ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বেগমপুর ফাঁড়ি পুলিশের হাতে ফেনসিডিলসহ সেনাসদস্য বশির আটকের ঘটনা নাটক আটকের হলেও-গোপন ব্যবসায় হলো তার কাল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:১৬:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জানুয়ারী ২০১৭
  • / ৩৪৯ বার পড়া হয়েছে

Untitled-1 copyনিজস্ব প্রতিবেদক: বেগমপুর ফাঁড়ি পুলিশের হাতে ফেনসিডিলসহ সেনাসদস্য বশির আদৌ হাতে নাতে আটক নাকি সাজানো নাটক এ নিয়ে নানা প্রশ্নের দানা বাঁধে পাঠক মনে। এ ঘটনায় তাদের নানামূখী আলোচনার প্রেক্ষিতে সময়ের সমীকরণ টিম সরেজমিনে তথ্য বের করেছে সম্প্রতি বেগমপুর ফাঁড়ি পুলিশের হাতে ৩০ বোতল ফেনসিডিলসহ সেনাসদস্য বশির আটকের নেপথ্য। হাতে নাতে আটকের বিষয়টি নাটক হলেও সেনা সদস্য বশির ধোয়া তুলশী পাতা নয়। তার চাকরীর আড়ালে সেনা সদস্য বশির জড়িত মাদক সিন্ডিকেটের গোপন চক্রের সাথে। এমনই তথ্য মিলেছে বশিরের নিজ গ্রামসহ আশপাশ এলাকার বিভিন্ন সূত্র থেকে।
সরেজমিনে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর ও জীবননগর উপজেলাধীন সীমান্তদ্বারগুলো থেকে একটি চক্র ফেনসিডিলসহ মাদক ও চোরাচালানী পণ্য গোপন পথে নির্দিষ্ট জায়গাতে একত্র করে। সেখান থেকে সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা তা পাচার করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সরবরাহকৃত মাদক চালানের অর্থ আদায় বা সংগ্রহের কাজটি একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সম্পন্ন করতো সেনা সদস্য বশির উদ্দিন ওরফে বশির। এ ক্ষেত্রে সে নিজের পদবীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতো। শুধু তাই নয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদককারবারী এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় বলেন, সদর উপজেলার বেগমপুর গ্রামের বেশ কিছু মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সিন্ডিকেট করে ফেনসিডিলের চালান বিভিন্ন স্থানে পৌছেও দিত সে। তবে বশির নিজে মাদক সরবরাহের সাথে কখনই স্বশরীরে যুক্ত ছিলনা। তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা মাদক সরবরাহের গোপন রুটে কাজ করতো। সরবরাহকৃত মাদক চালানের অর্থ আদায়ে বিশেষ ভুমিকা পালন করতো বশির। বিভিন্ন সময়ে বশির কারণে অ কারণেই যাকে তাকে টাকা ধার দিতো। আবার যাদের কাছে টাকা ধারদিতো তাদের অধিকাংশই মাদকব্যবসার সাথে জড়িত। ধারণা করা হচ্ছে এ সমস্ত টাকার হিসাব জটিলতা ও ভাগাভাগির সূত্র ধরেই তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
সেনা সদস্য বশিরের এক ব্যবসায়ীক সহযোগী জানায়, তাদের মধ্যে ব্যবসায়ীক লেনদেন বেশ ভালই ছিলো। ব্যবসায়ীক কাজে বশির ও তার দু’সহযোগী মিলে কিছুদিন আগে একটি প্রাইভেট কার কেনে। প্রাইভেট কারটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বশিরই বেশি ব্যবহার করতো। এক পর্যায়ে সকলের অজান্তে প্রাইভেট কারটি বিক্রি করে পুরো টাকা বেমালুম হজম করে ফেলে বশির একাই। ফলে অন্য দু’সহযোগী তার উপর চড়াও হলে একজনকে ম্যানেজ করতে পারলেও অন্য সহযোগীকে আর ম্যানেজ করতে পারেনি। ফলে তাদের মধ্যেও একটা কোন্দল চলে আসছিলো।
