ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বৃদ্ধ দুই সবজি চাচার ৪৫ বছর পার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪২:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী ২০২১
  • / ১৬৫ বার পড়া হয়েছে

??

অন্যের ঘাড়ে বোঝা হতে চান না, সিকে-বাক কাঁধে দুয়ারে দুয়ারে
প্রতিবেদক, কালীগঞ্জ:
বয়োবৃদ্ধ আরশেদ আলী আর আব্দুল গফুর দুজনেই কালীগঞ্জ শহরে বসবাসকারীদের নিকট অতিচেনা মুখ। তাঁরা ছোট-বড় সকলেরই সবজি চাচা। দুজনে প্রায় সমবয়সী। বাড়ি শহরতলীর ভিন্ন গ্রামে হলেও তাঁদের কর্মকাণ্ড প্রায় একই। কেননা তাঁরা দুজনেই প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে শাক-সবজি সিকে-বাক কাঁধে করে চলে আসেন শহরে। এরপর বিভিন্ন মহল্লায় ঘুরে আরশেদ আলী বিক্রি করেন পেপে। আর আব্দুল গফুর বিক্রি করেন নানা রকমের বিষমুক্ত গ্রামীণ শাক। এভাবে চলছে ৪৫ বছরের অধিক সময়। এ বয়সে সবজির বোঝা কাঁধে নিয়ে প্রতিদিন শহরের মানুষের যোগান দিয়ে চললেও গফুর চাচা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। তাঁরা দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে শরীরের জন্য বড়ই উপকারী নিরাপদ খাদ্য সতেজ পেপে, কচু শাক, কচুর ডাটা, লাল শাক, সজনে শাক, কুমড়া শাক, লাউ শাক, কলার মোচা, কলার থোড়সহ গ্রামীণ বিভিন্ন শাক-সবজি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে সেবা করেছেন। বিনিময়ে চালিয়েছেন নিজেদের সংসারও। আরশেদ আলীর বাড়ি উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামে। অন্যদিকে, আব্দুল গফুরের বাড়ি তার পাশের জামাল ইউনিয়নের তৈলকুপে।
প্রতিদিন ভোরে কালীগঞ্জবাসী কমপক্ষে ৪০-৪৫ বছর দেখতে পেয়েছেন সবজি ভরা দুজনেই সিকে-বাক কাঁধে। প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার দূর থেকে সবজির বোঝা কাঁধে নিয়ে আসায় ঠাণ্ডার সময়েও পরিশ্রমে শরীরের কাপড়ের সবটুকু ঘেমে ভিজে একাকার হয়ে যেতে। ছুটে চলেন বিভিন্ন মহল্লার বাড়ি বাড়িতে। সবজি বিক্রি করে নরম রোদেই চাল-ডাল কিনে বাড়ি ফিরেন তাঁরা। তাঁরা জানান, তাঁদের দুজনের বয়স ৮৫’র ওপরে। আর দুজনেই এভাবে শাক-সবজি বিক্রি করছেন কয়েক যুগ ধরে।
বৃদ্ধ বয়সেও তাঁরা কেন এমন পরিশ্রমের কাজ করছেন, এমন প্রশ্ন করলে কিছুদিন আগে তাঁদের একজন বয়োবৃদ্ধ আব্দুল গফুর ছিলেন নীরব। তবে তাঁর চোখ পানিতে ছলছল করছিল। একপর্যায়ে উত্তর দিলেন, এ বয়সে কেউ শখে এমন পরিশ্রম করে না। কপালে ছিল তাই করছেন। বেশ কিছুদিন নিজে অসুস্থ তাই বাজারের মানুষগুলোর শাক খাওয়াতে পারছেন না। কারণ হঠাৎ অসুস্থতা তাঁকে জেকে ধরেছে। কিন্তু অন্যজন আরশেদ চাচা বললেন ভিন্ন কথা। অভাবের সংসার হলেও বাড়ির সকলে তাঁকে নিষেধ করে। কিন্তু তাঁর ভাষ্যে, কর্মক্ষম থাকা অবস্থায় কেন অন্যের ঘাড়ে বোঝা হতে হবে। যতদিন শরীরে সুস্থতা আছে, ততদিন পরিশ্রম করতে হবে। তা ছাড়া কাজে থাকলে দেহ ও মন উভয়ই ভালো থাকে। তাই কাজ করে যাচ্ছেন।
