্মাহত। স্বজনরা জানায়, এক সপ্তাহ আগে ঢাকা থেকে মতিনুল হক পারুল চৌধুরী গ্রামের বাড়ি ছুটে আসেন। শ্রমিক লাগিয়ে বাড়িঘর পরিষ্কার, বসতঘর সংস্কার, বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন সংস্কারসহ রাস্তাঘাট সংস্কারের কাজ করান। বাড়িতে আনেন ফ্রিজ, জেনারেটরসহ নানা ধরনের মূল্যবান আসবাব। এই কাজ নিয়েই এক সপ্তাহ ধরে তিনি ব্যস্ত ছিলেন। এরই মধ্যে রবিবার পান ছেলে ও নাতির দুঃসংবাদ।
মতিন চৌধুরীর ভাতিজা সুজাত বখত চৌধুরী বলেন, ‘সম্পর্কে আমার চাচা হলেও আমরা সমবয়সী। তিনি ঢাকা থেকে আসার সময় আমাকে সিলেট থেকে নিয়ে এসেছেন। গল্প করেছেন, তাঁর নাতি আগামী নভেম্বরে বাড়িতে আসবে। গত এক সপ্তাহ ধরেই আনন্দের সঙ্গে তিনি শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ তদারকি করছিলেন। রবিবার বিকেলেও আমরা একসঙ্গে ছিলাম। এ সময়ই দুর্ঘটনার ফোন আসে। হাস্যোজ্জ্বল মানুষটি হঠাৎ মুষড়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ঢাকায় রওনা দিয়েছেন। সেখানে গিয়ে প্রিয় নাতি ও ছেলের জন্য বিলাপ করছেন।’