ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২১:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০১৯
  • / ২০২ বার পড়া হয়েছে

দ্রুততম সময়ে বিচার সম্পন্ন হোক
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আবারও জাতিকে কাঁদিয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে তারা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, মৃতদেহ চ্যাংদোলা করে এনে সিঁড়ির কাছে ফেলেও রাখা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরায় সে দৃশ্য দেখা গেছে। আবরারের অপরাধ কী ছিল? আবরার ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় সম্পাদিত কয়েকটি চুক্তির যৌক্তিকতা নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন। এমন ভিন্নমত আরো অনেক বিশিষ্টজনই প্রকাশ করেছেন। তার জন্য কি তাঁকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে? ভিন্নমত পোষণ করা কি অন্যায়? গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার কোনো দলেরই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সারাক্ষণ লেখাপড়া নিয়েই থাকতেন। হয়তো দেশ নিয়েও চিন্তা করতেন। আর সে কারণেই চুক্তিগুলো নিয়ে তিনি তাঁর মত প্রকাশ করেছিলেন। তিনি যদি সমালোচনা করতে গিয়ে অসত্য বা অন্যায় কিছু লিখে থাকেন, সে ক্ষেত্রে আইসিটি আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা যেত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারত। বিচারের মুখোমুখি করা যেত। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এই ক্ষমতা কে দিয়েছে যে সমালোচনাকারীকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে? এর কঠিন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন এবং তা হতে হবে দ্রুততম সময়ে। জানা গেছে, আবরারের বাবা ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা করেছেন। এরই মধ্যে পুলিশ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকিরা পলাতক রয়েছে। দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠান উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে পরিবারের পাশাপাশি দেশের মুখ উজ্জ্বল করার জন্য। আবরারও এসেছিলেন কুষ্টিয়া থেকে। হল প্রশাসনের ওপর ভরসা করে সন্তানকে হলে তুলে দিয়ে আবরারের অভিভাবকরা অনেকটা নিশ্চিন্ত ছিলেন। কিন্তু সেই হল প্রশাসনের ভূমিকাও এখানে প্রশ্নবিদ্ধ। প্রতিটি হলে গার্ড, সিকবয়সহ নিজস্ব স্টাফ রয়েছে। ছয় ঘণ্টা ধরে হলেরই একটি কক্ষে নিয়ে আবরারকে পেটানো হলো, তারা কিছুই জানল না কেন? ছাত্ররা জানিয়েছেন, ঘটনার শুরুতেই তাঁরা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। তাহলে কেন তারা এই মর্মান্তিক ঘটনা রোধ করতে পারল না? এই জবাবগুলোও আমাদের জানা দরকার। সরকার অনেক ক্ষেত্রেই সাফল্যের পরিচয় রাখছে কিন্তু ছাত্রলীগ-যুবলীগ বা দলীয় অসৎ কিছু লোক সব অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে। বিশ্বজিৎ হত্যা থেকে আবরার হত্যা, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ আরো কত অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ছাত্রলীগের নাম। আমরা কি জানতে পারি, ছাত্রলীগ আর কত অঘটন ঘটালে সরকার বা দলীয় নেতাদের টনক নড়বে? যত দিন ছাত্রলীগকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে না আনা যাবে, তত দিন কেন সংগঠনটির কাজকর্ম স্থগিত রাখা হবে না? আমরা অতিদ্রুত আবরার হত্যার বিচার এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা

আপলোড টাইম : ০৯:২১:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০১৯

দ্রুততম সময়ে বিচার সম্পন্ন হোক
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আবারও জাতিকে কাঁদিয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে তারা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, মৃতদেহ চ্যাংদোলা করে এনে সিঁড়ির কাছে ফেলেও রাখা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরায় সে দৃশ্য দেখা গেছে। আবরারের অপরাধ কী ছিল? আবরার ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় সম্পাদিত কয়েকটি চুক্তির যৌক্তিকতা নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন। এমন ভিন্নমত আরো অনেক বিশিষ্টজনই প্রকাশ করেছেন। তার জন্য কি তাঁকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে? ভিন্নমত পোষণ করা কি অন্যায়? গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার কোনো দলেরই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সারাক্ষণ লেখাপড়া নিয়েই থাকতেন। হয়তো দেশ নিয়েও চিন্তা করতেন। আর সে কারণেই চুক্তিগুলো নিয়ে তিনি তাঁর মত প্রকাশ করেছিলেন। তিনি যদি সমালোচনা করতে গিয়ে অসত্য বা অন্যায় কিছু লিখে থাকেন, সে ক্ষেত্রে আইসিটি আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা যেত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারত। বিচারের মুখোমুখি করা যেত। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এই ক্ষমতা কে দিয়েছে যে সমালোচনাকারীকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে? এর কঠিন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন এবং তা হতে হবে দ্রুততম সময়ে। জানা গেছে, আবরারের বাবা ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা করেছেন। এরই মধ্যে পুলিশ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকিরা পলাতক রয়েছে। দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠান উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে পরিবারের পাশাপাশি দেশের মুখ উজ্জ্বল করার জন্য। আবরারও এসেছিলেন কুষ্টিয়া থেকে। হল প্রশাসনের ওপর ভরসা করে সন্তানকে হলে তুলে দিয়ে আবরারের অভিভাবকরা অনেকটা নিশ্চিন্ত ছিলেন। কিন্তু সেই হল প্রশাসনের ভূমিকাও এখানে প্রশ্নবিদ্ধ। প্রতিটি হলে গার্ড, সিকবয়সহ নিজস্ব স্টাফ রয়েছে। ছয় ঘণ্টা ধরে হলেরই একটি কক্ষে নিয়ে আবরারকে পেটানো হলো, তারা কিছুই জানল না কেন? ছাত্ররা জানিয়েছেন, ঘটনার শুরুতেই তাঁরা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। তাহলে কেন তারা এই মর্মান্তিক ঘটনা রোধ করতে পারল না? এই জবাবগুলোও আমাদের জানা দরকার। সরকার অনেক ক্ষেত্রেই সাফল্যের পরিচয় রাখছে কিন্তু ছাত্রলীগ-যুবলীগ বা দলীয় অসৎ কিছু লোক সব অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে। বিশ্বজিৎ হত্যা থেকে আবরার হত্যা, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ আরো কত অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ছাত্রলীগের নাম। আমরা কি জানতে পারি, ছাত্রলীগ আর কত অঘটন ঘটালে সরকার বা দলীয় নেতাদের টনক নড়বে? যত দিন ছাত্রলীগকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে না আনা যাবে, তত দিন কেন সংগঠনটির কাজকর্ম স্থগিত রাখা হবে না? আমরা অতিদ্রুত আবরার হত্যার বিচার এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।