বয়োবৃদ্ধ আরশেদ আলী জানান, চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলেরাও বিয়ে করে সবাই পৃথক সংসার করছেন। মাঠে অল্প কিছু চাষযোগ্য জমি আছে। সেখান থেকে কিছু ফসল আসে। আর নিজে সারা বছর গ্রাম গ্রাম ঘুরে পেপে কিনে শহরে নিয়ে বিক্রি করেন। এতে তাঁর সংসার কোনো মতে চলে যায়। এভাবে চলছে প্রায় ৪৫ বছর। তিনি বলেন, ‘পরিশ্রমের কারণেই এখনও সুস্থ আছি। আমার দাবি, আমি এখন আমার গ্রাামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সী মানুষ হিসেবে আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছে।’
বয়োবৃদ্ধ আব্দুল গফুর জানান, চার ছেলে ও এক মেয়ে তাঁর। মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলেরাও বিয়ে করে সকলেই পৃথক সংসার করছেন। আর বৃদ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে তিনি এভাবে কাজের মাধ্যমে পয়সা রোজগার করে দুবেলা দুমুঠো খেযে বেঁচে আছেন। তিনি জানান, ‘বসতভিটের সাথে অল্প কিছু জমি আছে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের শাক চাষ করি। আর বাকি সময় মাঠে ও নদীর কিনার দিয়ে ঘুরে বিভিন্ন শাক নিজে তুলি আবার গ্রাম গ্রাম ঘুরে বাজারের দুর্লভ কিছু শাক কিনে এগুলো পরের দিন ভোরে শহরে নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি করি। মাঠে কোনো চাষযোগ্য জমি না থাকায় ছেলেরা পরের খেতে কামলার কাজ করে তারা তাদের সংসার সামলায়। আর এ বয়সে কাঁধে বোঝা টেনে আমাকে সামলাতে হয় আমাদের বুড়ো-বুড়ির সংসার।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে তৎকালীন কালীগঞ্জে কর্মরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মানোয়ার হোসেন মোল্লার বাসায় বিভিন্ন ধরনের শাক বিক্রি করতাম। তিনি আমার কষ্ট দেখে আমাকে বয়ষ্কভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। যা এখন আমার সংসার চালাতে খুব কাজে আসছে। তার এ উপকারের কথা আমি কোনো দিন ভুলব না। কিন্তু এখন আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। কী জানি কখন কী হয়ে যায়। তবে নিজের কাছে একটা বড় সান্তনা, জীবনে মানুষকে শাক দিয়ে অত্যন্ত উপকারে এসেছি। আমি কাউকে ফ্রি দিইনি। তারা আমাকে পয়সা দিয়েছেন তবে খাঁটি শাকটাই তাঁরা পেয়েছেন।’
পেপে চাচা আর সবজি চাচা যৌথভাবে বলেন, ‘যে জিনিস মানুষের শারীরিকভাবে উপকারে আসে, সেগুলোই আমরা ৪৫ বছর ধরে বিক্রি করে আসছি। তা ছাড়াও মানুষ সার ছাড়া উৎপাদিত টাটকা ও বাজারের দুর্লভ শাক-সবজি আমাদের কাছে পায় বলেই শহরের বিভিন্ন মহল্লার অনেকে পরিবারের চাহিদা মেটাতে আমাদের নিকট থেকেই নিয়মিত শাক-সবজি নিয়ে থাকে। ফলে শহরে বেশি সময় ঘুরতে হয় না।’ তাঁরা জানান, বেশি কষ্ট হয় গ্রাম গ্রাম ঘুরে এগুলো জোগাড় করে সিকে বাকে ভরে কাঁধে নিয়ে শহরে পৌঁছাতে।
