ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিদায় ২০১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৩:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / ২৫৯ বার পড়া হয়েছে

আগামী উদ্ভাসিত হোক সমৃদ্ধির আলোয়
আমাদের জীবন থেকে আজ বিদায় নেবে আরেকটি খ্রিষ্টীয় বছর। ২০১৯ সালের শেষ সূর্যটি গোধূলির পর হারিয়ে যাবে মহাকালের গর্ভে। আর রাত ১২টা পেরোলেই শুরু হবে নতুন খ্রিষ্টীয় বছর। আগামীকাল নতুন বর্ষ ২০২০-কে বরণ করতে প্রস্তুত সবাই। প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকাসহ সারাদেশে খ্রিষ্টীয় বছর শেষের রাতকে উপভোগ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং ক্লাবগুলোতে এ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তারকাখচিত হোটেলগুলোর পাশাপাশি ছোট পরিসরেও আয়োজন করা হয়েছে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করেছে। চলতি বছর বিশ্বজুড়ে জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা যে দামামা বাজিয়েছে, আমাদের দেশেও গত বছর জঙ্গি গ্রেপ্তার ও গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে; ফলে এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রশাসনকে আরও ব্যাপক সতর্ক অভিযান পরিচালনা করা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। বিগত বছরগুলোর মতো ২০১৯ সালেও ধারাবাহিকভাবে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, সহিংসতা, নৃশংসতা, নির্মমতা ও রক্তাক্ত ঘটনা কমবেশি প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে দেশবাসীকে। নানা ঘটন-অঘটন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চড়াই-উতরাই, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আনন্দ-বেদনার সাক্ষী হয়ে কালের গর্ভে সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে এ বছরটি। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় প্রেক্ষাপটে নানা কারণেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে বিদায়ী ২০১৯ সালটি। এ বছর আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের বছর। এ বছর রাজনীতির মাঠ তেমন উত্তপ্ত না থাকলেও নানা সহিংসতায় রাজনৈতিক নেতা হত্যাসহ অনেক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে ভোলার বোরহানউদ্দিনে। প্রতিহিংসা, সংখ্যালঘু ও প্রতিপক্ষের ঘরবাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশ্য প্রতিবাদ, প্রতিরোধের মতো ঘটনাও ঘটেছে। বরগুনায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা এবং বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি প্রতিহিংসা চরিতার্থের সবচেয়ে জঘন্য ঘটনা হিসেবে আলোচিত হয়েছে। অন্যদিকে বছর শেষে সরকার রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করলেও তাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম মুদ্রিত হওয়ার ঘটনাকে সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেও আলোচিত হয়েছে। তবে এত সংকটের মধ্যেও দেশ এগিয়েছে অনেক। মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করতে প্রবৃদ্ধিসহ আন্তর্জাতিক নানান সূচকে এগিয়েছি আমরা। স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য হ্রাসসহ নানা ক্ষেত্রে এশিয়ার বহু দেশের শীর্ষে অবস্থান, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সাফল্য বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করেছে। আমাদের জীবনের সব কর্মকান্ড ইংরেজি সালের গণনায় হয় বিধায় খ্রিষ্টীয় বছর অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। সেই বিবেচনায় বিদায়ী বছরটা কেমন যাচ্ছে তার হিসাব কষবেন অনেকেই। ভালো, মন্দ, আনন্দ, বেদনার স্মৃতিগুলো আরও একবার রোমন্থন করবেন সবাই। যার যার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, ভাবনায় বছরটি নানাভাবে মূল্যায়িত হলেও সার্বিকভাবে আমাদের জাতীয় জীবনে বিদায়ী বছরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০১৯ বেশ ঘটনাবহুল বছর। নানা ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে, ঘটেছে উত্থান-পতনের খেলা। তারপরও এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। এ বছর ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার রায়, ভয়াবহ হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলার বিচারের রায়সহ কয়েকজন মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের রায় আইনের শাসনের পথে দেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়েছে বলা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করে বাংলাদেশের সুনাম বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছেন। অপরদিকে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিচার শুরু ও জাতিসংঘে নিন্দা প্রস্তাব পাস কূটনৈতিক অঙ্গনের সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বছরের শেষ দিকে নিরাপদ সড়ক আইন কার্যকর এবং দেশজুড়ে নানান উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনাও সরকারের অন্যতম সাফল্য।সর্বোপরি বলতে চাই প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা দেশের কয়েকজন গুণী ব্যক্তিকে হারিয়েছি- যা গভীর বেদনাবহ। তবে সব কিছু ছাপিয়ে উন্নয়নের মহাসোপানে এগিয়ে যাওয়াটাই বড় প্রাপ্তি। আজকের রাত পোহালেই খ্রিষ্টীয় নববর্ষ ২০২০ সালের সূর্যোদয় হবে। আগামী বছর ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। নববর্ষের এই সূচনালগ্নে প্রত্যাশা জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে আত্মপ্রবঞ্চনা, অগণতান্ত্রিক ও পশ্চাৎমুখী প্রবণতার অবসান ঘটবে। সরকার জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করে যুদ্ধাপরাধীমুক্ত উন্নয়নশীল স্বদেশ গড়ে তুলবে। ত্রাস-সন্ত্রাসের দিন যেন আর না আসে ফিরে। শক্ত হাতে এই প্রতিরোধ সবাইকে গড়ে তুলতে হবে। দেশ সেবায় আত্মনিয়োগের মধ্য দিয়েই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক, আগামী উদ্ভাসিত হোক সমৃদ্ধির আলোয়- এটাই প্রত্যাশা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বিদায় ২০১৯

