ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিক্ষোভে উত্তাল মিয়ানমার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৯:১০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ৭৮ বার পড়া হয়েছে

বাড়ি চলে যান, তা না হলে কঠোর ব্যবস্থা, সেনাবাহিনীর হুঁশিয়ারি, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা পোপের
সমীকরণ প্রতিবেদন:
সেনা শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আর ধর্মঘটে উত্তাল হয়ে উঠেছে মিয়ানমার। প্রতিবাদ-বিক্ষোভের অংশ হিসেবে পেশাজীবী ও শ্রমিকরা গতকাল দেশজুড়ে ধর্মঘট পালন করেছে। রাজধানী নেপিডোতে পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করে এবং রাষ্ট্রীয় টিভিতে সতর্ক করে দেওয়া হয় যে বিক্ষোভকারীরা জননিরাপত্তা ও আইনের শাসনের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে মিয়ানমারে শহরগুলোর রাস্তায় তিন দিন ধরে বিক্ষোভ হচ্ছে। এদিকে ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস বিক্ষোভকারীদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তিনি অং সান সু চিসহ গণতন্ত্রপন্থি সবাইকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের
অনেকগুলো শহরে ছোট-বড় বিক্ষোভ :
গতকাল সোমবার সকালে রাজধানী নেপিডো, ইয়াঙ্গুন এবং মান্দালয়সহ নানা শহরে বহু লোক রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী ও ব্যাংক কর্মকর্তারা। ইন্টারনেটে কর্মচারীদের বিক্ষোভের প্রতীক হিসেবে কাজ না করার আহ্বান জানানো হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডাক্তার বলেন, ‘আজ আমরা পেশাজীবীরা এটাই দেখাতে চেয়েছি যে, একনায়কতন্ত্রের পতনের দাবিতে আমরা সবাই এক’। একজন পোশাক শ্রমিক নিন তাজিন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের বেতন কেটে নেওয়া হলেও আজ আমরা কাজে যাচ্ছি না’। বিক্ষোভে কিছু মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও কোনো সহিংসতা ঘটেনি। রাজধানী নেপিডোতে বিক্ষোভকারীদের ওপর জলকামান ব্যবহার করা হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কি আচরণ করবে তা নিয়ে তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। সংবাদদাতারা বলছেন, পুলিশের চেয়ে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি।
বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতাচ্যুত ও গৃহবন্দি নির্বাচিত নেতা অং সান সু চির মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনর্বহালের দাবি করছে। গত সপ্তাহে মিয়ানমারের নির্বাচনে কারচুপির প্রমাণবিহীন দাবি করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে এবং দেশে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে। সু চিসহ বেসামরিক রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি করা হয়। সামরিক বাহিনীর প্রধান মিন অং লাইং এখন দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ ঠেকাতে সেনা কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও রবিবার প্রায় লাখ খানেক লোক ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় নেমে আসে। ‘আমরা সামরিক শাসন চাই না’, ‘আমাদের ভোটকে সম্মান করুন’, ‘গণতন্ত্র ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা দাবি জানাতে থাকব’—এসবই ছিল বিক্ষোভকারীদের দিক থেকে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানকারী সামরিক নেতাদের প্রতি বার্তা। তাদের হাতে ছিল গৃহবন্দি নেত্রী অং সান সু চির ছবি। অনেকের পরনে ছিল তার দল এনএলডির প্রতীকী লাল রঙের ব্যাজ, কারো হাতে ছিল লাল বেলুন। অনেকে তিন আঙুলে স্যালুট দেখিয়ে একনায়কতন্ত্রী শাসনের প্রতিবাদ করে।
সামরিক বাহিনীর সতর্কবার্তা:
সামরিক বাহিনী এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে তারা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সোমবার তাতে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে একটি সতর্কবাণী প্রচার করা হয়। এতে বলা হয়, রাস্তা থেকে না সরলে সেনাবাহিনীকে মোকাবিলা করতে হবে বিক্ষোভকারীদের। বাড়ি ফিরে যেতে বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে সতর্কবার্তায়। রবিবার ইয়াঙ্গুন শহরে যে প্রতিবাদ-মিছিল বের হয় তা ছিল গত এক দশকের মধ্যে বৃহত্তম।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বিক্ষোভে উত্তাল মিয়ানমার