বয়োবৃদ্ধ আরশেদ আলীর ছেলে ইব্রাহিম হোসেন জানান, ‘ছোটবেলা থেকে দেখছি আমার বাবা গ্রাম গ্রাম ঘুরে পেপে কিনে কালীগঞ্জ শহরে নিয়ে বিক্রি করতে। এখন তার অনেক বয়স হয়েছে। তারপরও এ বয়সে এমন পরিশ্রম করে চলেছেন আমরা ছেলেরা অনেক নিষেধ করেছি। কয়েকবার বন্ধও করে দিয়েছি। কিন্তু এটা করলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শে এখন আর তার কাজে আমরা বাধা দিই না।’
শহরের বিশিষ্ট মাংস ব্যবসয়ী গুল মোহাম্মদ জানান, রোদ বৃষ্টি ঝড় কোনো বাধায় এ দুজনকে আটকাতে পারে না। ভোর হলেই তারা বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি নিয়ে চলে আসে শহরে। ছোটবেলা থেকে দেখছি তারা এভাবে ব্যবসা করছেন। তারা অত্যন্ত ভদ্র ও সৎ। এখন বয়স হয়ে গেছে ফলে মালামাল বোঝায় সিকে-বাক কাঁধে নিয়ে যখন তারা পথ দিয়ে হেঁটে যায়, তখন মানুষের খুব নজরে পড়ে। তাদেরকে শহরবাসী খুব ভালোবাসে। অনেকে টাটকা শাক-সবজি পেতে ভোরে তাদের অপেক্ষায় মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আবার ভোরে হাঁটতে বের হওয়া অনেক নারী পুরুষ পথ থেকেই তাদের শাক-সবজি কিনে নেন। এখনও গফুর চাচা নিয়মিত শহরে আসেন। কিন্তু আরশেদ চাচা নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এক কথায় তারা দুজনই অনেক সহজ সরল ও সৎ মানুষ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বৃদ্ধ দুই সবজি চাচার ৪৫ বছর পার

আপলোড টাইম : ০৯:৪২:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী ২০২১

অন্যের ঘাড়ে বোঝা হতে চান না, সিকে-বাক কাঁধে দুয়ারে দুয়ারে
প্রতিবেদক, কালীগঞ্জ:
বয়োবৃদ্ধ আরশেদ আলী আর আব্দুল গফুর দুজনেই কালীগঞ্জ শহরে বসবাসকারীদের নিকট অতিচেনা মুখ। তাঁরা ছোট-বড় সকলেরই সবজি চাচা। দুজনে প্রায় সমবয়সী। বাড়ি শহরতলীর ভিন্ন গ্রামে হলেও তাঁদের কর্মকাণ্ড প্রায় একই। কেননা তাঁরা দুজনেই প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে শাক-সবজি সিকে-বাক কাঁধে করে চলে আসেন শহরে। এরপর বিভিন্ন মহল্লায় ঘুরে আরশেদ আলী বিক্রি করেন পেপে। আর আব্দুল গফুর বিক্রি করেন নানা রকমের বিষমুক্ত গ্রামীণ শাক। এভাবে চলছে ৪৫ বছরের অধিক সময়। এ বয়সে সবজির বোঝা কাঁধে নিয়ে প্রতিদিন শহরের মানুষের যোগান দিয়ে চললেও গফুর চাচা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। তাঁরা দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে শরীরের জন্য বড়ই উপকারী নিরাপদ খাদ্য সতেজ পেপে, কচু শাক, কচুর ডাটা, লাল শাক, সজনে শাক, কুমড়া শাক, লাউ শাক, কলার মোচা, কলার থোড়সহ গ্রামীণ বিভিন্ন শাক-সবজি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে সেবা করেছেন। বিনিময়ে চালিয়েছেন নিজেদের সংসারও। আরশেদ আলীর বাড়ি উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামে। অন্যদিকে, আব্দুল গফুরের বাড়ি তার পাশের জামাল ইউনিয়নের তৈলকুপে।
