ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বেপরোয়া স্বাস্থ্য খাত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৫:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জুলাই ২০২০
  • / ১৫১ বার পড়া হয়েছে

দুর্নীতি বন্ধের সুপারিশ উপেক্ষিত কেন?
মেডিকেল কলেজে ভর্তি জালিয়াতি থেকে শুরু করে ডাক্তার-নার্স-টেকনিশিয়ান বদলি-পদায়ন- স্বাস্থ্য খাতের এমন কোনো দিক নেই যা দুর্নীতিতে জর্জরিত নয়। কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতি, সামান্য কয়েক টাকার পর্দা ও সুঁই-সিরিঞ্জের দাম কয়েক হাজার টাকা করে দেখানো, প্রশিক্ষিত অপারেটর না থাকার পরও দামি যন্ত্রপাতি কিনে ফেলে রেখে মেয়াদোত্তীর্ণ করে ফেলা- কোনো ফাঁকফোকরই বাদ পড়ছে না দুর্নীতির করাল থাবা থেকে। অবস্থা অনেকটা এমন- ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেব কোথা’। এগুলো গোপন কোনো বিষয় নয়, দিনের পর দিন মিডিয়ায় স্বাস্থ্য খাতের নানা দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে এবং হচ্ছে; কিন্তু তারপরও পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা, অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে বিভিন্ন কমিটির, এমনকি খোদ দুদকের সুপারিশও বাস্তবায়ন হয়নি। তাহলে যে কোনো বড় অনিয়মের পর হুটহাট করে তদন্ত কমিটি গঠন ও দ্রুত সময়ে রিপোর্ট দেয়ার তাড়া দেয়ার হেতু কী- এমন প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়।
স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি বেশ পুরনো হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তৃতীয় শ্রেণির হিসাবরক্ষক আবজালের অঢেল সম্পত্তির ঘটনা মিডিয়ায় আসার পর হইচই তৈরি হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী উচ্চপদস্থদের সহায়তা ছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়তে পারেন না। সর্বশেষ করোনা মহামারী এসে স্বাস্থ্যের কালোবিড়াল সবার সামনে উন্মুক্ত করে দেয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের একজন মহাপরিচালককে বিদায় নিতে হয় করোনাকালেই। সর্বশেষ মন্ত্রণালয়ের কাছে সন্তোষজনক জবাব দিতে না পেরে বিদায় নিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন মহাপরিচালক। এ থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হল, স্বাস্থ্য খাতে টপ-টু-বটম অনেকে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত এবং বিভিন্ন সময়ে এর প্রমাণও পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে নতুন মহাপরিচালক যোগদান করেছেন। আমরা আশা করব, যে পরিস্থিতিতে নতুন ডিজি দায়িত্ব নিয়েছেন; তাতে সবাইকে নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার সৎ ও কার্যকর সাহস দেখানো উচিত হবে তার।
তারপরও অবশ্য উদ্বেগ থেকে যায়। কারণ, এর আগেও অনেক তদন্ত হয়েছে, সুপারিশ এসেছে কিন্তু সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। যেমন- স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ১১টি উৎস চিহ্নিত করেছে দুদক এবং এগুলো বন্ধে ২৫ দফা সুপারিশও করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। কেনাকাটা, টেন্ডার, সেবা, নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও ওষুধ সরবরাহসহ বিভিন্ন খাতে কী ধরনের দুর্নীতি হয়, বিস্তারিত তুলে ধরে সেগুলো বন্ধের সুপারিশসহ প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছেও দেয়া হয়; কিন্তু সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আমরা মনি করি, স্বাস্থ্য খাতের আমূল সংস্কারের এখনই সময়। কেন সুপারিশ বাস্তবায়িত হল না, সে প্রশ্ন উঠতে পারে। বস্তুত, অসমর্থ রোগীদের কষ্ট ও যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়া এবং সামর্থ্যবানদের সামান্য চিকিৎসার জন্যও বিদেশমুখী হওয়ার পেছনে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির দায় রয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ করা গেলে বিদ্যমান বাজেট দিয়েও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন সম্ভব। তারপরও দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার জরুরি ভিত্তিতে। নিয়মনীতির আওতায় আনা দরকার বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাকে। করোনকালে মানুষের ভোগান্তি ও উন্মোচিত স্বাস্থ্যের অনিয়ম থেকে অন্তত এ শিক্ষা নিতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও বড় সংকটের মুখে পড়তে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বেপরোয়া স্বাস্থ্য খাত

