ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিস্মিত ক্রিকেট বিশ্ব

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০৯:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯
  • / ২৩৪ বার পড়া হয়েছে

স্বপ্নের ট্রফিতে বিতর্কের দাগ
খেলাধুলা প্রতিবেদন:
১৯৮৬-এর আগে ফুটবলে ‘হ্যান্ড অব গড’ বলে কিছু ছিল না। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনার সৌজন্যে যা এখন ইতিহাসের অংশ। ক্রিকেটেও এতদিন ‘হ্যান্ড অব ব্যাট’ বলে কিছু ছিল না। বেন স্টোকসের সুবাদে এ শব্দবন্ধটি এখন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল। প্রথমবার ইংল্যান্ড ছিল ভুক্তভোগী, এবার সরাসরি সুবিধাভোগী। সেবার বিতর্ক ছিল ইচ্ছাকৃত হাতে বল লাগার পর রেফারির নির্লিপ্ততার, এবার অনিচ্ছাকৃত ব্যাটে বল লাগার পর আম্পায়ারের অতি উৎসাহী ভূমিকার। এক্ষেত্রে স্টোকসের ব্যাট’…অব গড’ হয়ে ওঠার পর রান হওয়ার কথা পাঁচটি, কিন্তু আম্পায়ার দিলেন ৬ রান। শিরোপা নির্ধারণের পঞ্চাশতম ওভারের চতুর্থ বলের ওই ৬ রানের কারণে খেলা শেষ হয় সমতায়। এরপর সুপার ওভারের দ্বিতীয় সুযোগে ইংল্যান্ড জিতল বিশ্বকাপ। কিন্তু ৬ রান না হলে যে নিউজিল্যান্ডই বিশ্বকাপ জিতে যায়! আবার, সুপার ওভারে দু’দলই তুলল ১৫ রান করে। আরেকবার রানে সমতা। কিন্তু ফলের পাল্লা হেলে গেল একদিকে, জিতে গেল ইংল্যান্ড। কারণ, ম্যাচজুড়ে তারা নিউজিল্যান্ডের চেয়ে ৯টি বাউন্ডারি বেশি মেরেছে। কিন্তু বাউন্ডারি কেন এখানে ফল নির্ধারক? ব্যাটসম্যানদের রানের অর্জন সমান হয়ে যাওয়ার পর বোলারদের উইকেট নেওয়ার কীর্তিই তো দেখার কথা। আর সেটা হলে ইংল্যান্ডকে অলআউট করার সুবাদে নিউজিল্যান্ডই বিশ্বকাপ জিতে যায়!
ওভার থ্রোতে পাঁচের বদলে ছয় রান, আর ফল নির্ধারণে উইকেটের বদলে বাউন্ডারি- এ দুই বিস্ময়ে ছেয়ে গেছে গোটা ক্রিকেটবিশ্ব। আইসিসি যাকে টানা চার বছর বর্ষসেরার স্বীকৃতি দিয়েছে, এখন ক্রিকেটের আইন প্রণয়ন-সংক্রান্ত কমিটিতে আছেন- এমন একজন সাবেক আম্পায়ার বলছেন পাঁচের জায়গায় ছয় রান দেওয়া পরিস্কার ভুল। আর বিশ্বকাপজয়ী তিনজন ক্রিকেটার বলছেন, বাউন্ডারিতে ফল নির্ধারণ উদ্ভট। লর্ডসের ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল তাই অবিশ্বাস্য উত্তেজনার এক থ্রিলার উপহার দিয়েও এখন নিদারুণভাবে বিতর্কের উৎস। ক্রিকেটের এক দিনের দর্শক থেকে শুরু করে খেলাটির কিংবদন্তি পর্যন্ত সবার মুখেই দুই সিদ্ধান্তের সমালোচনার সুর। এক্ষেত্রে ওভার থ্রোতে হওয়া ৬ রানের সিদ্ধান্তটি মানবীয় ভুল, প্রতিষ্ঠিত আইন নয়। পঞ্চাশ ওভারি খেলায় শেষ তিন বলে জেতার জন্য ৯ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। ট্রেন্ট বোল্টের মিডল স্টাম্পের ওপর থাকা ফুলটস ডিপ মিড উইকেটে পাঠিয়ে দুই রানের জন্য দৌড়ান স্টোকস-আদিল রশিদ। প্রথম রানটি নিতে পারলেও দ্বিতীয় রানটির সময় বাধে বিপত্তি।