প্রতিদিন ভোরে কালীগঞ্জবাসী কমপক্ষে ৪০-৪৫ বছর দেখতে পেয়েছেন সবজি ভরা দুজনেই সিকে-বাক কাঁধে। প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার দূর থেকে সবজির বোঝা কাঁধে নিয়ে আসায় ঠাণ্ডার সময়েও পরিশ্রমে শরীরের কাপড়ের সবটুকু ঘেমে ভিজে একাকার হয়ে যেতে। ছুটে চলেন বিভিন্ন মহল্লার বাড়ি বাড়িতে। সবজি বিক্রি করে নরম রোদেই চাল-ডাল কিনে বাড়ি ফিরেন তাঁরা। তাঁরা জানান, তাঁদের দুজনের বয়স ৮৫’র ওপরে। আর দুজনেই এভাবে শাক-সবজি বিক্রি করছেন কয়েক যুগ ধরে।
বৃদ্ধ বয়সেও তাঁরা কেন এমন পরিশ্রমের কাজ করছেন, এমন প্রশ্ন করলে কিছুদিন আগে তাঁদের একজন বয়োবৃদ্ধ আব্দুল গফুর ছিলেন নীরব। তবে তাঁর চোখ পানিতে ছলছল করছিল। একপর্যায়ে উত্তর দিলেন, এ বয়সে কেউ শখে এমন পরিশ্রম করে না। কপালে ছিল তাই করছেন। বেশ কিছুদিন নিজে অসুস্থ তাই বাজারের মানুষগুলোর শাক খাওয়াতে পারছেন না। কারণ হঠাৎ অসুস্থতা তাঁকে জেকে ধরেছে। কিন্তু অন্যজন আরশেদ চাচা বললেন ভিন্ন কথা। অভাবের সংসার হলেও বাড়ির সকলে তাঁকে নিষেধ করে। কিন্তু তাঁর ভাষ্যে, কর্মক্ষম থাকা অবস্থায় কেন অন্যের ঘাড়ে বোঝা হতে হবে। যতদিন শরীরে সুস্থতা আছে, ততদিন পরিশ্রম করতে হবে। তা ছাড়া কাজে থাকলে দেহ ও মন উভয়ই ভালো থাকে। তাই কাজ করে যাচ্ছেন।
বয়োবৃদ্ধ আরশেদ আলী জানান, চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলেরাও বিয়ে করে সবাই পৃথক সংসার করছেন। মাঠে অল্প কিছু চাষযোগ্য জমি আছে। সেখান থেকে কিছু ফসল আসে। আর নিজে সারা বছর গ্রাম গ্রাম ঘুরে পেপে কিনে শহরে নিয়ে বিক্রি করেন। এতে তাঁর সংসার কোনো মতে চলে যায়। এভাবে চলছে প্রায় ৪৫ বছর। তিনি বলেন, ‘পরিশ্রমের কারণেই এখনও সুস্থ আছি। আমার দাবি, আমি এখন আমার গ্রাামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সী মানুষ হিসেবে আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছে।’
বয়োবৃদ্ধ আব্দুল গফুর জানান, চার ছেলে ও এক মেয়ে তাঁর। মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলেরাও বিয়ে করে সকলেই পৃথক সংসার করছেন। আর বৃদ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে তিনি এভাবে কাজের মাধ্যমে পয়সা রোজগার করে দুবেলা দুমুঠো খেযে বেঁচে আছেন। তিনি জানান, ‘বসতভিটের সাথে অল্প কিছু জমি আছে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের শাক চাষ করি। আর বাকি সময় মাঠে ও নদীর কিনার দিয়ে ঘুরে বিভিন্ন শাক নিজে তুলি আবার গ্রাম গ্রাম ঘুরে বাজারের দুর্লভ কিছু শাক কিনে এগুলো পরের দিন ভোরে শহরে নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি করি। মাঠে কোনো চাষযোগ্য জমি না থাকায় ছেলেরা পরের খেতে কামলার কাজ করে তারা তাদের সংসার সামলায়। আর এ বয়সে কাঁধে বোঝা টেনে আমাকে সামলাতে হয় আমাদের বুড়ো-বুড়ির সংসার।