ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিদ্যুতের ভারসাম্যহীন পরিকল্পনায় বাংলাদেশ!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০০:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • / ১৬০ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ২০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। যদিও গত বছর ২৯ মে উৎপাদন করা হয় সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৮৯৩ মেগাওয়াট। তবে এ উৎপাদন আট থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াটে ওঠানামা করে। তাই চাহিদা না থাকায় গড়ে সক্ষমতার প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকছে। এর পরও উৎপাদনে আসছে একের পর এক নতুন কেন্দ্র। এতে আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ২২ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা নতুন যুক্ত হবে। আগামী পাঁচ বছরে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ২০ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। এর বাইরে ভারত থেকে আমদানি করা হবে আরও প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। তবে পাঁচ বছরে চাহিদা খুব বেশি বাড়বে না। ফলে অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, নতুন বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার পাশাপাশি পাঁচ বছরে রেন্টাল-কুইক রেন্টালসহ বেশকিছু কেন্দ্র অবসরে যাবে। ফলে ২০২৫ সাল শেষে বিদ্যুৎ সরবরাহ সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৬ হাজার মেগাওয়াট। যদিও সে সময় সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার মেগাওয়াট। ফলে চাহিদার সর্বোচ্চ ব্যবহার হলেও সে সময় সক্ষমতার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা ১১ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকবে। তবে শীতকালে তা অনেক বেড়ে যাবে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি বছর উৎপাদনে আসবে তিন হাজার ৫১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর মধ্যে থাকবে সরকারি মালিকানাধীন দুই হাজার ৪৫৬ মেগাওয়াট ও বেসরকারি মালিকানাধীন এক হাজার ৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র। আগামী বছর নতুন করে উৎপাদনে আসবে দুই হাজার ২৮৯ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্র। এর মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন কেন্দ্র দুই হাজার ১৩৯ মেগাওয়াটের ও বেসরকারি মালিকানাধীন কেন্দ্র থাকবে ১৫০ মেগাওয়াটের। ২০২২ সালে চার হাজার ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে, ২০২৩ সালে চার হাজার ৩৭৮, ২০২৪ সালে দুই হাজার ৯৯০ ও ২০২৫ সালে তিন হাজার ২১৫ মেগাওয়াট। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালে ২০ হাজার ৪৮১ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। এর মধ্যে সরকারি কেন্দ্র ১৩ হাজার ৫৭২ মেগাওয়াট ও বেসরকারি কেন্দ্র ছয় হাজার ৯০৯ মেগাওয়াটের। এছাড়া ২০২২ সালে ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে আরও এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। সব মিলিয়ে নতুন ২১ হাজার ৯৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা যুক্ত হবে ২০২৫ সাল নাগাদ।
জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীরা বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি পেতে অস্থির হয়ে আছে। অথচ বিদ্যুতের মাস্টারপ্ল্যানের বাইরে নতুন কেন্দ্রের প্রয়োজন নেই। তাই নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন না দিতে সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন বন্ধ নেই। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরপত্র মূল্যায়ন চলছে। এগুলোর সক্ষমতা ৬৫০ মেগাওয়াট। এর বাইরে পরিকল্পনাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ১৬টি, যেগুলো নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই বা সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। এ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা আরও ১৯ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে সরকারি কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ৯ হাজার ৭১৭ মেগাওয়াট আর বেসরকারি খাতে রয়েছে আট হাজার ৮৮৪ মেগাওয়াট। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের রয়েছে ৬৬০ মেগাওয়াট কেন্দ্র। আর ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট। সব মিলিয়ে গত জুলাই শেষে বিদ্যুৎ সরবরাহ সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৩৮৩ মেগাওয়াট। বছর শেষে এ সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ২২ হাজার ১৫২ মেগাওয়াট। আর সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৭৫৭ মেগাওয়াট। যদিও শীত মৌসুমে এ চাহিদা ৯ হাজার মেগাওয়াটের বেশি থাকবে না। আর আগামী বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ২৩ হাজার ৬৯৯ মেগাওয়াট। তবে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৮২৩ মেগাওয়াট।