ফিল্ডিং করে মার্টিন গাপটিল বল পাঠান উইকেটরক্ষকের কাছে। এদিকে রানআউট থেকে বাঁচতে ডাইভ দেন স্টোকস। স্টাম্পের পথে থাকা বল স্টোকসের ব্যাটে লেগে দিক পরিবর্তন করে চলে যায় থার্ডম্যান বাউন্ডারিতে। ক্রিকেট আইনের ১৯.৮ ধারা বলছে, ওভার থ্রোতে বাউন্ডারি হলে যে কোনো একটি দল রান পাবে। এক্ষেত্রে ব্যাটসম্যান যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বল ব্যাটে লাগান, তাহলে বাউন্ডারি হওয়ার পর তার দলের স্কোর থেকে রান কাটা যাবে, আর অনিচ্ছাকৃত হলে রান যোগ হবে। এ ছাড়া ব্যাটে বল লাগার আগে ব্যাটসম্যানরা যদি কোনো রান নিয়ে থাকেন, সেটিও যোগ হবে। স্টোকসের ব্যাটে লেগে বল বাউন্ডারিতে যাওয়ার আগে দুই ব্যাটসম্যান দৌড় শেষ করেছিলেন একবার, দ্বিতীয় রান সম্পন্ন হওয়ার আগেই ব্যাটে বল লেগে গেছে। অর্থাৎ, রান এক্ষেত্রে ৫টি। কিন্তু সহকর্মী মারাইস এরাসমাসের সঙ্গে পরামর্শ করে আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা ছয় রানের সংকেত দেন। ২০০৪ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত টানা আইসিসির বর্ষসেরা আম্পায়ারের ট্রফি জেতা সাইমন টফেল মনে করেন সিদ্ধান্তটি ভুল। ফক্স স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এটা পরিস্কার ভুল… ভুল বিচার। তাদের (ইংল্যান্ড) অবশ্যই পাঁচ রান দেওয়া উচিত ছিল, ছয় নয়।’ তবে আম্পায়ারদ্বয় স্টোকসের দ্বিতীয় রান প্রায় হয়ে গিয়েছিল ধরে নিয়ে দুই রান গণনা করেছেন বলে ধারণা টফেলের। আর পরিস্থিতির তীব্রতায় আম্পায়ারদের এমন সিদ্ধান্তকে তিনি ইচ্ছাকৃত বলেও মনে করেন না। এখন ক্রিকেটের বৈশ্বিক কর্তৃপক্ষ আইসিসিরই বিষয়টি দেখার কথা।
তবে বিশ্বকাপ আয়োজক হিসেবে আইসিসি নিজেই এখন বিতর্কের তুঙ্গে। সুপার ওভারেও ম্যাচ টাই হওয়ার পর ইংল্যান্ডকে জয়ী ঘোষণা করা হয় ২৬-১৭ বাউন্ডারি ব্যবধানের আইনে। ২০০৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি২০ ম্যাচে এ নিয়মটি প্রথম কার্যকর হয়। বিশ্বকাপে প্রচলন করা হয় ২০১১ বিশ্বকাপের নকআউট থেকে, যদি তখন থেকে এবারের ফাইনালের আগ পর্যন্ত তা কাজে লাগেনি। ক্রিকেট বিশ্ব এখন আইনটির উপযুক্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। রান সমান হওয়ার পর উইকেট না বিচার করে ব্যাটিংবান্ধব বাউন্ডারি নিয়ম কেন চালু- এ নিয়ে সরব সবাই। ২০১৯ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী রোহিত শর্মা টুইট করেছেন, ‘গুরুত্ব দিয়ে ক্রিকেটের কিছু আইন অবশ্যই পরিবর্তন করা দরকার।’ নিউজিল্যান্ডের হয়ে ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলা কাইল মিলস বলেন, ‘আমি জানতাম, ক্রিকেট হচ্ছে রান আর উইকেটের খেলা। রান সমান হয়ে গেলে কে প্রতিপক্ষের কয় উইকেট নিয়েছে বা নিজেরা হারিয়েছে, এটিই বিবেচিত হওয়ার কথা আগে। কিন্তু হলো ভিন্ন কিছু।’ নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার স্কট স্টাইরিস উপহাসের সুরে লিখেছেন, ‘খুব ভালো করেছে আইসিসি। আপনারা খুব মজার।’