সেনা সদস্য বশিরের নিজ গ্রাম বেগমপুরের চিলমারীপাড়ার বেশ কয়েকজন বয়স্ক বাসিন্দার সাথে কথা বলে জানা যায় একই কথা। তারাও বলেন বশির মাদক বহন করতে পারেনা। তবে মাদক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সাথে বশিরের বেশ খাতির রয়েছে। ছুটিতে আসলে বশিরের বেশির ভাগ সময়ই কাটে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে। হতে পারে কোনো স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে বশিরকে ফাঁসানো হয়েছে।
এদিকে ঘটনার নেপথ্যের নায়ক এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শাহীন পেশায় একজন গোয়ালা। সে দিনে বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে ছানা ও দুধ সরবরাহ করে, আর রাতে অন্ধকারের আড়ালে মাদক ব্যবসা চালায়। এ ব্যাপারে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ঘটনার পর থেকে সে গাঁ ঢাকা দেওয়ায় যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। আরো জানা যায়, সেনা সদস্য বশিরকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একটি গোপন মহলে ১০হাজার টাকার চুক্তি করে শাহীন। বিষয়টি জানা জানি হয়ে যাওয়ায় সে গাঁ ঢাকা দিয়েছে বলে ধারণা করছে এলাকাবাসী। তবে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
এ ঘটনাটির ষড়যন্ত্র পরিকল্পনায় অনলাইনে কর্মরত কিছু স্থানীয় স্বার্থান্বেষী সাংবাদিক যুক্ত বলে জোর গুঞ্জন উঠেছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে বেগমপুর ফাঁড়ি পুলিশের অভিযানে ৩০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক সেনা সদস্য বেগমপুর চিলমারী পাড়ার সাবেক ইউপি সদস্য আকবর আলীর ছেলে বশির উদ্দিন ওরফে বশির বর্তমানে সেনা হেফাজতে আছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বেগমপুর ফাঁড়ি পুলিশের হাতে ফেনসিডিলসহ সেনাসদস্য বশির আটকের ঘটনা নাটক আটকের হলেও-গোপন ব্যবসায় হলো তার কাল

আপলোড টাইম : ১২:১৬:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জানুয়ারী ২০১৭

Untitled-1 copyনিজস্ব প্রতিবেদক: বেগমপুর ফাঁড়ি পুলিশের হাতে ফেনসিডিলসহ সেনাসদস্য বশির আদৌ হাতে নাতে আটক নাকি সাজানো নাটক এ নিয়ে নানা প্রশ্নের দানা বাঁধে পাঠক মনে। এ ঘটনায় তাদের নানামূখী আলোচনার প্রেক্ষিতে সময়ের সমীকরণ টিম সরেজমিনে তথ্য বের করেছে সম্প্রতি বেগমপুর ফাঁড়ি পুলিশের হাতে ৩০ বোতল ফেনসিডিলসহ সেনাসদস্য বশির আটকের নেপথ্য। হাতে নাতে আটকের বিষয়টি নাটক হলেও সেনা সদস্য বশির ধোয়া তুলশী পাতা নয়। তার চাকরীর আড়ালে সেনা সদস্য বশির জড়িত মাদক সিন্ডিকেটের গোপন চক্রের সাথে। এমনই তথ্য মিলেছে বশিরের নিজ গ্রামসহ আশপাশ এলাকার বিভিন্ন সূত্র থেকে।
সরেজমিনে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর ও জীবননগর উপজেলাধীন সীমান্তদ্বারগুলো থেকে একটি চক্র ফেনসিডিলসহ মাদক ও চোরাচালানী পণ্য গোপন পথে নির্দিষ্ট জায়গাতে একত্র করে। সেখান থেকে সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা তা পাচার করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সরবরাহকৃত মাদক চালানের অর্থ আদায় বা সংগ্রহের কাজটি একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সম্পন্ন করতো সেনা সদস্য বশির উদ্দিন ওরফে বশির। এ ক্ষেত্রে সে নিজের পদবীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতো। শুধু