আপলোড টাইম : ০৯:১৫:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জুলাই ২০২০

দুর্নীতি বন্ধের সুপারিশ উপেক্ষিত কেন?
মেডিকেল কলেজে ভর্তি জালিয়াতি থেকে শুরু করে ডাক্তার-নার্স-টেকনিশিয়ান বদলি-পদায়ন- স্বাস্থ্য খাতের এমন কোনো দিক নেই যা দুর্নীতিতে জর্জরিত নয়। কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতি, সামান্য কয়েক টাকার পর্দা ও সুঁই-সিরিঞ্জের দাম কয়েক হাজার টাকা করে দেখানো, প্রশিক্ষিত অপারেটর না থাকার পরও দামি যন্ত্রপাতি কিনে ফেলে রেখে মেয়াদোত্তীর্ণ করে ফেলা- কোনো ফাঁকফোকরই বাদ পড়ছে না দুর্নীতির করাল থাবা থেকে। অবস্থা অনেকটা এমন- ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেব কোথা’। এগুলো গোপন কোনো বিষয় নয়, দিনের পর দিন মিডিয়ায় স্বাস্থ্য খাতের নানা দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে এবং হচ্ছে; কিন্তু তারপরও পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা, অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে বিভিন্ন কমিটির, এমনকি খোদ দুদকের সুপারিশও বাস্তবায়ন হয়নি। তাহলে যে কোনো বড় অনিয়মের পর হুটহাট করে তদন্ত কমিটি গঠন ও দ্রুত সময়ে রিপোর্ট দেয়ার তাড়া দেয়ার হেতু কী- এমন প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়।
স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি বেশ পুরনো হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তৃতীয় শ্রেণির হিসাবরক্ষক আবজালের অঢেল সম্পত্তির ঘটনা মিডিয়ায় আসার পর হইচই তৈরি হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী উচ্চপদস্থদের সহায়তা ছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়তে পারেন না। সর্বশেষ করোনা মহামারী এসে স্বাস্থ্যের কালোবিড়াল সবার সামনে উন্মুক্ত করে দেয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের একজন মহাপরিচালককে বিদায় নিতে হয় করোনাকালেই। সর্বশেষ মন্ত্রণালয়ের কাছে সন্তোষজনক জবাব দিতে না পেরে বিদায় নিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন মহাপরিচালক। এ থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হল, স্বাস্থ্য খাতে টপ-টু-বটম অনেকে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত এবং বিভিন্ন সময়ে এর প্রমাণও পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে নতুন মহাপরিচালক যোগদান করেছেন। আমরা আশা করব, যে পরিস্থিতিতে নতুন ডিজি দায়িত্ব নিয়েছেন; তাতে সবাইকে নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার সৎ ও কার্যকর সাহস দেখানো উচিত হবে তার।
তারপরও অবশ্য উদ্বেগ থেকে যায়। কারণ, এর আগেও অনেক তদন্ত হয়েছে, সুপারিশ এসেছে কিন্তু সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। যেমন- স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ১১টি উৎস চিহ্নিত করেছে দুদক এবং এগুলো বন্ধে ২৫ দফা সুপারিশও করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। কেনাকাটা, টেন্ডার, সেবা, নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও ওষুধ সরবরাহসহ বিভিন্ন খাতে কী ধরনের দুর্নীতি হয়, বিস্তারিত তুলে ধরে সেগুলো বন্ধের সুপারিশসহ প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছেও দেয়া হয়; কিন্তু সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আমরা মনি করি, স্বাস্থ্য খাতের আমূল সংস্কারের এখনই সময়। কেন সুপারিশ বাস্তবায়িত হল না, সে প্রশ্ন উঠতে পারে। বস্তুত, অসমর্থ রোগীদের কষ্ট ও যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়া এবং সামর্থ্যবানদের সামান্য চিকিৎসার জন্যও বিদেশমুখী হওয়ার পেছনে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির দায় রয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ করা গেলে বিদ্যমান বাজেট দিয়েও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন সম্ভব। তারপরও দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার জরুরি ভিত্তিতে। নিয়মনীতির আওতায় আনা দরকার বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাকে। করোনকালে মানুষের ভোগান্তি ও উন্মোচিত স্বাস্থ্যের অনিয়ম থেকে অন্তত এ শিক্ষা নিতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও বড় সংকটের মুখে পড়তে হবে।