ভারতের সাবেক ওপেনার গৌতম গম্ভীর লিখেছেন, ‘বুঝলাম না, কীভাবে সমতা বিধান হলো। বিশ্বকাপের ফাইনাল নির্ধারণ হলো কে বেশি বাউন্ডারি করেছে তা দিয়ে। এটা আইসিসির হাস্যকর আইন।’ সাবেক অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের টুইটে লেখা এরকম- ‘বাউন্ডারিই বিশ্বকাপ জেতাল? ক্রিকেটপ্রেমীরা দেখল উইকেট (ইংল্যান্ড ২৪১-১০, নিউজিল্যান্ড ২৪১-৮) আর রানের খেলা। এমন দারুণ একটা ম্যাচের এমন সমাপ্তি দেখে আমার খুবই খারাপ লাগছে।’ নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার ডিয়ন ন্যাশ বলেন, ‘শূন্য শূন্য লাগছে। মনে হচ্ছে প্রতারিত হলাম। সত্যিই হাস্যকর আইন। এটা এক ধরনের টসের মতোই।’ সাবেক অস্ট্রেলিয়ান পেসার ব্রেট লি ইংল্যান্ডকে অভিনন্দন আর নিউজিল্যান্ডকে সমবেদনা জানিয়ে লেখেন, ‘জয়ী নির্ধারণের এটি ভয়ঙ্কর উপায়। এই আইনে বদল দরকার।’ এ ছাড়া ভারতের বিষেণ সিং বেদি, যুবরাজ সিং, মোহাম্মদ কাইফ, অস্ট্রেলিয়ার ডিন জোন্সরাও এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। সব মিলিয়ে রুদ্ধশ্বাস এক বিশ্বকাপ ফাইনাল এখন বিতর্কের কেন্দ্রে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বিস্মিত ক্রিকেট বিশ্ব

আপলোড টাইম : ১১:০৯:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯

স্বপ্নের ট্রফিতে বিতর্কের দাগ
খেলাধুলা প্রতিবেদন:
১৯৮৬-এর আগে ফুটবলে ‘হ্যান্ড অব গড’ বলে কিছু ছিল না। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনার সৌজন্যে যা এখন ইতিহাসের অংশ। ক্রিকেটেও এতদিন ‘হ্যান্ড অব ব্যাট’ বলে কিছু ছিল না। বেন স্টোকসের সুবাদে এ শব্দবন্ধটি এখন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল। প্রথমবার ইংল্যান্ড ছিল ভুক্তভোগী, এবার সরাসরি সুবিধাভোগী। সেবার বিতর্ক ছিল ইচ্ছাকৃত হাতে বল লাগার পর রেফারির নির্লিপ্ততার, এবার অনিচ্ছাকৃত ব্যাটে বল লাগার পর আম্পায়ারের অতি উৎসাহী ভূমিকার। এক্ষেত্রে স্টোকসের ব্যাট’…অব গড’ হয়ে ওঠার পর রান হওয়ার কথা পাঁচটি, কিন্তু আম্পায়ার দিলেন ৬ রান। শিরোপা নির্ধারণের পঞ্চাশতম ওভারের চতুর্থ বলের ওই ৬ রানের কারণে খেলা শেষ হয় সমতায়। এরপর সুপার ওভারের দ্বিতীয় সুযোগে ইংল্যান্ড জিতল বিশ্বকাপ। কিন্তু ৬ রান না হলে যে নিউজিল্যান্ডই বিশ্বকাপ জিতে যায়! আবার, সুপার ওভারে দু’দলই তুলল ১৫ রান করে। আরেকবার রানে সমতা। কিন্তু ফলের পাল্লা হেলে গেল একদিকে, জিতে গেল ইংল্যান্ড। কারণ, ম্যাচজুড়ে তারা নিউজিল্যান্ডের চেয়ে ৯টি বাউন্ডারি বেশি মেরেছে। কিন্তু বাউন্ডারি কেন এখানে ফল নির্ধারক? ব্যাটসম্যানদের রানের অর্জন সমান হয়ে যাওয়ার পর বোলারদের উইকেট নেওয়ার কীর্তিই তো দেখার কথা। আর সেটা হলে ইংল্যান্ডকে অলআউট করার সুবাদে নিউজিল্যান্ডই বিশ্বকাপ জিতে যায়!