তাই নয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদককারবারী এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় বলেন, সদর উপজেলার বেগমপুর গ্রামের বেশ কিছু মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সিন্ডিকেট করে ফেনসিডিলের চালান বিভিন্ন স্থানে পৌছেও দিত সে। তবে বশির নিজে মাদক সরবরাহের সাথে কখনই স্বশরীরে যুক্ত ছিলনা। তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা মাদক সরবরাহের গোপন রুটে কাজ করতো। সরবরাহকৃত মাদক চালানের অর্থ আদায়ে বিশেষ ভুমিকা পালন করতো বশির। বিভিন্ন সময়ে বশির কারণে অ কারণেই যাকে তাকে টাকা ধার দিতো। আবার যাদের কাছে টাকা ধারদিতো তাদের অধিকাংশই মাদকব্যবসার সাথে জড়িত। ধারণা করা হচ্ছে এ সমস্ত টাকার হিসাব জটিলতা ও ভাগাভাগির সূত্র ধরেই তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
সেনা সদস্য বশিরের এক ব্যবসায়ীক সহযোগী জানায়, তাদের মধ্যে ব্যবসায়ীক লেনদেন বেশ ভালই ছিলো। ব্যবসায়ীক কাজে বশির ও তার দু’সহযোগী মিলে কিছুদিন আগে একটি প্রাইভেট কার কেনে। প্রাইভেট কারটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বশিরই বেশি ব্যবহার করতো। এক পর্যায়ে সকলের অজান্তে প্রাইভেট কারটি বিক্রি করে পুরো টাকা বেমালুম হজম করে ফেলে বশির একাই। ফলে অন্য দু’সহযোগী তার উপর চড়াও হলে একজনকে ম্যানেজ করতে পারলেও অন্য সহযোগীকে আর ম্যানেজ করতে পারেনি। ফলে তাদের মধ্যেও একটা কোন্দল চলে আসছিলো।
সেনা সদস্য বশিরের নিজ গ্রাম বেগমপুরের চিলমারীপাড়ার বেশ কয়েকজন বয়স্ক বাসিন্দার সাথে কথা বলে জানা যায় একই কথা। তারাও বলেন বশির মাদক বহন করতে পারেনা। তবে মাদক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সাথে বশিরের বেশ খাতির রয়েছে। ছুটিতে আসলে বশিরের বেশির ভাগ সময়ই কাটে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে। হতে পারে কোনো স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে বশিরকে ফাঁসানো হয়েছে।
এদিকে ঘটনার নেপথ্যের নায়ক এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শাহীন পেশায় একজন গোয়ালা। সে দিনে বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে ছানা ও দুধ সরবরাহ করে, আর রাতে অন্ধকারের আড়ালে মাদক ব্যবসা চালায়। এ ব্যাপারে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ঘটনার পর থেকে সে গাঁ ঢাকা দেওয়ায় যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। আরো জানা যায়, সেনা সদস্য বশিরকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একটি গোপন মহলে ১০হাজার টাকার চুক্তি করে শাহীন। বিষয়টি জানা জানি হয়ে যাওয়ায় সে গাঁ ঢাকা দিয়েছে বলে ধারণা করছে এলাকাবাসী। তবে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
এ ঘটনাটির ষড়যন্ত্র পরিকল্পনায় অনলাইনে কর্মরত কিছু স্থানীয় স্বার্থান্বেষী সাংবাদিক যুক্ত বলে জোর গুঞ্জন উঠেছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে বেগমপুর ফাঁড়ি পুলিশের অভিযানে ৩০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক সেনা সদস্য বেগমপুর চিলমারী পাড়ার সাবেক ইউপি সদস্য আকবর আলীর ছেলে বশির উদ্দিন ওরফে বশির বর্তমানে সেনা হেফাজতে আছে।