আপলোড টাইম : ০৯:৩৯:১০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১

বাড়ি চলে যান, তা না হলে কঠোর ব্যবস্থা, সেনাবাহিনীর হুঁশিয়ারি, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা পোপের
সমীকরণ প্রতিবেদন:
সেনা শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আর ধর্মঘটে উত্তাল হয়ে উঠেছে মিয়ানমার। প্রতিবাদ-বিক্ষোভের অংশ হিসেবে পেশাজীবী ও শ্রমিকরা গতকাল দেশজুড়ে ধর্মঘট পালন করেছে। রাজধানী নেপিডোতে পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করে এবং রাষ্ট্রীয় টিভিতে সতর্ক করে দেওয়া হয় যে বিক্ষোভকারীরা জননিরাপত্তা ও আইনের শাসনের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে মিয়ানমারে শহরগুলোর রাস্তায় তিন দিন ধরে বিক্ষোভ হচ্ছে। এদিকে ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস বিক্ষোভকারীদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তিনি অং সান সু চিসহ গণতন্ত্রপন্থি সবাইকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের
অনেকগুলো শহরে ছোট-বড় বিক্ষোভ :
গতকাল সোমবার সকালে রাজধানী নেপিডো, ইয়াঙ্গুন এবং মান্দালয়সহ নানা শহরে বহু লোক রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী ও ব্যাংক কর্মকর্তারা। ইন্টারনেটে কর্মচারীদের বিক্ষোভের প্রতীক হিসেবে কাজ না করার আহ্বান জানানো হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডাক্তার বলেন, ‘আজ আমরা পেশাজীবীরা এটাই দেখাতে চেয়েছি যে, একনায়কতন্ত্রের পতনের দাবিতে আমরা সবাই এক’। একজন পোশাক শ্রমিক নিন তাজিন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের বেতন কেটে নেওয়া হলেও আজ আমরা কাজে যাচ্ছি না’। বিক্ষোভে কিছু মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও কোনো সহিংসতা ঘটেনি। রাজধানী নেপিডোতে বিক্ষোভকারীদের ওপর জলকামান ব্যবহার করা হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কি আচরণ করবে তা নিয়ে তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। সংবাদদাতারা বলছেন, পুলিশের চেয়ে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি।
বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতাচ্যুত ও গৃহবন্দি নির্বাচিত নেতা অং সান সু চির মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনর্বহালের দাবি করছে। গত সপ্তাহে মিয়ানমারের নির্বাচনে কারচুপির প্রমাণবিহীন দাবি করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে এবং দেশে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে। সু চিসহ বেসামরিক রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি করা হয়। সামরিক বাহিনীর প্রধান মিন অং লাইং এখন দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ ঠেকাতে সেনা কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও রবিবার প্রায় লাখ খানেক লোক ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় নেমে আসে। ‘আমরা সামরিক শাসন চাই না’, ‘আমাদের ভোটকে সম্মান করুন’, ‘গণতন্ত্র ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা দাবি জানাতে থাকব’—এসবই ছিল বিক্ষোভকারীদের দিক থেকে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানকারী সামরিক নেতাদের প্রতি বার্তা। তাদের হাতে ছিল গৃহবন্দি নেত্রী অং সান সু চির ছবি। অনেকের পরনে ছিল তার দল এনএলডির প্রতীকী লাল রঙের ব্যাজ, কারো হাতে ছিল লাল বেলুন। অনেকে তিন আঙুলে স্যালুট দেখিয়ে একনায়কতন্ত্রী শাসনের প্রতিবাদ করে।
সামরিক বাহিনীর সতর্কবার্তা:
সামরিক বাহিনী এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে তারা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সোমবার তাতে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে একটি সতর্কবাণী প্রচার করা হয়। এতে বলা হয়, রাস্তা থেকে না সরলে সেনাবাহিনীকে মোকাবিলা করতে হবে বিক্ষোভকারীদের। বাড়ি ফিরে যেতে বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে সতর্কবার্তায়। রবিবার ইয়াঙ্গুন শহরে যে প্রতিবাদ-মিছিল বের হয় তা ছিল গত এক দশকের মধ্যে বৃহত্তম।