ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেন জঙ্গিবাদে?

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৭:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • / ২০৮ বার পড়া হয়েছে

দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি দুর্নীতি, জালিয়াতি এবং নানামুখী আন্দোলনের মাধ্যমে আলোচনায় আসলেও এবার আরও ভয়াবহ খবরের শিরোনাম হয়েছে। অবশ্য এমন খবর এই প্রথম নয়, এর আগেও শঙ্কার খবর আমরা দেখেছি। আর তা হলো: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার খবর। গতকাল সোমবার সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তক্কার মাঠ এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি ঘিরে রাখে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। সেখান থেকে আটক করা হয়েছে এক নারীসহ ৩ জনকে। আরও ভয়ংকর খবর হলো, সেই তিনজনের একজন হলেন দেশের একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর বাকি দু’জনের পরিচয়ও চমকে দেয়ার মতো। তারা হলেন সেই শিক্ষকের ব্যাংকার স্ত্রী ও ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ভাই। হলি আর্টিজানের ঘটনায়ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নাম আসতে দেখেছি। এমনকি সেনা অভিযানে নিহতদের প্রায় সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। কেউ কেউ আবার পড়াশোনা শেষও করেছেন, আবার কেউ ছিলেন শিক্ষক। পরে জঙ্গিবাদের ঘটনায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি অর্থাৎ যার যার পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিতদের জড়িত থাকতে দেখা গেছে। এই বিষয়গুলো শঙ্কার কারণ বলেই আমরা মনে করি। হলি আর্টিজানের সেই ভয়াবহ হামলার পর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ছিল। জঙ্গিবাদ নির্মূলে অনেক সফল অভিযান হয়েছে। এসব অভিযানে মারা গেছে বহু জঙ্গি, এমনকি মাস্টারমাইন্ডরাও। এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তবে এটা ঠিক যে, এসব অভিযানে জঙ্গিবাদ দমন করা গেলেও একেবারে নির্মূল করা যায়নি। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশে এর পক্ষে কোনো ধরনের জনমত না থাকার পরও কেন জঙ্গিবাদ শূন্যের কোটায় আনা যায়নি? এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ সমাজের নানা পর্যায়ের প্রতিষ্ঠিত মানুষদের কেন জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে? জঙ্গিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। জঙ্গিবাদ এখন যে আর নির্দিষ্ট কোনো দেশের নয়, বরং বৈশ্বিক হুমকি; সেটা আমরা জানি। তবুও এই হুমকি মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম গ্রহণ জরুরি বলে আমরা মনে করি। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গত জুনে বলেছিল: জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া যুবকদের অধিকাংশই ইন্টারনেট থেকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এ তথ্য তারা পেয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে। এ বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। ইন্টারনেট থেকে এমন ক্ষতিকর কন্টেন্ট সরানো কষ্টসাধ্য হলেও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে জঙ্গিবিরোধী প্রচারণা বাড়াতে হবে বলে আমরা মনে করি। তবে সরকারের একার পক্ষে জঙ্গিবাদকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সামাজিক প্রতিরোধ ও সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। তাই যার যার অবস্থান থেকে জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম ও প্রচারণা বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসতে আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেন জঙ্গিবাদে?

আপলোড টাইম : ১০:১৭:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি দুর্নীতি, জালিয়াতি এবং নানামুখী আন্দোলনের মাধ্যমে আলোচনায় আসলেও এবার আরও ভয়াবহ খবরের শিরোনাম হয়েছে। অবশ্য এমন খবর এই প্রথম নয়, এর আগেও শঙ্কার খবর আমরা দেখেছি। আর তা হলো: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার খবর। গতকাল সোমবার সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তক্কার মাঠ এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি ঘিরে রাখে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। সেখান থেকে আটক করা হয়েছে এক নারীসহ ৩ জনকে। আরও ভয়ংকর খবর হলো, সেই তিনজনের একজন হলেন দেশের একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর বাকি দু’জনের পরিচয়ও চমকে দেয়ার মতো। তারা হলেন সেই শিক্ষকের ব্যাংকার স্ত্রী ও ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ভাই। হলি আর্টিজানের ঘটনায়ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নাম আসতে দেখেছি। এমনকি সেনা অভিযানে নিহতদের প্রায় সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। কেউ কেউ আবার পড়াশোনা শেষও করেছেন, আবার কেউ ছিলেন শিক্ষক। পরে জঙ্গিবাদের ঘটনায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি অর্থাৎ যার যার পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিতদের জড়িত থাকতে দেখা গেছে। এই বিষয়গুলো শঙ্কার কারণ বলেই আমরা মনে করি। হলি আর্টিজানের সেই ভয়াবহ হামলার পর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ছিল। জঙ্গিবাদ নির্মূলে অনেক সফল অভিযান হয়েছে। এসব অভিযানে মারা গেছে বহু জঙ্গি, এমনকি মাস্টারমাইন্ডরাও। এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তবে এটা ঠিক যে, এসব অভিযানে জঙ্গিবাদ দমন করা গেলেও একেবারে নির্মূল করা যায়নি। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশে এর পক্ষে কোনো ধরনের জনমত না থাকার পরও কেন জঙ্গিবাদ শূন্যের কোটায় আনা যায়নি? এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ সমাজের নানা পর্যায়ের প্রতিষ্ঠিত মানুষদের কেন জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে? জঙ্গিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। জঙ্গিবাদ এখন যে আর নির্দিষ্ট কোনো দেশের নয়, বরং বৈশ্বিক হুমকি; সেটা আমরা জানি। তবুও এই হুমকি মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম গ্রহণ জরুরি বলে আমরা মনে করি। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গত জুনে বলেছিল: জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া যুবকদের অধিকাংশই ইন্টারনেট থেকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এ তথ্য তারা পেয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে। এ বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। ইন্টারনেট থেকে এমন ক্ষতিকর কন্টেন্ট সরানো কষ্টসাধ্য হলেও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে জঙ্গিবিরোধী প্রচারণা বাড়াতে হবে বলে আমরা মনে করি। তবে সরকারের একার পক্ষে জঙ্গিবাদকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সামাজিক প্রতিরোধ ও সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। তাই যার যার অবস্থান থেকে জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম ও প্রচারণা বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসতে আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।