আপলোড টাইম : ১০:১৩:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

আগামী উদ্ভাসিত হোক সমৃদ্ধির আলোয়
আমাদের জীবন থেকে আজ বিদায় নেবে আরেকটি খ্রিষ্টীয় বছর। ২০১৯ সালের শেষ সূর্যটি গোধূলির পর হারিয়ে যাবে মহাকালের গর্ভে। আর রাত ১২টা পেরোলেই শুরু হবে নতুন খ্রিষ্টীয় বছর। আগামীকাল নতুন বর্ষ ২০২০-কে বরণ করতে প্রস্তুত সবাই। প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকাসহ সারাদেশে খ্রিষ্টীয় বছর শেষের রাতকে উপভোগ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং ক্লাবগুলোতে এ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তারকাখচিত হোটেলগুলোর পাশাপাশি ছোট পরিসরেও আয়োজন করা হয়েছে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করেছে। চলতি বছর বিশ্বজুড়ে জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা যে দামামা বাজিয়েছে, আমাদের দেশেও গত বছর জঙ্গি গ্রেপ্তার ও গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে; ফলে এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রশাসনকে আরও ব্যাপক সতর্ক অভিযান পরিচালনা করা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। বিগত বছরগুলোর মতো ২০১৯ সালেও ধারাবাহিকভাবে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, সহিংসতা, নৃশংসতা, নির্মমতা ও রক্তাক্ত ঘটনা কমবেশি প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে দেশবাসীকে। নানা ঘটন-অঘটন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চড়াই-উতরাই, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আনন্দ-বেদনার সাক্ষী হয়ে কালের গর্ভে সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে এ বছরটি। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় প্রেক্ষাপটে নানা কারণেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে বিদায়ী ২০১৯ সালটি। এ বছর আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের বছর। এ বছর রাজনীতির মাঠ তেমন উত্তপ্ত না থাকলেও নানা সহিংসতায় রাজনৈতিক নেতা হত্যাসহ অনেক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে ভোলার বোরহানউদ্দিনে। প্রতিহিংসা, সংখ্যালঘু ও প্রতিপক্ষের ঘরবাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশ্য প্রতিবাদ, প্রতিরোধের মতো ঘটনাও ঘটেছে। বরগুনায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা এবং বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি প্রতিহিংসা চরিতার্থের সবচেয়ে জঘন্য ঘটনা হিসেবে আলোচিত হয়েছে। অন্যদিকে বছর শেষে সরকার রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করলেও তাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম মুদ্রিত হওয়ার ঘটনাকে সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেও আলোচিত হয়েছে। তবে এত সংকটের মধ্যেও দেশ এগিয়েছে অনেক। মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করতে প্রবৃদ্ধিসহ আন্তর্জাতিক নানান সূচকে এগিয়েছি আমরা। স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য হ্রাসসহ নানা ক্ষেত্রে এশিয়ার বহু দেশের শীর্ষে অবস্থান, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সাফল্য বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করেছে। আমাদের জীবনের সব কর্মকান্ড ইংরেজি সালের গণনায় হয় বিধায় খ্রিষ্টীয় বছর অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। সেই বিবেচনায় বিদায়ী বছরটা কেমন যাচ্ছে তার হিসাব কষবেন অনেকেই। ভালো, মন্দ, আনন্দ, বেদনার স্মৃতিগুলো আরও একবার রোমন্থন করবেন সবাই। যার যার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, ভাবনায় বছরটি নানাভাবে মূল্যায়িত হলেও সার্বিকভাবে আমাদের জাতীয় জীবনে বিদায়ী বছরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০১৯ বেশ ঘটনাবহুল বছর। নানা ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে, ঘটেছে উত্থান-পতনের খেলা। তারপরও এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। এ বছর ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার রায়, ভয়াবহ হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলার বিচারের রায়সহ কয়েকজন মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের রায় আইনের শাসনের পথে দেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়েছে বলা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করে বাংলাদেশের সুনাম বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছেন। অপরদিকে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিচার শুরু ও জাতিসংঘে নিন্দা প্রস্তাব পাস কূটনৈতিক অঙ্গনের সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বছরের শেষ দিকে নিরাপদ সড়ক আইন কার্যকর এবং দেশজুড়ে নানান উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনাও সরকারের অন্যতম সাফল্য।সর্বোপরি বলতে চাই প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা দেশের কয়েকজন গুণী ব্যক্তিকে হারিয়েছি- যা গভীর বেদনাবহ। তবে সব কিছু ছাপিয়ে উন্নয়নের মহাসোপানে এগিয়ে যাওয়াটাই বড় প্রাপ্তি। আজকের রাত পোহালেই খ্রিষ্টীয় নববর্ষ ২০২০ সালের সূর্যোদয় হবে। আগামী বছর ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। নববর্ষের এই সূচনালগ্নে প্রত্যাশা জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে আত্মপ্রবঞ্চনা, অগণতান্ত্রিক ও পশ্চাৎমুখী প্রবণতার অবসান ঘটবে। সরকার জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করে যুদ্ধাপরাধীমুক্ত উন্নয়নশীল স্বদেশ গড়ে তুলবে। ত্রাস-সন্ত্রাসের দিন যেন আর না আসে ফিরে। শক্ত হাতে এই প্রতিরোধ সবাইকে গড়ে তুলতে হবে। দেশ সেবায় আত্মনিয়োগের মধ্য দিয়েই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক, আগামী উদ্ভাসিত হোক সমৃদ্ধির আলোয়- এটাই প্রত্যাশা।