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে তৎকালীন কালীগঞ্জে কর্মরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মানোয়ার হোসেন মোল্লার বাসায় বিভিন্ন ধরনের শাক বিক্রি করতাম। তিনি আমার কষ্ট দেখে আমাকে বয়ষ্কভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। যা এখন আমার সংসার চালাতে খুব কাজে আসছে। তার এ উপকারের কথা আমি কোনো দিন ভুলব না। কিন্তু এখন আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। কী জানি কখন কী হয়ে যায়। তবে নিজের কাছে একটা বড় সান্তনা, জীবনে মানুষকে শাক দিয়ে অত্যন্ত উপকারে এসেছি। আমি কাউকে ফ্রি দিইনি। তারা আমাকে পয়সা দিয়েছেন তবে খাঁটি শাকটাই তাঁরা পেয়েছেন।’
পেপে চাচা আর সবজি চাচা যৌথভাবে বলেন, ‘যে জিনিস মানুষের শারীরিকভাবে উপকারে আসে, সেগুলোই আমরা ৪৫ বছর ধরে বিক্রি করে আসছি। তা ছাড়াও মানুষ সার ছাড়া উৎপাদিত টাটকা ও বাজারের দুর্লভ শাক-সবজি আমাদের কাছে পায় বলেই শহরের বিভিন্ন মহল্লার অনেকে পরিবারের চাহিদা মেটাতে আমাদের নিকট থেকেই নিয়মিত শাক-সবজি নিয়ে থাকে। ফলে শহরে বেশি সময় ঘুরতে হয় না।’ তাঁরা জানান, বেশি কষ্ট হয় গ্রাম গ্রাম ঘুরে এগুলো জোগাড় করে সিকে বাকে ভরে কাঁধে নিয়ে শহরে পৌঁছাতে।
বয়োবৃদ্ধ আরশেদ আলীর ছেলে ইব্রাহিম হোসেন জানান, ‘ছোটবেলা থেকে দেখছি আমার বাবা গ্রাম গ্রাম ঘুরে পেপে কিনে কালীগঞ্জ শহরে নিয়ে বিক্রি করতে। এখন তার অনেক বয়স হয়েছে। তারপরও এ বয়সে এমন পরিশ্রম করে চলেছেন আমরা ছেলেরা অনেক নিষেধ করেছি। কয়েকবার বন্ধও করে দিয়েছি। কিন্তু এটা করলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শে এখন আর তার কাজে আমরা বাধা দিই না।’
শহরের বিশিষ্ট মাংস ব্যবসয়ী গুল মোহাম্মদ জানান, রোদ বৃষ্টি ঝড় কোনো বাধায় এ দুজনকে আটকাতে পারে না। ভোর হলেই তারা বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি নিয়ে চলে আসে শহরে। ছোটবেলা থেকে দেখছি তারা এভাবে ব্যবসা করছেন। তারা অত্যন্ত ভদ্র ও সৎ। এখন বয়স হয়ে গেছে ফলে মালামাল বোঝায় সিকে-বাক কাঁধে নিয়ে যখন তারা পথ দিয়ে হেঁটে যায়, তখন মানুষের খুব নজরে পড়ে। তাদেরকে শহরবাসী খুব ভালোবাসে। অনেকে টাটকা শাক-সবজি পেতে ভোরে তাদের অপেক্ষায় মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আবার ভোরে হাঁটতে বের হওয়া অনেক নারী পুরুষ পথ থেকেই তাদের শাক-সবজি কিনে নেন। এখনও গফুর চাচা নিয়মিত শহরে আসেন। কিন্তু আরশেদ চাচা নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এক কথায় তারা দুজনই অনেক সহজ সরল ও সৎ মানুষ।