ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর দাবি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৩৪:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জুলাই ২০১৮
  • / ৩০৫ বার পড়া হয়েছে

বৃহস্পতিবার সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। যারা পাস করেছেন, তাদের পরবর্তী লক্ষ্য ভালো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য আরেক যুদ্ধ। ভর্তির জন্য তাদের দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাঙ্খিত গুচ্ছ বা সমন্বিত পদ্ধতি এ বছরও কার্যকর হচ্ছে না। জানা গেছে, এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার রোডম্যাপ তৈরির লক্ষ্যে ছয় মাস আগে কমিটি গঠন করে দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেই কমিটি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন দিতে পারেনি। ফলে এটা নিশ্চিত, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এবারও শিক্ষার্থীদের দেশের নানা প্রান্তে দৌড়াতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর দাবি দীর্ঘদিনের। ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হলেও নানা কারণে তা ফলপ্রসূ হয়নি। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর কেন্দ্রীয় বা আঞ্চলিকভাবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নিতে উপাচার্যদের প্রতি কয়েক দফা আহ্বান জানিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর ব্যাপারে আন্তরিক। তারপরও উদ্যোগটি সফল না হওয়ার কারণ বোধগম্য নয়। অভিযোগ রয়েছে, গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ সফল না হওয়ার কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অসহযোগিতা, যার পেছনে রয়েছে মূলত শিক্ষকদের গোষ্ঠীস্বার্থ। উচ্চমূল্যে ফরম বিক্রিসহ ভর্তি পরীক্ষায় নানারকম ডিউটি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও অন্যান্য কাজ থেকে শিক্ষকরা মোটা অংকের অর্থ রোজগার করেন। কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা হলে তাদের বাড়তি আয়ের এ পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এ আশঙ্কায় কেউ অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর পক্ষে মত দিচ্ছেন না। অথচ প্রতি বছর অনার্সে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তির সীমা থাকে না।
আলাদাভাবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে অভিভাবকদের বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ হয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প (হেকেপ) সংশ্লিষ্ট এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি ভর্তি মৌসুমে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়া ও ভর্তি কোচিংসহ আনুষঙ্গিক খাতে একজন শিক্ষার্থীর তথা তার অভিভাবকের গড়ে ৯৬ হাজার টাকা খরচ হয়, যা অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীর পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। নিজেদের গোষ্ঠীস্বার্থ চরিতার্থ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর ধরে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি এবং আর্থিক ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় সমন্বয়হীনতা ও পদ্ধতিগত জটিলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কোচিং ব্যবসার প্রসার ঘটেছে এবং কোচিং ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এটি বন্ধ করতে হলে পদ্ধতিগত জটিলতার অবসান ঘটিয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন জরুরি। একটিমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের সব মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ভর্তির ব্যবস্থা চালু করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও একই পদ্ধতির আওতায় আনা সম্ভব। আমরা আশা করব, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগী হবে এবং আগামী বছরের ভর্তি পরীক্ষা সামনে রেখে এখন থেকেই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর দাবি

আপলোড টাইম : ১১:৩৪:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জুলাই ২০১৮

বৃহস্পতিবার সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। যারা পাস করেছেন, তাদের পরবর্তী লক্ষ্য ভালো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য আরেক যুদ্ধ। ভর্তির জন্য তাদের দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাঙ্খিত গুচ্ছ বা সমন্বিত পদ্ধতি এ বছরও কার্যকর হচ্ছে না। জানা গেছে, এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার রোডম্যাপ তৈরির লক্ষ্যে ছয় মাস আগে কমিটি গঠন করে দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেই কমিটি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন দিতে পারেনি। ফলে এটা নিশ্চিত, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এবারও শিক্ষার্থীদের দেশের নানা প্রান্তে দৌড়াতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর দাবি দীর্ঘদিনের। ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হলেও নানা কারণে তা ফলপ্রসূ হয়নি। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর কেন্দ্রীয় বা আঞ্চলিকভাবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নিতে উপাচার্যদের প্রতি কয়েক দফা আহ্বান জানিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর ব্যাপারে আন্তরিক। তারপরও উদ্যোগটি সফল না হওয়ার কারণ বোধগম্য নয়। অভিযোগ রয়েছে, গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ সফল না হওয়ার কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অসহযোগিতা, যার পেছনে রয়েছে মূলত শিক্ষকদের গোষ্ঠীস্বার্থ। উচ্চমূল্যে ফরম বিক্রিসহ ভর্তি পরীক্ষায় নানারকম ডিউটি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও অন্যান্য কাজ থেকে শিক্ষকরা মোটা অংকের অর্থ রোজগার করেন। কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা হলে তাদের বাড়তি আয়ের এ পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এ আশঙ্কায় কেউ অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর পক্ষে মত দিচ্ছেন না। অথচ প্রতি বছর অনার্সে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তির সীমা থাকে না।
আলাদাভাবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে অভিভাবকদের বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ হয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প (হেকেপ) সংশ্লিষ্ট এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি ভর্তি মৌসুমে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়া ও ভর্তি কোচিংসহ আনুষঙ্গিক খাতে একজন শিক্ষার্থীর তথা তার অভিভাবকের গড়ে ৯৬ হাজার টাকা খরচ হয়, যা অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীর পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। নিজেদের গোষ্ঠীস্বার্থ চরিতার্থ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর ধরে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি এবং আর্থিক ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় সমন্বয়হীনতা ও পদ্ধতিগত জটিলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কোচিং ব্যবসার প্রসার ঘটেছে এবং কোচিং ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এটি বন্ধ করতে হলে পদ্ধতিগত জটিলতার অবসান ঘটিয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন জরুরি। একটিমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের সব মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ভর্তির ব্যবস্থা চালু করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও একই পদ্ধতির আওতায় আনা সম্ভব। আমরা আশা করব, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগী হবে এবং আগামী বছরের ভর্তি পরীক্ষা সামনে রেখে এখন থেকেই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।