এদিকে ২০২২ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আরও বেড়ে দাঁড়াবে ২৮ হাজার ৫৯৫ মেগাওয়াট, ২০২৩ সালে ৩১ হাজার ২৬ মেগাওয়াট, ২০২৪ সালে ৩২ হাজার ৮৮৭ মেগাওয়াট ও ২০২৫ সালে ৩৬ হাজার ১৮ মেগাওয়াট। আর সে বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৯৫২ মেগাওয়াট। তবে শীত মৌসুমে তা অনেক কম হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে পর্যায়ক্রমে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়। এতে স্বাভাবিকভাবে চাহিদার ১০ শতাংশ অধিক ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র রাখলেই চলে। সে হিসাবে, বর্তমানে দেশে ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলেই চলে। আর ২০২৫ সালে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন সক্ষমতা লাগবে ২৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। কিন্তু সর্বোচ্চ চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩৩ শতাংশ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে অলস বসে আছে প্রায় ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র। উৎপাদন না হলেও বেসরকারি খাতের এসব কেন্দ্রের জন্য মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হচ্ছে। ভারসাম্যহীন পরিকল্পনার কারণে সরকারকে এ খাতে প্রতি বছর প্রচুর ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। সরকারের সর্বশেষ পরিকল্পনায় বিদ্যুতের নতুন গ্রাহক প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৪ শতাংশ। আবাসিক গ্রাহকের প্রবৃদ্ধি ঠিকমতো হলেও শিল্প গ্রাহকের প্রবৃদ্ধি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে হয়নি। এতে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা প্রাক্কলনের চেয়ে অনেক কম। এছাড়া সাম্প্রতিক করোনা সংক্রমণের পর বিদ্যুতের চাহিদায় আরও ধস নামে।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিদ্যুতের মাস্টারপ্ল্যান আমরা রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাংলাদেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা কত, সেটা এখন আবার নিরূপণ করা দরকার। কারণ অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে থাকে। এতে সরকারের ক্ষতি হয়। এর মধ্যে আবার কভিড-১৯-এর কারণে চাহিদার যে প্রাক্কলন করা হয়েছিল, সেটিও হবে না। মাস্টারপ্ল্যান রিভিউ করার পর যদি দেখা যায় প্রাক্কলনের চেয়ে চাহিদা কম, তাহলে পরিকল্পনাধীন কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা হবে। এছাড়া তিন হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, যার বেশির ভাগই রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বিদ্যুতের ভারসাম্যহীন পরিকল্পনায় বাংলাদেশ!

আপলোড টাইম : ০৯:০০:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

সমীকরণ প্রতিবেদন:
দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ২০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। যদিও গত বছর ২৯ মে উৎপাদন করা হয় সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৮৯৩ মেগাওয়াট। তবে এ উৎপাদন আট থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াটে ওঠানামা করে। তাই চাহিদা না থাকায় গড়ে সক্ষমতার প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকছে। এর পরও উৎপাদনে আসছে একের পর এক নতুন কেন্দ্র। এতে আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ২২ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা নতুন যুক্ত হবে। আগামী পাঁচ বছরে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ২০ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। এর বাইরে ভারত থেকে আমদানি করা হবে আরও প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। তবে পাঁচ বছরে চাহিদা খুব বেশি বাড়বে না। ফলে অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, নতুন বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার পাশাপাশি পাঁচ বছরে রেন্টাল-কুইক রেন্টালসহ বেশকিছু কেন্দ্র অবসরে যাবে। ফলে ২০২৫ সাল শেষে বিদ্যুৎ সরবরাহ সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৬ হাজার মেগাওয়াট। যদিও সে সময় সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার মেগাওয়াট। ফলে চাহিদার সর্বোচ্চ ব্যবহার হলেও সে সময় সক্ষমতার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা ১১ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকবে। তবে শীতকালে তা অনেক বেড়ে যাবে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি বছর উৎপাদনে আসবে তিন হাজার ৫১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর মধ্যে থাকবে সরকারি মালিকানাধীন দুই হাজার ৪৫৬ মেগাওয়াট ও বেসরকারি মালিকানাধীন এক হাজার ৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র। আগামী বছর নতুন করে উৎপাদনে আসবে দুই হাজার ২৮৯ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্র। এর মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন কেন্দ্র দুই হাজার ১৩৯ মেগাওয়াটের ও বেসরকারি মালিকানাধীন কেন্দ্র থাকবে ১৫০ মেগাওয়াটের। ২০২২ সালে চার হাজার ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে, ২০২৩ সালে চার হাজার ৩৭৮, ২০২৪ সালে দুই হাজার ৯৯০ ও ২০২৫ সালে তিন হাজার ২১৫ মেগাওয়াট। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালে ২০ হাজার ৪৮১ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। এর মধ্যে সরকারি কেন্দ্র ১৩ হাজার ৫৭২ মেগাওয়াট ও বেসরকারি কেন্দ্র ছয় হাজার ৯০৯ মেগাওয়াটের। এছাড়া ২০২২ সালে ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে আরও এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। সব মিলিয়ে নতুন ২১ হাজার ৯৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা যুক্ত হবে ২০২৫ সাল নাগাদ।
জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীরা বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি পেতে অস্থির হয়ে আছে। অথচ বিদ্যুতের মাস্টারপ্ল্যানের বাইরে নতুন কেন্দ্রের প্রয়োজন নেই। তাই নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন না দিতে সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন বন্ধ নেই। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরপত্র মূল্যায়ন চলছে। এগুলোর সক্ষমতা ৬৫০ মেগাওয়াট। এর বাইরে পরিকল্পনাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ১৬টি, যেগুলো নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই বা সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। এ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা আরও ১৯ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে সরকারি কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ৯ হাজার ৭১৭ মেগাওয়াট আর বেসরকারি খাতে রয়েছে আট হাজার ৮৮৪ মেগাওয়াট। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের রয়েছে ৬৬০ মেগাওয়াট কেন্দ্র। আর ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট। সব মিলিয়ে গত জুলাই শেষে বিদ্যুৎ সরবরাহ সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৩৮৩ মেগাওয়াট। বছর শেষে এ সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ২২ হাজার ১৫২ মেগাওয়াট। আর সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৭৫৭ মেগাওয়াট। যদিও শীত মৌসুমে এ চাহিদা ৯ হাজার মেগাওয়াটের বেশি থাকবে না। আর আগামী বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ২৩ হাজার ৬৯৯ মেগাওয়াট। তবে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৮২৩ মেগাওয়াট।
এদিকে ২০২২ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আরও বেড়ে দাঁড়াবে ২৮ হাজার ৫৯৫ মেগাওয়াট, ২০২৩ সালে ৩১ হাজার ২৬ মেগাওয়াট, ২০২৪ সালে ৩২ হাজার ৮৮৭ মেগাওয়াট ও ২০২৫ সালে ৩৬ হাজার ১৮ মেগাওয়াট। আর সে বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৯৫২ মেগাওয়াট। তবে শীত মৌসুমে তা অনেক কম হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে পর্যায়ক্রমে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়। এতে স্বাভাবিকভাবে চাহিদার ১০ শতাংশ অধিক ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র রাখলেই চলে। সে হিসাবে, বর্তমানে দেশে ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলেই চলে। আর ২০২৫ সালে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন সক্ষমতা লাগবে ২৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। কিন্তু সর্বোচ্চ চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩৩ শতাংশ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে অলস বসে আছে প্রায় ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র। উৎপাদন না হলেও বেসরকারি খাতের এসব কেন্দ্রের জন্য মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হচ্ছে। ভারসাম্যহীন পরিকল্পনার কারণে সরকারকে এ খাতে প্রতি বছর প্রচুর ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। সরকারের সর্বশেষ পরিকল্পনায় বিদ্যুতের নতুন গ্রাহক প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৪ শতাংশ। আবাসিক গ্রাহকের প্রবৃদ্ধি ঠিকমতো হলেও শিল্প গ্রাহকের প্রবৃদ্ধি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে হয়নি। এতে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা প্রাক্কলনের চেয়ে অনেক কম। এছাড়া সাম্প্রতিক করোনা সংক্রমণের পর বিদ্যুতের চাহিদায় আরও ধস নামে।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিদ্যুতের মাস্টারপ্ল্যান আমরা রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাংলাদেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা কত, সেটা এখন আবার নিরূপণ করা দরকার। কারণ অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে থাকে। এতে সরকারের ক্ষতি হয়। এর মধ্যে আবার কভিড-১৯-এর কারণে চাহিদার যে প্রাক্কলন করা হয়েছিল, সেটিও হবে না। মাস্টারপ্ল্যান রিভিউ করার পর যদি দেখা যায় প্রাক্কলনের চেয়ে চাহিদা কম, তাহলে পরিকল্পনাধীন কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা হবে। এছাড়া তিন হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, যার বেশির ভাগই রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল।’