ওভার থ্রোতে পাঁচের বদলে ছয় রান, আর ফল নির্ধারণে উইকেটের বদলে বাউন্ডারি- এ দুই বিস্ময়ে ছেয়ে গেছে গোটা ক্রিকেটবিশ্ব। আইসিসি যাকে টানা চার বছর বর্ষসেরার স্বীকৃতি দিয়েছে, এখন ক্রিকেটের আইন প্রণয়ন-সংক্রান্ত কমিটিতে আছেন- এমন একজন সাবেক আম্পায়ার বলছেন পাঁচের জায়গায় ছয় রান দেওয়া পরিস্কার ভুল। আর বিশ্বকাপজয়ী তিনজন ক্রিকেটার বলছেন, বাউন্ডারিতে ফল নির্ধারণ উদ্ভট। লর্ডসের ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল তাই অবিশ্বাস্য উত্তেজনার এক থ্রিলার উপহার দিয়েও এখন নিদারুণভাবে বিতর্কের উৎস। ক্রিকেটের এক দিনের দর্শক থেকে শুরু করে খেলাটির কিংবদন্তি পর্যন্ত সবার মুখেই দুই সিদ্ধান্তের সমালোচনার সুর। এক্ষেত্রে ওভার থ্রোতে হওয়া ৬ রানের সিদ্ধান্তটি মানবীয় ভুল, প্রতিষ্ঠিত আইন নয়। পঞ্চাশ ওভারি খেলায় শেষ তিন বলে জেতার জন্য ৯ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। ট্রেন্ট বোল্টের মিডল স্টাম্পের ওপর থাকা ফুলটস ডিপ মিড উইকেটে পাঠিয়ে দুই রানের জন্য দৌড়ান স্টোকস-আদিল রশিদ। প্রথম রানটি নিতে পারলেও দ্বিতীয় রানটির সময় বাধে বিপত্তি।
ফিল্ডিং করে মার্টিন গাপটিল বল পাঠান উইকেটরক্ষকের কাছে। এদিকে রানআউট থেকে বাঁচতে ডাইভ দেন স্টোকস। স্টাম্পের পথে থাকা বল স্টোকসের ব্যাটে লেগে দিক পরিবর্তন করে চলে যায় থার্ডম্যান বাউন্ডারিতে। ক্রিকেট আইনের ১৯.৮ ধারা বলছে, ওভার থ্রোতে বাউন্ডারি হলে যে কোনো একটি দল রান পাবে। এক্ষেত্রে ব্যাটসম্যান যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বল ব্যাটে লাগান, তাহলে বাউন্ডারি হওয়ার পর তার দলের স্কোর থেকে রান কাটা যাবে, আর অনিচ্ছাকৃত হলে রান যোগ হবে। এ ছাড়া ব্যাটে বল লাগার আগে ব্যাটসম্যানরা যদি কোনো রান নিয়ে থাকেন, সেটিও যোগ হবে। স্টোকসের ব্যাটে লেগে বল বাউন্ডারিতে যাওয়ার আগে দুই ব্যাটসম্যান দৌড় শেষ করেছিলেন একবার, দ্বিতীয় রান সম্পন্ন হওয়ার আগেই ব্যাটে বল লেগে গেছে। অর্থাৎ, রান এক্ষেত্রে ৫টি। কিন্তু সহকর্মী মারাইস এরাসমাসের সঙ্গে পরামর্শ করে আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা ছয় রানের সংকেত দেন। ২০০৪ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত টানা আইসিসির বর্ষসেরা আম্পায়ারের ট্রফি জেতা সাইমন টফেল মনে করেন সিদ্ধান্তটি ভুল। ফক্স স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এটা পরিস্কার ভুল… ভুল বিচার। তাদের (ইংল্যান্ড) অবশ্যই পাঁচ রান দেওয়া উচিত ছিল, ছয় নয়।’ তবে আম্পায়ারদ্বয় স্টোকসের দ্বিতীয় রান প্রায় হয়ে গিয়েছিল ধরে নিয়ে দুই রান গণনা করেছেন বলে ধারণা টফেলের। আর পরিস্থিতির তীব্রতায় আম্পায়ারদের এমন সিদ্ধান্তকে তিনি ইচ্ছাকৃত বলেও মনে করেন না। এখন ক্রিকেটের বৈশ্বিক কর্তৃপক্ষ আইসিসিরই বিষয়টি দেখার কথা।
তবে বিশ্বকাপ আয়োজক হিসেবে আইসিসি নিজেই এখন বিতর্কের তুঙ্গে। সুপার ওভারেও ম্যাচ টাই হওয়ার পর ইংল্যান্ডকে জয়ী ঘোষণা করা হয় ২৬-১৭ বাউন্ডারি ব্যবধানের আইনে। ২০০৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি২০ ম্যাচে এ নিয়মটি প্রথম কার্যকর হয়। বিশ্বকাপে প্রচলন করা হয় ২০১১ বিশ্বকাপের নকআউট থেকে, যদি তখন থেকে এবারের ফাইনালের আগ পর্যন্ত তা কাজে লাগেনি। ক্রিকেট বিশ্ব এখন আইনটির উপযুক্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। রান সমান হওয়ার পর উইকেট না বিচার করে ব্যাটিংবান্ধব বাউন্ডারি নিয়ম কেন চালু- এ নিয়ে সরব সবাই। ২০১৯ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী রোহিত শর্মা টুইট করেছেন, ‘গুরুত্ব দিয়ে ক্রিকেটের কিছু আইন অবশ্যই পরিবর্তন করা দরকার।’ নিউজিল্যান্ডের হয়ে ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলা কাইল মিলস বলেন, ‘আমি জানতাম, ক্রিকেট হচ্ছে রান আর উইকেটের খেলা। রান সমান হয়ে গেলে কে প্রতিপক্ষের কয় উইকেট নিয়েছে বা নিজেরা হারিয়েছে, এটিই বিবেচিত হওয়ার কথা আগে। কিন্তু হলো ভিন্ন কিছু।’ নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার স্কট স্টাইরিস উপহাসের সুরে লিখেছেন, ‘খুব ভালো করেছে আইসিসি। আপনারা খুব মজার।’
ভারতের সাবেক ওপেনার গৌতম গম্ভীর লিখেছেন, ‘বুঝলাম না, কীভাবে সমতা বিধান হলো। বিশ্বকাপের ফাইনাল নির্ধারণ হলো কে বেশি বাউন্ডারি করেছে তা দিয়ে। এটা আইসিসির হাস্যকর আইন।’ সাবেক অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের টুইটে লেখা এরকম- ‘বাউন্ডারিই বিশ্বকাপ জেতাল? ক্রিকেটপ্রেমীরা দেখল উইকেট (ইংল্যান্ড ২৪১-১০, নিউজিল্যান্ড ২৪১-৮) আর রানের খেলা। এমন দারুণ একটা ম্যাচের এমন সমাপ্তি দেখে আমার খুবই খারাপ লাগছে।’ নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার ডিয়ন ন্যাশ বলেন, ‘শূন্য শূন্য লাগছে। মনে হচ্ছে প্রতারিত হলাম। সত্যিই হাস্যকর আইন। এটা এক ধরনের টসের মতোই।’ সাবেক অস্ট্রেলিয়ান পেসার ব্রেট লি ইংল্যান্ডকে অভিনন্দন আর নিউজিল্যান্ডকে সমবেদনা জানিয়ে লেখেন, ‘জয়ী নির্ধারণের এটি ভয়ঙ্কর উপায়। এই আইনে বদল দরকার।’ এ ছাড়া ভারতের বিষেণ সিং বেদি, যুবরাজ সিং, মোহাম্মদ কাইফ, অস্ট্রেলিয়ার ডিন জোন্সরাও এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। সব মিলিয়ে রুদ্ধশ্বাস এক বিশ্বকাপ ফাইনাল এখন বিতর্কের কেন্দ্রে।